শিক্ষক।
স্বাগতম দাসের ‘সেই সব মাস্টারমশাই’ (১০-৮) শীর্ষক প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু বলতে চাই। এটা ঠিক যে, সত্তর-আশি-নব্বইয়ের দশকে স্কুল পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের কাছে স্কুলের স্মৃতি অমলিন ও সুন্দর। মাঝেমধ্যেই মন ফিরে যেতে চায় সেই ফেলে আসা জীবনে, যেখানে মাস্টারমশাই শাসন যেমন করতেন, তেমনই ভালবেসে বুকে জড়িয়েও ধরতেন। তাঁরা ছিলেন প্রকৃত ছাত্র গড়ার কারিগর। কোচিং ও প্রাইভেট টিউশনির ব্যাধি তখনও সমাজকে এ ভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেনি। যদি এমনটা হত, তা হলে অনেক দরিদ্র ঘরের সন্তান উচ্চশিক্ষার মুখ দেখত না। শিক্ষা নিয়ে এই ব্যবসায়ী মানসিকতা তখন দেখা যেত না শিক্ষকদের মধ্যে।
মনে পড়ে, বায়োলজি বই কিনতে পারিনি বলে আমার শিক্ষক তাঁর নিজের বইটা আমাকে দিয়ে দিয়েছিলেন। ক্লাসে পুরোদমে পড়াশোনা হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনে মাস্টারমশাইয়ের কাছে যাওয়া যেত এবং তাতে তাঁরা খুশি হতেন। আশির দশকে শিক্ষকদের বেতন ছিল নেহাতই কম। আর্থিক ভাবে তাঁরা দরিদ্র হলেও, মানসিকতার দারিদ্র তাঁদের এ ভাবে ঘিরে ধরেনি। ছাত্রের সাফল্যকে তাঁরা নিজের সাফল্য হিসাবে দেখতেন। মনে পড়ে, আমাদের বাংলার শিক্ষকের কথা। নৈহাটি থেকে আসতেন, এবং দমদম স্টেশন থেকে হেঁটে। কালবিলম্ব না করে ক্লাসে ঢুকে যেতেন। যে ভাবে পড়াতেন, অর্ধেক পড়া ক্লাসেই হয়ে যেত। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, অঙ্ক প্রতিটি ক্লাস নিয়মিত হওয়াটাই ছিল নিয়ম।
পদার্থবিদ্যার ছাত্র হিসাবে ভর্তি হই মণীন্দ্র কলেজে। তখন ডিফারেনশিয়াল ক্যালকুলাসের ক্লাস নিতেন অশোক মুখোপাধ্যায়। প্রায় তিন শতাধিক ছেলেমেয়ের কোলাহল তাঁর অভিনব পদ্ধতিতে নিমেষে শান্ত হলে, তিনি শুরু করতেন ক্লাস। বোর্ডে লিখতেন, ‘টকিং বয়েজ় অ্যান্ড গার্লস ক্যান নেভার আনসার মাই কোয়েশ্চন’ (এলএএমআই’স থিয়োরেম)। কলেজ ছাড়ার বেশ কিছু বছর পরে এক দিন অফিস যাওয়ার পথে দেখা পেলাম স্যরের। প্রথমে চিনতে না পারলেও, পরিচয় দেওয়ার পরে উনি খুব খুশি হয়েছিলেন। এই অমূল্য স্মৃতিগুলিই তো আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
উষ্ণায়নের জেরে
বর্তমানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সমস্যা উষ্ণায়ন। যানবাহন, কলকারখানা, বিভিন্ন ধরনের ই-বর্জ্য, প্লাস্টিক ইত্যাদি বৃদ্ধির ফলে বাতাসে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, ক্লোরোফ্লুরোকার্বন প্রভৃতি বিষাক্ত গ্যাস মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাচ্ছে। এই সব গ্যাস পৃথিবীর চার পাশে এমন এক আবরণ তৈরি করে, যা পৃথিবী থেকে জীবকুলের জীবনধারণের প্রয়োজনের অতিরিক্ত তাপকে মহাশূন্যে ফিরে যেতে বাধা দেয়। এর ফলে এই তাপ পৃথিবীর উষ্ণতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের একটি বড় কারণ গ্রিনহাউস এফেক্ট। আবার কেউ কেউ মনে করেন, প্রযুক্তির উন্নতি ও তার দ্বারা সৃষ্ট দূষণ বিশ্ব উষ্ণায়নের মূল কারণ। ১৮৮০ সাল থেকে প্রতি দশকে মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা বেড়েছে ০.০৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু ১৯৮১ সালের পর থেকে প্রতি দশকে তা প্রায় দ্বিগুণ হারে (০.১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বৃদ্ধি পেয়েছে। বিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর কারণে বার্ষিক কার্বন নিঃসরণ ১৯৬০-এর দশক থেকে প্রতি বছরে ৩০০ কোটি টন থেকে বেড়ে ২০১০-এর দশকে প্রতি বছরে ৯৫০ কোটি টনে পৌঁছেছে। নাসার তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ এবং ২০২০ হল বিশ্বের উষ্ণতম বছর। পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বেড়ে যাওয়ায় মেরু প্রদেশের বরফ গলতে শুরু করেছে। ফলে সমুদ্রের জলতল বাড়ছে। বিপদের মুখে বহু দেশের উপকূলবর্তী অঞ্চল তথা দ্বীপদেশগুলি। বারো মাসের মধ্যে আট-ন’মাস গরম। ঋতু পরিবর্তনের সময়-অসময় নেই, অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, খরা, বন্যা, অধিক বজ্রপাত, ঘূর্ণিঝড়ের মাত্রাতিরিক্ত গতিবেগ বৃদ্ধির মতো বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তায় পরিবেশবিদরা। পরিবেশের ক্ষয় রুখতে বৃক্ষনিধন রোধ, জঙ্গল বৃদ্ধির মতো পদক্ষেপগুলি করা দরকার। চাই পরিবেশ-বান্ধব উন্নয়ন। মুনাফা বৃদ্ধি নয়, ব্যক্তি মালিকানা নয়, সমাজের জন্য সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা চাই। নয়তো উষ্ণায়নের হাত থেকে মুক্তি নেই।
বিদ্যুৎ সীট, জগদল্লা, বাঁকুড়া
অযথা বিকৃতি
‘খলনায়ক’ (১১-৯) শীর্ষক পত্রটির জন্য পত্রলেখককে ধন্যবাদ জানাতে চাই। চিঠিতে আলোচ্য রকেট বয়েজ় সিরিজের প্রথমেই ‘ডিসক্লেমার’-এ লেখা হয়েছে, এই সিরিজ় বিখ্যাত বিজ্ঞানী হোমি ভাবা এবং বিক্রম সারাভাইয়ের জীবনের ভিত্তিতে রচিত, এবং তাঁদের জীবনের প্রকৃত ঘটনা দ্বারা অনুপ্রাণিত। কাহিনির প্রয়োজনে সৃজনশীল স্বাধীনতা নেওয়া হয়েছে। কিছু চরিত্র, স্থান, ঘটনা প্রভৃতি কাল্পনিক।
গোড়াতেই ধোঁয়াশা। কাহিনির ভিত্তি জীবনী কিন্তু বাস্তব ঘটনায় উদ্বুদ্ধ, বাস্তব কিন্তু কল্পকাহিনি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন ওঠে, সিরিজ়ে মেঘনাদ সাহাকে খাটো করার স্বাধীনতা কে দিলেন। এটা তথ্যচিত্র না ছবি, বোঝা যাচ্ছে না। এটা ডকু-ফিকশন হতে পারে। গণতন্ত্রের সুবাদে ফাঁকির সুযোগ বিস্তর। এখানেই মুশকিল।
আবার শিল্পের খাতিরেও ফাঁক আছে। উপন্যাস থেকে চলচ্চিত্রায়ণ, বিশেষ করে জীবনীমূলক চলচ্চিত্র নিয়ে বিস্তর বিতর্কের অবকাশ আছে। তার অন্যতম কারণ, উৎস বাস্তব জীবন হলেও সাহিত্য ও চলচ্চিত্র দুই ভিন্ন মাধ্যম। কিন্তু পত্রে পাওয়া যাচ্ছে এক মোটিভের আঁচ, যেখানে ইতিহাস বিকৃতির সন্দেহ বাড়ছে। এই সূত্রেই ভাবতে হচ্ছে পত্রলেখকের অভিযোগে মেঘনাদ সাহার ভূমিকা ও চরিত্র বিকৃতির কথা। বর্তমান শাসক রাজনীতি গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সাম্য, ন্যায় বিষয়ে যত অসহিষ্ণু হচ্ছে, অসহিষ্ণুতার কারণে দলিত, মুসলিম, কমিউনিস্ট, সাংবাদিক, ধর্মীয় গোঁড়ামি এবং কুসংস্কারমুক্ত উদারমনস্ক মানুষের প্রতি যত আক্রমণ বাড়াচ্ছে, তত ইতিহাস বিকৃতির উদ্দেশ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে সম্মিলিত প্রতিবাদ করা দরকার।
বাস্তবে তিন ভিন্ন পারিবারিক আবহে গড়ে ওঠা হোমি ভাবা, বিক্রম সারাভাই ও মেঘনাদ সাহা যথাক্রমে পরমাণুশক্তি, মহাকাশবিজ্ঞান ও পরমাণুবিজ্ঞান— পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণার তিন দিকে স্বাধীনতা-উত্তর ভারতে বিজ্ঞানের উন্নতির পথপ্রদর্শক ছিলেন। এঁদের তিন জনের মধ্যে ব্যক্তিগত হিংসার কথা শুনিনি। ভারতের স্বাধীনতার জন্য বল্লভভাই পটেল, জওহরলাল নেহরু, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, গান্ধীজির মত ও পথেও অনেক পার্থক্য ছিল। তা সত্ত্বেও এঁরা পরস্পরকে শ্রদ্ধা করতেন। মেঘনাদ সাহার ব্যাপারে সাবধান ও সতর্ক হওয়া দরকার ছিল, যে-হেতু তিনি ফলিত বিজ্ঞানের সঙ্গে বিজ্ঞানকে রাষ্ট্র ও জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে নিয়োজিত করার ক্ষেত্রে উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে গিয়েছেন।
এখন ওয়েব সিরিজ়ে ক্রাইম থ্রিলারের বিপুল চাহিদা, সেখানে এক জনকে খলনায়ক করতেই হয়। কিন্তু এ ভাবে খলনায়ক করা হলে শিল্প (আর্ট ও ইন্ডাস্ট্রি দুই অর্থে) তো বটেই, সিরিজ়ে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানমনস্কতা, দুইয়ের অভাব থেকে যায়।
শুভ্রাংশু কুমার রায়, চন্দননগর, হুগলি
বাসভাড়া
বেসরকারি বাসে কন্ডাক্টর বনাম যাত্রীদের ঝগড়ার বেশির ভাগ কারণ মনে হয় সঠিক ভাড়া। দু’টি প্রান্তিক স্টপ নিয়ে অতটা না হলেও মাঝের স্টপগুলির ভাড়া নিয়েই যত সমস্যা হয়। আগে যাত্রী ভাড়ার চার্ট বাসে টাঙানো থাকত। যদিও সেগুলি থেকে সঠিক ভাড়া বার করা ছিল কষ্টকর। এখন সেগুলিও আর বিশেষ দেখা যায় না। সহজবোধ্য এবং স্পষ্ট অক্ষরের ভাড়ার তালিকা আবার যাতে বাসযাত্রীরা দেখতে পান, তার ব্যবস্থা করার জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানাই।
অমিতাভ সরকার, কলকাতা-৩৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy