গোলপার্কের এক ডাকঘরের সামনে অসহায় দাঁড়িয়ে বৃদ্ধা। আকাশের দিকে ফ্যালফেলে চাহনি। এমআইএস বাবদ সাড়ে দশ হাজার টাকা পান। তাতেই মাস গুজরান। কিন্তু ডাকঘর এ মাসে জানিয়ে দিল, নগদ নেই, চার হাজার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
চার হাজারে মাস কাটবে কী করে বৃদ্ধার?
দিন কেটেছে, সপ্তাহ কেটেছে, মাস কেটেছে, এ বার পঞ্চাশ দিনও কেটে গেল। রোজ রোজ সহস্র প্রশ্ন জন্ম নিল, উদ্বেগ তৈরি হল, সঙ্কট ঘনাল। কিন্তু ভারতের বর্তমান ভাগ্যবিধাতারা সুরাহা নিয়ে ভাবলেন না। পঞ্চাশ দিন ধরে শব্দ, শব্দবন্ধ আর কথার কারসাজি চালিয়ে গেলেন শুধু। প্রথমে শোনা গেল, ‘কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াই’ চলছে। তার পর বলা হল, ‘জাল টাকার বিরুদ্ধে জেহাদ’ হচ্ছে। সব শেষে জানা গেল, ‘ক্যাশলেস ভারত’ গড়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী কখনও বললেন, মাত্র পঞ্চাশ দিনের কষ্ট, তার পরই সব সঙ্কটে ইতি। তার পর বললেন, পঞ্চাশ দিন কাটলে ভাল লোকের কষ্ট কমতে শুরু করবে আর খারাপ লোকের কষ্ট বাড়তে শুরু করবে। এখন শোনা যাচ্ছে, নতুন বছরে ধীরে ধীরে বোঝা যাবে, নগদরহিত দেশ হয়ে ওঠার সুফল কতখানি।
কথা চালাচালি আর শব্দের কারসাজির মাঝে অনেকগুলো অসহায় মুখ খাবি খাচ্ছে রোজ, নাভিশ্বাস উঠছে যেন। অসহায় ভিড়টাতে গোলপার্কের ডাকঘরের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ওই বৃদ্ধাকে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর দত্তক নেওয়া গ্রাম নাগেপুরের সেই বাসিন্দাদের দেখা যাচ্ছে, যাঁরা ডেবিট কার্ড, পেটিএম, মোবাইল ব্যাঙ্কিং-এর নামই শোনেননি কখনও, ভারতের প্রান্তে-প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকা আরও কোটি কোটি মানুষকে দেখা যাচ্ছে।
এখনও অনেকে বলছেন, কিছু পেতে গেলে কিছু দিতে হয়, দেশের ভাল চাইলে একটু কষ্ট সইতে হয়। প্রশ্নটা হল, কষ্ট কত দিন সইতে হয়? প্রধানমন্ত্রী যত দিন সইতে বলে দেবেন, তত দিনই সইতে হয়? না কি তার পরেও সইতে হয়? পঞ্চাশ দিন কাটলেই আলোয় আলো হয়ে উঠবে চতুর্দিক, এমনই আশা জাগিয়ে দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু সঙ্কটমুক্তির কোনও আলো যে আজও দেখা যাচ্ছে না, সে কথার উচ্চারণ বাহুল্য মাত্র।
অসংখ্য মানুষের প্রত্যাশায় ভর করে ভারতীয় শাসনতন্ত্রের শীর্ষে পৌঁছেছেন নরেন্দ্র মোদী। মুদ্রা প্রত্যাহারের মাধ্যমে যে উজ্জ্বল দিনে পৌঁছনোর স্বপ্ন দেখিয়েছেন তিনি, তাও বহু মানুষের মনে প্রত্যাশার আগুন উস্কে দিয়েছে। এ প্রত্যাশার মূল্যটাও কিন্তু চোকাতে হবে। যদি মূল্য চোকাতে পারেন, যদি প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন, তা হলে শুধু দেশের জন্য নয়, নরেন্দ্র মোদীর জন্যও ‘অচ্ছে দিন’ অপেক্ষায়। আর এই বিপুল প্রত্যাশা যদি বৃথা যায়, তা হলে কিন্তু অন্যতর মূল্য চোকানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy