Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Letters to the editor

সম্পাদক সমীপেষু: শুধুই অপচয়

অপচয় হচ্ছে আমার আর আপনার টাকা, কেউ নিজের পকেট থেকে দিচ্ছে না। যেটা দিচ্ছে সেটা হল, নাকের সামনে গাজর।

শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২১ ০৪:৪৯
Share: Save:

যত বার কলকাতায় আসি, অবাক হয়ে যাই। অপচয় আর অপচয়। রাস্তাঘাটে খারাপ মানের জিনিস দিয়ে বার বার তাপ্পি দিয়ে জনসাধারণের টাকার অপচয়। নর্দমা সাফ না করেই খরচ দেখিয়ে টাকার অপচয়। ল্যাম্পপোস্টে আলো পেঁচিয়ে রাতের সাজে সাজিয়ে, সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্প লাগিয়ে বিদ্যুৎ অপচয়। অবস্থাপন্ন ঘরে ঘরে রেশন দিয়ে খাদ্যশস্য অপচয়। কাজের সুযোগ তৈরি করতে না পেরে প্রতিভার অপচয়। সঙ্গে অর্থহীন দানখয়রাত। এ ছাড়াও গোদের উপর বিষফোড়া— বিশাল পুজোর আয়োজন। বিলাসবহুল প্যান্ডেলের পিছনে অনাবশ্যক খরচ করা এবং ক্লাবকে অনুদান আরও বড় অপচয়। অথচ, এগুলোই এখন কলকাতার নির্মম বাস্তব।

জনপ্রতিনিধিরা কি এগুলো দেখতে পান না? না কি ব্যক্তিভজনায় এবং নিজেদের জন্য আরও অনেক বেশি জোগাড় করার ব্যস্ততায় ‘সার্ভিস’ দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না? এ ক্ষেত্রে তথাকথিত শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত সবাইকেই সমান ও মাসতুতো ভাই মনে হয়। রাজ্য-কেন্দ্র খামচাখামচিও অর্থহীন ও সময়ের অপচয়। আমরা, যারা ষাট-সত্তরের দশকে কলকাতায় বেড়ে উঠেছি, তারা এই সর্বাঙ্গীণ অবক্ষয় দেখে লজ্জা পাই। মাঝে মাঝে ঠাট্টা করে ‘ওয়েস্ট’ (বর্জ্য) বেঙ্গল বলতাম। কিন্তু কখনও ভাবিনি যে, এক দিন তা সত্যি হয়ে উঠবে। প্রবাসী বাঙালি হিসাবে বাংলার প্রসঙ্গ উঠলেই লজ্জায় মুখ লুকিয়ে কেটে পড়ার সুযোগ খুঁজতে হবে। ‘টিপিক্যাল বং’-এর মতো গলার শিরা ফুলিয়ে অবান্তর তর্ক করার মানসিকতা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য কোনও রাজ্যে দেখতে পাওয়া যায় না।

অবশ্য সব রাজ্যেই অপচয় রয়েছে। কারণ, সব রাজ্যেই দুর্নীতিগ্রস্ত জনপ্রতিনিধিরা আছেন। মনে রাখতে হবে যে, অপচয় হচ্ছে আমার আর আপনার টাকা, কেউ নিজের পকেট থেকে দিচ্ছে না। যেটা দিচ্ছে সেটা হল, নাকের সামনে গাজর। আর তা দেখে দেখে শক্তি ও সময়ের অপচয় হচ্ছে জনসাধারণের।

অপু মিত্র

বেঙ্গালুরু

বৌদ্ধবিহার

পশ্চিম মেদিনীপুরে দাঁতন ব্লকের অন্তর্গত মোগলমারিতে শিলালিপি-সহ দু’টি বৌদ্ধবিহার আবিষ্কারের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নাম বলা হচ্ছে যজ্ঞপিণ্ডিক এবং মুগলায়িক। নাম দেখে অনুমান করা যায় যে, এগুলি বৌদ্ধবিহারের গোলাকার আকৃতির ইঙ্গিতবাহী। যজ্ঞে যে গোলাকার পিণ্ড দান করা হয়, দেখতে খানিকটা সেই রকমই মনে হয়।

মুগলায়িক, যা তুলনায় আকারে ছোট, মনে হয় তার অর্থ মটরদানার মতো। মোগলমারির সঙ্গে মুগলায়িকের কোনও ভাষাতাত্ত্বিক সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। বর্ধমান জেলার দক্ষিণ দামোদর অঞ্চলে সেহারা বাজার ও উচালনের কাছে মোগলমারি নামে একটি গ্রাম আছে। আবার গলসি খানা জংশনের কাছে মোগলসীমা নামে একটি গ্রাম আছে, যেগুলি মোগল আমলের সাম্রাজ্যের সীমানা নির্দেশ করে বলে ইতিহাসবিদরা অনুমান করেন। মোগলসরাই রেল স্টেশনের কথাও আমরা জানি। মেদিনীপুরের মোগলমারির সন্নিকটে দাঁতন অঞ্চলের নামকরণ দন্তপুর থেকে হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। কথিত আছে, বৌদ্ধবিহারে ভগবান বুদ্ধের একটি দাঁত পবিত্র বস্তুরূপে রাখা ছিল, তার জন্যে এই অঞ্চলের নাম দন্তপুর, অপভ্রংশ হয় দাঁতন।

বুদ্ধের দেহের কোনও অংশ পবিত্র স্মারক বস্তুরূপে বৌদ্ধবিহারে রাখা বৌদ্ধ ধর্মে প্রচলিত প্রথা হিসাবে গণ্য করা হত। নামকরণের সাদৃশ্য এবং প্রাপ্ত নিদর্শন এই অঞ্চলে বৌদ্ধবিহারের অস্তিত্বকে এক দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

তপন কুমার মুখোপাধ্যায়

সুভাষপল্লি, বর্ধমান

জীবনের মূল্য

অসমের উচ্ছেদের ঘটনার ভিডিয়ো দেখে বাক্‌রুদ্ধ! এক জন পুলিশ বাহিনীর দিকে লাঠি হাতে তেড়ে আসছেন। পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। তার পর ওই ব্যক্তি মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর সবাই গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই তাঁকে বেধড়ক মারছে। সমাজমাধ্যমে সেই ভিডিয়োর কমেন্ট সেকশনে অনেকেই মন্তব্য করছেন, “ঠিকই তো আছে। ওরা তো বেআইনি অভিবাসী, দখলদার। দারুণ কাজ অসম পুলিশ।” মনে ভাবনা আসছে, এত মানুষ পুলিশকে বাহবা দিচ্ছেন, তা হলে কি আমার বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে? বার বার মনে পড়ছে সেই ভিডিয়োর কথা, আর মনে হচ্ছে বেআইনি হলেও ওঁরা তো মানুষ। আমাদের মতোই। উচ্ছেদের আতঙ্কে পুলিশকে ভয় দেখিয়ে তাড়াচ্ছেন। হাতে একটা লাঠি নিয়ে তেড়ে যাচ্ছেন। দিল্লির ঘটনায় সেই ছেলেটির মতো হাতে বন্দুক তো নেই। ২০২০-র জানুয়ারি মাসে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া-র ছাত্রদের অ্যান্টি সিএএ মিছিলে হঠাৎই হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উদয় হয়েছিল এক বন্দুকবাজ। সেই ঘটনা গোটা দেশকে তোলপাড় করেছিল। প্রশ্ন হল, যদি তখন নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকে রাষ্ট্রের পুলিশ, তা হলে অসমের ঘটনায় এত জন পুলিশ প্রথমে গুলি চালিয়ে তার পর ওই ব্যক্তিকে বেধড়ক মারল কেন? তারা তো প্রশিক্ষিত। এত জন মিলে তাঁকে গ্রেফতার করতে পারত। সেই মানুষটা গরিব, পিছিয়ে পড়া বলে কি তাঁর জীবনের কোনও মূল্য নেই?

শুভদীপ দেবনাথ

রাজাপুর, পূর্ব বর্ধমান

কাঁথড়া

মধ্যযুগের ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যধারার সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের (সপ্তম শতক) জন্মস্থান কোথায়, তা নিয়ে কোনও গবেষণা হয়নি। কবির কাব্যের আত্মপরিচয় অংশে পাওয়া যায়— “সোমনগর হইল কাঁথড়া।” এই ‘কাঁথড়া’ কোথায়? এ প্রসঙ্গে বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহবশত নিজস্ব উদ্যোগে রাঢ় অঞ্চলে কয়েক বছর ধরে এক ক্ষেত্রসমীক্ষা চালাচ্ছি। তাতে বেশ কিছু তথ্য আমাকে আকৃষ্ট করে।

প্রথমত, মনসামঙ্গলের মুখ্যচরিত্র চাঁদ সওদাগরের বাসস্থান প্রাচীন বাণিজ্যনগরী চম্পক নগরের প্রকৃত অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ, মায়ানমার, ত্রিপুরা-সহ বিভিন্ন প্রদেশ যে দাবিগুলি জানিয়ে আসছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চম্পক নগরের প্রকৃত অবস্থান বর্তমান পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসি অঞ্চলের কসবাতে। গাঙুর নদী এই অঞ্চলের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত, অন্য কোথাও তা নেই। বেহুলার মন্দাস বা ভেলা যে পথ দিয়ে ভেসে গিয়েছে, সেই নদী অনেক স্থানেই বেহুলানদী নামে পরিচিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ যে ‘কাঁথড়া’র কথা বলেছেন, তা বর্তমানে বর্ধমান গলসির ‘কৈতাড়া’ গ্রাম বলে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। কসবায় চাঁদ সওদাগরের পূজিত বলে প্রচলিত যে রামেশ্বর শিব মন্দির এবং বেহুলার লোহার বাসরঘর বলে চিহ্নিত যে ‘সাতালি পর্বত’ আছে, সেই স্থান পরিদর্শনে কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ একাধিক বার এসেছিলেন বলে এখানকার প্রাচীনরা শুনে এসেছেন। এই কসবা অঞ্চল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে কৈতাড়া গ্রামের অবস্থান (জেএল নং ৭৪)। গ্রামটি খুবই প্রাচীন, বঙ্গদেশের প্রাচীনতম তাম্রপট্ট লিপি মল্লসারুল-এ গ্রামটির নাম রয়েছে ‘কবিন্থবাটক’। এই গ্রামটি কাঁসা-পিতল কেন্দ্রিক ব্যবসার জন্য বহু কাল ধরে বিখ্যাত। অনুমান করতে পারি, কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ এই গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন। এর প্রশ্নাতীত প্রমাণ হল, আজও কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের কাব্যের ভাষার সঙ্গে কৈতাড়া গ্রাম ও সংলগ্ন গলসি অঞ্চলের উপভাষার মিল পাওয়া যায়। ভাষাতাত্ত্বিক এই বৈশিষ্ট্য ছাড়াও কেতকাদাসের কাব্যে গোহগ্রাম ঘাট, শিল্লা ঘাট, জুজুটি ঘাট প্রভৃতি যে নাম পাওয়া যায়, সেগুলি কৈতাড়া সংলগ্ন মৃতপ্রায় গাঙুর নদী ও দামোদর নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রাম। কাঁথড়া থেকে কেতেড়া, এবং তার থেকে কৈতাড়া— এই ভাবেই নামটি পরিবর্তিত হয়েছে।

ফিরোজ আলি কাঞ্চন

গলসি, বর্ধমান

যত বার কলকাতায় আসি, অবাক হয়ে যাই। অপচয় আর অপচয়। রাস্তাঘাটে খারাপ মানের জিনিস দিয়ে বার বার তাপ্পি দিয়ে জনসাধারণের টাকার অপচয়। নর্দমা সাফ না করেই খরচ দেখিয়ে টাকার অপচয়। ল্যাম্পপোস্টে আলো পেঁচিয়ে রাতের সাজে সাজিয়ে, সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্প লাগিয়ে বিদ্যুৎ অপচয়। অবস্থাপন্ন ঘরে ঘরে রেশন দিয়ে খাদ্যশস্য অপচয়। কাজের সুযোগ তৈরি করতে না পেরে প্রতিভার অপচয়। সঙ্গে অর্থহীন দানখয়রাত। এ ছাড়াও গোদের উপর বিষফোড়া— বিশাল পুজোর আয়োজন। বিলাসবহুল প্যান্ডেলের পিছনে অনাবশ্যক খরচ করা এবং ক্লাবকে অনুদান আরও বড় অপচয়। অথচ, এগুলোই এখন কলকাতার নির্মম বাস্তব।

জনপ্রতিনিধিরা কি এগুলো দেখতে পান না? না কি ব্যক্তিভজনায় এবং নিজেদের জন্য আরও অনেক বেশি জোগাড় করার ব্যস্ততায় ‘সার্ভিস’ দেওয়ার প্রয়োজন মনে করেন না? এ ক্ষেত্রে তথাকথিত শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত সবাইকেই সমান ও মাসতুতো ভাই মনে হয়। রাজ্য-কেন্দ্র খামচাখামচিও অর্থহীন ও সময়ের অপচয়। আমরা, যারা ষাট-সত্তরের দশকে কলকাতায় বেড়ে উঠেছি, তারা এই সর্বাঙ্গীণ অবক্ষয় দেখে লজ্জা পাই। মাঝে মাঝে ঠাট্টা করে ‘ওয়েস্ট’ (বর্জ্য) বেঙ্গল বলতাম। কিন্তু কখনও ভাবিনি যে, এক দিন তা সত্যি হয়ে উঠবে। প্রবাসী বাঙালি হিসাবে বাংলার প্রসঙ্গ উঠলেই লজ্জায় মুখ লুকিয়ে কেটে পড়ার সুযোগ খুঁজতে হবে। ‘টিপিক্যাল বং’-এর মতো গলার শিরা ফুলিয়ে অবান্তর তর্ক করার মানসিকতা পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া অন্য কোনও রাজ্যে দেখতে পাওয়া যায় না।

অবশ্য সব রাজ্যেই অপচয় রয়েছে। কারণ, সব রাজ্যেই দুর্নীতিগ্রস্ত জনপ্রতিনিধিরা আছেন। মনে রাখতে হবে যে, অপচয় হচ্ছে আমার আর আপনার টাকা, কেউ নিজের পকেট থেকে দিচ্ছে না। যেটা দিচ্ছে সেটা হল, নাকের সামনে গাজর। আর তা দেখে দেখে শক্তি ও সময়ের অপচয় হচ্ছে জনসাধারণের।

অপু মিত্র

বেঙ্গালুরু

বৌদ্ধবিহার

পশ্চিম মেদিনীপুরে দাঁতন ব্লকের অন্তর্গত মোগলমারিতে শিলালিপি-সহ দু’টি বৌদ্ধবিহার আবিষ্কারের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। নাম বলা হচ্ছে যজ্ঞপিণ্ডিক এবং মুগলায়িক। নাম দেখে অনুমান করা যায় যে, এগুলি বৌদ্ধবিহারের গোলাকার আকৃতির ইঙ্গিতবাহী। যজ্ঞে যে গোলাকার পিণ্ড দান করা হয়, দেখতে খানিকটা সেই রকমই মনে হয়।

মুগলায়িক, যা তুলনায় আকারে ছোট, মনে হয় তার অর্থ মটরদানার মতো। মোগলমারির সঙ্গে মুগলায়িকের কোনও ভাষাতাত্ত্বিক সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না। বর্ধমান জেলার দক্ষিণ দামোদর অঞ্চলে সেহারা বাজার ও উচালনের কাছে মোগলমারি নামে একটি গ্রাম আছে। আবার গলসি খানা জংশনের কাছে মোগলসীমা নামে একটি গ্রাম আছে, যেগুলি মোগল আমলের সাম্রাজ্যের সীমানা নির্দেশ করে বলে ইতিহাসবিদরা অনুমান করেন। মোগলসরাই রেল স্টেশনের কথাও আমরা জানি। মেদিনীপুরের মোগলমারির সন্নিকটে দাঁতন অঞ্চলের নামকরণ দন্তপুর থেকে হয়েছে বলে অনুমান করা হয়। কথিত আছে, বৌদ্ধবিহারে ভগবান বুদ্ধের একটি দাঁত পবিত্র বস্তুরূপে রাখা ছিল, তার জন্যে এই অঞ্চলের নাম দন্তপুর, অপভ্রংশ হয় দাঁতন।

বুদ্ধের দেহের কোনও অংশ পবিত্র স্মারক বস্তুরূপে বৌদ্ধবিহারে রাখা বৌদ্ধ ধর্মে প্রচলিত প্রথা হিসাবে গণ্য করা হত। নামকরণের সাদৃশ্য এবং প্রাপ্ত নিদর্শন এই অঞ্চলে বৌদ্ধবিহারের অস্তিত্বকে এক দৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত করে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

তপন কুমার মুখোপাধ্যায়

সুভাষপল্লি, বর্ধমান

জীবনের মূল্য

অসমের উচ্ছেদের ঘটনার ভিডিয়ো দেখে বাক্‌রুদ্ধ! এক জন পুলিশ বাহিনীর দিকে লাঠি হাতে তেড়ে আসছেন। পুলিশ গুলি চালাচ্ছে। তার পর ওই ব্যক্তি মাটিতে পড়ে যাওয়ার পর সবাই গুলিবিদ্ধ অবস্থাতেই তাঁকে বেধড়ক মারছে। সমাজমাধ্যমে সেই ভিডিয়োর কমেন্ট সেকশনে অনেকেই মন্তব্য করছেন, “ঠিকই তো আছে। ওরা তো বেআইনি অভিবাসী, দখলদার। দারুণ কাজ অসম পুলিশ।” মনে ভাবনা আসছে, এত মানুষ পুলিশকে বাহবা দিচ্ছেন, তা হলে কি আমার বুঝতে কোথাও ভুল হচ্ছে? বার বার মনে পড়ছে সেই ভিডিয়োর কথা, আর মনে হচ্ছে বেআইনি হলেও ওঁরা তো মানুষ। আমাদের মতোই। উচ্ছেদের আতঙ্কে পুলিশকে ভয় দেখিয়ে তাড়াচ্ছেন। হাতে একটা লাঠি নিয়ে তেড়ে যাচ্ছেন। দিল্লির ঘটনায় সেই ছেলেটির মতো হাতে বন্দুক তো নেই। ২০২০-র জানুয়ারি মাসে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া-র ছাত্রদের অ্যান্টি সিএএ মিছিলে হঠাৎই হাতে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উদয় হয়েছিল এক বন্দুকবাজ। সেই ঘটনা গোটা দেশকে তোলপাড় করেছিল। প্রশ্ন হল, যদি তখন নীরব দর্শকের ভূমিকায় থাকে রাষ্ট্রের পুলিশ, তা হলে অসমের ঘটনায় এত জন পুলিশ প্রথমে গুলি চালিয়ে তার পর ওই ব্যক্তিকে বেধড়ক মারল কেন? তারা তো প্রশিক্ষিত। এত জন মিলে তাঁকে গ্রেফতার করতে পারত। সেই মানুষটা গরিব, পিছিয়ে পড়া বলে কি তাঁর জীবনের কোনও মূল্য নেই?

শুভদীপ দেবনাথ

রাজাপুর, পূর্ব বর্ধমান

কাঁথড়া

মধ্যযুগের ‘মনসামঙ্গল’ কাব্যধারার সর্বাধিক জনপ্রিয় কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের (সপ্তম শতক) জন্মস্থান কোথায়, তা নিয়ে কোনও গবেষণা হয়নি। কবির কাব্যের আত্মপরিচয় অংশে পাওয়া যায়— “সোমনগর হইল কাঁথড়া।” এই ‘কাঁথড়া’ কোথায়? এ প্রসঙ্গে বাংলার আঞ্চলিক ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতি আগ্রহবশত নিজস্ব উদ্যোগে রাঢ় অঞ্চলে কয়েক বছর ধরে এক ক্ষেত্রসমীক্ষা চালাচ্ছি। তাতে বেশ কিছু তথ্য আমাকে আকৃষ্ট করে।

প্রথমত, মনসামঙ্গলের মুখ্যচরিত্র চাঁদ সওদাগরের বাসস্থান প্রাচীন বাণিজ্যনগরী চম্পক নগরের প্রকৃত অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ, মায়ানমার, ত্রিপুরা-সহ বিভিন্ন প্রদেশ যে দাবিগুলি জানিয়ে আসছে, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। চম্পক নগরের প্রকৃত অবস্থান বর্তমান পূর্ব বর্ধমান জেলার গলসি অঞ্চলের কসবাতে। গাঙুর নদী এই অঞ্চলের মধ্য দিয়েই প্রবাহিত, অন্য কোথাও তা নেই। বেহুলার মন্দাস বা ভেলা যে পথ দিয়ে ভেসে গিয়েছে, সেই নদী অনেক স্থানেই বেহুলানদী নামে পরিচিত হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ যে ‘কাঁথড়া’র কথা বলেছেন, তা বর্তমানে বর্ধমান গলসির ‘কৈতাড়া’ গ্রাম বলে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি। কসবায় চাঁদ সওদাগরের পূজিত বলে প্রচলিত যে রামেশ্বর শিব মন্দির এবং বেহুলার লোহার বাসরঘর বলে চিহ্নিত যে ‘সাতালি পর্বত’ আছে, সেই স্থান পরিদর্শনে কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ একাধিক বার এসেছিলেন বলে এখানকার প্রাচীনরা শুনে এসেছেন। এই কসবা অঞ্চল থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার পূর্ব দিকে কৈতাড়া গ্রামের অবস্থান (জেএল নং ৭৪)। গ্রামটি খুবই প্রাচীন, বঙ্গদেশের প্রাচীনতম তাম্রপট্ট লিপি মল্লসারুল-এ গ্রামটির নাম রয়েছে ‘কবিন্থবাটক’। এই গ্রামটি কাঁসা-পিতল কেন্দ্রিক ব্যবসার জন্য বহু কাল ধরে বিখ্যাত। অনুমান করতে পারি, কেতকাদাস ক্ষেমানন্দ এই গ্রামেরই বাসিন্দা ছিলেন। এর প্রশ্নাতীত প্রমাণ হল, আজও কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের কাব্যের ভাষার সঙ্গে কৈতাড়া গ্রাম ও সংলগ্ন গলসি অঞ্চলের উপভাষার মিল পাওয়া যায়। ভাষাতাত্ত্বিক এই বৈশিষ্ট্য ছাড়াও কেতকাদাসের কাব্যে গোহগ্রাম ঘাট, শিল্লা ঘাট, জুজুটি ঘাট প্রভৃতি যে নাম পাওয়া যায়, সেগুলি কৈতাড়া সংলগ্ন মৃতপ্রায় গাঙুর নদী ও দামোদর নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রাম। কাঁথড়া থেকে কেতেড়া, এবং তার থেকে কৈতাড়া— এই ভাবেই নামটি পরিবর্তিত হয়েছে।

ফিরোজ আলি কাঞ্চন

গলসি, বর্ধমান

অন্য বিষয়গুলি:

Letters to the editor Corruption
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy