বেশ কয়েক দিন ধরে উত্তরপ্রদেশের লখিমপুর খেরি সংবাদের শিরোনামে। বাম-ডান সব পক্ষই চেষ্টা করছে আসন্ন উত্তরপ্রদেশ রাজ্য নির্বাচনকে পাখির চোখ করে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই— বহুধা বিভক্ত এই বিরোধীদের মুখ কে? ২০২৪-এর সাধারণ নির্বাচনের আড়াই বছর আগে থেকে ভারতের জনতা কাকে প্রধানমন্ত্রীর মসনদে বসানোর স্বপ্ন দেখতে শুরু করতে পারে? কৃষি বিল প্রত্যাহারকে কেন্দ্র করে কৃষকহত্যা, এয়ার ইন্ডিয়া-সহ রাষ্ট্রীয় পুঁজির বেসরকারিকরণ, বিক্রি করে দেওয়া, শ্রমিক-বিরোধী আইন পাশ, পেট্রল, ডিজ়েল, রান্নার গ্যাস-সহ জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, এই সমস্ত কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের কারণে জনমানসে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তা সত্ত্বেও দেশ জুড়ে বিরোধিতার কোনও আলোড়ন সৃষ্টি হয়নি। কারণ, বিরোধী রাজনীতি করতে হলে শুধু ‘প্রভাবশালী নেতা’ হলেই চলে না, তার জন্য প্রয়োজন পরিবর্তনের জোরদার আখ্যানের। মোদীর নেতৃত্বে বিজেপি সুসংহত ভাবে বিস্তৃত রাজনৈতিক পরিসর দখল করে রেখেছে, যেখানে দরিদ্র পরিবারের কল্যাণমূলক সুবিধাভোগী প্রকল্প রয়েছে হিন্দু জাতীয়তাবাদী উচ্ছ্বাসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে। যেখানে বিরোধীদের বিকল্প সীমিত, তাঁদের মধ্যে অনৈক্য একটি বড় সমস্যা।
দেবাশিস ভট্টাচার্য (‘পদ্মের পরাভবে কোন বার্তা’, ৭-১০) সঠিক ভাবেই উল্লেখ করেছেন, কংগ্রেসের সঙ্গে মমতার দূরত্ব যে ভাবে বেড়ে উঠছে, তাতে বিরোধী জোটের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই সংশয়ী। এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার মনে করেন যে, কংগ্রেস এখনও পুরনো জমিদারি প্রথা মেনে চলেছে, তারা হারিয়ে ফেলা জমির কথা স্মরণ করে দিন কাটায়। অপর দিকে, কংগ্রেস-বিরোধী ঐক্যকে মজবুত করার পরিবর্তে একটি বা দু’টি ঘটনায় একজোট হওয়া (যেমন, লখিমপুরের ঘটনায় সমাজবাদী পার্টি, আপ, তৃণমূল কংগ্রেসের ঐক্য) ব্যতীত আঞ্চলিক দলগুলো পরস্পরকে বিজেপির ‘বি’ টিম বলে ঘোষণা করছে। এই বিরোধী নেতারা কি শেষ পর্যন্ত পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে একত্র হবেন? না কি তাঁরা প্রথমেই একে অপরকে হারিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবেন? বুঝতে গেলে লক্ষ রাখতে হবে আগামী কয়েক মাসে হতে-চলা বিধানসভা নির্বাচনগুলির দিকে। দেখতে হবে, পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে বিরোধী রাজনীতির পুনর্গঠন হবে, না কি ফের ক্ষমতায় ফিরবেন নরেন্দ্র মোদী।
সৌমিত্র মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৬১
বোধোদয়
বিমান বসু ২০২১ সালে জীবন সায়াহ্নে এসে বুঝতে পারলেন, দলের কাজ না করে শুধু ‘লেভি’ দিয়ে বহু সদস্য তাঁদের সদস্যপদ নবীকরণ করে যাচ্ছেন বছরের পর বছর (‘কাজ না করলে পার্টিতে কেন, প্রশ্ন বিমানের’, ১২-১০)। বৃহৎ সংবাদপত্রে এই খবর দেখে অবাক হচ্ছি। এই অধম যা বুঝতে পেরেছিল সেই ১৯৮২ সালেই, বিমানবাবু তা ৩৯ বছর বাদে ২০২১ সালে বুঝলেন? মাত্র ৩৬ হাজার সদস্য নিয়ে ১৯৭৭ সালে যে বামপন্থী গণতান্ত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন হয়েছিল, আজ কোটি কোটি সদস্য ও সমর্থক, এবং পার্টির কাগজ নিয়মিত প্রকাশ করেও যে ব্যর্থতা হতাশা ঘিরে ধরেছে, তা অনিবার্য পরিণতি বললে অত্যুক্তি হবে না। গুণগত মানকে কবরে পাঠিয়ে সংখ্যাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিমানবাবু এই পতন, বিচ্যুতি বুঝতেই পারেননি কেন? হয়তো পার্টিকে ভালবেসে কাজে ব্যস্ত থাকার জন্য, নতুবা কিছুই করতে পারবেন না ভেবে চুপ ছিলেন। কিন্তু ধ্বংসের ঢেউ আছড়ে পড়লে চোখ বন্ধ করে তাকে কি আটকে রাখা সম্ভব? তাই ২০০৬ সালে ২৩৫ জন বামপন্থী বিধায়ক আর ২০১৪ সালে ৩৫ জন সাংসদ আজ ২০২১ সালে শূন্য! যদি কোনও কমরেড দলকে সত্যিই ভালবাসেন, সম্মান করেন, কোনও বিশেষ দাদার অন্ধ স্তাবক না হন, তাঁর সদস্যপদ সহজে রিনিউ হয় না, লেভি দিতে রাজি থাকলেও সদস্যপদ বাতিল হয়ে যায় কোনও এক অদৃশ্য কারণে। এই ধারা বিগত ১০৫ বছর ধরে বিশ্বের সমস্ত মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টিতে চলে আসছে, গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার দোহাই দিয়ে। তা থেকে এই দেশ বা রাজ্য বাদ যেতে পারে না। তাই তো চিনের সদর দফতরে কামান দাগার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল, যা মাও জে দং শুরু করেছিলেন। তার পর বিশ্বে আর কোথাও সেই আকারে দেখা যায়নি কঠোর ভাবে দলীয় প্রশাসন আগলে রাখার জন্য। দশ বছর আগেও দলের বহিষ্কৃত সদস্য প্রসেনজিৎ বসু এই রাজ্যের সদর দফতর আলিমুদ্দিনের সামনে মিছিল নিয়ে গিয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশাসন তা আটকে দেয় প্রশাসনিক নিয়মেই। তাই বামপন্থীদের আজ আয়নার সামনে দাঁড়াতে হবে।
বিমানবাবু স্বীকার করুন, মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির অতীতের নেতানেত্রীদের যে সততা, নিষ্ঠা গ্রহণযোগ্যতা ছিল, বর্তমানে তা তলানিতে পৌঁছেছে।
মৃত্যুঞ্জয় বসু
কলকাতা-৩০
ক্ষমতার লোভ
‘পুজোয় চাই নতুন দল’ (১২-১০) প্রবন্ধে জাগরী বন্দ্যোপাধ্যায় বর্তমানে বহুচর্চিত দলবদল সংক্রান্ত রাজনীতির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করেছেন। অনেকে এই দলবদলকে মূল্যবোধের অবক্ষয় হিসাবে দেখেন। আবার এর স্বপক্ষে যুক্তি হিসাবে বলা যেতে পারে, এই দলবদলু নেতানেত্রীদের নির্বাচনের ফলাফলে দেখা যায়, এঁদের প্রত্যাখ্যাত হওয়ার থেকে গ্রহণযোগ্যতা বেশি। দলবদল আগেও ছিল, কিন্তু তার পিছনে অনেক যুক্তিসঙ্গত কারণ থাকত। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, দলত্যাগের নেপথ্যে একটাই কারণ, শুধুমাত্র ক্ষমতাকে আঁকড়ে নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করা। লক্ষ করলে দেখা যাবে, নির্বাচনে জেতার জন্য যে কর্পোরেট সংস্থাগুলোকে নিয়োগ করা হচ্ছে, তাদের প্রধান কাজই হল অন্য দল ভাঙিয়ে জনপ্রিয় নেতাদের নিয়োগকারী দলে নিয়ে আসা। ক্ষমতার লোভ এমনই যে, শোনা যাচ্ছে এই সকল সংস্থার অনেকেই দলের নিয়োগপত্র নেওয়ার আগে পদ লাভের আশায় দর কষাকষি অবধি করছেন। বর্তমান নেতানেত্রীরা ক্ষমতার অলিন্দে থাকার জন্য দলবদল করতে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু নতুন দল গঠনের জন্যে যে পরিমাণ পরিশ্রমের প্রয়োজন, তা তাঁরা করতে অপারগ। এঁদের প্রত্যেকেরই প্রতিটি পদক্ষেপ বোঝার মতো বুদ্ধি সাধারণ মানুষ এখনও করায়ত্ত করতে পারেননি। সুতরাং, এই দলবদলকে নীতিগত ভাবে মেনে নিয়ে জনগণ যত দিন এঁদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন, এবং লেখিকার বক্তব্য অনুযায়ী, কদাকারদেরও ‘ভাইরাল’ হয়ে মানুষের কাছে বাজার থাকবে, তত দিন মনে হয় আমাদের নীরব থাকাই শ্রেয়। সে নৈতিকতার বিচারে যতই অপছন্দ হোক না কেন।
অশোক দাশ
রিষড়া, হুগলি
চাষির আয়
‘কৃষকের আয় বাড়াতে হলে’ (১১-১০) প্রবন্ধে অচিন চক্রবর্তী ঠিকই লিখেছেন, কৃষি উৎপাদনের বৃদ্ধির হার ঊর্ধ্বমুখী হলেও কৃষকের আয় বাড়ে না। অথচ, ফড়ে-মজুতদারদের লাভে ভাটা পড়ে না। নিজের উৎপাদিত দ্রব্য মজুত করার অবস্থা গরিব চাষির নেই। তাই তাঁকে মজুতদার-আড়তদারদের শরণাপন্ন হতে হয়। আর মাঠ থেকে ফসল ওঠার সময়ই কোনও এক মন্ত্রবলে ফসলের দাম কমে যায়। গরিব চাষি ঋণ শোধ করার জন্য কম দামেই তা বিক্রি করতে বাধ্য হন। কিছু দিনের মধ্যেই সেই ফসলের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যায়। যত দিন না চাষি তাঁর উৎপাদিত পণ্যের দাম নিজে নির্ধারণ করতে পারবেন, তত দিন পর্যন্ত মুক্তি নেই। ফসল উৎপাদন করতে কত খরচ হয় এবং তার উপর কত দাম যুক্ত করলে লাভ হবে, একমাত্র চাষিই জানেন। কিন্তু ফসলের দাম নির্ধারণ করবে সেই ফড়ে-মজুতদাররা। সবুজ বিপ্লবের রাজ্যগুলিতেও তাই চাষিদের আত্মহত্যা করতে হয়।
ঋষভ কবিরাজ
কল্যাণী, নদিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy