—ফাইল চিত্র।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কোভিড মোকাবিলায় কৃতিত্ব দাবি করেছেন। অবাক না হয়ে পারি না। ৩০ লক্ষ পরিযায়ী মানুষকে অন্নহীন, আশ্রয়হীন অবস্থায় রেখে তড়িঘড়ি লকডাউন ঘোষণা কতটা মানবিক ছিল? হঠাৎ লকডাউন ঘোষণার ফলে যে সহায়-সম্বলহীন মানুষগুলোর মৃত্যু ঘটল পথে, রেল লাইনে, তার ‘কৃতিত্ব’ও প্রধানমন্ত্রী নেবেন কি? সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, কর্মহীন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার পাশাপাশি দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে দরিদ্র মানুষের হাতে নগদ টাকা তুলে দেওয়ার পরামর্শকে (যা বিশ্বের তাবড় অর্থনীতিবিদ বার বার বলছেন) প্রধানমন্ত্রী উপেক্ষা করে গিয়েছেন। বরং এই দুঃসময়ে রাজ্যগুলিকে তাদের ন্যায্য পাওনা জিএসটি-র টাকা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে আত্মনির্ভর হওয়ার সদুপদেশ দিয়েছেন। কিন্তু কোভিডের জন্য কাজ-হারানো মানুষদের কাজ ফিরে পাওয়ার কোনও সদর্থক পথ দেখাতে পারেননি। বরং ছাঁটাইয়ের রাস্তা মসৃণ করা নতুন শ্রমবিধিকে ‘শ্রমবান্ধব’ বলে উল্লেখ করেছেন। প্রথম ত্রৈমাসিকে জিডিপি-র হার কমেছে ২৩.৯%। প্রকৃতপক্ষে, কোভিড মোকাবিলায় আমজনতার কঠিন লড়াইয়ের কথা বার বার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী সুকৌশলে সরকারের ব্যর্থতাকে আড়াল করার চেষ্টা করছেন।
কুমার শেখর সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
রসিকতা
‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ (সম্পাদকীয়, ২৮-১০) নিবন্ধটি উদাসীন প্রশাসন ও লাভ-লোকসানের কারবারি পুজোকর্তাদের ছবি পরিষ্কার তুলে ধরল। সংক্রমণ আটকাতে জনগণকে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখা ও মাস্ক ব্যবহারের কথা প্রশাসন পইপই করে বললেও নিজেরা বোঝেনি, এই পুজোর পাঁচ-ছ’দিন যে জনসমুদ্র তৈরি হবে, তাতে পারস্পরিক দূরত্ব বজায় থাকবে না। টিভির পর্দায়, খবরের কাগজে যে সম্মানজয়ীদের মণ্ডপ, প্রতিমা বা সাজসজ্জার আয়োজন চোখে পড়ল, তার প্রস্তুতি অনিশ্চয়তার আবহে তড়িঘড়ি নেওয়া হয়নি মোটেই।
লকডাউনের প্রথম দু’-তিন মাস বাদ দিয়ে জনগণ বিধিনিষেধ মেনে স্বেচ্ছানির্বাসনে দিন গুজরান করলেও, তাবড় নেতা-মন্ত্রীদের পৃষ্ঠপোষকতায় শারদোৎসবের প্রস্তুতি চলেছে। তা নিয়ে প্রশাসন অন্ধকারে ছিল, এটা ভাবা বাতুলতা। শুধু সস্তা জনপ্রিয়তা লাভ ও ভোটকেন্দ্রিক ভাবনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জনগণের সঙ্গে রসিকতা করলেন নেতারা। প্রশাসন আর একটু দায়িত্বশীল হলে অনেক সঙ্কট এড়ানো যেত।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা
কলকাতা-১৫৪
বেহিসেবি
‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ সম্পাদকীয় একগুচ্ছ প্রশ্নের সামনে দাঁড় করিয়ে দিল! বেহিসেবি, বাঁধনছাড়া উচ্ছ্বাস সচেতনতার কবর খুঁড়ল! আজ সকালে বোড়াল মেন রোড সংলগ্ন বাজারে গিয়ে ফিসফাস কানে এল, ‘‘এলাকায় বাড়ি বাড়ি করোনা হয়েছে! সব দলবেঁধে ঠাকুর দেখতে বেরোনোর ফল!’’ এ যেন আলোর উপর দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পতঙ্গের ঝাঁপিয়ে পড়ার মতো! আমরা যারা যাবতীয় সতর্কতা অবলম্বন করে পুজো কাটালাম, তারাও আতঙ্কিত হয়ে রইলাম। চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিশ্রম আরও দীর্ঘায়িত হল। আমরা আর কবে সাবালক হব?
বিশ্বজিৎ কর
কলকাতা-১০৩
এই ভাল
অতিমারি আবহে সংশয়ের মধ্যে দিয়ে পুজো কাটলেও, তা সুষ্ঠু ভাবেই মিটেছে। সবচেয়ে সুন্দর ভাবে মিটেছে এ বারের বিসর্জন পর্ব। প্রতিমা নিরঞ্জনের জন্য না ছিল ট্র্যাফিক জ্যাম, না ছিল ব্যারিকেড। সুশৃঙ্খল ভাবে কেটেছে পুজো ও বিজয়া। বাঁধভাঙা ভিড় যেমন রাস্তায় চোখে পড়েনি, তেমনই পুজোকে কেন্দ্র করে কোনও অসংযমী আচরণ করতেও মানুষকে দেখা যায়নি। ঠিক একই রকম অনুশাসন মেনে যদি প্রতি বছর শারদীয়া পুজো পর্ব কাটে, যেখানে ভক্তি থাকবে, আড়ম্বরের বাড়াবাড়ি থাকবে না, নিষ্ঠা থাকবে, জাঁকজমক থাকবে না, তা হলে বড় ভাল হয়। যে পুজোয় লোক-দেখানো আতিশয্যের জন্য ঐতিহ্য লজ্জা পাবে না, সেই পুজো আবার বাঙালির জীবনে ফিরে আসুক।
দেবাশিস চক্রবর্তী
মাহেশ, হুগলি
পুজো ’৭৮
এই অতিমারির বছরেও পুজো হল জাঁকজমক করেই। আমার দেখা ১৯৭৮ সালের সেপ্টেম্বরের শেষের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় জলের তোড়ে একেবারেই ভেসে গিয়েছিল এ রাজ্যের ১৬টি জেলার পুজো। গ্রামাঞ্চলে সে বছরের মহালয়া থেকে দুর্গাপুজো সমস্তটাই ছিল নিশ্চুপ। শহরে কিছু পুজো কোনও রকমে হতে পারলেও গ্রামগঞ্জে পাওয়া যায়নি ঢাক ও মাইকের আওয়াজ। ছিল শ্মশানের নিস্তব্ধতা। ১৯৭৮ সালে পুজোর যে চেহারা দেখেছিলাম, তার কিয়দংশও দেখতে পেলাম না দেশব্যাপী, বিশ্বব্যাপী এই করোনা অতিমারিতে। আদালতের নির্দেশে ভিড় কিছুটা থিতিয়ে গেলেও সামগ্রিক ভাবে উৎসাহ-আনন্দে তেমন ভাটা পড়তে দেখিনি। সারা বিশ্ব করোনার আঘাতে ক্ষতবিক্ষত। এই পরিস্থিতিতে মানুষের মনে এত আনন্দ, ফুর্তি আসে কোথা থেকে?
তাপস সাহা
শেওড়াফুলি, হুগলি
রোগের হাট
দীর্ঘ লকডাউনে বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি বেথুয়াডহরিতে বুধবারের হাট আবার সর্বসাধারণের জন্য খোলা হয়েছে। কিন্তু ক্রেতা এবং বিক্রেতা, উভয় পক্ষই মাস্ক ব্যবহারে প্রচণ্ড অনীহা প্রকাশ করছেন, এমনকি শারীরিক দূরত্ব পর্যন্ত মানছেন না। অথচ নাকাশিপাড়া এলাকায় প্রতি দিন করোনা-আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদি কোনও উপসর্গহীন করোনা-আক্রান্ত রোগী হাটে আসেন, তা হলে তাঁর থেকে এলাকায় প্রবল ভাবে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে।
অভীক দে
নাকাশিপাড়া, নদিয়া
অন্তর্যামী
একটি রাজনৈতিক দলের বড়, ছোট, মাঝারি সব রকম ওজনের নেতা-নেত্রীকে দেখি হামেশাই একটা কথা বলেন, ‘‘বাংলার মানুষ এটা মেনে নেবেন না,’’ ‘‘বাংলার মানুষের হৃদয়ে অমুকের আসন পাতা আছে’’, ‘‘বাংলার মানুষ এর জবাব দেবেন’’।
বাংলার প্রতিটি মানুষকে ধরে ধরে মনের খোঁজ এঁরা কী করে নেন? ‘‘বাংলার জন্য প্রাণ দিতে পারি’’, এমন সব নাটকীয় সংলাপও শোনা যায়। এই করে রাজ্যের জ্বলন্ত সমস্যাগুলির কতটা সমাধান হয়েছে?
প্রণব রাহা
দুর্গাপুর, পশ্চিম বর্ধমান
স্পর্শহীন
খারাপ লাগছে বিজয়া দশমীতে পারস্পরিক মিলনের করুণ অবস্থা দেখে। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে তো এত দিন অনেক কিছুই চলল। কিন্তু কোলাকুলি, প্রণাম, আশীর্বাদ, এগুলো কি ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে সম্ভব? স্পর্শ ছাড়া অনুভূতি আসে না। অনলাইনে কোলাকুলি আদৌ সম্ভব নয়। বিদেশ থেকে বাবা ছেলেকে যতই আশীর্বাদ করুন ভিডিয়ো কলে, তাঁর হাত তো আর ছেলের মাথায় পড়ে না! কিংবা বাবার পায়ে ছেলের হাতের স্পর্শ পেলে বাবার যে অনুভূতি হয়, তা কি ভার্চুয়াল মাধ্যমে সম্ভব? এ বছর দশমীতে বাঙালির স্পর্শ-বঞ্চনা ইতিহাস হয়ে থাকবে। আগামী বছর পুজো ফিরে আসুক তার স্বাভাবিক মেজাজে, এই কামনা করি।
অমরনাথ কর্মকার
কলকাতা-১৫০
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy