দেবাশিস ভট্টাচার্যের “‘চাপ’-এর উৎস কোথায়” (১৯-১২) সময়োচিত প্রবন্ধ। আর জি করের ঘটনার বিচার হবে— এ আশা করেছিলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসক থেকে রাজ্যের নাগরিক সমাজের প্রতিভূরা। আশা ছিল বলেই রাজ্যের বিভিন্ন স্তরের মানুষদের রাতের রাস্তা দখল থেকে লাগাতার আন্দোলনে শামিল হতে দেখা গিয়েছিল। রাজনীতির ঘেরাটোপের বাইরে এ রকম জমায়েত অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ও প্রতিরোধে পথে নেমে সরব হতে মানুষকে উজ্জীবিত করেছিল। কিন্তু তদন্তের গতি-প্রকৃতি মানুষকে কিছুটা হলেও আশাহত করেছে। আশাহত করেছে নির্যাতিতার মা বাবাকে। তবে কি সুবিচার অধরাই থেকে যাবে? বিচারব্যবস্থার প্রতি যদি সাধারণ মানুষের আস্থা সরে যায় তা হলে কি আর মানুষকে দোষ দেওয়া যাবে? বিকাশ ভট্টাচার্য মামলা লড়ছিলেন, হঠাৎ মক্কেলপক্ষ মামলা তাঁকে ছেড়ে দিতে বলেন। কেন ছেড়ে দিতে বলা হল তাও বোঝা গেল কি? বৃন্দা গ্রোভার সুপ্রিম কোর্ট এবং শিয়ালদহ কোর্টে সতীর্থদের নিয়ে বিকাশবাবুর মতোই বিনা পারিশ্রমিকে লড়ছিলেন। হঠাৎ তিনিও সরে দাঁড়ালেন কেন? পরিস্থিতির চাপে, কোনও হস্তক্ষেপের কারণে? কোথা থেকে চাপ আসছে, কেন পরিস্থিতির এই পরিবর্তন— বোঝা গেল না। ঢাকঢোল পিটিয়ে যে সিবিআইকে ঘটনার তদন্তভার দেওয়া হল, তার ফল কী হল?
প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ থাকার পরেও যে তথ্য আন্দোলনরত ডাক্তারদের তরফ থেকে সিবিআই-এর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল এবং এত দিন তদন্তে যা যা উঠে এল, সেটা কি একটা চার্জশিট পেশ করার পক্ষে যথেষ্ট নয়? ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজ্য সরকার যার দিকে অভিযুক্ত বলে অঙ্গুলি নির্দেশ করল, অনেক ঢক্কানিনাদের পর দেখা গেল শেষ পর্যন্ত তাতেই সিলমোহর দিল সিবিআই। অন্য দিকে শোনা যাচ্ছে, এ-হেন কাণ্ড এক জনের পক্ষে ঘটানো অসম্ভব বলেই ডাক্তারদের মত। তবে অন্যেরা সিবিআই-এর জাল কেটে বেরিয়ে গেল কী করে! এত বড় পেশাদারি সংস্থার কি এটা ইচ্ছাকৃত ভুল, না কি রাজনৈতিক প্রভুদের অঙ্গুলিহেলনেই এমন করে সাজানো হল? সবটাই যেন মেঘাচ্ছন্ন, আলো কবে দেখব? তদন্তের পিছনে এক বা একাধিক বাজিকরের কুশলী হাতের সূক্ষ্ম পরশ রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যেন পুতুল-নাটিকা চলছে কোনও!
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা
রহস্যময়
দেবাশিস ভট্টাচার্য “‘চাপ’-এর উৎস কোথায়” প্রবন্ধে সম্প্রতি আর জি কর মামলায় অন্যতম দুই অভিযুক্তের জামিনের কারণ প্রসঙ্গে লিখেছেন। দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে একাধিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও নব্বই দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল করতে অসমর্থ হওয়ায় আরও এক বার সিবিআই-এর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের সামনে দাঁড়াল। নির্যাতিতার হয়ে মামলায় আইনজীবীর না দাঁড়ানো, পরে দাঁড়ালেও তার পরিবর্তন বা মামলা থেকে আইনজীবী সরে আসার পিছনে কোথাও যে রাজনৈতিক হুমকি, চাপ কাজ করেছে তেমন সংশয়ের কথায় অধিকাংশ সুবুদ্ধিসম্পন্ন নাগরিক লেখকের সঙ্গে সহমত হবেন।
দেশের কোথাও না কোথাও যে নিয়মিত ভাবে নারী-নির্যাতন, ধর্ষণ বা হত্যা ঘটে চলেছে, তার মধ্যে কতগুলিতে মানুষ প্রতিবাদ করেন বা করছেন? কিন্তু আর জি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে আমরা কী দেখলাম? সর্বস্তরের কোটি কোটি মানুষ রাজ্যে, দেশে, এমনকি বিদেশে যে ভাবে রাতদিন এক করে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন, তা এক কথায় অভূতপূর্ব। বিচার চাই, সুরক্ষা চাই বলে শাসক ও শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে সরব হওয়া বাঁধভাঙা জনস্রোত থামাতে কি কোনও এক গুপ্ত আঁতাঁত বা রাজনৈতিক চাপের কারণেই নির্যাতিতার সুবিচার এখনও মিলল না? কোটি কোটি মানুষ এই পরিণতিতে স্তব্ধ, স্তম্ভিত, এবং চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। সত্যিই পুরো বিষয়টা অতি রহস্যময় বলেই মনে হচ্ছে।
মানুষ ধরে নিয়েছিলেন, এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর দুই প্রধান অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ যে দিকে নির্দেশ করেছিল, সেগুলির কারণে দোষীদের শাস্তি অনিবার্য। কিন্তু ঘটনাচক্রে সেখানে ন্যূনতম শাস্তিও হল না! উল্টে জামিন হয়ে গেল। আর সেই জামিনের ঠিক পরেই তাই শাসকের শাসনব্যবস্থা ও দেশের বিচারব্যবস্থায় আস্থা হারিয়ে মানুষ আবারও প্রতিবাদের রাস্তায় ফিরতে চাইছেন। কারণ মানুষ জানেন এই ঘটনায় চুপ করে গেলে রাজনৈতিক দলগুলির কর্তৃত্বে থাকা রাজ্য বা দেশের শাসনব্যবস্থায় নারীদের বিপদ ও অবিচার ক্রমশ বাড়তেই থাকবে।
স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০
পৃথক ফল
“‘চাপ’-এর উৎস কোথায়” প্রবন্ধ প্রসঙ্গে জানাই রাজ্যবাসীর জন্য বিস্ময়কর ও দুর্ভাগ্যসূচক সময় চলছে। রাজ্যবাসীর মনে প্রশ্ন জাগছে, ৯০ দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পরও দেশের সেরা তদন্ত সংস্থা হিসাবে বর্ণিত সিবিআই মূল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোর্টে চার্জশিট পেশ করতে পারল না কেন? এই রাজ্যেরই অন্য প্রান্তে জয়নগর ও ফরাক্কায় নাবালিকা খুন ও ধর্ষণের ঘটনার তদন্তে নেমে রাজ্য পুলিশ দু’মাস সময়ে চার্জশিট পেশ করেছে, শেষে অপরাধীদের বিচারে ফাঁসির কাঠের ব্যবস্থাও হয়েছে। সেখানে আর জি করের একই ধারার ঘটনায় সিবিআই চার মাসেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বহু তথ্যপ্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চার্জশিট পেশ না করে, প্রকৃত অপরাধীদের ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে কেন? তা হলে কি বলা যায় না, সিবিআই-এর এই ব্যর্থতা রাজ্যে লালিত হুমকি সংস্কৃতি ও বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ?নাগরিক সমাজ ও জুনিয়র ডাক্তাররা এই ঘটনার বিচার ত্বরান্বিত করতে নিশ্চয়ই নতুন পদক্ষেপ করবেন, সেটুকুই আশা।
তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
কাগুজে বাঘ
“‘চাপ’-এর উৎস কোথায়” প্রবন্ধ প্রসঙ্গে জানাই, সিবিআই নামক সংস্থাটির হাতে দায়িত্বভার দিলে এক সময় ন্যায্য বিচার আসবে ভেবে সাধারণ মানুষের মনে আস্থা জন্মাত। দেখা যাচ্ছে, সেই ভরসা আজ তলানিতে ঠেকেছে। তার সঙ্গে এও স্বীকার করতে হবে যে, বেশ কয়েকটি ঘটনায় সুবিচার দিতে না পারায় বর্তমানে এই সংস্থাটি নিতান্তই একটি কাগুজে বাঘে পরিণত হয়েছে।
যদি উপরতলার চাপে পড়ে সিবিআই তাদের তদন্তের গতিমুখ ভিন্ন পথে পরিচালিত করে, তথ্য জানাতে আগ্রহী না হয়, তা হলে একটি গণতান্ত্রিক দেশে শেষ বিচারের আশায় বসে থাকা সাধারণ মানুষেরা যাবেন কোথায়? ভরসা করবেন কাদের উপর? আমরা চাই, নতিস্বীকার না করে আর জি করের কাণ্ডে এ-যাবৎ সংগৃহীত সমস্ত তথ্যপ্রমাণ আদালতে পেশ করুক সিবিআই। তা যদি না হয়, তা হলে মানুষ হতাশ হবেন ঠিকই, তার সঙ্গে সিবিআই নামের একদা দাপুটে সংস্থাটিও কৌলীন্য হারাবে।
সমীর কুমার ঘোষ, কলকাতা-৬৫
পৌষের শীত
কেটে গেল জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ। কিন্তু বাংলায় হাড় কাঁপানো ঠান্ডা কই? ডিসেম্বরেও শীতের সেই দাপট ছিল না। কবির কথায়, “পৌষের প্রত্যুষে দেখি চারিদিক ঢেকে আছে ঘন কুয়াশার আবছা ছায়ায়, ঝাপসা চাদরে।” পৌষ মাসে কোথাও কোথাও কুয়াশা জমলেও গাঙ্গেয় বঙ্গে শীতের চেনা ছবি এ বছর অনেকটাই ম্লান। পশ্চিম ভারতে একের পর এক হাজির হয়ে চলেছে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা। সেখানে বৃষ্টি হচ্ছে, উত্তুরে হাওয়া বাধা পাচ্ছে। শীতকালে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা নতুন নয়, কিন্তু এ বছর এর প্রবণতা আগের চেয়ে বেশি। কারণ অনেক কিছু হতে পারে। তবে পশ্চিমি ঝঞ্ঝা কেটে গেলে পারদ নিম্নমুখী হতে পারে, আশা রাখছি।
উৎপল মুখোপাধ্যায়, চন্দননগর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy