‘গোলি মারো’ স্লোগান পৌঁছে গেল শহিদ মিনারের জমায়েতে। সৌজন্যে অমিত শাহের জনসভা। ২৪% মুসলিম জনগণ অধ্যুষিত রাজ্যে কী দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে, তা সময়ের ওপর ছেড়ে দেওয়া চলে কি? সাম্প্রদায়িক বাটোয়ারা ইতিহাসের পাতায় পড়েছি। ১৯৪৬-এর প্রত্যক্ষ সংগ্রামের বীভৎসতা শুনেছি পিতামহের মুখে। ভাগলপুরের দাঙ্গা, ইন্দিরা হত্যার পর শিখ হত্যা কিশোর মনকে ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত করে তুলেছিল। মান্টোর দাঙ্গা-বিরোধী গল্প পড়ে বা টিভিতে গোবিন্দ নিহালনির ‘তমস’ দেখে, বাস্তবে কী ঘটতে পারে— কল্পনার শাঁসটুকু ছাড়িয়ে তা বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি। ২০০২-এর গুজরাত দাঙ্গার বীভৎসতা, হাতজোড় করে প্রাণভিক্ষা চাওয়া কুতুবুদ্দিনের ছবি স্পষ্ট মনে আছে। তরবারি দিয়ে পেট চিরে গর্ভস্থ সন্তানকে খুন, কোন ধর্ম অনুমোদন করে— দেশবাসী আজও বুঝে উঠতে পারেনি। ভাবলাম ২০০২ অতীত। ‘এই মৃত্যু উপত্যকা আমার দেশ নয়’ আউড়ে বালিতে মুখ গুঁজে রইলাম। ফ্যাসিবাদী শক্তি তার দাপট দেখিয়ে ছাড়ল খোদ রাজধানীর বুকে। অনেকের প্রাণহানি ঘটল, অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হলেন, বন্দুকবাজ ঘুরে বেড়াল পুলিশের নাকের ডগায়, বেছে বেছে ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে তবে ক্রোধ পরিতৃপ্ত হল। সংখ্যালঘুর মনে ভয় ধরানোর উদ্দেশ্য ১৮ আনা সফল।
কিন্তু আশ্চর্য হলাম পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায়। অতীতে বিভিন্ন বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ডাকা বৈঠক এড়িয়ে চলা মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী, প্রোটোকল মেনে ভুবনেশ্বরে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করে এলেন। তাঁর দলকে শাহের আগমন উপলক্ষে কোনও প্রতিবাদে শামিল হতে দেখা গেল না। শুধু টিভিতে বাইট দিয়ে কর্তব্য সারলেন।
রাজশেখর দাস
কলকাতা-১২২
কখন সক্রিয়
প্রধানমন্ত্রীর নিন্দা করে শিক্ষক অপরাধী হলেন। সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার হলেন অসমে। পুলিশ সক্রিয়। জনপ্রতিনিধির উস্কানিতে হিংসায় দিল্লিতে প্রাণ গেল ৪২ জনের। অথচ এটা অপরাধ নয়। পুলিশ নিষ্ক্রিয়। আসলে পুলিশ স্বয়ংক্রিয় নয়। তাই তার সক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুললে আসল অপরাধী আড়ালে থেকে যায়। তবে আজকের এই সময়ে সেই অপরাধীর চেহারা চোখে দেখা গেলেও, তার বর্ণনা করলে তুমি অপরাধী। তোমাকে কথা বলতে হবে মেপে, চলতে হবে মেপে। না হলে বুঝতেই পারবে না তুমি কখন উঠবে কেঁপে। আসলে এখনও প্রমাণ হয়নি যে এ দেশ তোমার !
নরেন্দ্রনাথ কুলে
কলকাতা-৩৪
জনসম্পদ
বোঝা হওয়া তো দূরস্থান, প্রকৃতপক্ষে জনসংখ্যা এক জাতীয় সম্পদ, যার যথাযথ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে সর্ব ক্ষেত্রে দেশকে সমৃদ্ধ করা যায়। আর ভারত শুধু জনসংখ্যার সম্পদে বলীয়ানই নয়, বিপুল যুবশক্তিতেও আশীর্বাদধন্য। এই যৌবনের দূতরা নিজেদের উদ্দীপনা ও দক্ষতার মাধ্যমে দেশের দীর্ঘকালীন সেবা করতে সক্ষম। জনসংখ্যা যদি সত্যিই এক বোঝা হত, তা হলে বিশ্বের বহু অগ্রসর উন্নত দেশকে আজ জনসংখ্যা হ্রাসের কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে হত না। জনসংখ্যা বৃদ্ধি করার জন্য কম বয়সি দম্পতিদের অনুপ্রাণিত করতে বিভিন্ন লোভনীয় ‘ইনসেনটিভ’ আজ সেই দেশগুলোকে দিতে হত না!
‘নাচতে না জানলে উঠোন বাঁকা’ প্রবাদের জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে, মানবসম্পদের পূর্ণ ব্যবহার করতে অপারগ (বা তার উপযুক্ত ব্যবহার করতে অনিচ্ছুক) নেতারা যখন ‘জনবিস্ফোরণ’-এর কার্পেটের তলায় নিজেদের চূড়ান্ত ব্যর্থতাকে ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে চান, তখন হাসি সামলানো শক্ত হয়ে পড়ে।
আসলে, মানবসম্পদের পূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হয়। কিন্তু ভারতে আজ বোধ হয় এমন কোনও সংস্থা নেই যেখানে বিপুল কর্মী হ্রাস হচ্ছে না! সে শূন্য পদে কর্মী নিয়োগ না করেই হোক, বা কর্মী সঙ্কোচন করেই হোক।
ফলে দক্ষ শক্তিশালী উদ্যমী মানুষের স্বর্ণখনি থাকা সত্ত্বেও; এই সমাজে কর্মহীন ও শোষিত অসহায়দের সংখ্যা বিপুল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যাঁদের ভবিষ্যৎ সত্যিই আলোকবিহীন। বলা বাহুল্য, তাঁদের পরিবারের ভবিষ্যৎও ক্ষতিগ্রস্ত। আসলে, দেশ বলতে বুলেট ট্রেনও বোঝায় না, অতিকায় সুউচ্চ মূর্তিও বোঝায় না। মঙ্গলযানও নয়, প্রকাশ্য রাজপথে গণ-যোগব্যায়ামও নয়। রামমন্দিরও নয়, এমনকি গগনচুম্বী পতাকাও নয়। দেশ-এর অর্থ হল দেশের মানুষ। সেটুকু মনে রাখলেই, বিপুল জনসংখ্যাকে অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ মনে হবে। দেশের কল্যাণের জন্য তাকে গঠনমূলক ভাবে ব্যবহার করলে, দেশ এগিয়ে যাবে।
কাজল চট্টোপাধ্যায়
সোদপুর
অবিমৃশ্যকারিতা
‘জনসংখ্যা বিল’ ও ‘জনবিস্ফোরণ’ (১৮-২) চিঠি দু’টি পড়ে স্তম্ভিত হলাম। এক পত্রলেখিকা তো ঘোষণাই করে দিয়েছেন, জনসংখ্যার প্রভাব বুঝতে ‘অর্থনীতির গম্ভীর তত্ত্ব বা অঙ্কের সিঁড়িভাঙা’র কোনও প্রয়োজন নেই। এ প্রসঙ্গে জানাই, ডেমোগ্রাফি বা জনতত্ত্ব বা জনসংখ্যাতত্ত্ব একটি বিশেষ বিজ্ঞান। এটার অধ্যয়ন করা হয়। রাম শ্যাম যদু মধু যে কেউ এটা নিয়ে কথা বললে, তা অবিমৃশ্যকারিতা। পৃথিবীর জনসংখ্যা কত হওয়া উচিত বা বসুন্ধরার ধারণক্ষমতা কত, তা নিয়ে বিতর্ক আছে।
জনসংখ্যার যে চাপের কথা অহরহ আমরা বলি, তা-ও আপেক্ষিক। কোনও দেশের জনসংখ্যা এবং সেই দেশের জমির পরিমাণ দিয়ে জানা যেতে পারে জনসংখ্যার ঘনত্ব। দক্ষিণ কোরিয়ার জনঘনত্ব ভারতের চেয়েও বেশি, কিন্তু দেশটি ভারতের চেয়ে কয়েক কদম এগিয়ে। তাই জনসংখ্যাকে সর্ব দোষের দোষী বলে ভাবলে হবে না।
কুশল মিত্র
কলকাতা-৪
অপরাধের পাতা
খবরের কাগজে প্রতি দিন যেমন খেলার পাতা থাকে, এ বার তেমন একটি ‘অপরাধের পাতা’ চালু হোক, যাতে দেশ দুনিয়া ও রাজ্যের প্রতি দিনের খুন, ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, অপহরণ, গুলিগোলা ছোড়া ইত্যাদি খবরগুলো এক জায়গায় থাকবে।
সবিতা রায়
কালনা, পূর্ব বর্ধমান
আমি তা বলিনি
‘প্রতিবাদে শামিল ক্ষুব্ধ বিদেশি ছাত্রও’ (২০-১২) শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে আমাকে উদ্ধৃত করে কিছু কথা লেখা হয়েছে। কিন্তু উদ্ধৃতিগুলি ভুল, অসঙ্গতিপূর্ণ, পরিপ্রেক্ষিতহীন এবং যে সাংবাদিক আমাকে চারটি প্রশ্ন করেছিলেন তার উত্তরে আমার বলা কথাকে যথাযথ ভাবে তুলে ধরেনি। আমাকে করা প্রশ্নের (‘আপনি কোথা থেকে এসেছেন? আপনি কি এক জন শিক্ষার্থী? আপনি কোথায় পড়েন ও আপনার নাম কী?’) উত্তরে আমি যথাক্রমে বলেছিলাম, ‘পোল্যান্ড। হ্যাঁ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। কামিল।’ এইটুকু ছাড়া, অন্য কোনও কথা আমি বলিনি। প্রতিবেদক নিশ্চয়ই সে দিন বহু সংখ্যক মানুষের সঙ্গে কথা বলে থাকবেন, ভুলবশত তিনি আমার নামে নানা কথা বা উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। আপনাদের কাছে সত্বর একটি সংশোধনী প্রকাশের অনুরোধ জানাই, কারণ এর জেরে ভারতে আমার পড়াশোনা ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কামিল শেদচিনস্কি
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়
প্রতিবেদকের উত্তর: ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৯-এর সিএএ বিরোধী মিছিলে যাদবপুরের তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের পোলিশ ছাত্র কামিল শেদচিনস্কির সঙ্গে কথা হয়েছিল, সিএএ এবং মিছিল নিয়ে। তিনি যা বলেছিলেন, তার ভিত্তিতেই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে।
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy