‘নীরবতার অপরাধ’ (২১-৮) সম্পাদকীয়তে যথার্থই বলা হয়েছে যে, এই রাজ্যে নানা দুষ্কর্ম নিয়ে গত দেড় দশক ধরে রাজ্য মহিলা কমিশন যেন মৌনব্রত পালন করে যাচ্ছে। রাজ্যের অধীনে বিভিন্ন কমিশন, যেমন মানবাধিকার কমিশন, রাজ্য মহিলা কমিশন বা রাজ্য নির্বাচন কমিশন— গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এরা সবাই স্বশাসিত। এদের প্রধানের ক্ষমতা কম নয়। অথচ, তৃণমূল সরকার এই তিন কমিশনকে নিজের কুক্ষিগত করে রেখেছে। ওই তিন কমিশনের শীর্ষ পদগুলোতে বিভিন্ন সময়ে নিজেদের অনুগত আমলা বা অন্যদের বসিয়েছে। গত ৯ অগস্ট এক সুরক্ষিত সরকারি হাসপাতালে যে নৃশংস ভাবে খুন হলেন এক মহিলা ডাক্তার, তা নিয়ে বক্তব্য রাখেননি রাজ্য মহিলা কমিশন, বা মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানরা। এই ডামাডোলে অনেকেই ভুলে গিয়েছে রাজ্যের ওই দুই গুরুত্বপূর্ণ কমিশনের কথা। রাজ্যের এই কমিশনগুলোর প্রধানদের কাছে এটাই প্রত্যাশিত যে, রাজ্যের যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে, সেখানে উপস্থিত থেকে তাঁরা মানুষের দুঃখ, দুর্দশার কথা শুনবেন, তদন্ত করে সরকারকে যথাযথ পরামর্শ প্রদান করবেন।
আর জি কর কাণ্ড নিয়ে আন্দোলন যখন দেশ ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছে গেছে, তখন রাজ্য মানবাধিকার কমিশন বা মহিলা কমিশনের কাউকে দেখা যায়নি অকুস্থলে। প্রশ্ন উঠেছে, যাদের করের টাকায় বড় বড় পদের ব্যক্তিদের বেতন দেওয়া হয়, তাদের প্রয়োজনে এঁরা কোথায়? মহিলা কমিশনের পদাধিকারীরা দায় এড়ালেন, সম্ভবত তাঁদের নিয়োগকর্তাদের খুশি করতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত না হয়ে। জনমানসে খুব স্বাভাবিক ভাবেই এ নিয়ে প্রশ্ন উঠবে। এই আমলারা তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন যে আজ আর তাঁদের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি কারও নজরে আসে না।
সম্পাদক প্রবন্ধে মনে করিয়ে দিয়েছেন বাম জমানার অন্তিম লগ্নে রিজওয়ানুর মামলার কথা। মনে পড়ে যায়, সেই সময়েও মানবাধিকার কমিশন সরকারকে সতর্ক করেছিল। মমতার জমানায় পার্ক স্ট্রিট ধর্ষণ কাণ্ডে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে সওয়াল খাড়া করেছিল সরকারের কাছে এই কমিশন। তার পর থেকে এত সামাজিক অপরাধ ঘটে চলেছে, যত্র তত্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। কিন্তু মানবাধিকার কমিশন কর্তব্য পালনে ব্যর্থ। এই ভারী মাথাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখার দরকার কী, ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না।
তারক সাহা
হিন্দমোটর, হুগলি
দলীয় নয়?
‘অ-দলীয়, প্রবল রাজনৈতিক’ (২১-৮) প্রবন্ধে শতাব্দী দাশ সঠিক ভাবেই বলেছেন যে, এই বছরের স্বাধীনতা দিবসের মধ্যরাতে অনুষ্ঠিত ‘নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গের রাত দখল’ আশাতীত ভাবে সফল একটা গণআন্দোলন। আন্দোলনে যোগদানকারী সাধারণ মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতার উল্লেখ করে তিনি এটাও জানিয়েছেন, “এই আন্দোলনের মাধ্যমে সাধারণ মেয়ে ও প্রান্তিক লিঙ্গ-যৌন গোষ্ঠী সরাসরি কথোপকথন শুরু করেছে রাষ্ট্রের সঙ্গে।” তবে রাজনৈতিক আন্দোলনও অ-দলীয় হতে পারে, এই বক্তব্য আমাদের একটু পিছন দিকে নিয়ে যেতে বাধ্য করে। ২০১১ সালে অণ্ণা হজারের নেতৃত্বে ও অরবিন্দ কেজরীওয়ালের সহ-নেতৃত্বে লোকপালের দাবিতে দিল্লির রামলীলা ময়দানে যে দুর্নীতি-বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেটাও কিন্তু প্রথমে ছিল একটা অ-দলীয় আন্দোলন। সেই আন্দোলনেও মানুষের অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছিল। তার পরে যা ঘটল তা তো আজ ইতিহাস। ঘটনাক্রমে দেখা গেল মূল কান্ডারি অণ্ণা হজারে নিজেই আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ালেন এবং ধীরে ধীরে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের নেতৃত্বে ‘আম আদমি পার্টি’ নামে একটা রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হল। জন্মের অব্যবহিত পরেই, অর্থাৎ ২০১৩ সালেই সংসদীয় রাজনীতিতে যোগ দিয়ে দিল্লিতে আপ স্বল্পস্থায়ী সরকারও গঠন করে ফেলল।
এই উদাহরণের মাধ্যমে বলতে চাইছি, এখন যে গোষ্ঠীকে ‘অ-দলীয়’ মনে হচ্ছে, তা বস্তুত দলহীন নয়। বর্তমানে হয়তো তাঁদের কোনও পোশাকি নাম, পরিচিতি, বা কোনও পতাকা বা নিয়মনীতি-সম্বলিত কোনও সংবিধান নেই। তার অর্থ কিন্তু এই নয় যে, তাঁরা কোনও দলভুক্ত নয়। আর জি করের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার চেয়ে এবং নারী-সুরক্ষার প্রশ্নে ন্যায্য কিছু দাবিদাওয়া নিয়েই তাঁরা সে দিন পথে নেমেছিলেন। অর্থাৎ, কতকগুলো সাধারণ স্বার্থ বা নীতিই তাঁদের সকলকে এক মঞ্চে নিয়ে এসেছিল, যা যে কোনও রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। দলগুলিও ঠিক এই রকম ভাবেই একগুচ্ছ নীতির ভিত্তিতে জনগণকে একত্রিত হতে উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং, এই আন্দোলন একই সঙ্গে প্রবল ভাবে রাজনৈতিক এবং নীতিগত ভাবে দলীয়ও বটে। একটাই পার্থক্য যে, এ ক্ষেত্রে দলের প্রাতিষ্ঠানিক কোনও পরিচয় এখনও তৈরি হয়নি।
গৌতম নারায়ণ দেব
কলকাতা-৭৪
চাই প্রশিক্ষণ
মেয়েদের কর্মস্থলে পরিকাঠামোর অভাব এবং নিরাপত্তাহীনতা একটি গুরুতর সমস্যা, যা তাঁদের কর্মজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক কর্মস্থলে পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাব এবং নিরাপত্তার অভাবের কারণে মেয়েরা প্রায়ই হয়রানি এবং হিংসার শিকার হন। সরকারের ব্যর্থতা এই সমস্যাগুলিকে আরও তীব্র করে তুলেছে। পর্যাপ্ত নীতি এবং আইন প্রণয়ন না করা, এবং আইন প্রয়োগে ব্যর্থতা, মেয়েদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই সমস্যাগুলি মোকাবিলার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করা যায়। যেমন, কর্মস্থলে পর্যাপ্ত আলো, সিসিটিভি, এবং নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ করে পরিকাঠামোর উন্নতি। কর্মীদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং যৌন হয়রানি প্রতিরোধে প্রশিক্ষণ প্রদান করা। কর্মস্থলে হয়রানি বা হিংসার অভিযোগের দ্রুত এবং কার্যকর তদন্ত নিশ্চিত করা। এ ছাড়াও, কর্মস্থলে মেয়েদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে, তাঁদের মতামত এবং প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যেমন, কর্মস্থলের নকশা এবং বিধিনিষেধ তৈরিতে মেয়েদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেতে পারে। এ ছাড়াও, পুলিশ এবং অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির প্রশিক্ষণ এবং সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি প্রয়োজন।
সুকৃত মোদক
বোরহাট, পূর্ব বর্ধমান
ইঁদুরের জীবন
প্রহেলী ধর চৌধুরীর ‘তুমি রোখার কে’ (২৩-৮) প্রবন্ধটি সম্পর্কে কিছু কথা। কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে সরকার যে নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, তা যেন ‘পুনরায় তুমি ইঁদুর জন্ম লাভ করো’ বলার মতো। মেয়েরা ঘরেই থাক, রাতে যেন না বেরোয়। তা হলে কিসের জন্য এত লড়াই? প্রবন্ধকার ঠিক কথাই লিখেছেন, এই নির্দেশিকার ফলে মেয়েদের কাজের সুযোগ কমে যেতে পারে এবং তাঁদের গৃহকাজের সময় বেড়ে যেতে পারে। কর্মক্ষেত্রে মেয়েরা পুরুষদের সঙ্গে সমান ভাবে যুক্ত না হতে পারলে একটা দেশের সার্বিক উন্নতি হয় না। সুতরাং, রাষ্ট্র মেয়েদের সেই সুরক্ষা দিতে না পারলে মেয়েরা রাত দখলের লড়াইতে নামবেনই। মেয়েরা একটা দেশের জনসংখ্যার অর্ধেক অংশ, রাতের আকাশের উপর তাঁদের অধিকার থাকবে না কেন? অনেক দিন সমাজের রক্তচক্ষু সহ্য করা হয়েছে, আর না! সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা পাল্টানোর সময় এসেছে। শুধু তো রাতে নয়, দিনের বেলাতেও মেয়েরা বাসে, ট্রেনে, কর্মক্ষেত্রে, এমনকি পরিবারেও যৌন হেনস্থার শিকার হন। এমন কোনও মেয়ে নেই যিনি ছোট থেকে কোনও না কোনও ভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হননি। ছোটবেলা থেকেই ছেলেদের সুশিক্ষা দেওয়া উচিত, যাতে তারা মহিলাদের সম্মান করতে শেখে।
দেবযানী চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা-৮৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy