দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদকজয়ী কুস্তিগিররা পুলিশের হাতে নিগৃহীত হলেন। ফাইল চিত্র।
মাত্র দু’কিলোমিটারের ব্যবধানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন মহাসমারোহে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করছেন, ঠিক তখনই দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পদকজয়ী কুস্তিগিররা পুলিশের হাতে নিগৃহীত হলেন। সাক্ষী থাকল গোটা দেশ। কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি, তথা উত্তরপ্রদেশের বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার মতো ঘৃণ্য অপরাধের শাস্তি চেয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দিল্লির রাজপথে আন্দোলন করছেন দেশের প্রথম সারির কুস্তিগিররা। ন্যায়ের দাবিতে দিনের পর দিন যন্তর মন্তরেই রাত কাটিয়েছেন বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটরা। দাবি একটাই, অভিযুক্ত ব্রিজভূষণের অপসারণ ও গ্রেফতার। এই আন্দোলন সারা দেশে সাড়া ফেললেও কেন্দ্রীয় সরকার নির্বিকার। আন্দোলনরত কুস্তিগিরদের দিকেই আক্রমণের তির। ভয়ঙ্কর পুলিশি আক্রমণেরও শিকার হতে হচ্ছে তাঁদের। অথচ, কেন্দ্রীয় সরকারের ছত্রছায়ায় থাকা ‘বাহুবলী’ ব্রিজভূষণ ফেডারেশনের সভাপতি পদে এখনও বহাল।
দেশের নামী ক্রীড়াবিদ থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি, প্রায় সকলেই আন্দোলনরত কুস্তিগিরদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তবে আশ্চর্য এই যে, ক্রিকেটাররা এখনও নীরব। নীরজ চোপড়া, সুনীল ছেত্রীরা বজরংদের প্রতিবাদে শামিল হলেও কোহলি, রোহিতদের এই প্রসঙ্গে রা কাড়তে দেখা যায়নি। হয়তো তাঁদের সুযোগ-সুবিধায় কোপ পড়ার ভয় রয়েছে। যাঁরা বিশ্বের দরবারে দেশকে পদক এনে দিতেন কুস্তি লড়ে, তাঁরাই আজ অপরাধের বিচার চেয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে লড়ছেন!
সুদীপ সোম, হাবড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
কৃতীর মূল্য
সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগটরা রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক মঞ্চ থেকে দেশের জন্য পদকই আনেননি, ভারতীয় পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যে ধারণা তৈরি করেছে— ‘নারীরা দুর্বল, সন্তান লালনের জন্য তাদের জন্ম’— তাকে এক ধোবি পাছাড়ে মাটিতে মিলিয়ে দিয়েছেন! রাজধানীর রাস্তায় তাঁদের এমন ভাবে টেনে-হিঁচড়ে লাঞ্ছিত করা দেশের জন্য ভাল বিজ্ঞাপন তো? তাঁদের অবস্থান আন্দোলনে জল, বিদ্যুৎ সংযোগ ছিন্ন করার অভিযোগ উঠেছে। এ আমাদের গ্লানি নয়? কে ঠিক কে ভুল, তা বিচার করার জন্য দেশে আইন রয়েছে। কোনও তরফে ভুল হয়ে থাকলে আরও একটু সহানুভূতিশীল, আরও খানিকটা মরমি হওয়া যেত না? সারা বিশ্ব তার কৃতীদের কোহিনুরের মতো আগলে রাখে। পশ্চিম এশিয়ার কিছু দেশ তো আফ্রিকার সফল, দরিদ্র অ্যাথলিটদের নিজের দেশের নাগরিকত্ব দিয়ে রাজার হালে রাখে, শুধু একটা আন্তর্জাতিক পদকের প্রত্যাশায়। আর সেখানে আমাদের সোনার মেডেল পাওয়া কুস্তিগিরদের টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে! এই ‘খাতিরদারি’ তাঁদের প্রাপ্য?
পলাশ মান্না, সবং,পশ্চিম মেদিনীপুর
ভারতের ‘বেটি’
২৮ মে সাক্ষী, বিনেশ, সঙ্গীতাদের উপর পুলিশি নিপীড়নের ছবি সংবাদপত্রে দেখামাত্র বুকের ভিতরটা দুমড়েমুচড়ে গেল। এ-ই কি স্বাধীনতার অমৃতকালে ‘বেটি বচাও’ ভাবনার প্রদর্শন? যাঁরা বিশ্বমঞ্চে ভারতকে গৌরবান্বিত করেছেন, তাঁদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন দিল্লি পুলিশের এমন অভব্য, নির্লজ্জ আচরণ কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। কুস্তি ফেডারেশনের প্রধান, বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের যৌন নিগ্ৰহের প্রতিবাদে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দিল্লির যন্তর মন্তরে ধর্না অবস্থান চালিয়ে গিয়েছেন যাঁরা, তাঁদের অন্তর হতে পূর্ণ সমর্থন জানাই। অপরাধী যতই রাষ্ট্রীয় আনুকূল্যপুষ্ট হোন, শাস্তির ঊর্ধ্বে কেউ নন। সত্যের জয় হবেই।
শুভ্রা সামন্ত, বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর
রাষ্ট্রের মুখ
কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপির পক্ষপাত এবং ঔদ্ধত্যের কারণে ছোটখাটো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গ আজকাল ব্যাপক ধ্বংসাত্মক রূপ নিচ্ছে (ধর্না স্থগিত, তবে লড়াই চলবে, জানালেন সাক্ষীরা, ৩০-৫)। আবর্জনা দিয়ে অগ্নি নির্বাপিত হয় না। কৃষক আন্দোলন, কুস্তিগিরদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নেতা-মন্ত্রীদের অশালীন মন্তব্য, শাসক দলের দমননীতি, সহমর্মিতার অভাব, এ সব বড়ই দুর্ভাগ্যজনক।
কুস্তিগিররা আন্দোলনে অনড়। কুস্তিগিরদের সঙ্গে দিল্লি পুলিশের অপ্রীতিকর আচরণ একেবারেই বাঞ্ছিত ছিল না। অন্যায় কার্যকলাপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেই গুলি করে মারার হুমকি দিতে হবে, দেশদ্রোহী বা সমাজবিরোধী আখ্যা দিতে হবে, কিংবা জেলে পুরতে হবে? এটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মুখ হতে পারে না।
বাবুলাল দাস, ইছাপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
চাই প্রতিবাদ
সাক্ষী মালিক, বজরং পুনিয়া, বিনেশ ফোগট প্রমুখ যে ভারতীয় কুস্তি সংস্থার প্রধান ব্রিজভূষণ সিংহের বিরুদ্ধে মহিলা কুস্তিগিরদের যৌন হেনস্থার অভিযোগে তাঁকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি তুলেছেন, তাতে অন্যায় কী? শাসক দলের লোক হলেই কি যা খুশি করা যায়? এখানে গণতন্ত্র বিপন্ন হচ্ছে। কুস্তিগিরদের উপর অন্যায় হলে কেন প্রতিবাদ করা যাবে না? স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কি এই দিন দেখার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলেন? কেন কুস্তিগিরদের সংস্থার প্রধানকে সরকার সরিয়ে দিচ্ছে না বা তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত করছে না? অভিযোগ যখন এসেছে, তখন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত হওয়াই তো স্বাভাবিক। সব রাজনৈতিক দল ও জনগণের উচিত কুস্তিগিরদের পাশে থেকে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়া।
অভিজিৎ দত্ত, জিয়াগঞ্জ, মুর্শিদাবাদ
স্বৈরাচারীর কাজ
গত ২০ মে দিল্লিতে দিল্লি ক্যাপিটালস বনাম চেন্নাই সুপার কিংস-এর ম্যাচ ছিল। সেই আইপিএল ম্যাচ দেখতে গিয়েছিলেন অলিম্পিক্স পদকজয়ী সাক্ষী মালিক-সহ আরও চার জন আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা মহিলা কুস্তিগির। তাঁদের কাছে পাঁচটি বৈধ টিকিট থাকা সত্ত্বেও দিল্লি পুলিশ তাঁদের খেলা দেখতে মাঠে ঢুকতে দেয়নি। অযথা হেনস্থা করেছে। তাঁরা খেলা না দেখেই ফিরে গিয়েছেন। বুঝতে অসুবিধা হয় না, নামী কুস্তিগিরদের লাগাতার প্রতিবাদ আন্দোলনের প্রেক্ষিতেই এই হয়রানি মোদী সরকারের নির্দেশে।
মহিলা কুস্তিগিররা সুবিচারের জন্য নিজেদের অনুশীলন বন্ধ রেখে দিনের পর দিন যন্তর মন্তরে পড়ে থেকেছেন, এতে তাঁদের বিরাট ক্ষতি হয়েছে। এটি জাতীয় ক্ষতি। তবু মেয়েদের উপর যৌন হেনস্থা রুখতে উপযুক্ত ব্যবস্থা করার বিষয়ে সরকারের কোনও গরজ নেই। বরং নিগৃহীতাদের আন্দোলন থামাতে পুলিশ দিয়ে তাঁদের অযথা হয়রানি করা হচ্ছে। এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি! এ ভাবে দেশের মেয়েদের অসম্মান মানা যায় না। সর্বত্র এর প্রতিবাদ জরুরি। গোটা দেশের মানুষের উচিত সাক্ষীদের প্রতিবাদী আন্দোলনের পাশে দাঁড়ানো। মনে রাখা দরকার, মানুষের যূথবদ্ধ শক্তির কাছে স্বৈরাচার সর্বদাই নতি স্বীকার করেছে। এই শিক্ষা ইতিহাসের।
কুমার শেখর সেনগুপ্ত, কোন্নগর, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy