ওই অঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দারা কেন প্রতিবাদ করে অসহায় মহিলাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন না? না কি তাঁরাও এই ঘটনায় মজা লুটছিলেন?
‘ধর্ষিতাকে জুতোর মালা, মুখে কালি’ (২৮-১) খুবই লজ্জাজনক ঘটনা। এক জন মহিলাকে গণধর্ষণ করে, মাথা মুড়িয়ে, মুখে কালি মাখিয়ে প্রকাশ্যে ঘোরানো হল, আর প্রশাসন হাত গুটিয়ে বসে থাকল, এ আমরা কেমন রাজত্বে বাস করছি? আইনের শাসন থাকলে কী করে এই ধরনের অমানবিক ঘটনা ঘটতে পারে? প্রকাশ্য রাস্তায় দীর্ঘ ক্ষণ ধরে এই অপরাধ সংঘটিত হওয়ার কথা কেন প্রশাসনের কানে যথাসময়ে পৌঁছল না? না কি জেনেও না-জানার ভান করেছেন আধিকারিকরা, তাঁরাও ওই অসহায় মহিলাকে সাজা দিতে চেয়েছিলেন? প্রশ্ন জাগে, নাগরিক সমাজও কি চোখে ঠুলি আর কানে তুলো গুঁজে ছিল? ওই অঞ্চলের সাধারণ বাসিন্দারা কেন প্রতিবাদ করে অসহায় মহিলাকে বাঁচাতে এগিয়ে এলেন না? না কি তাঁরাও এই ঘটনায় মজা লুটছিলেন? যদি তেমনই হয়ে থাকে, তবে স্বীকার করতেই হবে যে, পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এর পর থেকে তো যে কোনও ভয়ঙ্কর ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটিয়ে অপরাধীরা রাস্তায় নির্বিবাদে ঘুরে বেড়াবে, অপরাধ করেও পার পেয়ে যাবে।
দিল্লির ওই মহিলাকে যারা ধর্ষণ করল, এবং যারা মহিলাকে প্রকাশ্য রাস্তায় অপমান করল, তাদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। একই সঙ্গে প্রশাসনের গাফিলতি থাকলে তারও তদন্ত করে দোষী আধিকারিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা করা হোক।
অতীশচন্দ্র ভাওয়াল
কোন্নগর, হুগলি
হিংসার শিকড়
‘প্রশ্রয়ের ফল’ (২৮-১) সম্পাদকীয়ের জন্য ধন্যবাদ। ধর্ষণ এখন প্রায় রোজই কোথাও না কোথাও সংঘটিত হচ্ছে। দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ড, হাথরস কাণ্ড, কাঠুয়া, উন্নাও, কামদুনি, পার্ক স্ট্রিট প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে বেপরোয়া ধর্ষকরা নৃশংসতার পরিচয় রেখেছে। ধর্ষিতার জাত, ধর্ম, অর্থনৈতিক অবস্থান, এগুলো ধর্ষণ সম্পর্কে আলোচনায় প্রধান বিবেচ্য বিষয় নয়, অপরাধ ও অপরাধীর দিকেই নজর দিতে হবে, কারণ এরা অপরাধ করেছে নারীর বিরুদ্ধে।
সবাই জানে যে, ধর্ষণের মতো অপরাধে কঠোর শাস্তি পেতেই হবে। তবুও এই অপরাধ কমছে না। এর জন্যে সমাজের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। ছোট থেকেই ছেলেদের মেয়েদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার শিক্ষা দিতে হবে। বর্তমানে সিনেমা, ওয়েব সিরিজ়গুলিতে ধর্ষণের দৃশ্য ভয়াবহ ভাবে প্রদর্শিত হয়, সঙ্গে থাকে নানা আপত্তিকর দৃশ্য। এগুলিও কিন্তু পরোক্ষ ভাবে ধর্ষণের সংখ্যা বৃদ্ধিতে সাহায্য করছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দরকার, যাতে দ্বিতীয় বার এই অন্যায় করার কথা কেউ ভাবতেও না পারে।
সর্বানী গুপ্ত
বড়জোড়া, বাঁকুড়া
বাংলার লজ্জা
‘প্রশ্রয়ের ফল’ সম্পাদকীয়টি নির্ভীক! একটু যোগ করা দরকার মনে করে এই চিঠি। ধর্ষণ নিয়ে এখন আর তেমন হইচই হয় না, অথচ দিল্লির নির্ভয়া কাণ্ডে একটা সরকারই পড়ে গেল! কাজেই, দিল্লির কাণ্ডে যে সুদূরপ্রসারী ফল পাওয়া গিয়েছিল, সেটা পরবর্তী কালে রাজনৈতিক স্থবিরতায় হারিয়ে গেল! গণতন্ত্রের এই দুর্ভাগ্য সত্যি নতুন করে ভাবাচ্ছে!
হাওড়ার আন্দুল চুনাভাটির ভয়াবহ ধর্ষণকাণ্ডের সাক্ষী রইল সারা দেশ! মুখে চুনকালি পড়ল বাংলা ও বাঙালির! তাই ধর্ষণের ঘটনায় কোনও রকম রং, রাজনীতি দেখা, ক্ষমতার দম্ভ দেখানো উচিত নয়।
মনশ্রী চৌধুরী
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
সমাজের ভূমিকা
যে কোনও ধর্ষণের ক্ষেত্রেই একটি প্রশ্ন বার বার উঠে আসে, কেন মহিলাদের প্রতি এই নিগ্রহের প্রবণতা কমছে না? এত নিন্দা, ভর্ৎসনা সত্ত্বেও, নিয়ন্ত্রণ কেন সম্ভব হচ্ছে না? কারণগুলি কি যথেষ্ট ভাবে পর্যালোচিত? যদি জীববিদ্যার ভাষা বর্জন করে মানবাধিকারের ভাষায় বলি, তবে বিষয়টিকে নিগ্রহ বলে চিহ্নিত করা উচিত। কারণ, পুরুষ ধর্ষণ করে শুধুমাত্র শারীরিক সুখের তাড়না থেকে নয়, নিগ্রহ করার বাসনা থেকেও একটি মহিলাকে ধর্ষণ করা হয়। একটি মহিলাকে নিগ্রহ করার, শাস্তি প্রদান করার, উপযুক্ত জবাব দেওয়ার সব থেকে বড় পথ হল যৌন অবমাননা। গালাগালির প্রয়োগেও মা, বোন জাতীয় অনুভূতিশীল সম্পর্কগুলি যৌন সম্ভোগের সঙ্গে মিশিয়ে বলা হয়।
এই প্রসঙ্গে সুচিত্রা ভট্টাচার্যের বিখ্যাত দহন উপন্যাসটির কথা মনে পড়ে, যেখানে পুরুষের রাগের বহিঃপ্রকাশে ধর্ষণের বিষয়টিকে লেখিকা তুলে ধরেছিলেন। একটি সামাজিক অপরাধের পিছনে বিশেষ এক জন বা কয়েক জন দায়ী নয়, সামগ্রিক ভাবে সমাজের স্তরগুলি তাকে প্রতিপালন করে দীর্ঘ দিন ধরে। কার্যকারণ এবং উৎপত্তিতে ফিরে না গেলে এই নির্মম অবমাননার অনুসন্ধানগুলি সাময়িক আশা জাগাতে পারে, কিন্তু বিহিত করতে পারে না।
সোমা দত্ত
কলকাতা-২৮
বিবাহে ধর্ষণ
‘বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়ে সরব রাহুল’ (১৮-১) খবরটি পড়লাম। এখনও পর্যন্ত বৈবাহিক ধর্ষণ, অর্থাৎ স্ত্রী’র ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে যৌন সম্পর্ক করলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হয় না। কেউ কেউ পারিবারিক হিংসার সংজ্ঞার পরিধিকে বাড়ানোর কথা ভেবেছেন। এই ধরনের অত্যাচারের শিকার হয়ে অনেকে আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছেন। মহামান্য আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলতে চাই, বৈবাহিক ধর্ষণ আইনের চোখে অপরাধ হলে, শাস্তির ব্যবস্থাও থাকা চাই। এ ক্ষেত্রে ধর্ষণের প্রমাণে নিশ্চয়ই মেডিক্যাল পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। বিবাহ একটা প্রাতিষ্ঠানিক, পবিত্র সম্পর্ক, এর জন্য পরস্পরের প্রতি বন্ধুত্বপূর্ণ অনুভূতিটাই চাবিকাঠি। দ্বৈতগান যেমন একই ‘স্কেল’-এ গাইতে হয়, তেমনই যৌনকামনাও একই স্তরে বেঁধে এগোনো দরকার।
অঞ্জন কুমার শেঠ
কলকাতা-১৩৬
রাম রহিম
‘পঞ্জাবে ভোটের মুখে জেলের বাইরে রাম রহিম’ (৮-২) পড়ে স্তম্ভিত হতে হয়। এ দেশের নির্বাচন আইন এমন ত্রুটিপূর্ণ যে, খুন ও ধর্ষণের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিতের ভাবমূর্তি কাজে লাগানোর আশায় তাকে তিন সপ্তাহের জন্য সংশোধনাগারের বাইরে আনাও সম্ভব।
ভারতে দুষ্কৃতীরা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে এই অজুহাতে যে, তার অপরাধ তখনও প্রমাণিত হয়নি। জেলবন্দিরা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারে, এবং জেতেও। যেমন, কয়েক বছর আগে বিহারের সাধু যাদবের জেলে বসে ভোটে জেতার ঘটনা। অথচ, ভারতের নির্বাচন প্রক্রিয়া চিরদিন এমন কলঙ্কজনক ছিল না।
সঞ্জিত ঘটক
কলকাতা-১০৩
বাড়ুক টহল
কলকাতা আবার এক অমানবিক ঘটনার সাক্ষী রইল (“শহরে ‘যৌন নির্যাতন’ মূক বধির যুবতীকে”, ২৯-১)। এই ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অনভিপ্রেত। আশ্বাসের কথা, পুলিশ অপরাধীকে দ্রুত শনাক্ত করেছে, গ্রেফতারও করেছে এক জনকে। কিন্তু পুলিশের টহলদারি সত্ত্বেও শহরের রাস্তায় এমন ঘটনা ঘটল কী করে? পুলিশের আরও বেশি সতর্কতা ও দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন। উচিত, সব রাস্তায় সন্ধ্যা থেকে সারা রাত টহলদারি বাড়ানো। বিশেষ করে নির্জন ও অন্ধকারাচ্ছন্ন এলাকায় এই ধরনের অপরাধের প্রবণতা থাকে। সেখানে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, তা নিশ্চিত করতে পারে পুলিশই। পুলিশ ও প্রশাসনের উচিত এই ধরনের ঘটনাকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া।
পঙ্কজ সেনগুপ্ত
কোন্নগর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy