Advertisement
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Rabindranath Tagore

বৌদ্ধিক তঞ্চকতা

হিন্দুত্ববাদীরা আংশিক ভাবে দু’-এক লাইন তুলে রবীন্দ্রনাথকে বিশেষ কোনও ধর্মের সমালোচক বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে, এবং তিনি যে হিন্দুধর্মেরও কিছু দিকের কঠোর সমালোচক, তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে।

শেষ আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২১ ০২:৪০
Share: Save:

‘যেন লজ্জা স্বীকার করি’ (১৮-১) নিবন্ধটির জন্য দীপেশ চক্রবর্তীকে ধন্যবাদ। রবীন্দ্রনাথ ও অন্যান্য মহাপুরুষকে নিয়ে বর্তমানে ভারতের কেন্দ্রীয় শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকদের এই বৌদ্ধিক তঞ্চকতার বিষয়টিকে স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন তিনি। আর এক বার প্রমাণিত হল যে, হিন্দুত্ববাদীরা আংশিক ভাবে দু’-এক লাইন তুলে রবীন্দ্রনাথকে কোনও কিছুর (আপাতত বিশেষ কোনও ধর্মের) সমালোচক বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে, এবং তিনি যে হিন্দুধর্মেরও কিছু দিকের কঠোর সমালোচক, তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। কৌশলটা ওই— পকেট থেকে একটি চিরকুটে রবীন্দ্রনাথের একচিলতে দেখানো, আর বাকি বিশাল রবীন্দ্রনাথকে লেপেপুঁছে দেওয়া, যেন বাকি, অজস্র, বহুব্যাপ্ত রবীন্দ্রনাথ কোত্থাও নেই, বাঙালির বইয়ের তাকে বা তার স্মৃতিতে তিনি নিশ্চিহ্ন।

কালিদাস নাগকে লেখা ওই চিঠিতে (পরে কালান্তর-এ মুদ্রিত) রবীন্দ্রনাথ হিন্দুধর্মকেও যে তুলোধোনা করেছেন, তা আড়াল করে যাওয়ার চেষ্টা হয়। ওই দু’টি ধর্ম সম্বন্ধে রবীন্দ্রনাথের সমালোচনা সঙ্গত বলেই মনে করি। কিন্তু কেন ধর্ম দু’টি এমন হয়েছিল, তার ঐতিহাসিক-সামাজিক কারণ নিবন্ধকার জানেন। যে দামি কথাটা তিনি যোগ করেছেন তা হল, ভারতের একটি গোষ্ঠী হিন্দুধর্মকেও আরও বেশি করে সেই পথেই নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ধর্মের সঙ্গে এক ধরনের সাম্রাজ্যবাদ লিপ্ত হয়ে যায় নানা ঐতিহাসিক যোগাযোগে, এবং আমরাও হিন্দুধর্মের নামে এক নিষ্ঠুর সাম্রাজ্যবাদ খাড়া করার চেষ্টা করছি।

যে প্রশ্নটা দীপেশ চক্রবর্তীই করতে পারতেন, তা এই— না হয় এই মিথ্যেটাকেই জোর করে মানলাম যে, হিন্দুধর্ম ছাড়া আর সব ধর্ম বিচ্ছিরি। তাতেও কি এই কথা দাঁড়ায়, সেই ধর্মের সব মানুষ খারাপ, এবং হিন্দুধর্মের সবাই দেবতার পোষ্যপুত্র? তাই অন্য ধর্মের লোকেদের ভারত থেকে তাড়িয়ে দিতে হবে? এত জাতিভেদ আর কোন ধর্মে পাই, দলিতদের উপর এত অসম্মান আর কোন ধর্মে নথিবদ্ধ? সারা ভারতে যত নারীধর্ষণ হয়, খুন, জখম, লুট, কোটি কোটি টাকার ব্যাঙ্ক জালিয়াতি হয়, সবই কি অন্য ধর্মের মানুষেরা করে? ‘গরবসে কহো হম হিন্দু হ্যায়’-এর বদলে আমরা যদি আমাদের ধর্মকে তার ঐতিহাসিক সামাজিক ভূমিকায় আর একটু বোঝার চেষ্টা করতাম!

পবিত্র সরকার

কলকাতা-৮৪

খণ্ডিত

দীপেশ চক্রবর্তীর প্রবন্ধটির সঙ্গে সহমত হয়ে লিখি, খণ্ডিত মন্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে রবীন্দ্রনাথকে মুসলমান-বিরোধী বলার প্রয়াসটি সম্পূর্ণ ভ্রান্ত। এ ভাবে তাঁকে বিচার করা অন্ধের হস্তি দর্শনের মতো। রবীন্দ্রনাথ কোনও ধর্মের বিরোধী ছিলেন না। বরং হিন্দুধর্মের অনমনীয়তা তাঁকে কষ্ট দিত। সাম্প্রতিক অপপ্রচার তাঁকে ধ্বংসেরই চেষ্টা! জাতির স্বার্থে রবীন্দ্রনাথকে বাঁচানো আমাদের অবশ্যকর্তব্য।

রঞ্জিত কুমার দাস

বালি, হাওড়া

কেউ তো ছিল

সেমন্তী ঘোষ ‘আত্মসাৎ করতেই হবে?’ (১৫-১) নিবন্ধে লিখেছেন, “এর আগে রাজনীতি প্রচারে অন্য নেতারা সরাসরি জড়িয়ে নেননি রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ,সুভাষচন্দ্রদের।” ঠিক কথা, কিন্তু কেউ তো ছিল। সত্তরের দশক থেকে ধরলে আগে পণ্য ছিলেন কার্ল মার্কস, এঙ্গেলস, লেনিন, স্ট্যালিন, মাও। সেই আমলে রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ ছিলেন অচ্ছুত। রবীন্দ্রনাথ বুর্জোয়া, সুভাষচন্দ্র তোজো এবং হিটলারের সহযোগী। বিবেকানন্দের জন্মদিন ছুটির দিনের মধ্যেই ছিল না। রবীন্দ্রনাথকে পণ্য করে জীবন ও জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন, এমন মানুষ কম না। টেলিভিশন চ্যানেলে বিতর্কে মনীষীদের উদ্ধৃতি ছাত্রছাত্রীদেরও ছাপিয়ে যায়। প্রতিযোগিতামূলক ধর্মাচরণে এগিয়ে থাকার তাগিদ যেমন অগ্রাধিকার পেল, তেমনই পরিবর্তন হল পণ্যের ও ব্যবহারকারীর অবস্থার। লেখাপড়াতে সাহিত্য ও জীবনী পড়ার ইচ্ছে কমেছে। ইংরেজি পড়লেও বাংলা পড়ে কম। মনীষীদের উদ্ধৃতি ও জীবনী লোকশিক্ষার মতো করে যদি রাজনীতি প্রচার করে, তা হলে উপকারই হয়তো হবে।

শ্যামল নারায়ণ ঘোষ দস্তিদার

কলকাতা-৭৫

সবাই সমান

সেমন্তী ঘোষের ‘আত্মসাৎ করতেই হবে?’ প্রসঙ্গে প্রশ্ন, কেবলমাত্র প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর তাঁর দলের নেতারাই কি মনীষীদের বাণীর অপব্যবহার করছেন? বাংলার রাজনীতিতেও এটা নতুন ঘটনা নয়। বর্তমানে তা আরও ফুলেফেঁপে উঠেছে। তা নিয়ে বাঙালির মাথাব্যথা নেই। শুধুমাত্র বিজেপি কেন, সব রাজনৈতিক দলই ভোটের প্রচারে বা দলীয় স্বার্থে মনীষীদের বাণীগুলির ভুল ব্যাখ্যা করেন। বাঙালির প্রতিবাদ কই?

রিক্তা বসু

কলকাতা-১৪৪

সত্যের পথ

রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘ এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ধ্বজাধারী দল বিজেপি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতকে নিজেদের পথ বলে আপন করে নিতে চায়। সে দাবি সত্য কি না, বুঝতে রবীন্দ্রনাথের বলে-যাওয়া মত-পথগুলিই আওড়াতে হবে বার বার। অনেকের কাছে তা বহুচর্চিত মনে হলেও, সত্য ভাবনা প্রতিষ্ঠার আর কোনও বিকল্প পথ নেই। রবীন্দ্রনাথের বিশ্বাস ছিল ‘নেশন’-ই রূপান্তরিত হয় সাম্রাজ্যবাদে। তাঁর চিন্তায় ‘নেশন’মাত্রই সঙ্কীর্ণ জাত্যভিমান এবং স্বার্থান্ধ সাম্রাজ্যবাদ। রবীন্দ্রনাথের লক্ষ্য ছিল ভারতীয় সমাজের বিশ্বাস, বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য স্থাপন, দেশপ্রেমের ভিত্তিতে বিশ্বপ্রেমের সাধনা। এ হেন মত-পথের মানুষটিকে স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে বিজেপি আত্মসাৎ করতে উদ্যত হয়েছে। কিন্তু দুই মত এতই আলাদা যে, মিশতে পারে না।

সঞ্জয় রায়

দানেশ শেখ লেন, হাওড়া

সেই রেডিয়ো

শিখা সেনগুপ্তের চিঠির (‘একাত্তরে’, ১৭-১) পরিপ্রেক্ষিতে জানাই, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সামরিক বাহিনীর অত্যাচারের ভয়ে প্রত্যন্ত গ্রামে বাবা-মায়ের সঙ্গে পালিয়েছিলাম। কৈশোরের সেই স্মৃতিতে গেঁথে আছে মার্ফি রেডিয়ো। আট ব্যাটারি যুক্ত, টিনের বাক্সের মতো অতিকায় রেডিয়োটির রক্ষার দায়িত্ব ছিল আমার উপর। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অত্যাচারের কাহিনি,

মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করার ইতিবৃত্ত শুনতে পেতাম এ রেডিয়োর নব ঘুরিয়ে, বিবিসি, ভয়েস অব আমেরিকা, আকাশবাণী ও স্বাধীন বাংলা বেতারের খবর শুনে। আকাশবাণী ও স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে দেশাত্মবোধক গান শুনে দেশের স্বাধীনতার স্বপ্নে বিভোর হয়ে থাকতাম। “আকাশবাণী থেকে খবর পড়ছি ইভানা”— আজও কানে বাজে। দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংবাদ পরিক্রমা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকতাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের আগুনঝরা দিনগুলোর কথা শোনা সম্ভব হয়েছিল সেই মার্ফি রেডিয়োর কল্যাণে।

নারায়ণ সাহা

কলকাতা-৮৪

কুৎসিত

বিধানসভা নির্বাচনের ঢাকের কাঠি না পড়তেই চতুর্দিকে দেওয়াল লিখন শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো এটা বন্ধ করে ফেসবুক, সমাজমাধ্যমে প্রচার করতে পারে অনায়াসে। বেঙ্গালুরুতে নির্বাচনের সময়ে নেতা-নেত্রীদের ছবি প্লাইবোর্ডে নির্মিত কাট আউটে প্রদর্শিত করা হয়। নির্বাচনের পর সেগুলি সরিয়ে ফেলা হয়। এই দৃষ্টান্ত গ্রহণ করলে অফিসকাছারি এবং বাড়িঘর কুৎসিত দেওয়াল লিখনে ভরে যাবে না।

তুষার ভট্টাচার্য

কাশিমবাজার, মুর্শিদাবাদ

অন্য বিষয়গুলি:

Rabindranath Tagore Letters to Editor
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy