Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

মনসা কাহিনি

তমোনাশচন্দ্র দাশগুপ্তের সম্পাদনায় নারায়ণ দেবের ‘পদ্মাপুরাণ’ প্রকাশকাল ১৯৪২, আর বিনয়তোষ ভট্টাচার্যের ‘দি ইন্ডিয়ান বুদ্ধিস্ট আইকনগ্রাফি’ গ্রন্থের প্রথম প্রকাশ ১৯২৪ সালে।

মনসা পুজো।

মনসা পুজো।

শেষ আপডেট: ৩০ অগস্ট ২০১৯ ২৩:৫৭
Share: Save:

‘বন্দুক দ্বীপের পাঁচালি’ (রবিবাসরীয়, ১৬-৬) প্রবন্ধে গৌতম চক্রবর্তী তমোনাশচন্দ্র দাশগুপ্তের সম্পাদনায় নারায়ণ দেবের ‘পদ্মাপুরাণ’-এর সম্পাদকীয় মন্তব্যের উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মনসার উদ্ভব শুধুমাত্র বাংলাতেই নয়। এর উদ্ভব ও প্রসার প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে বেদ-পুরাণ পার হয়ে পূর্বভারতে (অসম, বাংলা, ওড়িশা, বিহার এবং উত্তরপ্রদেশের কিয়দংশে)।

তমোনাশচন্দ্র দাশগুপ্তের সম্পাদনায় নারায়ণ দেবের ‘পদ্মাপুরাণ’ প্রকাশকাল ১৯৪২, আর বিনয়তোষ ভট্টাচার্যের ‘দি ইন্ডিয়ান বুদ্ধিস্ট আইকনগ্রাফি’ গ্রন্থের প্রথম প্রকাশ ১৯২৪ সালে। সেখানে শ্রীভট্টাচার্য বৌদ্ধ দেবী জাঙ্গুলি থেকে মনসার উৎপত্তির কথা বলেছেন। বলা হয়ে থাকে জাঙ্গুলি বুদ্ধের মতোই প্রাচীন। এই প্রসঙ্গে সরস্বতী ও ব্রহ্মা বা শিব ও মনসা সংক্রান্ত কাহিনি স্মর্তব্য— যার উৎস ঋগ্বেদের দশম মণ্ডলের ৬১ সূক্তে ৫-৭ ঋকের রুদ্র ও উষার কাহিনি।

জৈন ধর্মেও মনসা কাহিনি প্রচলিত। সেখানে তিনি পদ্মাবতী, যিনি জৈন ধর্মের তেইশতম তীর্থঙ্কর পার্শ্বনাথের সাধনকালে তাঁকে রক্ষা করেছিলেন। অন্য রক্ষা কর্তা ছিলেন ধরণেন্দ্র। পরবর্তীতে এই পদ্মাবতী জৈন ধর্মের মুখ্য দেবীতে পরিণত হন।

সুতরাং মনসাকে নিতান্ত বঙ্গীয় সর্পসঙ্কুল পরিবেশে উদ্ভূত এক দেবী হিসেবে দেখা ভুল। কৌটিল্য তাঁর অর্থশাস্ত্রে জাঙ্গুলি বিদ্যাবিদ বা বিষবৈদ্যের নিদান দিয়েছেন, সাপে কাটা রোগীর চিকিৎসায়। এমনকি অশ্বের বিষক্রিয়ার ক্ষেত্রেও (প্রথম খণ্ড ত্রিংশ অধ্যায় এবং দ্বিতীয় খণ্ড তৃতীয় অধ্যায়)। সপ্তম শতকের বাণের ‘হর্ষচরিত’-এ জাঙ্গুলিক বা বিষ চিকিৎসকের উল্লেখ পাওয়া যায়, যার বিধান কৌটিল্য তৃতীয় বা চতুর্থ শতকেই দিয়ে গিয়েছিলেন।

ভগিনী নিবেদিতা ও অানন্দ কুমারস্বামী ‘মিথস অব দ্য হিন্দুজ় অ্যান্ড বুদ্ধিস্টস’ গ্রন্থে মনসা কাহিনিকে তুলনা করেছেন Mykenean Stratum on Asiatic Culture-এর সঙ্গে (১৯৮৭, লন্ডন)। শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ই সি ডিমক-ও ‘মনসা, গডেস অব স্নেকস’-এ এই রকম মত পোষণ করেছেন।

সুতরাং মনসা এবং তার উদ্ভবকে একটা নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে ভাবলে তা হবে খণ্ডিত। পূর্ণাঙ্গরূপে প্রতিভাত করার জন্য দরকার অনুসন্ধানের আরও ব্যাপ্তি।

পোস্ত


‘‘খায় পুস্তু মারে ঘুম /এই নিয়ে বীরভূম।’’ পোস্ত বাঙালির প্রিয় খাবার। ভাতের সঙ্গে একটু পোস্ত না হলে চলে না। বীরভূম, বর্ধমান, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া তথা গোটা পশ্চিমবঙ্গের গরিব মানুষগুলো পোস্ত খাওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। ধনীদের মাঝে মধ্যে পোস্ত রকমারি খেতে দেখা যায়। এর বাজার-মূল্য আকাশ ছোঁয়া। মূলত ১২০০-১৪০০ টাকা কিলো। সত্তরের দশকের শেষ দিকে বা আশির দশকের প্রথম দিকে পোস্তর দর ছিল ছ’টাকা থেকে ১০ টাকা কিলো। আমি গ্রামের ছেলে। গ্রামের দোকানে গরিব মানুষেরা এসে বলতেন, ‘‘ওগো দুকানি, ১০ পয়সার পুস্তু দেও, তাড়াতাড়ি দেও গো, বাবুদের ধান পুঁততে যেতে হবে।’’ পোস্ত বেটে নিয়ে, ভাত মাথায় করে বাবুদের ধান পুঁততে চলে যেতেন। দোকানি ১০ পয়সায় এক খাবল হাতে তুলে কাগজে মুড়ে দিতেন। মাঝে মধ্যে খদ্দেররা বলতেন, ‘‘দুকানি কী ঠুঁটা!’’ তাই শুনে আবার কাগজ খুলে হাত ঝেড়ে দিতেন দোকানদার।
গৌর গোপাল সরকার
নতুন হাসপাতাল, বীরভূম

রোবট ৩.০


অধুনা বহু আইসিএসসি ও সিবিএসসি বোর্ডের স্কুলে বাংলায় কথা বলা নিষিদ্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। ভুবনগ্রামের প্রয়োজনে অনেকে তাঁদের সন্তানদের পাঠ্য বিষয়গুলি ইংরেজিতে শেখানোর তাগিদ অনুভব করেন ঠিকই, কিন্তু বন্ধুর সঙ্গে আনন্দ, বিষাদ, উৎসাহ ভাগ করে নেওয়ার যে স্বাভাবিক প্রবণতা, তার প্রকাশ যদি টিফিনবেলায় দুই বন্ধুর মাতৃভাষায় কথোপকথনে হয়, তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের সেখানে বাধা দেওয়া অযৌক্তিক। এ নিয়ম এক অন্যায় ভাষা-আগ্রাসনও বটে। দ্রুত হ্রাসমাণ মাঠের মফস্সল-শহরে স্কুলের বন্ধুরাই এখন একমাত্র বন্ধু। ক্লাসের পর ক্লাসের ফাঁকে, পড়ে-পাওয়া চোদ্দো সেকেন্ডে যদি প্রাণের বন্ধুর সঙ্গে মনের ভাষায় দুটো ঠাট্টা করার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় সিসিটিভি ক্যামেরা, তবে পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো হয়ে উঠবে রোবট ৩.০!


শোভন সেন
সাঁতরাগাছি, হাওড়া

কাটমানি চা

সকাল দশটায় নিউ টাউন যাব বলে চিংড়িঘাটায় নামলাম আমি আর গিন্নি। দু’জনেই সিনিয়র সিটিজ়েন। সারি সারি হলুদ ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে, জিজ্ঞাসা করলাম, ‘‘নিউ টাউন যাবেন?’’ পাশে চায়ের দোকানে দু’জন পুলিশ আর এক ভদ্রলোক চা খাচ্ছিলেন। বললেন, ‘‘যাব, তবে দেড়শো টাকা লাগবে।’’ আমি বললাম, ‘‘কেন, মিটারে যাবেন না?’’ বললেন, ‘‘আমরা মিটারে যাই না।’’ আমি বললাম, ‘‘পাশে পুলিশ দাঁড়িয়ে, এ কথা বলার সাহস হচ্ছে কী করে?’’ এ বার পুলিশ সেই ভদ্রলোককে বললেন, ‘‘অ্যাই, তোকে বলেছি না, সামনাসামনি করবি না? ও-পাশে গিয়ে খদ্দেরের সঙ্গে কথা বল।’’ আমি সব বুঝে সরে এলাম। আমার গিন্নি বললেন, ‘‘চা দুটো নিশ্চয়ই কাটমানি!’’


রঞ্জন মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৪৭

আগে রেপ্লিকা


‘‘ঘুষ নিতে গিয়ে ধৃত ‘সেরা কনস্টেবল’’’ (১৮-৮) শীর্ষক সংবাদ পাঠে কৌতুক অনুভব করা গেল। তেলঙ্গানার পুলিশকর্মী তিরুপতি রেড্ডি স্বাধীনতা দিবসে ‘সেরা কনস্টেবল’ পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছিলেন। পরের দিনই ঘুষ নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়েন। তবে এই ঘটনা অভিনব নয়, ইতিপূর্বে বেশ কিছু নজির সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে পাঠকের জানা। আদিবাসী সাংবাদিক সোনি সোরির ওপর পুলিশ লক-আপে যৌন অত্যাচার চালানোর দায়ে অভিযুক্ত আইপিএস অঙ্কিত গর্গ রাষ্ট্রপতি পুরস্কারে সম্মানিত হন। তহলকাখ্যাত তেজপাল বা পঞ্জাব পুলিশ ডিজি কে পি এস গিলের সম্মান প্রাপ্তি ও যৌন হেনস্থার দায়ে অভিযুক্ত হওয়ার ঘটনা মনে পড়ে। কাশ্মীরে বেআইনি অনুপ্রবেশ রোধে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে (জিপের সামনে বেঁধে মানব-বন্ধন খ্যাত) আর্মি প্রধানের ‘কমেন্ডেশন কার্ড’ পেয়েছিলেন মেজর গগৈ। কিছু দিনের মধ্যে শ্রীনগর হোটেলে নাবালিকার সঙ্গে যৌন সংসর্গের দায়ে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। ময়নাগুড়ির হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সিল ভেঙে মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র নিজের স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে বিলি করার অভিযোগে শিক্ষাজগতে আলোড়ন পড়েছিল। ওই প্রধান শিক্ষক বছরখানেক আগেই শিক্ষারত্ন সম্মান পেয়েছিলেন। আর ডোপিং-এর দায়ে খেলোয়াড়দের পদক কেড়ে নেওয়ার নজির তো ভূরি ভূরি। তাই একটা প্রস্তাব: সরাসরি সম্মানিত করার আগে বরং রেপ্লিকা দিয়ে ‘প্রভিশনাল’ পদক দেওয়া চালু করা হোক। প্রোবেশন পিরিয়ড শেষে না-হয় কনফার্মেশন দেওয়া যাবে!


সরিৎশেখর দাস
সুকান্ত সরণি, ব্যারাকপুর

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

ভ্রম সংশোধন

তাঁদের প্রতিবাদের ভাষা’ (৩০-৮, পৃ ৪) উত্তর-সম্পাদকীয় প্রবন্ধের শিরোনামে লেখা হয়েছে ‘‘মিঞা কবিদের গ্রেফতার বলে দেয়, অসমের জনসমাজ কত বিপন্ন’’। বাস্তব হল, এই কবিদের বিরুদ্ধে এফআইআর রুজু করা হয়েছে— তাঁদের গ্রেফতার করা হয়নি।

‘‘তরুণীকে ফের ‘অশ্লীল’ মন্তব্য’’ শীর্ষক প্রতিবেদনে (৩০-৮, কলকাতা, পৃ ১৩) রাজ্যের মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী লেখা হয়েছে। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Goddess Manasa Buddhism Jainism Cut Money
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy