ভুল সংশোধন করিয়া লওয়ায় বিন্দুমাত্র লজ্জা নাই। পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি মস্ত ভুল করিয়াছে— রাজ্যে কত পরিযায়ী শ্রমিক ফিরিয়াছেন, সেই সংক্রান্ত তথ্য সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে জানায় নাই। ফলে, গরিব কল্যাণ রোজগার যোজনার তহবিল হইতে এই রাজ্য বঞ্চিত। অস্বীকার করা চলিবে না যে অতিমারির সূচনালগ্ন হইতে কেন্দ্রীয় সরকার বিভিন্ন ভাবে এই রাজ্যের সহিত বিমাতৃসুলভ আচরণ করিয়াছে। তাহার পশ্চাতে রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতাও অনস্বীকার্য। কিন্তু, এই মুহূর্তে সেই ক্ষুদ্রতাকে পরিহার করিবার দায় রাজ্য সরকারেরও ছিল। রাজ্যবাসীর স্বার্থেই কর্তব্য ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের সহিত সহযোগিতা করা। তাহা না করিবার ফল, রাজ্যে একশত দিনের কর্মপ্রকল্পের তহবিলে টান পড়িতে আরম্ভ করিয়াছে। এতখানিই যে প্রকল্পের বার্ষিক বরাদ্দের বড় অংশ খরচ হইয়া গেল প্রথম তিন মাসেই। এই মুহূর্তে বহু পরিযায়ী শ্রমিক যাবতীয় অনিশ্চয়তাকে স্বীকার করিয়াও ফের ভিন্রাজ্যে পাড়ি দিতে উদ্গ্রীব, কারণ এই রাজ্যে তাঁহাদের ন্যূনতম উপার্জনের ব্যবস্থাও হইতেছে না। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নহে, সরকারি পরিসংখ্যান বলিতেছে, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশার ন্যায় যে রাজ্যগুলিতে অধিক সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক ফিরিয়া আসিয়াছেন, সেই রাজ্যগুলিতে কর্মসংস্থান যোজনার তহবিলে টান পড়িতেছে বেশি। অর্থাৎ, অতিমারি ও লকডাউনের ফলে কাজ হারাইয়া মানুষ কর্মসংস্থান যোজনাকে আঁকড়াইয়া ধরিতে চাহিতেছেন। এই মানুষগুলির কর্মসংস্থানের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করা রাজ্য সরকারের কর্তব্য। পূর্বের ভুলটি শুধরাইয়া লওয়া জরুরি।
প্রশ্ন হইল, প্রধানমন্ত্রীও কি নিজের ভুলটি স্বীকার করিয়া লইবেন? তিনি সকৌতুক বলিয়াছিলেন, জাতীয় কর্মসংস্থান যোজনা প্রকল্পটিকে তিনি রাখিয়া দিবেন একটিমাত্র কারণে— ইউপিএ সরকার কতখানি ভ্রান্ত নীতি দ্বারা পরিচালিত ছিল, তাহার প্রমাণ হিসাবে। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে নরেন্দ্র মোদী যখন এই শ্লেষোক্তি করিয়াছিলেন, অতিমারি-জনিত আর্থিক বিপর্যয় তখনও সম্ভাবনার অপর পারে। তখনও জানা ছিল না, দেশব্যাপী বিপুল সঙ্কটে বহু কোটি মানুষের একমাত্র আশ্রয় হইয়া উঠিবে সেই একশত দিনের কর্মসংস্থান যোজনা। রাজনৈতিক সঙ্কীর্ণতা ও অজ্ঞতাপ্রসূত দম্ভ ত্যাগ করিয়া প্রধানমন্ত্রী কি স্বীকার করিতে পারিবেন যে, এই প্রকল্পের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বুঝিতে তাঁহার ভুল হইয়াছিল? স্বীকার করিয়া লইতে পারিবেন, অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য নিরাপত্তা জাল নির্মাণ করিবার কাজে এনআরইজিএ মস্ত ভরসা হইয়াছে?
স্বল্পমেয়াদে কর্মপ্রকল্পের উপর নির্ভরশীলতা বৃদ্ধি ভিন্ন গত্যন্তর নাই। ইহা ঘটনা যে বহু অর্ধদক্ষ ও দক্ষ শ্রমিকের নিকটই এনআরইজিএ-র স্বল্প মজুরির কায়িক শ্রম যথেষ্ট লাভজনক নহে, তাঁহারা ঝুঁকি লইয়াও নিজেদের পেশায় ফিরিতে চাহিতেছেন। বাজারের নিয়মচালিত পেশাবণ্টনই যে অর্থনৈতিক ভাবেও অধিকতর কাম্য পরিস্থিতি, তাহাতেও সংশয় নাই। কিন্তু, স্বল্পমেয়াদে বিপুল সংখ্যক কর্মহীন মানুষের জন্য খানিক হইলেও উপার্জনের ব্যবস্থা করিতে পারে একমাত্র এনআরইজিএ। বাস্তব পরিস্থিতিও তাহাই বলিতেছে। কাজেই, এই মুহূর্তে প্রকল্পের বরাদ্দ বৃদ্ধি করা জরুরি। আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা নামক প্রহসনটির রেশ মিলাইয়া গিয়াছে, অর্থব্যবস্থায় তাহার প্রভাব অকিঞ্চিৎকর। এখন বাজারে চাহিদাবৃদ্ধির স্বার্থেও সাধারণ মানুষের হাতে নগদ পৌঁছাইয়া দেওয়া জরুরি। এনআরইজিএ তাহারও পথ। কাজেই, রাজনৈতিক বিবাদ ভুলিয়া সর্বশক্তিতে প্রকল্পটিকে চালাইয়া লইয়া যাওয়া প্রয়োজন। আশঙ্কা হয়, যত ক্ষণ প্রধানমন্ত্রীর অহং এনআরইজিএ বিষয়ে তাঁহার প্রকাশ্য বিদ্রুপগুলি না ভুলিতেছে, তত ক্ষণ এই প্রকল্পের গুরুত্ব তিনি দেখিতে পাইবেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy