Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Children Are Lacking Interest In Studies

আগ্রহের অভাব

শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য কোঠারি কমিশন-সহ বিভিন্ন সময়ে গঠিত কমিশন শিক্ষাখাতে ব্যয়ের পরিমাণ জিডিপি-র ৬%-এর সুপারিশ করেছে।

children.

২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইন, সর্বশিক্ষা, সমগ্রশিক্ষা প্রভৃতি প্রকল্প শিশু-কিশোর ও অভিভাবকদের আকর্ষণ করতে পারেনি। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৩ ০৫:১৬
Share: Save:

সব্যসাচী রায়ের প্রবন্ধটি (লেখাপড়ায় এত অনীহা কেন, ১৭-৬) সময়োপযোগী। পঞ্চম জাতীয় পারিবারিক স্বাস্থ্য সমীক্ষার পরিসংখ্যান অনুসারে ৬-১৭ বছরের স্কুলছুট ছেলেদের মধ্যে ৩৫.৭% এবং স্কুলছুট মেয়েদের মধ্যে ২৭.৯% লেখাপড়া ছাড়ছে আগ্রহের অভাবে। আগ্রহের অভাব কেন, এই রোগের মূলে ঢোকার চেষ্টা করেছেন লেখক, এবং তার সমাধানের পথও খুঁজেছেন। তাঁর মতে, উদ্ভাবনী শিক্ষা পরিকাঠামো ও কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকলে, মাধ্যমিক স্তরের ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ায় আগ্রহ নিশ্চিত ভাবে বাড়বে। বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক, স্কুল ইউনিফর্ম আর পুষ্টির জন্য মিড-ডে মিল থাকা সত্ত্বেও লেখাপড়ায় আগ্রহ যে বাড়ছে না, সেটা স্কুলছুটের পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায়। দেখা যাচ্ছে, সরকারি স্কুলে ছাত্রছাত্রী ভর্তির প্রবণতা বিস্ময়কর ভাবে নিম্নমুখী। অপর দিকে, বেসরকারি স্কুলে পড়ার ঝোঁক বৃদ্ধি পেয়েছে।

চাহিদা কমতে থাকায় সরকারি স্কুলগুলির এখন বেহাল দশা। রোগ সারাতে উদ্যোগও করা হয়েছিল দেশের সরকারের পক্ষ থেকে। সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার উদ্যোগ থেকে শুরু করে ২০০৯ সালের শিক্ষার অধিকার আইন, সর্বশিক্ষা, সমগ্রশিক্ষা প্রভৃতি প্রকল্প শিশু-কিশোর ও অভিভাবকদের আকর্ষণ করতে পারেনি। হেলদোল নেই সরকারের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির হাল ফেরাতে সরকারি ব্যয়ের পরিমাণও হতাশাজনক।

শিক্ষাব্যবস্থার উন্নতির জন্য কোঠারি কমিশন-সহ বিভিন্ন সময়ে গঠিত কমিশন শিক্ষাখাতে ব্যয়ের পরিমাণ জিডিপি-র ৬%-এর সুপারিশ করেছে। কিন্তু বিগত পাঁচ দশকে এই হার কখনও তিন শতাংশের সীমারেখা পার করেনি। আসলে, ছাত্রছাত্রীদের অনীহা কাটাতে পরিকাঠামোগত পরিবর্তনের সঙ্গে চাই যথেষ্ট বিনিয়োগ, এবং তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ। কিন্তু উদাসীন সরকার। বর্তমান সরকার যে ভাবে বেসরকারিকরণের খেলায় মেতেছে, তাতে দু’-তিন বছরের মধ্যে বেসরকারি স্কুলে যাওয়া পড়ুয়ার সংখ্যা দ্বিগুণ হলেও আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।

প্রবীর কুমার সরখেল, পশ্চিম মেদিনীপুর

শিক্ষায় উদ্ভাবন

সব্যসাচী রায় তাঁর প্রবন্ধে ঠিকই বলেছেন— কন্যাশ্রী, শিক্ষাশ্রী, সাইকেল, বই-খাতা, পোশাক ইত্যাদি দেওয়া সত্ত্বেও মাধ্যমিক স্তরে ব্যাপক স্কুলছুট ঠেকানো যাচ্ছে না। অসচ্ছল পরিবারের পড়ুয়াদের স্কুলে ধরে রাখতে হলে প্রথমত এই রাজ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির প্রয়োজন। যখন স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীদের খোঁজে আমরা তাদের বাড়িতে যাই, অধিকাংশ অভিভাবক বলেন, আর পড়ে কী হবে, তার চেয়ে বরং কাজ শিখুক। এক দিন এক অষ্টম শ্রেণিতে পাঠরতা ছাত্রীর বিয়ে বন্ধ করার জন্য বোঝাতে গিয়েছিলাম। ছাত্রীর কাকিমা বলেছিলেন— আমার বাবা তো বহু কষ্ট করে আমাকে কলেজে পড়িয়েছিলেন, একটা ছোটখাটো চাকরিও জুটল না। আমাদের মতো অভাবী ঘরের মেয়েদের ওই হেঁশেলে পড়ে থাকা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। বেশি পড়িয়ে লাভ কী? তাঁর ওই নিরুপায় অভিব্যক্তি আজও মনে গেঁথে আছে।

অনেক অভিভাবক আবার বলেন, ছেলেমেয়েদের স্কুলে যেতে বললেও তারা যায় না, সারা দিন খেলে বেড়ায়। স্কুল ও স্কুলশিক্ষা, কোনওটাই এদের আর তেমন করে টানে না। এর প্রধান কারণ, প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার গতানুগতিকতা। শিক্ষণপদ্ধতিতে আরও বৈচিত্র আনতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় আগ্ৰহী করতে হলে প্রথমেই স্কুলগুলিতে শিক্ষা পরিকাঠামোয় নতুন উদ্ভাবন প্রয়োজন, যাতে ছাত্রছাত্রীরা নতুন সৃষ্টির আনন্দে মেতে থাকতে পারে। শিক্ষাকে আনন্দময় করে তুলতে হবে। পাশাপাশি, শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরও সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা প্রয়োজন। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি, বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কার, গবেষণা, তথ্যাদি সম্পর্কে তাঁদের ওয়াকিবহাল থাকা বাঞ্ছনীয়। এ জন্য নিরন্তর চর্চা ও নির্দিষ্ট সময় অন্তর কর্মশালা, সেমিনারের আয়োজন করা একান্ত জরুরি। শিক্ষাকে বৃহত্তম সামাজিক পরিমণ্ডলের সঙ্গে অন্বিত করতে প্রতিনিয়ত ভাব বিনিময়ের পরিসর গড়ে তোলা প্রয়োজন। এতে শিক্ষক-ছাত্র উভয়েরই সমৃদ্ধি ঘটে। মুক্তমনে শিক্ষাকে গ্ৰহণ করতে ছাত্রছাত্রীদের অনীহা থাকে না।

নতুন শিক্ষানীতিতে উদ্ভাবনী পঠনপাঠন ও তথ্যপ্রযুক্তি-ভিত্তিক শিক্ষাদানের ব্যবস্থা থাকলেও, স্মার্টফোন না থাকায় বিশেষত গ্ৰামের দরিদ্র ছাত্রছাত্রীরা যে এ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে, সে বিষয়ে এক রকম নিশ্চিত থাকা যায়। এতে জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে পরিকল্পনা শুরুতেই হোঁচট খেতে পারে।

শুভ্রা সামন্ত, বালিচক, পশ্চিম মেদিনীপুর

মুখ্য ও গৌণ

‘লেখাপড়ায় এত অনীহা কেন’ প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এক জন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষা আধিকারিক হিসাবে বলতে পারি, এটা বহু দিনের অবহেলিত বিষয়। সরকারি স্কুলে লেখাপড়ায় অনীহার কারণগুলি কী? এক, শিক্ষাখাতে বাজেটে যে টাকা ধরা হয় তা যথেষ্ট নয়। দুই, ছাত্র-শিক্ষক অনুপাতে অসঙ্গতি। তিন, রাজনীতি ও শিক্ষক সংগঠনের প্রভাব। শিক্ষক সংগঠনের নেতারা যেমন রাজনীতির অনুগত, তেমনই অন্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও সংগঠনের নেতা-নেত্রীদের অনুগত। সেখানে রাজনীতি মুখ্য, লেখাপড়া গৌণ। বেসরকারি স্কুলগুলি এই সমস্যা থেকে বহুলাংশে মুক্ত। চার, ছাত্র-শিক্ষক, শিক্ষক-শিক্ষক ও শিক্ষক-স্কুল কমিটির সম্পর্ক আশানুরূপ নয়। সকলের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। ফলে স্কুলে সৃষ্টি হয় নানান সমস্যা।

শেষে বলতে হয়, বেসরকারি স্কুলে কর্তব্যে গাফিলতি হলে চাকরিও চলে যেতে পারে। সরকারি স্কুলে কাজের নিরাপত্তা অনেক। ফলে একটা স্বেচ্ছাচারিতা দেখা যায়। উপরন্তু, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ— যেমন শিক্ষাশ্রী, কন্যাশ্রী, মিড-ডে মিল, নির্বাচনের কাজ শিক্ষকদের করতে হয়, যেটা শুধু স্কুলের সময়কেই গ্রাস করে না, শিক্ষকদের মানসিকতার উপরেও প্রভাব ফেলে। এর পর ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকদের অনীহা তো আছেই। দারিদ্রও সরকারি স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের স্কুলের প্রতি আগ্রহ হারানোর অন্যতম কারণ। এ ছাড়াও রাজনীতির ক্ষেত্রে সংসদ-সদস্য, বা এলাকার কমিশনার ও বিধায়ক যখন স্কুল কমিটির সদস্য হন, তখন তাঁদের ভূমিকা বহুলাংশে সদর্থক হয় না। এটাও সরকারি স্কুলের কাজের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক।

দীননাথ চক্রবর্তী, দুইলা, হাওড়া

হাস্যকর

গত ২২ মে, ২০২৩ রামমোহন রায়ের ২৫১তম জন্ম দিবসে কলকাতায় অবস্থিত ভারতীয় টাঁকশাল রাজা রামমোহন রায়ের ২৫০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ২৫০ টাকা মূল্যের একটি স্মারক মুদ্রা বার করেছে। এই মুদ্রাটির সঙ্গে যে বুকলেটটি আছে, সেখানে লেখা আছে— রামমোহন বহু ভাষা শিক্ষা করেছিলেন। যেমন— বাংলা, ফারসি, আরবি ও সংস্কৃত, যার ফলে তিনি বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থের মূল পাঠ্যটি অনুধাবন করতে পারেন।

জানি না, রামমোহনের বাংলা শিক্ষার এই চমৎকার তথ্য এঁরা কোথা থেকে পেয়েছিলেন। অষ্টাদশ শতকের শেষ ভাগে ও ঊনবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় বাংলা ভাষায় কোনও ‘মূল’ ধর্মগ্রন্থ ছিল বলে জানা নেই। রামমোহন নিজেই বেদান্ত ও পাঁচটি উপনিষদকে বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। যার ফলে, সাধারণ লোকের হাতে এই ধর্মগ্রন্থের বিষয়বস্তুগুলি সে কালের কথিত বাংলা ভাষায় উপলব্ধ হয়, যা কেবল মুষ্টিমেয় সংস্কৃতজ্ঞ ব্রাহ্মণের কাছেই কুক্ষিগত ছিল। রামমোহনের আর একটা পরিচয় হল— তিনি বাংলা গদ্যের জনক। সুতরাং, তিনি বাংলা ভাষা শিক্ষা করেছিলেন— এই ব্যাপারটি একটু হাস্যকর ঠেকে।

অমিত দাস, সহকারী সম্পাদক, সাধারণ ব্রাহ্ম সমাজ

অন্য বিষয়গুলি:

Education school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy