Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
CISF slapped MP

নিন্দনীয়

অনুমান করা চলে যে, অভিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মী সহজে পার পাবেন না— শাসক দলের সাংসদকে নিগ্রহ করার অপরাধে তাঁর কঠোর শাস্তি হবে।

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০২৪ ০৯:০০
Share: Save:

সা‌ংসদ পদে নির্বাচিত হওয়ার পরই এক অপ্রীতিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেন কঙ্গনা রানাউত। তাঁর অভিযোগ, চণ্ডীগড় বিমানবন্দরে সিআইএসএফ-এর এক নিরাপত্তাকর্মী তাঁকে চপেটাঘাত করেন। কৃষক আন্দোলন বিষয়ে অভিনেত্রীর একটি মন্তব্য নিয়ে সেই কর্মী ক্ষুব্ধ ছিলেন; তাঁর সেই ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ ঘটে কঙ্গনাকে সামনে পেয়ে। ঘটনাটি অতি নিন্দনীয়। গণতন্ত্রে মতপ্রকাশের অধিকার যেমন অলঙ্ঘনীয়, তেমনই কাউকে শারীরিক ভাবে নিগ্রহ করাও নিষিদ্ধ। কৃষক আন্দোলন বিষয়ে কঙ্গনা যা বলেছেন, তার সঙ্গে একশো শতাংশ অমত হলেও তাঁর সেই মতপ্রকাশের অধিকারকে সম্মান করতেই হবে। তাঁর সঙ্গে বিলক্ষণ অমত হওয়া চলে, সেই মতানৈক্য প্রকাশ করার একাধিক গণতন্ত্রসম্মত পদ্ধতি রয়েছে। কিন্তু, অভিযুক্ত সিআইএসএফ কর্মী শারীরিক নিগ্রহের পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। বিশেষত এই কারণে যে, তিনি দেশের নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর সদস্য— উর্দির নিরপেক্ষতা বিস্মৃত হওয়া অক্ষমণীয় অপরাধ।

অনুমান করা চলে যে, অভিযুক্ত নিরাপত্তাকর্মী সহজে পার পাবেন না— শাসক দলের সাংসদকে নিগ্রহ করার অপরাধে তাঁর কঠোর শাস্তি হবে। হওয়া উচিত, তা নিয়ে দ্বিমতের অবকাশ নেই। কিন্তু, শাসকপক্ষের গণতান্ত্রিক নৈতিকতার এই বোধটি অন্য সময় এতই নিদ্রিত থাকে যে, সংশয় হওয়া স্বাভাবিক— তাঁদের কাছে নিজপক্ষের জন্য এক নিয়ম, আর বিরোধীদের জন্য ভিন্ন। গত দশ বছরে উগ্র গৈরিক জাতীয়তাবাদের সঙ্গে ভিন্নমত হওয়ায় এত নাগরিক এত রকম নিগ্রহ ও লাঞ্ছনার সম্মুখীন হয়েছেন— গৈরিক বাহিনীর দ্বারা, এবং রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা— এবং সে বিষয়ে শাসকপক্ষ এত অপার ঔদাসীন্য বজায় রেখেছেন যে, গণতন্ত্রের প্রতি তাঁদের বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা আছে বলে সংশয় হয় না। এই নির্বাচনের ফলাফল তাঁদের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল হতে শেখাবে, তেমন আশাও ক্ষীণ। কঙ্গনার বিরুদ্ধে যা ঘটেছে, তা নিন্দনীয় হলেও, তা কেন ঘটেছে, বোঝা কঠিন নয়। শাসক দলের আশীর্বাদধন্য বলেই কেউ যা ইচ্ছা বলে পার পেয়ে যাবেন, এবং শাসক দলের বিরুদ্ধবাদী স্বরমাত্রকেই রাষ্ট্রযন্ত্র সর্বশক্তিতে দমন করবে— এই ব্যবস্থা এক অবিশ্বাস্য শ্বাসরোধী পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তার বিরুদ্ধে কারও ক্ষোভে ফেটে পড়া কি শুধু সময়ের অপেক্ষা ছিল না?

ঠিক সেই কারণেই কঙ্গনার লাঞ্ছনাকে কেন্দ্র করে দেশের প্রগতিশীল, উদারবাদী মহলে কার্যত একটি উল্লাসের বিস্ফোরণ ঘটেছে। অতি দুর্ভাগ্যজনক যে, দেশ এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, উদারবাদীরাও নিজেদের উল্লাসের মধ্যে নিহিত প্রহসনটি ধরতে পারছেন না। ভারতে যে গণতন্ত্রহীনতায় তাঁরা ক্ষুব্ধ, যে স্বৈরাচারী শাসনক্ষমতার প্রতিভূ হিসাবে কঙ্গনা রানাউতকে তাঁরা অপছন্দ করেন, তাঁর লাঞ্ছনায় এই উল্লাস উদারবাদীদের ঠিক সেই পঙ্‌ক্তিতেই দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। অপছন্দের মানুষের লাঞ্ছনাতে যদি তাঁরা ধিক্কার না জানাতে পারেন, তবে তাঁদের দিকে পরবর্তী আক্রমণ ধেয়ে এলে তার বিরুদ্ধতা করার নৈতিক অধিকারও তাঁদের থাকে না। গণতন্ত্রের অনুশীলন পছন্দ-অপছন্দের মানুষভেদে হয় না। দেশে গণতন্ত্রহীনতার প্রতিবাদে তাঁরা যখন ভলতেয়ারকে উদ্ধৃত করেন, তখন মনে রাখা ভাল যে, সেই নিয়মের অনুশীলন তাঁদের আচরণের মধ্যেও থাকতেই হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Kangana Ranaut
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy