অশোক কুমার লাহিড়ী ‘প্রতিশ্রুতির বিপদ’ (২০-১২) প্রবন্ধে তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে হিমাচলপ্রদেশ, তেলঙ্গানা আর কর্নাটকের বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। লক্ষণীয়, এই রাজ্যগুলিতে কেন্দ্রীয় শাসক দলের বিরোধী জোট ক্ষমতাসীন। মধ্যপ্রদেশ বা মহারাষ্ট্রে মহিলাদের জন্য ঢালাও অর্থ বিলির প্রকল্পে ভর করে নির্বাচনী বৈতরণি পার করার যে প্রয়াস বিজেপির পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল সে বিষয়ে লেখক নিশ্চুপ। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ক্ষমতায় এলে মহিলাদের বা আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণির মানুষদের জন্য যে আরও বেশি অনুদানের ব্যবস্থা করা হবে— বাংলার বিজেপি নেতাদের এই ধরনের উক্তিরও উল্লেখ নেই।
লেখক খুব সঙ্গত কারণেই অনিয়ন্ত্রিত সরকারি ব্যয়ের সমালোচনা করেছেন। সমাজের অন্য প্রান্তের মানুষদের প্রতি কিছু ঔদার্যের নমুনাও এই পরিপ্রেক্ষিতে উল্লেখ করা উচিত। গরিবদের ব্যাঙ্ক ঋণ মকুব নিয়ে অনেক প্রশ্নই তোলা হয়, পাশাপাশি শিল্পপতি বা প্রতিষ্ঠিত মানুষদের ঋণ মকুবের তথ্য না জানলে সরকারি খয়রাতির চিত্রটা অসম্পূর্ণ থাকে।
ভারতীয় রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছে, গত তিন অর্থবর্ষে মোট ৫৮৬৮৯১ কোটি টাকার সম্পদ মুছে ফেলা হয়েছে, যার মধ্যে উদ্ধার করা সম্পদের পরিমাণ মাত্র ১০৯১৮৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট মুছে ফেলা সম্পদের মাত্র ১৮.৬ শতাংশ। ব্যাঙ্কের এই অনুৎপাদিত সম্পদ অনেক কম দামে দেউলিয়া বিধি বা জাতীয় কোম্পানি আইন ট্রাইবুনাল সমাধান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্য শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিল্পপতিদের যে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হচ্ছে সেটাও কি এক ধরনের খয়রাতি নয়? অতি ধনিক শ্রেণির (বছরে পাঁচ কোটির বেশি আয়) ট্যাক্স সারচার্জের হার এক ধাক্কায় ৩৭ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে ফেলা হল। একে কি আমরা অনুদানের পর্যায়ে ফেলতে পারি না?
দেশের মাত্র ১ শতাংশ মানুষের কাছে আছে ৪০ শতাংশ সম্পদ আর ১ শতাংশ মানুষের আয় দেশের মোট আয়ের ২২.৬ শতাংশ। গত দশ বছরে অবনমনের হার অনেক বেড়েছে। করোনার সময়ে যখন মানুষের আয় নিম্নগামী হয়েছে সেই সময়েও বিত্তশালীদের আয় এবং সম্পদ দুই-ই ঝড়ের গতিতে ঊর্ধ্বগামী। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে তাই কেবল গরিব মানুষদের দেওয়া সরকারি সাহায্যের সমালোচনা করা ঠিক নয়।
তড়িৎ দাস, কলকাতা-৬
বিপদ দেশ জুড়ে
অশোক কুমার লাহিড়ী ‘প্রতিশ্রুতির বিপদ’ প্রবন্ধে বিবিধ রাজনৈতিক দল এবং তাদের নেতারা বহুজন হিতায় কাজ করতে যে সর্বদাই উদ্গ্রীব বলে মন্তব্য করেছেন, সেই বিষয়ে সম্পূর্ণ সহমত পোষণ করা গেল না। রাজনৈতিক দল না বলে, নির্বাচিত সরকার ও মন্ত্রিসভা বলা উপযুক্ত বলে মনে হয়।
সরকারের খয়রাতি প্রকল্পে এমন ভাবে প্রচার করা হয়, যেন সরকার নয়, মানুষ সুবিধা ভোগ করছেন ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের কাছ থেকেই। সম্ভবত কয়েক দশক আগে তামিলনাড়ু সরকারের দু’টাকা কিলো চাল দেওয়া থেকে এই প্রবণতার শুরু, পরবর্তী সময়ে বেকার ভাতা প্রদান, নগদ হস্তান্তর থেকে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ বা স্কুটার প্রদানেও সেই প্রথাই চলছে। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোয় ব্যাপক হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি না করতে পারলে, অনুদানমূলক প্রকল্পের যে প্রয়োজনীয়তা আছে, তা অনস্বীকার্য। দুঃখের বিষয়, চটজলদি জনপ্রিয়তা লাভের উদ্দেশ্যে, দ্বিতীয়টিকেই প্রধান পথ হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে সর্বত্র। এই অনুদান প্রকল্পগুলি সর্বসাধারণের জন্য নয়, তবুও দেখা যায় রাজনৈতিক লাভের উদ্দেশ্যে কোনও সরকারই এই ধরনের সহায়তা শুধুমাত্র প্রকৃত গরিব মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে না। আর্থিক ভাবে সবল মানুষ অনুদানের সুযোগ নিচ্ছেন, যেমন আবাস যোজনায় নাম উঠছে দোতলা বাড়ির মালিকেরও। সুতরাং এই সব ক্ষেত্রে খরচের সীমা মাত্রা ছাড়িয়ে বহু দূর চলে যায়, যা কোষাগারের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য মোটেই উচিত নয়। স্বাভাবিক ভাবেই শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও পরিকাঠামোর মতো অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চরম অবহেলিত হয়।
আমাদের দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও পরিবহণ বা কৃষি ঋণ মকুবের মতো ‘খয়রাতি প্রকল্প’ নিয়ে রাজ্যগুলোকে সম্প্রতি সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক। তাই এই মুহূর্তেই এই ধরনের সমস্ত খয়রাতি ও অনুদান প্রকল্পে রাশ না টানতে পারলে সমগ্র দেশ জুড়েই সমূহ বিপদ আসন্ন।
অশোক দাস, রিষড়া, হুগলি
চিহ্নিত করুন
অশোক কুমার লাহিড়ীর ‘প্রতিশ্রুতির বিপদ’ প্রবন্ধটি বাস্তবসম্মত। এই জনমোহিনী প্রকল্পের প্রতিশ্রুতিতে হাতে গরম ফলও পেয়েছে কিছু রাজনৈতিক দল। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তার অন্যতম। এই পরিকল্পনা এবং নগদ অর্থ প্রদানের সরাসরি সমালোচনা সাজে না। কিন্তু আর্থিক দিক থেকে সক্ষম পরিবার, চাকরিজীবী মহিলা এমনকি স্বামীরা সরকারি চাকরিজীবী হওয়া সত্ত্বেও অনেকে সুবিধাগুলি নিচ্ছেন। ফলে প্রচুর পরিমাণে টাকা রাজ্যগুলির কোষাগার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। তাই খোলা বাজার থেকে প্রচুর ঋণ নিতে হচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলির ভ্রুক্ষেপই নেই।
রাজ্যে শিল্প নেই, কলকারখানা নেই, চাকরি নেই। অথচ ঝড়ের গতিতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিদ্যুৎ বিল, জীবনদায়ী ওষুধ, জ্বালানির দাম বাড়ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ধ্বস্ত। শুধু ভোটব্যাঙ্কের লক্ষ্যে ধনী-দরিদ্রদের মিলেমিশে একাকার করে দিয়ে ভোটের বৈতরণি পার হলেই হয় না, আর্তদের চিহ্নিত করে তাঁদের সুযোগসুবিধা দেওয়াটাও সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এতে সরকারের খরচের পরিমাণটাও কমবে আর উন্নয়নমূলক কাজ করতেও সুবিধা হবে।
স্বপন আদিত্য কুমার বিশ্বাস, অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
উপার্জনের পথ
অশোক কুমার লাহিড়ীর ‘প্রতিশ্রুতির বিপদ’ প্রবন্ধ প্রসঙ্গে কিছু কথা। দারিদ্রসীমার নীচে চিহ্নিত পরিবারগুলির আর্থসামাজিক উন্নয়নে জেলাস্তরে কাজ করেছিলাম। অর্থের জোগান আসত কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার থেকে। বলা হত আর্থ-সামাজিক ভাবে অনগ্রসর পরিবারগুলিকে প্রধানত অর্থকরী কাজকর্মের প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎপন্ন সামগ্রীকে বাজারে পাঠাতে হবে। কাঁচামালের আমদানি এবং পণ্যকে বাজার-উপযুক্ত করতে সরকারি উদ্যোগ ছিল। গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র পরিবার শনাক্তকরণের জন্য তাদের বর্তমান অবস্থার তল্লাশি হত। পরে অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে পরিবারগুলির খরচ করার সূচকের হিসাব ধরে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারগুলির চিহ্নিতকরণ চালু হল। প্রকল্পটির নাম ইন্টিগ্রেটেড রুরাল ডেভলপমেন্ট প্রোগ্রাম (আইআরডিপি)। আশি ও নব্বইয়ের দশকে প্রকল্পটি গতিশীল ছিল। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার অগ্রাধিকার তালিকায় প্রকল্পটি জায়গা পেল না।
রাজ্যের লক্ষ্মীর ভান্ডার, স্মার্ট ফোন প্রদান, বিবাহের খরচ দেওয়া ইত্যাদি প্রকল্পগুলি নিয়ে লেখকের মন্তব্য মানতে পারলাম না। এই প্রকল্পগুলি তো ফলপ্রসূ হয়েছে। অন্যান্য রাজ্যও একই পথ অনুসরণ করেছে। তবে এ কথা মানতেই হবে অনুদানের তুলনায় স্বোপার্জন অবশ্যই মানসিক পরিতৃপ্তি আনে। আইআরডিপি-র বাৎসরিক সবলা মেলা আজও রাজ্য সরকারের চেষ্টায় চলছে। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের শিল্পীরা তাঁদের সামগ্রী বেচাকেনা করে লাভের মুখ দেখেন। একটাই প্রশ্ন। এখন তো পঞ্চায়েত-ব্যবস্থা অনেক পরিণত। আইআরডিপি-র কাজকর্মগুলি কি আবার চালু করে মানুষকে স্বনির্ভর করা যায় না?
সুবীর ভদ্র, কলকাতা-১৫১
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy