প্রশাসনিক কাজকে সুগম করার জন্য জেলা ভাঙার প্রয়োজন ছিল।
সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ৭টি নতুন জেলা তৈরি করার কথা ঘোষণা করেছেন। অর্থাৎ, ২৩ থেকে জেলার সংখ্যা দাঁড়াবে ৩০। প্রশাসনিক কাজকে সুগম করার জন্য জেলা ভাঙার প্রয়োজন ছিল। জেলার আয়তন ছোট হলে যেমন প্রশাসন সুষ্ঠু ভাবে তার কাজকর্ম পরিচালনা করতে পারে, তেমনই সাধারণ মানুষের অনেক সুবিধা হয়। এমন অনেক জেলা রয়েছে যেখানে একদম প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের কাছে জেলা সদরে আসা প্রায় অসম্ভব, কিন্তু বাধ্য হয়ে তাঁদের আসতে হয়। তাই জেলা ছোট হলে মানুষ অনেকাংশে উপকৃত হবেন। কারণ, একদম প্রান্তিক মানুষটির কাছেও সরকারি সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য ছোট জেলার গুরুত্ব অপরিসীম। এ ছাড়াও একটা জেলা মানে, সাধারণত সেখানে থাকবে একটি জেলা হাসপাতাল, জেলা আদালত। এরও সুবিধা পাবেন সংশ্লিষ্ট জেলার মানুষজন।
আর একটি বিষয় হল, নতুন জেলা তৈরি হওয়া মানে সেখানকার প্রশাসনিক কাজকর্ম পরিচালনার জন্য ডব্লিউবিসিএস, পুলিশ আধিকারিক নিয়োগ করা হবে। ফলে, পিএসসি পরীক্ষায় আসন সংখ্যাও বাড়বে, যা আমাদের মতো ছাত্রদের কাছে অত্যন্ত আনন্দের খবর। এ ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি দফতরেও কর্মচারী নিয়োগ হবে, ফলে কর্মসংস্থানও হবে।
তবে জেলা বিভাজনের আগে সেই জেলার মানুষের আবেগ, ঐতিহ্য, ঐতিহাসিক এবং বর্তমান সামাজিক পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করা উচিত। প্রশাসনিক জোর না খাটিয়ে মানুষের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে যদি এই ভাগ করা হয়, আমার মতে সেটাই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।
দিগন্ত চক্রবর্তী, মথুরাবাটি, হুগলি
কাঁচির ক্ষত
একটি মানচিত্রে নিপুণ ভাবে এক বার কাঁচি চালিয়ে দিলে, মুহূর্তের মধ্যে বদলে যায় একটি ভূখণ্ডের ভৌগোলিক অবস্থান। আজ পর্যন্ত যা ‘এক’ ছিল, কাল থেকে তা-ই ‘আলাদা’ হয়ে যায়। আমরা এমন এক দেশে বসবাস করি, যে দেশের উপর একাধিক বার চলেছে এই বিভাজনের কাঁচি। অভাব এবং দারিদ্র যে দেশের ছায়াসঙ্গী, নিঃসঙ্গতা যে দেশের মানুষের জীবনপথের সহযাত্রী, সে দেশের মানচিত্রে যত বার কাঁচি চলে তত বার জনসাধারণের হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হয়। যখনই একটি ভূখণ্ড ভাগ হয়, তখনই উক্ত অঞ্চলে বসবাসকারী মানুষের জীবনে ‘এ পার’ ও ‘ও পার’ এই দু’টি শব্দ এক নতুন অর্থ নিয়ে আসে। ‘এ পার’-এর সঙ্গে ‘ও পার’-এর বিচ্ছেদ-যন্ত্রণা অসহনীয় হয়ে ওঠে। আমরা যারা পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করি, তাদের কাছে এই শব্দ দুটো নতুন নয়। আমরা জানি, এই শব্দ দুটোর শরীরে বাংলার মানুষের মানবাত্মার কী মারাত্মক মর্মযন্ত্রণা লেগে আছে!
সম্প্রতি, পশ্চিমবঙ্গ সরকার নতুন সাতটি জেলার কথা ঘোষণা করেছে। অর্থাৎ, কয়েকটি জেলাকে ভেঙে তৈরি হবে নতুন সাতটি জেলা। এই বিভাজনের পিছনে নিশ্চিত ভাবে কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণ রয়েছে। হয়তো সেই কারণগুলি অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ভাবে ভবিষ্যতে ফলপ্রসূও হতে পারে। বিভাজনের এই কারণগুলিকে উপেক্ষা করা যায় না। তবে আমরা কি এই বিভাজনটিকে শুধুমাত্র রাজনীতি এবং অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই দেখব? এখানে কি মানুষের যন্ত্রণার কোনও জায়গা নেই? দীর্ঘকাল ধরে একই জায়গায় বসবাস করলে এক ধর্মের মানুষের সঙ্গে আর এক ধর্মের মানুষের এক আত্মিক সম্পর্ক তৈরি হয়। এক ভাষার মানুষের সঙ্গে আর এক ভাষার মানুষের মিলনে গড়ে ওঠে বৈচিত্র। এই সমস্ত কিছু কি তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাবে মানচিত্রের উপর আঁকা একটি দাগের কারণে? সরকারের একটিমাত্র সিদ্ধান্তে শ্রীচৈতন্যদেব ও কৃত্তিবাস ওঝার জন্মস্থান বদলে যাবে এক রাতের মধ্যেই?
জেলা বিভাজন দেশভাগের মতো ভয়াবহ রূপ নেবে না জানি। তবু জেলা ভাগের সিদ্ধান্তে যাঁরা বিভাজিত হলেন, তাঁদের যন্ত্রণা ইতিমধ্যে সমাজমাধ্যম জুড়ে লক্ষ করা যাচ্ছে। কোনও রাজনৈতিক দলকে দায়ী করে লাভ নেই। দোষারোপ করতে ইচ্ছে করে, সারা পৃথিবীর ক্ষমতাশীল মানুষদের। কেন বার বার আমরা প্রশাসনের কাছে অসহায় হয়ে পড়ি?
সৌমাল্য চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৩২
গ্রহণযোগ্য
প্রশাসনিক কাজের সুবিধার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের জেলার সংখ্যা ২৩ থেকে বাড়িয়ে ৩০ করার প্রস্তাব সত্যিই যথার্থ। পশ্চিমবঙ্গের পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খণ্ডের জনসংখ্যা যেখানে ৩.২০ কোটি, সেখানকার জেলার সংখ্যা ২৪, ওড়িশার জনসংখ্যা ৪.৫০ কোটি ও সেখানকার জেলার সংখ্যা ৩০, বিহারের জনসংখ্যা প্রায় ১০ কোটি, সেখানকার জেলার সংখ্যা ৩৮। সেই দিক থেকে পশ্চিমবঙ্গের জনসংখ্যা প্রায় ১১ কোটি। কিন্তু জেলার সংখ্যা মাত্র ২৩। জেলা যত বেশি কাজের সুযোগও তত বেশি, ফলে সাধারণ মানুষের সুবিধা। সদর জেলা অফিস, আদালত সমস্ত কাছাকাছি চলে আসে। যদিও জেলা ভাগ এবং তার নামকরণ নিয়ে নানা বিতর্ক থেকে যায়, কারণ জেলা ভাগের সঙ্গে স্থানীয় আবেগ জড়িয়ে থাকে। সেই কারণেই দিনাজপুর, মেদিনীপুর, বর্ধমান, ২৪ পরগনা জেলা ভাগ হলেও মূল নামটি বদলায়নি। ঠিক তেমন ভাবে এ বারও গুরুত্ব পেয়েছে স্থানীয় ভাবাবেগ। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর লীলাক্ষেত্রের নাম নদিয়া রেখেই সেই জেলাকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ইছামতী নদীর পাশ ঘেঁষে বাসিন্দাদের আবেগকে ধরে রাখতে জেলার নাম ‘ইছামতী’ করার পিছনেও সাধারণের ভাবাবেগের গুরুত্ব প্রকাশ পেয়েছে। সুন্দরবনের একটি আলাদা সত্তার প্রয়োজন ছিল। এত দিনে তা পেল আলাদা জেলা হিসেবে। মুখ্যমন্ত্রীর এই জেলা ভাগের সিদ্ধান্ত সমস্ত দিক থেকে বৈজ্ঞানিক এবং রাজ্যের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয়। সমস্ত রাজ্যবাসীর উচিত এই সিদ্ধান্তকে গ্রহণ করা।
দীপেন্দু দাস, রানাঘাট, নদিয়া
জটিল প্রক্রিয়া
রাজ্যে সম্প্রতি নতুন ৭টি জেলা তৈরির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গে জেলার সংখ্যা হবে ৩০। তবে কোন কোন এলাকা, ব্লক ও মহকুমা নিয়ে নতুন জেলাগুলো হবে, তা এখনও পুরোপুরি ধোঁয়াশায়। যদিও ৬ মাস সময় নেওয়া হয়েছে। নতুন জেলা গঠনে প্রশাসনিক অনেক নিয়মবিধি আছে, দরকার উচ্চ ন্যায়ালয় ও কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন এবং আছে অনেক রকমের লাল ফিতের গিঁট। নতুন শিক্ষার্থীরা কোন ম্যাপ ব্যবহার করবে, ভূগোল বইয়ের কোন লেখা অনুসরণ করবে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিষয় যেন নির্ধারিত সময়ে ঘোষণা করা হয়, তা দেখতে হবে। না হলে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হবে। ভৌগোলিক বিভাজন ও জেলার নাম নির্ধারণ হবে আগামী ইতিহাসের নতুন পরম্পরা। প্রত্যেক মানুষ, ইনস্টিটিউশন, কোম্পানি, বিভিন্ন ধরনের প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা, আধার, প্যান, দলিল, রেজিস্ট্রেশন সর্বত্রই পরিবর্তন প্রয়োজন। সুতরাং, বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দফতরের আপডেটেড সার্কুলার ও নির্দেশনামা সমস্ত প্রচারমাধ্যমে যথাসময়ে প্রকাশ জরুরি।
রাধারমন গঙ্গোপাধ্যায়, বজবজ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
মুর্শিদাবাদি
মুর্শিদাবাদকে টুকরো টুকরো করে ভাগ করার কী দরকার? ভাগ করলে উত্তর ও দক্ষিণ মুর্শিদাবাদ এই ভাবে ভাগ করা হোক। ‘মুর্শিদাবাদ’ নামটি আবেগের, ঐতিহ্যের। আমরা মুর্শিদাবাদ নামটি হারাতে চাই না। আমাদের বড্ড কষ্ট হয়। দয়া করে নামটি রেখে ভাগ করুন। মুর্শিদাবাদবাসীর কথা শুনুন। মুর্শিদকুলি খাঁর মুকসুদাবাদ আমার বাড়ি। আমি যে হলাম মুর্শিদাবাদি আশালত।
আশালত হোসেন বিশ্বাস, সাগরদিঘি, মুর্শিদাবাদ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy