Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪

হাঁসজারু

নীতি আয়োগ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিটিও প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলিয়াছেন, নীতি আয়োগের হাতে অর্থ বরাদ্দ করিবার ক্ষমতা নাই, ফলে তাহার বৈঠকে উপস্থিতি অর্থহীন।

শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৯ ০০:০২
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেহাদ অব্যাহত। তিনি জানাইয়াছেন, সপ্তাহান্তে নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিবেন না। কেন, তাহার কারণও জানাইয়াছেন তিনি। কারণটি যে অবান্তর বা অযৌক্তিক, তেমন কথা বলিবার উপায় নাই। কিন্তু, বৈঠকে না যাওয়ার সিদ্ধান্তটি শুধু সেই কারণের ভিত্তিতেই, এমন কথাই বা বলিবার উপায় কোথায়? বেশ কিছু দিন হইল, কেন্দ্রের সহিত অসহযোগিতাকে তিনি রাজনৈতিক পথ হিসাবে বাছিয়াছেন। তাহাতে রাজনীতি কতখানি হইতেছে, তাহা ভিন্ন বিবেচ্য— কিন্তু, প্রশাসনিকতার ক্ষতি হইতেছে বিলক্ষণ। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দলের সহিত তাঁহার রাজনৈতিক মতানৈক্য থাকিতেই পারে; প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন ব্যক্তিকেও তিনি অপছন্দ করিতে পারেন— কিন্তু, সেই রাজনৈতিক পছন্দ-অপছন্দের আঁচ প্রতিষ্ঠানের উপর পড়িলে বিপদ। তাঁহাকে বুঝিতে হইবে, ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদীর ডাকে নহে, প্রধানমন্ত্রীর সাড়া দেওয়া রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে তাঁহার কর্তব্য। কেন্দ্রীয় সরকারকে সাহায্য করা তাঁহার দায়িত্ব। তথ্য না দেওয়া, আমলাদের আটকাইয়া রাখা ইত্যাদি ছেলেমানুষি তো বহু দিন হইল। পুরাতন বিসংবাদ ভুলিয়া এই বার তিনি প্রতিষ্ঠানকে তাহার প্রাপ্য গুরুত্ব দিন। স্মরণে রাখুন, তাঁহার এই যুক্তিহীন জেহাদে সর্বাপেক্ষা ক্ষতি হইতেছে পশ্চিমবঙ্গের।

তবে, নীতি আয়োগ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তিটিও প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলিয়াছেন, নীতি আয়োগের হাতে অর্থ বরাদ্দ করিবার ক্ষমতা নাই, ফলে তাহার বৈঠকে উপস্থিতি অর্থহীন। নীতি আয়োগের ক্ষমতাহীনতার কথাটি নির্ভুল। যোজনা কমিশন বিলুপ্ত করিয়া ২০১৫ সালে যখন নীতি আয়োগ প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল, তখনই বোঝা গিয়াছিল, ইহা নিছক হাঁসজারু। নেহরু-যুগের যোজনা কমিশনের ক্ষমতাও তাহার নাই, আবার বিকেন্দ্রিত বাজার ব্যবস্থার সহিত মানানসই হইয়া উঠিবার মতো উদারতাও নাই। নরেন্দ্র মোদী যে যুক্তিতে যোজনা কমিশন উঠাইয়া দিয়াছিলেন, ঠিক সেই যুক্তিতেই নীতি আয়োগ প্রতিষ্ঠা করিবার অপ্রয়োজনীয়তাও প্রতিষ্ঠা করা যাইত। দুর্ভাগ্য, প্রধানমন্ত্রী এক পা অগ্রসর হইয়াই থামিয়া গিয়াছিলেন। বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রের মধ্যে সমন্বয় সাধন করিতে নীতি আয়োগের ন্যায় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নাই। তাহার ভিন্নতর এবং কম সময়সাপেক্ষ পথ আছে। গত সাড়ে চার বৎসরের অভিজ্ঞতাতেও স্পষ্ট, কেন্দ্রীয় সরকারের কিছু ভ্রান্ত আর্থিক সিদ্ধান্তের পিছনে কুযুক্তি খাড়া করা ভিন্ন আর কোনও কাজ নীতি আয়োগ করে নাই। করিবে, সেই ভরসাও নাই। কাজেই, সেই প্রতিষ্ঠানটিকে অযথা গুরুত্ব দেওয়া কেন?

কাজেই, নীতি আয়োগ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে কুলার বাতাস দিয়া বিদায় করাই বিধেয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করিয়া বিজেপির মুখপাত্র যুক্তরাষ্ট্রীয়তার প্রসঙ্গ টানিয়াছেন। যোজনা কমিশন বা নীতি আয়োগের ন্যায় প্রতিষ্ঠান চরিত্রগত ভাবেই যুক্তরাষ্ট্রীয়তার বিরোধী; রাজ্যের তুলনায় কেন্দ্র এই প্রতিষ্ঠানগুলিতে ঢের বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয়তার স্বার্থরক্ষা করিতে চাহিলে নীতি আয়োগের যাওয়া প্রয়োজন। কেন্দ্র-রাজ্য সমন্বয় অবশ্যই জরুরি। কিন্তু, তাহার জন্য এই গোত্রের পরিসরের প্রয়োজন নাই। যে কোনও প্রয়োজনে রাজ্য প্রশাসন যাহাতে কেন্দ্রের সাহায্য পাইতে পারে, ভারতের সংবিধানেই সেই অধিকার আছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদের কথা বলিয়াছেন। কোনও প্রকল্পের জন্য একাধিক রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন হইলে সেই প্রশ্নভিত্তিক সংগঠনের পথেও হাঁটা যায়। প্রয়োজনে একাধিক রাজ্য একযোগে কেন্দ্রের নিকট সুবিচার দাবি করিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় সব পথই খোলা। তাহার জন্য যেমন যোজনা কমিশন অবান্তর, নীতি আয়োগও। এই বার নীতি আয়োগও অতীত হইলেই হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Niti Aayog Narendra Modi BJP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy