Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Financial Gap

উত্তরণের দিশা

ওয়ার্ল্ড ইনইকোয়ালিটি ল্যাব-এর সাম্প্রতিক তথ্য দাবি করছে, ভারতে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য অতীতের সমস্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং দেশের জাতীয় সম্পদের ৪০ শতাংশই রয়েছে দেশের ১% ধনকুবেরের হাতে।

শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪ ০৬:১৩
Share: Save:

অর্থনীতিবিদ এস্থার দুফলোর সঙ্গে অমিতাভ গুপ্তের ‘বিনা শর্তে নগদই ভাল’ (২৩-৬) সাক্ষাৎকারভিত্তিক লেখাটি গুরুত্বপূর্ণ। এস্থার বলেছেন, দরিদ্র মানুষ হাতে নগদ টাকা পাওয়ায় মানুষের ক্ষুধা ও অপুষ্টি কমছে, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটছে, শ্রমশক্তিতে যোগ দেওয়ার সামর্থ্য বাড়ছে। তাঁর এই মন্তব্য থেকে অর্থশাস্ত্রের ‘মাল্টিপ্লায়ার তত্ত্ব’ অনুযায়ী বলা চলে যে, গরিবের হাতে টাকা পৌঁছলে তার সিংহভাগ খরচ হয় ভোগব্যয়ে, ফলে বাজারে চাহিদা বাড়ে। এর আগেও অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, গরিবদের হাতে নিয়মিত টাকা দিলে তাঁরা অলস হয়ে যাবেন, এই ধারণা ঠিক নয়। অর্থনীতিতে তার ইতিবাচক প্রভাবই পড়ে। আফ্রিকা ও ভারতে বিভিন্ন গবেষণার সূত্র ধরে তিনি এটাও জানিয়েছিলেন যে, কর্পোরেটের করের হার না কমিয়ে, গরিবের হাতে টাকা পৌঁছলে তাঁরা আরও বেশি উৎসাহী ও উৎপাদনশীল হবেন। এস্থার দুফলো ও অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, এই যুগ্ম-নোবেলজয়ী অর্থশাস্ত্রী গরিব-দুঃখীদের দীর্ঘমেয়াদি চরম আর্থিক দুরবস্থার সমাধানের জন্যে রাষ্ট্রীয় কর্ণধারদের সামনে উত্তরণের পন্থা বার বার পেশ করছেন।

ওয়ার্ল্ড ইনইকোয়ালিটি ল্যাব-এর সাম্প্রতিক তথ্য দাবি করছে, ভারতে ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে আর্থিক বৈষম্য অতীতের সমস্ত রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছে এবং দেশের জাতীয় সম্পদের ৪০ শতাংশই রয়েছে দেশের ১% ধনকুবেরের হাতে। ‘ওয়ার্ল্ড পভার্টি ক্লক’-এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ভারতে প্রায় ৩.৪৪ কোটি লোক চরম দারিদ্রের কবলে। পাশাপাশি, বিশ্ব ব্যাঙ্কের সমীক্ষা বলছে, (২০২২ সালে প্রকাশিত) এ দেশে গরিব মানুষের হার ১১.৯ শতাংশ। ২০২১-২০২২ সালে দেশে জিএসটি বাবদ মোট ১৪.৮৩ লক্ষ কোটি টাকার মধ্যে ৬৪ শতাংশ পাওয়া গিয়েছে সবচেয়ে নীচে থাকা ৫০ শতাংশ নাগরিকের থেকে। আর সবচেয়ে ধনী বা বিত্তশালীদের থেকে আদায় হয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। তবু জনধন অ্যাকাউন্টের তথ্যকে ভিত্তি করে, এবং প্রয়োজনে আধার ব্যবহার করে প্রতিটি হতদরিদ্র পরিবারের কাছে প্রতি মাসে উপযুক্ত পরিমাণে অর্থ পাঠানোর ব্যবস্থা আজও গড়ে তোলা গেল না।

পৃথ্বীশ মজুমদার, কোন্নগর, হুগলি

নগদের লাভ

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ এস্থার দুফলোর যে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অমিতাভ গুপ্ত, তা থেকে জানা গেল যে, দারিদ্র নিয়ে শিশুদের জন্য গল্পের ছলে বই বেরোচ্ছে (পুয়োর ইকনমিক্স ফর কিডস)। উদ্যোগটিকে সাধুবাদ জানাই। দারিদ্রের কারণ শিশুরা জানলে তারা চেষ্টা করতে পারে তাকে সমূলে বিনাশ করার। বিশেষত দরিদ্র শিশুদের অবশ্যই জানা দরকার দারিদ্রের কারণ। সাক্ষাৎকারের শেষের দিকে এস্থার নগদ হস্তান্তরকে গরিবের পক্ষে এবং অর্থনীতির পক্ষে মঙ্গলদায়ক বলেছেন। অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় (এস্থারের সহ-নোবেলপ্রাপক) এবং স্বাতী ভট্টাচার্যের লেখা বিকল্প বিপ্লব বইয়ের একটি নিবন্ধে বলা হয়েছে যে, বাড়তি টাকা হাতে পেলেই একটি গরিব পরিবার পুষ্টিকর খাদ্যশস্য কিনবে, পরিচ্ছন্ন শৌচালয় বানাবে, এমন কোনও কথা নেই। বরং সেই দিয়ে সে কম দামি প্রসাধন কেনে, মোবাইল রিচার্জ করে। তাই কোনটি ঠিক, তা নিয়ে আমরা দ্বিধান্বিত। সাক্ষাৎকারে এস্থার বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গে চলা প্রকল্পগুলি নিয়ে তিনি বিশেষ কিছু জানেন না। অর্থাৎ, এখানে সমীক্ষা হয়নি। বিকল্প বিপ্লব বইতে যে সমীক্ষাগুলির কথা বলা আছে, তার মধ্যে দু’একটি দেশের মধ্যে করা। বাকি সব অন্য দেশের।

ওই বইতে বলা রয়েছে যে, গরিবকে অনুদানের ব্যাপারে মধ্যবিত্তের মধ্যে উষ্মা আছে। সেটা কোনও কোনও ক্ষেত্রে কিছুটা অন্তত সঙ্গত। যেমন, একশো দিনের কাজের জন্য চাষে মজুর পাওয়ার সমস্যা হচ্ছে। বর্তমানে গোটা ভারত বিনা শর্তে নগদ দেওয়ার দিকে ঝুঁকছে। উদ্দেশ্য দারিদ্র দূরীকরণ না ভোটবাক্স ভরা, তা জানা নেই। সেই সঙ্গে রাষ্ট্রের বা রাজ্যের আয়ের কত অংশ অনুদানে, আর কত অংশ স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি করতে ব্যবহার করা উচিত, সেটাও জানা দরকার। অনুদানের লক্ষ্য কোন গোষ্ঠীগুলি, এবং এই অনুদানের টাকার উৎস কী, তা-ও জানা দরকার। এ সব হওয়ার আগেই ‘বিনা শর্তে নগদ ভাল’— এমন কথা মনে হয় আংশিক সত্য।

সৌমেন রায়, মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

চাষির ক্ষতি

‘সহায়তার ফাঁদ’ (২৯-৬) সম্পাদকীয় প্রসঙ্গে কয়েকটা কথা বলতে চাই। কৃষক আন্দোলনের অন্যতম দাবি ছিল কৃষিজ দ্রব্যের ন্যূনতম সহায়ক মূল্যকে (এমএসপি) আইনসিদ্ধ করা, ও উৎপাদন খরচের দেড়গুণ দাম নিশ্চিত করা। নরেন্দ্র মোদী সরকার আন্দোলনের চাপে তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে আশ্বাস দিয়েছিল, বিদ্যুৎ বিল প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু সেই আশ্বাস তাঁরা পূরণ করেননি। এমএসপি খানিকটা বাড়িয়ে দিয়ে তাকেই তাঁরা ‘উৎপাদন খরচের দেড়গুণ দাম’ বলে ঘোষণা করেছেন। এ একটা নির্লজ্জ প্রতারণা।

ধানের কথাই ধরা যাক। যথার্থ উৎপাদন খরচের দেড়গুণ দাম যদি দিতে হয়, তা হলে কমিশন ফর এগ্রিকালচারাল কস্টস অ্যান্ড প্রাইসেস-এর হিসাব অনুযায়ী দাম দিতে হবে ৩০১২ টাকা। অথচ, সরকার দাম ধার্য করল ২৩০০ টাকা, যা ৭১২ টাকা কম। একই ভাবে জোয়ার, বাজরা, মুগ ডাল, তুলো ইত্যাদি ফসলের ক্ষেত্রে দাম যথাক্রমে ১০৬৬ টাকা, ২৭৯ টাকা, ২২৭৪ টাকা ও ২২২৪ টাকা কম ধার্য করা হয়েছে। ফসলের এমএসপি বাড়ালেও, সার, বীজ, তেল, বিদ্যুতের দাম যে সরকার অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে, এবং তার ফলে চাষের খরচ যে অনেক বেড়েছে, তা বিজেপি নেতারা ধরছেন না।

সম্পাদকীয়তে খেদের সঙ্গে বলা হয়েছে, সরকার কৃষিতে এত টাকা খরচ করছে, অথচ কৃষিকে কোনও মতেই লাভজনক করা যাচ্ছে না। তার কারণ, সার, কৃষি যন্ত্রপাতি, কৃষি বিমার জন্য সরকারি ভর্তুকির টাকা ঘুরপথে বহুজাতিক সংস্থাগুলির পকেটেই যায়। সরকারি খরচ বাড়লেও কৃষকের কোনও লাভ হয় না। কৃষকদের অভিজ্ঞতা হল, এই সরকার, এই রাষ্ট্র বহুজাতিক সংস্থা ও বৃহৎ বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির ইচ্ছা অনুসারে কাজ করে। কৃষকরা যদি লাভজনক দাম পান এবং জনগণ যদি সস্তা দরে খাদ্যশস্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস সরকারি ব্যবস্থাপনায় পান, অর্থাৎ যদি সামগ্রিক রাষ্ট্রীয় বাণিজ্য চালু হয়, তা হলে এই পুঁজিপতিদের একচেটিয়া খাদ্যব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। এই ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার ক্ষমতা এই সরকারের নেই। ফলে জনগণকে প্রতারণা করা ছাড়া উপায় কী?

শংকর ঘোষ, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা

কার প্রকল্প

বর্তমানে স্কুলের নির্দিষ্ট ক্লাসগুলির পাঠ্যক্রমে ‘প্রোজেক্ট’ যোগ করা হয়েছে। নির্দিষ্ট নম্বরও ধার্য করা হয়েছে। ঠিকই যে, শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা, দক্ষতা, পরিকল্পনা-ক্ষমতা, মানসিক সক্ষমতা, বাস্তব অভিজ্ঞতা ইত্যাদি গড়ে তুলতে এই ‘প্রকল্প-কর্ম’ বেশ উপযোগী। কিন্তু সেই উপযোগিতা কি শিক্ষার্থীরা আদৌ পাচ্ছে? বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে প্রোজেক্ট বা ‘প্রকল্প’-এর নামে যা শিক্ষার্থীদের করতে দেওয়া হচ্ছে, তা বেশ সময় এবং খরচসাপেক্ষ। ফলে বাবা-মা, দাদা-দিদি, গৃহশিক্ষক তা করে দেওয়ার দায়িত্ব নিচ্ছেন। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারাও বুঝতে পারছেন যে, প্রকল্পের কাজ শিক্ষার্থীরা নিজে করছে না। তবুও স্কুল থেকে বার বার একই রকমের প্রকল্প দেওয়া হচ্ছে। ‘প্রকল্প’ তার প্রকৃত উদ্দেশ্য হারাচ্ছে। আমার মতে, শিক্ষার্থীদের এমন কিছু ‘প্রকল্প’ দেওয়া উচিত, যা তাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে, যাতে তারা নিজেরাই উৎসাহের সঙ্গে করে।

অয়ন কুমার সরকার, খড়্গপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

poor Indian Economy Financial Inequality
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE