প্রতীকী ছবি।
রাজ্য সরকার জানাইল, আদর্শ কার্যবিধি মানিয়া আগাম সরকারি অনুমতি লইলে তবেই টিকা শিবিরের আয়োজন করা যাইবে। ইতিপূর্বে বেসরকারি শিবিরের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করিয়াছিল স্বাস্থ্য দফতর। উহাতে গণ-টিকাকরণ ব্যাহত হইবার আশঙ্কা সৃষ্টি হইতেছিল। নূতন ঘোষণায় খানিক স্বস্তি মিলিল। মূল প্রশ্নের উত্তরটি যদিও মিলিল না। এত কাল কি তবে সব নিয়ম না মানিলেও অনুমতি দেওয়া হইতেছিল? টিকাকরণের ন্যায় জীবন-মরণ প্রশ্নে এমন ঢিলাঢালা ব্যবস্থা কী ভাবে সম্ভব? উত্তরগুলি তদন্তসাপেক্ষ, তদন্ত চলিতেছেও, কিন্তু দুর্ভাগ্যের কথাটি হইল যে, টিকা শিবির সংক্রান্ত বিধি প্রকৃত অর্থে বলবৎ করিবার জন্য কোনও এক কুচক্রীর দুষ্টচক্রের আবরণ উন্মোচনের অপেক্ষা করিতে হইল। অতিমারির কালে টিকাকরণে কোনও ফাঁক থাকিতে পারে না, স্বাস্থ্য দফতর বা পুরসভার অনুমতি গ্রহণের প্রক্রিয়ায় ব্যত্যয় ঘটিতে পারে না, শিবিরের উপর নজরদারিতে অমনোযোগিতা চলিতে পারে না। উহা অপরাধমূলক, কেননা এই কারবার নাগরিকের জীবন লইয়া। যাঁহাদের গাফিলতিতে টিকাকরণের ন্যায় জীবন-মরণ প্রশ্নেও এত ফাঁক থাকিয়া যাইতে পারে, তাহাদের কঠোর শাস্তি হওয়া বিধেয়।
যদিও, কোনও শাস্তিতেই ভুয়া টিকাকাণ্ড-প্রসূত সর্বোচ্চ ক্ষতিটি ঠেকানো যাইবে বলিয়া আশা হয় না। ভারতে গণ-টিকাকরণকে গতিশীল ও সর্বজনীন করিয়া তুলিতে যে স্বাস্থ্য পরিকাঠামো প্রয়োজন, তাহা বেসরকারি ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকি সরকারি ক্ষেত্রেও রাতারাতি গড়িয়া তোলা দুষ্কর। ফলে, দ্রুত সর্বজনীন টিকাকরণে নাগরিক সমাজের প্রতিষ্ঠানগুলির উপর নির্ভর করা ভিন্ন ভারতে উপায় নাই। ক্লাব, আবাসন, স্কুল, কলেজ ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান আয়োজিত শিবিরের ভিতর দিয়াই তাহা আগাইয়া চলে। হিসাবটি সহজ— যত অধিক স্থান হইতে টিকাকরণের বন্দোবস্ত হইবে, তত অধিক মানুষ অতিমারির বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ লাভ করিতে পারিবেন। টিকাকরণে জালিয়াতি এই প্রক্রিয়াটিকেই ব্যাহত করিল। এক দিকে, টিকা লইয়া বহু নাগরিকের মনে সন্দেহ দেখা দিয়াছে, অপর দিকে নবপ্রণিত কঠোর প্রশাসনিক শর্তাবলি পার করিয়া বহু শিবির আয়োজন লইয়াই সংশয় দেখা দিয়াছে। সুতরাং, কিছু ভুয়া কর্মসূচির ফলে সমাজে সৃষ্ট প্রবল অবিশ্বাস টিকা গ্রহণের হার কমাইয়া দিল— ইহা অতিমারির বিরুদ্ধে চলমান লড়াইয়ে এক বিপুল ক্ষতি।
কী উপায়ে সেই ক্ষতি ঠেকানো যাইতে পারে, উহাই আপাতত আলোচ্য। ভুয়া সরকারি আমলার পরিচয়ে কেহ জাল বিছাইয়াছিলেন, তাহার তদন্ত চলিতেছে, কিন্তু তাহা কী ভাবে সম্ভব হইল, উহাও খুঁজিয়া বাহির করা সমান জরুরি। ব্যবস্থায় যে বিরাট চ্যুতি আছে, ইহা স্পষ্ট; নিয়মের তোয়াক্কা থাকিলে, যথাবিধ শিবির আয়োজিত হইলে এই ঘটনা ঘটিতেই পারিত না। সুতরাং, প্রশাসন বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই পরিস্থিতির দায়িত্ব এড়াইতে পারিবেন না। এখন শুভবুদ্ধির উদয় হইয়াছে, নিয়ম মানিবার কথা শুনা যাইতেছে— অদ্য সংশোধনের কাল। ভুল শুধরাইয়া লওয়া বিধেয়, কিন্তু যাহার গোড়ায় ভুলের উপস্থিতিই চরম অপরাধ, তাহাতে সংশোধনের প্রক্রিয়া অবধি যাইতে হইতেছে, ইহাও কম ভ্রান্তি নহে। ক্ষত সামলাইবার পূর্বেই বহু ক্ষতি হইয়া গিয়াছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy