প্রতীকী ছবি।
আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডার আশঙ্কা যেই প্রকাশ করিল যে, ভারতীয় অর্থব্যবস্থার দুর্দশা ফুরায় নাই— প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তখনই বলিয়া দিলেন যে, ভারত ঘুরিয়া দাঁড়াইয়াছে, আর্থিক বৃদ্ধির হার কুড়ি শতাংশ, বিশ্বের দ্রুততম হারে অর্থব্যবস্থার মুকুটটি ভারতের মাথায় চাপিল বলিয়া। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনও সায় দিয়া বলিলেন, ঠিক ঠিক। আন্তর্জাতিক সমীক্ষায় জানা গেল যে, ক্ষুধার নিরিখে ভারতের অবস্থা শ্রীলঙ্কা বা বাংলাদেশের তুলনায় তো বটেই, এমনকি পাকিস্তানের তুলনাতেও খারাপ। তথ্যটি মাটিতে পড়িতে না পড়িতেই কেন্দ্রীয় নারী ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রক বিবৃতি দিয়া জানাইল, এই সমীক্ষার পদ্ধতির গোড়ায় গলদ— ভারতের অবস্থা মোটেও মন্দ নহে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাহারা দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করিতে চাহিতেছে— ক্ষুধার সূচকেও পদ্ধতিগত গোলমাল নাই, অর্থব্যবস্থার ২৪ শতাংশ সঙ্কোচনের ভিত্তিতে দাঁড়াইয়া কুড়ি শতাংশ বৃদ্ধির হারেও কোনও কৃতিত্ব নাই। প্রশ্ন হইল, যে মিথ্যা এমন সহজেই ধরা পড়িয়া যায়— কোনও ক্ষেত্রে পাটিগণিতের প্রাথমিক জ্ঞান থাকিলেই জোড়াতালি ধরিয়া ফেলা যায়, সামান্য বইপত্র নাড়িলেই চলে— তাঁহারা তেমন কাঁচা মিথ্যার ভরসাতেই মানুষকে ভুলাইবেন বলিয়া ভাবেন?
অর্থব্যবস্থা লইয়া এমন অর্ধসত্য বা ডাহা মিথ্যা এই প্রথম বলা হইতেছে না। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে প্রধানমন্ত্রী অর্থব্যবস্থা বিষয়ে যত প্রতিশ্রুতি দিয়াছিলেন, তাহার সবই ছিল হাওয়ার নাড়ু। কোনও প্রধানমন্ত্রী যে চাহিলেই ডলারের দামকে চল্লিশ টাকায় বাঁধিয়া রাখিতে পারেন না, পেট্রল-ডিজ়েলের দাম স্বেচ্ছা-নির্ধারণ করিতে পারেন না— এই কথাগুলি বুঝিতে অর্থশাস্ত্রে ব্যুৎপত্তি নহে, প্রয়োজন ছিল কাণ্ডজ্ঞানের। দেশবাসী সেই কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় দেয় নাই। প্রধানমন্ত্রী-পদপ্রার্থী মূল্যস্ফীতির হারকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনিবার অলীক প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন; দেশবাসী বিশ্বাস করিয়াছে। এমনকি, যখন ভারতীয় অর্থব্যবস্থাকে পাঁচ লক্ষ কোটি ডলারের আয়তনে লইয়া যাইবার প্রতিশ্রুতি, অথবা পাঁচ বৎসরে কৃষকের আয় দ্বিগুণ করিবার প্রতিশ্রুতির অসম্ভাব্যতার কথা গণমাধ্যমে উচ্চারিত হইয়াছে— বিশেষজ্ঞরা বুঝাইয়া বলিয়াছেন, কেন এই গোত্রের প্রতিশ্রুতি পূরণ করা কার্যত অসম্ভব— দেশবাসী তখনও গা করে নাই।
তবে কি ইহা ভারতীয় জনতার চরিত্রগত আলস্য যে, নেতার প্রতিশ্রুতি অথবা আশ্বাসের সত্যাসত্য যাচাই করিবার পরিশ্রমটুকুও করিতে তাহারা নারাজ? সংখ্যার সম্মুখে অধিকাংশ মানুষের মাথা গুলাইয়া যায়। নেতারা মনুষ্য-মগজের এই দুর্বলতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করিয়া থাকেন। সংখ্যার ভাষায় নেতারা যাহা বলিতেছেন, তাহাকে জনগণবোধ্য ভাষায় অনুবাদ করিবার দায়িত্বটি নাগরিক সমাজের উপর বর্তায়। এবং, সংখ্যার ধোঁয়াশায় যে সত্যগুলিকে ঢাকিয়া দেওয়ার চেষ্টা চলে— যেমন, জিডিপির বৃদ্ধির হারের গল্পে ক্রমবর্ধমান অসাম্যের কথা ঢাকিয়া রাখা দলমতনির্বিশেষে নেতাদের অভ্যাস— তাহাকে প্রকাশ করিবার দায়িত্বও নাগরিক সমাজকেই লইতে হইবে। গণতন্ত্রের অনুশীলনের জন্য সাধারণ মানুষের নিকট তথ্য থাকা প্রয়োজন। সংখ্যা আসিয়া যেন তথ্যকে আড়াল না করিয়া দেয়, তাহা নিশ্চিত করা গণতন্ত্রের স্বার্থেই কর্তব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy