Advertisement
২৩ অক্টোবর ২০২৪
Amit Shah

অতঃপর

অর্থাৎ প্রকারান্তরে বলা, হিন্দি তো দেশের সিংহাসনে বসেই গেছে, তার সঙ্গে আর যুদ্ধ করতে যাওয়া কেন। অন্য ভারতীয় ভাষারা এ বার তার সঙ্গে সন্ধি করে নিক।

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০৮:০২
Share: Save:

কোনও প্রতিযোগিতা থাকবে না, কিন্তু লক্ষ্য হবে সব ভাষার মধ্যে হিন্দিকেই দেশে প্রতিষ্ঠা দেওয়া। পার্লামেন্টারি কমিটি অন অফিশিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ-এর প্রধান হিসাবে আরও এক বার স্থলাভিষিক্ত হয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্যের নির্যাস এমনই, বললে ভুল হয় না। বিজেপি শাসনে গত দশ বছরে হিন্দির ভাষিক-রাজনৈতিক বাড়বাড়ন্ত যে জবরদখলের পর্যায়ে পৌঁছেছে, তা এ বার রাষ্ট্রীয় ‘লক্ষ্য’ হিসাবে অনুমোদন পেল— এ তারই বিপদঘণ্টা বললে অত্যুক্তি হবে না। বলার কায়দাটি শাসক দলের সুচতুর নেতা-মন্ত্রীদের মতোই কৌশলী, তার শব্দচয়নও: হিন্দি আর সব স্থানীয় ভাষার ‘বন্ধু’ হতে এসেছে, লড়াই করতে আসেনি; সরকারই খেয়াল রাখবে যাতে স্থানীয় ভাষাভাষী কোনও মানুষ হিন্দি নিয়ে ‘হীনম্মন্যতা’য় না ভোগেন; হিন্দিই যে বর্তমান ভারতের সর্বজনমান্য ‘কাজের ভাষা’ তা যেন সবাই মন থেকে মেনে নেন। কথাগুলিকে এই ভাবেও পড়া যায়: অন্যান্য ভাষা হীন হতে পারে, ‘হীনম্মন্যতা’য় ভোগা চলবে না। দেশের ‘কাজের ভাষা’ হিসাবে অন্য ভাষার অধিকার দাবি করাও চলবে না।

অর্থাৎ প্রকারান্তরে বলা, হিন্দি তো দেশের সিংহাসনে বসেই গেছে, তার সঙ্গে আর যুদ্ধ করতে যাওয়া কেন। অন্য ভারতীয় ভাষারা এ বার তার সঙ্গে সন্ধি করে নিক। লক্ষণীয়, হিন্দি নিয়ে বিজেপি দল ও সরকারের মনোভাব এখন আর গা-জোয়ারি নেই, সেই পর্যায়টিও অতিক্রান্ত; এখন লক্ষ্য ভবিষ্যৎ ভারতে প্রযুক্তি-প্রকৌশল সহায়ে অশ্বমেধ যজ্ঞ সম্পন্ন করে হিন্দির রাষ্ট্রাভিষেক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেই পথও ঘোষণা করেছেন: এমন একটি সফ্টওয়্যার তৈরি হচ্ছে যার মাধ্যমে ভারতের সংবিধানের অষ্টম শিডিউল বা তফসিলে অন্তর্ভুক্ত সব ভাষাই অনুবাদ করা যাবে। বুঝিয়ে বলতে হবে না যে, এই অনুবাদের গন্তব্য-ভাষাটি হবে হিন্দি। দেশের যাবতীয় কর্মকাণ্ড এখন থেকে সব ‘ভারতীয়’ ভাষায় সম্পাদন করা যাবে, বিজেপি বহিরঙ্গে এই চিরাচরিত ‘জাতীয়তাবাদী’ নিশানটি যেমন ওড়াতে পারবে, তেমনই ভিতরে ভিতরে চালিয়ে যেতে পারবে হিন্দির ভারতবিজয়ের প্রকল্প, কারণ আর সব ভাষা তো অনুবাদ ও মতবাদেও নতিস্বীকার করবে হিন্দির কাছেই।

গত দশ বছরে হিন্দির ভাষিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠায় বিজেপি সামাজিক ভাবে বেশ সফল। দক্ষিণ ভারত তাকে ঠেকিয়ে রেখেছে নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতির জোরে, উত্তর-পূর্ব ভারতও কিছুটা, তা বাদে উত্তরাবর্ত্মে তার প্রতাপ চোখে পড়ে এমনকি অ-হিন্দিভাষী রাজ্যেও। সংবিধান মতে ভারতের কোনও ‘জাতীয় ভাষা’ নেই, এখনও অবধি ২২টি ‘অফিশিয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ’ স্বীকৃত, প্রতিটিই সমমর্যাদার দাবিদার। কিন্তু বাস্তব ভিন্ন। তফসিলভুক্ত ভাষাগুলির মধ্যে কেন্দ্র আলাদা করে হিন্দিকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে যে অগণিত ভারতবাসী বিশ্বাস করছেন হিন্দি ভারতের জাতীয় ভাষা; দেশ জুড়ে কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে হিন্দির উদ্‌যাপন হচ্ছে আলাদা করে; প্রচারমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ঘোষণায় প্রবল ভাবে দৃশ্যমান বা শ্রুত হচ্ছে মুখ্যত হিন্দি। পশ্চিমবঙ্গেও এই অভিযোগ বাড়ছে— এখানে সরকারি-অসরকারি অফিসে কর্মীরা শুধু হিন্দিতেই স্বচ্ছন্দ, ফোনে বাণিজ্যিক সংস্থা-প্রতিনিধি বা পরিষেবাদাতা কথা বলেন হিন্দিতে। শাসকের প্রশ্রয় ছাড়া এই প্রভাব বিস্তার অসম্ভব। আর এখনকার ভারতশাসকদের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য কী, সেও খোলাখুলিই জানা গেল।

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Shah Hindi Language
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE