রাডিয়ার্ড কিপলিং খুব অপছন্দ করতেন কলকাতা শহরটাকে। ‘আ টেল অব টু সিটিজ’ (১৮৮৭) কবিতায় বর্ণনা করেছিলেন কলকাতার জন্ম-বৃত্তান্ত: ‘...গ্রু আ সিটি/ অ্যাজ দ্য ফাঙ্গাস স্প্রাউটস কেঅটিক ফ্রম ইটস বেড,/ সো ইট স্প্রেড—/ চান্স-ডিরেক্টেড, চান্স-ইরেক্টেড,...।’ একশো ত্রিশ বছর পরে কলকাতা ছাড়িয়ে রাজ্যের প্রায় সব মফস্সল শহর, আধা-শহরের জনবসতি বেড়ে উঠছে পরিকল্পনাহীন, নিয়ন্ত্রণহীন। ছত্রাকের মতো যেখানে-সেখানে যেমন-তেমন গজিয়ে উঠছে বহুতল বাড়ি। অথচ পথ রয়ে গেছে অপরিসর, নিকাশি ব্যবস্থা অপ্রতুল। অপরিসর পথে যান-চলাচল বিপজ্জনক ভাবে বেড়ে গেছে বহু গুণ। বেড়ে চলা জনবাহুল্যের পরিণামে ছোট এলাকায় তৈরি হচ্ছে বিপুল আবর্জনা। মাঝে-মাঝে সাফাইয়ের নামে নর্দমার আবর্জনা তুলে রাস্তার পাশে ফেলে রাখা হয় দিনের পর দিন। সেই আবর্জনা শুকিয়ে ধুলো হয়ে ওড়ে অথবা বৃষ্টিতে ছড়িয়ে গিয়ে রাস্তাকে করে তোলে চলাচলের অযোগ্য। অনেক এলাকায় পথ এত সংকীর্ণ যে বড় অ্যামবুল্যান্স বা দমকলের গাড়ি ঢুকতে পারে না। স্বস্তির শ্বাস নেওয়ার জায়গা ফুরিয়ে আসছে ক্রমশ।
প্রখ্যাত মার্কিন বিজ্ঞানী জন বি ক্যালহুন গবেষণা করেছিলেন ব্যক্তি ও সমাজের উপর জনবাহুল্যের প্রভাব নিয়ে। ‘পপুলেশন ডেনসিটি অ্যান্ড সোশ্যাল প্যাথলজি’ নামে ইঁদুরের ওপর তাঁর সাড়া-জাগানো গবেষণাপত্র ১৯৬২ সালে প্রকাশিত হয়েছিল বিখ্যাত ‘সায়েন্টিফিক আমেরিকান’ পত্রিকায়। ক্যালহুনের ইঁদুরদের খাদ্য, নিরাপত্তা, আশ্রয় কিছুরই অভাব ছিল না, ছিল শুধু প্রয়োজনীয় স্থানাভাব। দেখা গেল সবল পুরুষরা হিংস্র হয়ে উঠছে, কেউ কেউ দল বেঁধে ঘুরছে, স্ত্রী-ইঁদুর আর শিশু ইঁদুরদের আক্রমণ করছে। অনেকে আবার অতিরিক্ত কামপ্রবণ হয়ে যাকে সামনে পাচ্ছে তার ওপর চড়াও হচ্ছে। মায়েরা ছানাদের অবহেলা করছে, স্বচ্ছন্দে থাকার জায়গা না পেয়ে ছানাদের ত্যাগ করছে, এমনকী আক্রমণ করছে। আরও নানা সাংঘাতিক ব্যাপার ঘটছে। গবেষণার মূল প্রতিপাদ্য হল, ইঁদুরের মতো মানুষের ক্ষেত্রেও সংকীর্ণ পরিসরে অতিজনবাহুল্য সৃষ্টি করে মানসিক ও আচরণগত বিকারের। মানুষের ক্ষেত্রে এটা এমন বিকারের একমাত্র কারণ না হলেও, অন্যতম তো বটেই। যদিও ক্যালহুনের গবেষণা ছিল চার দেওয়ালের সংকীর্ণ পরিসরে ইঁদুরের সংখ্যাবাহুল্যের পরিণাম নিয়ে, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে চার দেওয়ালের বাইরের সংকীর্ণ পরিসরেও অনুরূপ বিকার জন্ম নিতে পারে।
কিপলিং স্তবকটা শেষ করেছেন এই ভাবে: ‘প্যালেস, বায়ার, হভেল— পভার্টি অ্যান্ড প্রাইড—/ সাইড বাই সাইড; / অ্যান্ড, অ্যাবাভ দ্য প্যাক্ড অ্যান্ড পেস্টিলেনশিয়াল টাউন,/ ডেথ লুক্ড ডাউন।’ বেশ মিলছে না?
সৈকত রুদ্র কলকাতা-১১০
দোল ও মাতাল
দোল পূর্ণিমার রঙিন উত্সবে সবাই আনন্দে মেতে ওঠে, কিন্তু কয়েক বছর ধরে দেখা যাচ্ছে, এই উত্সবকে কেন্দ্র করে মদ খাওয়ার প্রবণতা প্রচণ্ড বেড়ে গেছে। যেটা দোলের আগে মদের দোকানের সামনে লাইন দেখলেই বোঝা যায়। দোলের দিনের বেশ কিছু অপ্রীতিকর ঘটনাও আমাদের সামনে এসেছে সংবাদমাধ্যমের সূত্রে। এমনিতেই এই দিনে রাস্তাঘাট সকাল থেকে ফাঁকা থাকে, কিন্তু দুপুরের পরে রাস্তায় কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবককে দেখা যায়, যারা বেহেড মাতাল হয়ে ঘুরে বেড়ায়। মহিলাদের পক্ষে ওই সময় রাস্তায় চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে। একটি আনন্দের উৎসবে যাতে এই ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা না চলে,
সে-জন্য প্রশাসনের যথেষ্ট কঠোর হওয়া প্রয়োজন।
সমীরবরণ সাহা কলকাতা-৮১
কী করব
পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন রাজ্যের বিভিন্ন স্কুলে ক্লার্ক নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছে সম্প্রতি। যোগ্য প্রার্থীদের সুপারিশপত্রও দিয়েছে। আগে এই সুপারিশপত্রটি নিয়ে প্রার্থীরা স্কুলে যোগ দিতে পারতেন। স্কুল তাদের নিয়োগপত্র দিত। কিন্তু রাজ্য বর্তমানে এ-সংক্রান্ত নিয়ম পরিবর্তন করেছে। এখন নিয়োগপত্র দেওয়ার দায়িত্ব পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের। কিন্তু সুপারিশপত্র পাওয়ার পর প্রার্থীরা নিয়োগপত্রের জন্যে পর্ষদে যোগাযোগ করলে পর্ষদ জানায় যে, তাদের কাছে এ-সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ নেই। তাই তারা কিছু করতে পারবে না। এই অবস্থায় প্রার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ও বিচলিত।
অমিত মণ্ডল কলকাতা-১০২
রেল লাইন পার
সোদপুর রেল স্টেশনের ওপর দিয়ে ১৯৮০-র দশকের মাঝামাঝি উড়ালপুলের কাজ শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এখানকার লেভেল ক্রসিংটি সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া হয়। সেই সময়ে যাত্রীদের রেল লাইন পারাপার এবং প্ল্যাটফর্মে ঢোকার পথ ছিল একমাত্র ফুটব্রিজটি। ১৯৯০ সালের গোড়ার দিকে যানবাহনবাহী উড়ালপুলটি চালু হয়ে গেলে স্টেশনের দু’দিক থেকেই এই পুলে ওঠার সিঁড়ির ব্যবস্থা করা হয় আগেকার লেভেল ক্রসিং-এর পরিবর্ত হিসাবে। এক দশকেরও বেশি আগে এই উড়ালপুলে ওঠার সিঁড়িগুলি কোনও অজ্ঞাত কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। প্রায় দু’বছর আগে যাত্রীদের জন্য রেল কর্তৃপক্ষ রেল লাইনের তলা দিয়ে যে ভূগর্ভপথটির কাজ শুরু করেছেন, তা সম্পূর্ণ করার আগে, যাত্রীদের সুরক্ষার কথা চিন্তা না করেই, আশ্চর্যজনক ভাবে মাসখানেক আগে স্টেশনে ঢোকার এবং রেলপথ পারাপারের একমাত্র ফুটব্রিজটি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখন যাত্রীদের প্রাণ হাতে করে রেল লাইনের ওপর দিয়ে প্রতি দিন পারাপার করতে হচ্ছে। প্রায়শই দ্রুতগামী এক্সপ্রেস ও গ্যালপিং ট্রেন ছুটে এলে বৃদ্ধ ও শিশুসহ সমস্ত যাত্রী প্রাণের তাগিদে ছুটাছুটি শুরু করেন। এর জন্য সর্ব স্তরের যাত্রীরা ক্ষুব্ধ, কিন্তু অসহায়।
গুরুপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় সোদপুর
লুটেরা লটারি
প্রতিদিন তিন বার, দুপুর বারোটা, বিকেল ৪টে এবং রাত্রি ৮টায় খেলা। নিছকই ভাগ্যের খেলা। প্রতি খেলার প্রবেশমূল্য ৬ টাকা, কখনও কিছু কম বা বেশি। ফলাফলের মুনাফাও হাতে হাতে। এই ভাগ্যপরীক্ষায় গ্রামগঞ্জ মফস্সল শহর আজ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। দিনমজুর থেকে ছোট-বড় ব্যবসায়ী। এমনকী অফিস-ফেরত চাকুরে। এক সময় দৈনিক লটারি নিঃস্ব করে দিয়েছিল অগণিত দরিদ্র, নিম্ন মধ্যবিত্তকে। এখন ঘণ্টায় ঘণ্টায় খেলার প্রলোভন। ‘নাগাল্যান্ড’, ‘মিজোরাম’ প্রভৃতি নামে এই সব লটারির (অধিকাংশের প্রতিটির দাম ৬ টাকা) টিকিট এক-এক জন ক্রেতা ডজন ডজনই শুধু নয়, পঞ্চাশ একশোটা করে কিনছেন। দিনে তিন বার। দু’তিন ঘণ্টা পরে খেলা, ভাগ্য প্রসন্ন হলে লাভ, না হলে ফক্কা।
গরিব খেতমজুর, শ্রমিক, ঠিকা কাজের লোক, অভাবী মানুষ রীতিমত নিয়ম করে দিনের আয়ের একটা বড় অংশ ঢেলে দিচ্ছেন এই এই নেশায়। এক সময় গ্রামেগঞ্জে জুয়াখেলার বিরাট প্রচলন ছিল, এখন সেই জায়গাটাই দখল করেছে স্বল্পমেয়াদি লটারি।
একটু চোখ মেললেই দেখা যায় রাস্তায়, বাজারে, ফুটপাতে, সর্বত্র চলছে এর বেচাকেনা। প্রশাসনের অবশ্যই এই লুটেরা লটারির ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এটা কি চিটফান্ডের চেয়ে কম কিছু!
সুব্রত বিশ্বাস ধর্মপুকুরিয়া, উত্তর ২৪ পরগনা
ভ্রম সংশোধন
এই কাগজের কয়েকটি সংস্করণে ‘মামলা করুন, বার্তা সাংসদকে’ (২৮-২, পৃ ৫) শীর্ষক খবরে উত্তর দমদমের পুরপ্রধানের নাম মলয় ঘোষ লেখা হয়েছে। মলয়বাবু উত্তর ব্যারাকপুরের পুরপ্রধান। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ই-মেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy