‘এই সংস্কার এখন কেন’ (১৬-১২) সাক্ষাৎকারটিতে অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, কৃষিক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু এই সংস্কার কার প্রয়োজনে? যদি কৃষকের স্বার্থে হয়, তবে তার অভিমুখ এক রকম হবে। আর যদি বৃহৎ ব্যবসায়ী বা কর্পোরেট সংস্থার স্বার্থে হয় (যেটা কেউ স্বীকার করেন না), তবে তার অভিমুখ ভিন্ন হতে বাধ্য। একই নীতি এবং পদক্ষেপের দ্বারা কৃষক এবং কর্পোরেট সংস্থা উভয়ের স্বার্থ সমান ভাবে রক্ষিত হবে না। পঞ্জাব-হরিয়ানার চাষির উৎপাদিত পণ্য ক্রয় করার ক্ষেত্রে সরকারি ভূমিকাকে অভিজিৎবাবু সমুচিত বলে মনে করেননি। সহায়ক মূল্যে ফসল কিনে চাষিকে রক্ষা করা এবং দেশের মানুষের মুখে খাদ্য জোগানো তো জনমুখী সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব। ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নামেই আছে, বাস্তবে চাষিকে জলের দরে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য করেন ফড়ে আর মিল মালিকেরা। কিন্তু তা চড়া দামে বিক্রি করে নিজেরা বিপুল লাভ করেন। সহায়ক মূল্যের ব্যবস্থা এবং অত্যাবশ্যক পণ্য আইন চালু থাকা সত্ত্বেও এই অবস্থা! কৃষককে নিরুপায় হয়ে আত্মঘাতী হতে হচ্ছে। স্বামীনাথন কমিশন বলছে, ভারতে প্রতি ১২ মিনিটে এক জন চাষি আত্মহত্যা করছেন। অভিজিৎবাবু চাষিদের ভর্তুকি দেওয়া এবং তাঁদের উৎপাদিত শস্য কেনার বিপক্ষে বলতে চেয়েছেন, ‘মাখনের পাহাড়’-এর মতো খাদ্যশস্যের পাহাড় জমে যাওয়ার ভয়ে। সরকার নাকি খাদ্যশস্য বিতরণ করতে পারছে না। তা হলে অনাহারে মৃত্যু সংবাদ উঠে আসছে কেন? গলদটা কোথায়?
সরকার যদি নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য চাষির কাছ থেকে সরাসরি কিনে ন্যায্যমূল্যের দোকান করে সর্বত্র বিক্রি করে, তবে তো ফাটকাবাজি বন্ধ হতে পারে। অবশ্য সেখানে বড় আড়তদার বা কর্পোরেট সংস্থার স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হতে বাধ্য। সরকার কি তা করতে সাহসী হবে?
অর্থনীতিবিদ থেকে শুরু করে শিল্পপতি মহল সংস্কারের পক্ষে সওয়াল করে চলেছেন। কিন্তু সরকার যদি ন্যূনতম সহায়ক মূল্য, অত্যাবশ্যক পণ্য আইন-সহ কৃষকদের স্বার্থরক্ষাকারী ব্যবস্থা থেকে হাত গুটিয়ে নেয়, আর বৃহৎ ব্যবসায়ী বা কর্পোরেট সংস্থার হাতে দেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারণের দায়িত্ব অর্পণ করে, তবে হাসিম শেখ আর রামা কৈবর্তদের পরিণতি কী হবে?
মদন ঘটক
সিউড়ি, বীরভূম
নীরব বাংলা
দিল্লির তাপমাত্রা যখন ক্রমশ নীচের দিকে নামছে, তখন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন প্রায় পাঁচ লক্ষ কৃষক। এখনও অবধি কুড়ি জনেরও বেশি কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু বাংলার কৃষক সমাজ নিরুত্তাপ কেন? আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রধানত দু’টি রাজ্য, পঞ্জাব এবং হরিয়ানা। তা হলে কি দেশের অন্য প্রান্তের কৃষকদের সঙ্গে ওই দুই রাজ্যের কৃষি ও কৃষকের বৈশিষ্ট্য মেলে না?
পরিসংখ্যান বলছে, পশ্চিমবঙ্গে কমবেশি ৭০ লক্ষ কৃষক পরিবার রয়েছে। তাঁদের জোতের গড় আয়তন ০.৭৭ হেক্টর, যেখানে পঞ্জাবে এই পরিমাণ প্রায় ৩.৬ হেক্টর। অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গের চাষি পঞ্জাবের মতো অবস্থাপন্ন নন। তার মানে কৃষিপণ্যের ব্যবসায় যদি কর্পোরেট পুঁজির আগমন ঘটে, তা হলে পশ্চিমবঙ্গের চাষির কি তেমন কিছু পরিবর্তন হবে না? এটা কি আর্থিক ভাবে কৃষকদের দুর্বল অবস্থানের জন্য?
কৃষি বিল ২০২০-র প্রেক্ষিতে সংগঠিত কৃষক আন্দোলন এ রাজ্যে গড়ে না-ওঠার কারণ কি শুধুই অর্থনৈতিক? গণ-আন্দোলন, ছোট বা বড় যে কোনও পরিসরেই হোক না কেন, রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় না। বাংলায় কৃষক-অকৃষক পরিবারের অনুপাত প্রায় ৭:১৩, স্বাভাবিক ভাবেই অকৃষক পরিবার কৃষি বিল নিয়ে তেমন চিন্তিত নয়। পশ্চিমবঙ্গে কৃষক অসন্তোষের সার্বিক রূপ না পাওয়া কিছুটা হলেও রাজনৈতিক উদ্যোগের অভাব বলেই মনে হচ্ছে।
সৌমিত্র মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৬১
কবির কৃষিচিন্তা
কৃষি বিল নিয়ে জোর বিতর্ক চলছে। সরকারের সঙ্গে সংঘাত চলছে চাষিদের। কিন্তু কৃষকদের দাবির সঙ্গে মিল রয়েছে অতীতের এক প্রশাসকের। তিনি রবীন্দ্রনাথ। জমিদারির ভার নিয়ে শিলাইদহে আসার পরে তাঁর সহজাত মানবিকতা দিয়ে তিনি বোঝেন কৃষক প্রজার দুর্দশার কথা। খাজনা মকুব, ঋণ দেওয়া, রাস্তাঘাট উন্নয়ন, কূপ খনন, কৃষিব্যাঙ্ক স্থাপন, এই সবই করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। কৃষি সমবায় গঠনের পাশাপাশি তাঁত সমবায়, মৃৎশিল্প, ধানের কল-সহ বিভিন্ন কুটির শিল্পের দিকেও নজর দিয়েছিলেন। মৎস্যজীবীদের মাছ চাষ করার জন্য তিনি গাজনার বিল এবং মরা রঘুয়ার বিল দান করে গিয়েছেন। গোচারণ ভূমির জন্য চলন বিলের ২০০ একর জমি দান করেন। অভাবী কৃষকরা যেন সুদখোর মহাজনদের কবলে না পড়েন, তার জন্য তিনি পতিসরে ১৯০৫ সালে পতিসর কৃষি ব্যাঙ্ক প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নোবেল পুরস্কারের ১ লক্ষ ১২ হাজার টাকা ওই ব্যাঙ্কে জমা করা হয়। আমেরিকা থেকে উন্নত মানের ভুট্টা বীজ, মাদ্রাজ থেকে সরু ধানের বীজ এবং পটনার মটরের বীজ এনে শিলাইদহে চাষ করেন। তিনিই প্রথম শিলাইদহে আলু চাষ করেছিলেন। ফড়েদের হাত থেকে কৃষককে বাঁচাতে রবীন্দ্রনাথ কুষ্টিয়াতে কৃষিপণ্য ক্রয়-কেন্দ্র খোলেন। নিজেই পাট কিনতেন এবং তা বেল তৈরি করে কলকাতা-সহ বাইরে বিভিন্ন জায়গায় পাঠাতেন। রবীন্দ্রনাথের কৃষি ভাবনার খানিকটা অংশই আজকের কৃষি উন্নয়ন বিভাগের কাজ। কৃষকের কাছ থেকে তাঁর ফসল কেনার ভাবনাই আজকের মান্ডি।
সনাতন পাল
বালুরঘাট, দক্ষিণ দিনাজপুর
দুয়োরানি মাদুর
“গোবর নিকানো আঙিনায় মাদুর পেতে সাজু রূপাইয়ের কোলে শুয়ে রয়”— পল্লিকবি জসীমউদ্দীনের নকশী কাঁথার মাঠ আখ্যানকাব্যে মাদুরের প্রসঙ্গ এসেছে এই ভাবে। সংস্কৃত শব্দ ‘মন্দুরা’ থেকে সম্ভবত ‘মাদুর’ শব্দটির উৎপত্তি। নবাবি আমলে একে বলা হত ‘মসলন্দ’। মাদুর হল এক রকম শাখাপ্রশাখাহীন হলুদ, সোনালি-সবুজ রঙের হালকা ঘাস। মেদিনীপুরের ভগবানপুর, সবং, পটাশপুর মাদুর বোনার পীঠস্থান। এ ছাড়াও দুই ২৪ পরগনা, কোচবিহার, বীরভূমের শ্রীনিকেতন ও হাওড়া জেলার উদয়নারায়ণপুরে মাদুর কাঠির চাষ হয়। চাষের আদর্শ সময় চৈত্র-বৈশাখ মাস। মাঘ মাসে খেত থেকে মাদুর কাঠি তুলে আনা হয়। দোআঁশ মাটি আদর্শ হলেও, বেলে ও এঁটেল মাটিতেও চাষ করা হয়। ২৮ মার্চ ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘জিআই’ ট্যাগ পেয়েছে মাদুর। একক ভাবে, বা সমবায় ভিত্তিতে মহিলারা মাদুর তৈরি করেন। সাধারণত মাটিতে পেতে বসার জন্য ব্যবহার করা হয় মাদুর। কখনও কখনও বিছানার উপরেও ব্যবহার করা হয়। তাপ অপরিবাহী ও জলীয় বাষ্প শোষণ করার ক্ষমতা মাদুরের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে।
এখন মাদুর কাঠির বিকল্প হিসেবে বাজারে এসেছে প্লাস্টিকের রঙিন কাঠি। যন্ত্রের মাধ্যমে কম সময়ে অধিক মাদুর তৈরি হচ্ছে। কিন্তু মাদুরের আরাম ও সৌন্দর্যের লেশমাত্র নেই তাতে। তবু দাম কম হওয়ায় ঝোঁক বাড়ছে সে দিকে। বছর দশেক আগেও গ্রামেগঞ্জে তো বটেই, শহরের শৌখিন পরিবারগুলিতেও মাদুরের চাহিদা ছিল। মাদুরের দাম এখন প্রায় তিন গুণ বেড়ে গিয়েছে। তার উপর প্লাস্টিকের মাদুর আসায় মাদুর শিল্পে ভাটার টান।
নরসিংহ দাস
রবীন্দ্রনগর, মেদিনীপুর
এক দোকানে
অতি পরিচিত এক টেলি-কোম্পানির দোকানে দেখলাম, টেলি-সামগ্রীর সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে আর এক বিখ্যাত কোম্পানির হিমায়িত খাদ্যসামগ্রী। ফোনটা রিচার্জ করিয়েই এক জন কিনে ফেললেন এক প্যাকেট চিকেন শিক কাবাব!
অমিতাভ সরকার
কলকাতা-৩৬
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy