ছবি সংগৃহীত
করোনাভাইরাস সংক্রান্ত হতাশাব্যঞ্জক সংবাদের মধ্যে লন্ডন-নিবাসী জনৈক অ্যাডাম কাস্টিলেনো কিছু শান্তি দিতে পারেন। গত বৎসর মার্চ মাসে সিয়াটল শহরে একটি সম্মেলনে ভাইরাস-বিশেষজ্ঞ রবীন্দ্র গুপ্ত ঘোষণা করিয়াছিলেন কাস্টিলেনোর কথা। গুপ্তর ঘোষণা মতে, উক্ত লন্ডন পেশেন্ট হইতেছেন দ্বিতীয় রোগী, চিকিৎসায় যাঁহার দেহ হইতে এডস রোগ নির্মূল করা গিয়াছে। ইতিপূর্বে আরও এক জন রোগী একই প্রকার চিকিৎসায় এডস-মুক্ত হন। তাঁহার ক্ষেত্রেও পরিচয় গোপন রাখা হইয়াছিল। চিকিৎসকগণ তাঁহাকে কেবল ‘বার্লিন পেশেন্ট’ বলিয়া উল্লেখ করিয়াছিলেন। পরে তিনি নিজ পরিচয় জনসমক্ষে ব্যক্ত করেন। বার্লিন শহর-নিবাসী উক্ত ব্যক্তির নাম তিমোথি রে ব্রাউন। চিকিৎসার সাফল্যের প্রথম নজির যদি ব্রাউন মহোদয় হইয়া থাকেন, তাহা হইলে কাস্টিলেনো দ্বিতীয় সাফল্যের উদাহরণ। এই সপ্তাহে ‘লন্ডন পেশেন্ট’ হিসাবে এত কাল অভিহিত কাস্টিলেনো আত্মপরিচয় জনসমক্ষে প্রকাশ করিয়াছেন। বলিয়াছেন, তিনি নিজেকে আশার দূত হিসাবে চিহ্নিত করিতে চাহেন। রোগ এবং চিকিৎসা, ভাইরাস এবং গবেষণা, দুই মেরুবাসী প্রতিপক্ষ। সম্ভবত উহাদের মধ্যে সংঘর্ষ বিদ্যমান। এই যুদ্ধে কে জিতে কে হারে, তাহার ঠিক নাই। তথাপি এডস-রূপী এক ভাইরাস, যাহার সংহারমূর্তি দেখিয়া জগৎসংসার যারপরনাই অসহায় ছিল এত কাল, তাহার পরাজয়ের বার্তাটি জনসাধারণের নিকট পৌঁছানো দরকার। যে কৌশলে কাস্টিলেনোর শরীর হইতে এডস ভাইরাস মুক্ত হইল, তাহা বলা উচিত। এই ক্ষেত্রে চিকিৎসার নাম ‘অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন’। অর্থাৎ, তাঁহার অস্থিমজ্জা ফেলিয়া দিয়া, অন্য ব্যক্তির অস্থিমজ্জা তাঁহার অস্থির অভ্যন্তরে চালান করিয়া দেওয়া। এই ক্ষেত্রে অস্থিমজ্জা-দাতা বিশেষ ব্যক্তি হওয়া আবশ্যক। দাতা এমন ছিলেন যে, তাঁহার দেহকোষে এডস ভাইরাস প্রবেশ করিতে পারিত না। প্রবেশ করিতে উদ্যত ভাইরাসকে ওই কোষ বাধা দিত। এমন ব্যক্তি কম মিলে। সুতরাং, কাস্টিলেনো যে প্রক্রিয়ায় এডস-মুক্ত হইলেন, তাহাকে সাধারণ চিকিৎসা কোনও মতে বলা যায় না। তাহা এক বিশেষ চিকিৎসা। তথাপি ইহাকে সাফল্য বলিতে বাধা নাই। কাস্টিলেনো এই বিশ্বে আশার দূত নিশ্চয়।
এই মুহূর্তে নিরাশার দূতটি অবশ্যই করোনাভাইরাস। জীবাণুটির সংহারমূর্তি পৃথিবীব্যাপী মানুষের ত্রাসের কারণ। ভাইরাস বনাম মানুষের যুদ্ধে মানুষ যেন এক পরাভূত এবং অসহায় সৈনিক। মোট সাত প্রকার করোনাভাইরাস মানুষকে আক্রমণ করিতে পারে। উহাদের মধ্যে এক প্রকার করোনাভাইরাসে সর্দিজ্বর হইলেও, দুইটি মহামারির রূপ পরিগ্রহ করিতে পারে। ২০০২ সালের সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (সার্স রোগ) বা ২০১২ সালের মিডল ইস্ট সিভিয়ার অ্যাকিউট রেসপিরেটরি সিনড্রোম (মার্স) এই গোত্রে পড়ে। ভাইরাসটিকে ঘিরিয়া একটি বলয় থাকে, যাহার উপাদান লিপিড নামে এক প্রকার অণু। ভাইরাসটি মানবদেহে প্রবেশ করে মুখগহ্বর, নাসারন্ধ্র এবং চক্ষুর পথে। আক্রান্ত দেহকোষটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারায়। এবং পরিণত হয় লক্ষ লক্ষ করোনাভাইরাস উৎপাদনকারী কারখানায়। কারখানাগুলি অচিরে ধ্বংস হয়। সংহারক ভাইরাসটিকে কী রূপে প্রতিরোধ করা যায়, তাহার উপায় আবিষ্কারই এ-ক্ষণে প্রধান বিবেচ্য। করোনাভাইরাসের শরীরে ধুতুরা ফুলের বীজের ন্যায় প্রোটিন নির্মিত এক প্রকার কাঁটা থাকে। উহার সাহায্যে মানুষের দেহকোষের উপরস্থ রিসেপটর নামক অংশের সহিত করোনাভাইরাস খাপে খাপে মিলিয়া যায়। এই ডকিং বা সংযোগ ভাইরাসটির আক্রমণের প্রথম ও প্রধান ধাপ। ওই ধাপকে বানচাল করা এই মুহূর্তে গবেষকগণের অভীষ্ট।
১৯১৮ সালে আমেরিকা-সহ কতিপয় রাষ্ট্রে যে ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারি দেখা গিয়াছিল, তাহাতে পাঁচ কোটি মানুষ মারা গিয়াছিলেন। পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার অনুপাত হিসাব করিলে আজিকার হিসাবে ওই সংখ্যা কুড়ি কোটি দাঁড়াইবে। ১৯১৮-র গবেষকগণের হাতে যন্ত্রপাতি কিছুই ছিল না। ভাইরাস দেখিতে কেমন, তাহা জানা ছিল না। একশত দুই বৎসরে গবেষণা অনেকটা আগাইয়াছে। এখন ভাইরাসকে যন্ত্রে চক্ষুগোচর করা সম্ভব। তাহার জিনগত উপাদানও জানা যায়। তথাপি করোনাভাইরাস আক্রমণ অতিমারি ঘোষিত। একশত দুই বৎসর পূর্বের ন্যায় না হইলেও, মানুষ এখনও ভাইরাসের সহিত যুদ্ধে যথেষ্ট অসহায়।
যৎকিঞ্চিৎ
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন, হিংসায় কারা মারা গিয়েছেন, এ নিয়েও ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজন হয়? হিংসায় ৫২ জন ‘ভারতীয়ের’ মৃত্যু হয়েছে। এই দেশপ্রেম শিক্ষণীয়। সত্যিই তো, ৫২ জনের মধ্যে ৪০ জনই মুসলিম, তা বললে কি হিংসার নির্দিষ্ট চরিত্র বেরিয়ে পড়ার ভয় থাকে? এ-ও বুঝতে হবে, মারা গেলে মুসলিমরা ভারতীয়। বেঁচে থাকলে, মুসলিম। তখন তাঁদের বিরুদ্ধে বিষাক্ত উস্কানি, তাঁদের প্রতি হিংসাকে দেদার প্রশ্রয়। শুধু লাশের হিসেব চাইলে, ওঁরা ভারতীয়। আর ‘গদ্দার’ নন, ‘ব্রাদ্দার’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy