আন্তর্জাতিক কোনও সমীক্ষায় ভারতের স্থান নীচের দিকে, এমন ইঙ্গিত মিললেই সরকার মনে করে, এটি কূটনৈতিক চক্রান্ত। অথচ, বিরোধী রাষ্ট্রগুলো কেন এগিয়ে গেল, তা কি বিশেষ বৈঠকে এক বারও আলোচনা করে? গত ১৬ অক্টোবর বিশ্ব ক্ষুধা সূচক ২০২০-র রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। ভারতের স্থান ১০৭টি দেশের মধ্যে ৯৪তম। এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে পিছিয়ে থাকার নিরিখে দ্বিতীয়। সকল বিরোধী রাষ্ট্রই তাকে পিছনে ফেলে ভালই এগিয়েছে। যদিও এখন সবেতেই করোনা অতিমারিকে ফাঁসিকাঠে তোলার কৌশল অবলম্বন করা হবে, কিন্তু যে সমস্যা গত কয়েক দশক ধরেই মাথাচাড়া দিচ্ছে, তা কি নজর এড়ানো সম্ভব?
রিপোর্ট বলছে, ১৪% মানুষ অপুষ্টির শিকার। তার মধ্যে শিশুর সংখ্যা অধিক। করোনার জেরে মিড-ডে মিল বন্ধ। শিশুর পুষ্টির অন্যতম উৎসটির উপর প্রশ্নচিহ্ন ঝুলছে গত সাত মাস ধরে। রেশন ব্যবস্থা চালু করেই সব সমাধান হবে? জীবিকার সন্ধানে ভিন্রাজ্যে কিংবা এক রাজ্যের মধ্যেই অন্যত্র কাজ করতে যাওয়া মানুষগুলোর কাছে রেশন কার্ডটুকু আছে কি না, কে দেখছে? কত শতাংশ মানুষ এই সাত মাস সরকারি অফিস, আঞ্চলিক সংগঠনগুলোয় ঘুরেছেন রেশন পাওয়ার কুপন জোগাড় করতে, হিসেব আছে?
আমরা ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্নে বুঁদ, আয়ুষ্মান ভারতের গড়ে ওঠার গর্বে ছাতি চওড়া করছি, অথচ আসল ভারতকে লুকিয়ে রাখতে ব্যস্ত। বিশ্ব ক্ষুধা সূচকের প্রতিটি তথ্য সত্যি। শিশু অপুষ্টি, অপুষ্টিজনিত মৃত্যু সত্যি বলে মানতে হবে।
কুহেলী কর্মকার
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
ক্ষুধার রাজ্যে
স্বাধীনতার ৭৩ বছর পরেও দেশের জনসাধারণের একটা বড় অংশ দু’বেলা পেটভরে খেতে পায় না। অপুষ্টিতে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুর প্রয়োজনীয় শারীরিক গঠন ও বৃদ্ধি হয় না। তার পর অতিমারি ও লকডাউনের ফলে কর্মহীন পরিযায়ী শ্রমিককে বাড়ি ফেরার জন্য মাইলের পর মাইল হেঁটে আসতে হয়। ঘুমন্ত মানুষগুলোকে ট্রেন এসে পিষে দিলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় তাঁদের হাতে গড়া রুটি। ১০৭টি দেশের মধ্যে ক্ষুধার সূচকে ভারত ৯৪ নম্বরে। পড়শি দেশ শ্রীলঙ্কা (৬৪), নেপাল (৭৩), বাংলাদেশ (৭৫), মায়ানমার (৭৪) এবং পাকিস্তানও (৮৮) ভারতের থেকে এগিয়ে। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি দাবি করেছেন, সরকারি গুদামে যে দশ হাজার কোটি টন খাদ্যশস্য পচছে, তা অভুক্তদের মধ্যে নিখরচায় বিলি করুক কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু সে কথা মানছে কে? অর্থনীতিতে নোবেল প্রাপক অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাষ্ট্রপুঞ্জের অর্থনীতি বিষয়ক প্রাক্তন উপদেষ্টা কৌশিক বসু বার বার বলেছেন, দরিদ্রতম শ্রমিকদের হাতে নগদ টাকা দিতে। কিন্তু এত আবেদনের বাস্তব রূপায়ণ কোথায়?
শিখা সেনগুপ্ত
কলকাতা-৫১
বৈষম্যের ফল
স্বাধীনতার সাত দশকেরও বেশি সময় পরে বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে ভারতের যে করুণ চিত্র ফুটে উঠল, তা দেখে প্রশ্ন জাগছে, স্বাধীনতা দেশের মানুষকে কী দিল? আজ তো আর আগের মতো দেশের সব সম্পদ বিদেশি শাসকরা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে না। সম্পদও তো কিছু কম নেই দেশে— খনি, জল, জঙ্গল, শিল্প-কারখানা, উর্বর জমি, কর্মক্ষম মানুষ, সবই অঢেল। খাদ্য উৎপাদনও কম হয় না। সব মানুষকে খাইয়েও অতিরিক্ত হয়। তবু কেন এত মানুষের খাবার জোটে না? এত শিশুর বৃদ্ধি আটকে যায়? ক’দিন আগেরই খবর, করোনা অতিমারির মধ্যেও দেশে নতুন ১৫ জন শতকোটিপতির উদয় হয়েছে। অর্থাৎ, সম্পদ দেশে কম তৈরি হচ্ছে না। কিন্তু তা গিয়ে জমা হচ্ছে মুষ্টিমেয় লোকের ভান্ডারে। এই বীভৎস বৈষম্যের ফলই কি ক্ষুধার আকারে প্রকাশ পাচ্ছে না? যে সমাজে বিরাট অংশের মানুষের বেঁচে থাকা এমন করে কয়েক জনের কুক্ষিগত হয়ে পড়ে, সে সমাজকে আর যা-ই হোক, সভ্য বলা যায় কি না, ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত বলা যায় কি না, তা কি আমরা ভাবব না!
শিলাই মণ্ডল
গড়বেতা, পশ্চিম মেদিনীপুর
ব্যর্থতার নজির
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে এ বছর ১০৭টি দেশের মধ্যে ভারতের অবস্থান নরেন্দ্র মোদী ঘোষিত ‘সব কা বিকাশ’-এর ব্যর্থতার নজির। বিরোধীরা এই নিয়ে সরকারের সমালোচনায় নেমেছেন। যদিও কংগ্রেস শাসনের সময় ২০০৬ এবং ২০১২ সালের মূল্যায়নে ভারতের অবস্থান এর চেয়েও খারাপ ছিল। প্রাপ্ত পয়েন্ট ছিল যথাক্রমে ৩৭.৫ এবং ২৯.৩। তারও আগে ২০০০ সালে এনডিএ শাসনের সময় ক্ষুধা সূচকে ভারতের অবস্থান ছিল আরও খারাপ (৩৮.৯)। এই অবস্থান বলে দিচ্ছে, সরকার নির্বিশেষে দেশের ক্ষুধা সূচক সূক্ষ্ম ভাবে হলেও ভালর দিকে। যদিও ১৩৭ কোটি জনসংখ্যার দেশে এখনও ১৪ শতাংশ (১৯ কোটির বেশি) শিশুর অপুষ্টি বলে দিচ্ছে, এই উন্নতি মোটেই সন্তোষজনক নয়। কেন্দ্রে যখন যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, তখন ক্ষমতায় থাকা শাসক এবং তাঁর দল লাগাতার উন্নয়নের ফিরিস্তি শুনিয়ে দেশের মানুষের কাছে নিজেদের জনকল্যাণমুখী ভাবমূর্তি বজায় রাখার চেষ্টা করে। বাস্তব যে কতখানি হাহাকারে ভরা, বিশ্ব ক্ষুধা সূচক তা চোখে আঙুল দিয়ে বার বার দেখিয়ে দিচ্ছে। দেশের গড় মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেলেও তার সমবণ্টন না হওয়ার কারণেই যে এমন উদ্বেগজনক অবস্থান, তা-ও বোঝার সময় এসেছে। শুধু জিডিপি বৃদ্ধি নয়, বণ্টন নীতিতেও বাস্তববাদী হওয়া দরকার।
প্রদ্যোৎ পালুই
বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
দোতলা বাস
‘হুড খোলা দোতলা বাসে শহর ভ্রমণ’ শীর্ষক সংবাদের (১৪-১০) প্রেক্ষিতে এই চিঠি। জানা গেল, পুজোর কলকাতায় হুড খোলা দোতলা বাসের উদ্বোধন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘হুড খোলা দোতলা বাস সাধারণত লন্ডনে দেখা যায়।’’ এই প্রসঙ্গে জানাতে চাই, যখন ছোট ছিলাম স্মৃতিকথায় সত্যজিৎ রায় লিখেছেন, ‘‘আমাদের ছেলেবেলায় এমন অনেক কিছু ছিল যা এখন আর নেই।... ছেলেবেলায় দেখেছি ওয়ালফোর্ড কোম্পানির লাল ডবল ডেকার বাসের ওপরে ছাদ নেই। সে বাসের দোতলায় চড়ে হাওয়া খেতে খেতে যাওয়ার একটা আলাদা মজা ছিল। রাস্তাঘাট তখন অনেক নিরিবিলি ছিল, ট্রাফিক জ্যামের বিভীষিকা ছিল না বললেই চলে, কিন্তু সবচেয়ে বড় তফাৎ ছিল মোটর গাড়ির চেহারায়। কত দেশের কত রকম মোটর গাড়ি যে চলত কলকাতা শহরে তার ইয়ত্তা নেই।... (এখন) হুড খোলা গাড়ি ক’টা দেখা যায়? খুদে গাড়ি বেবি অস্টিন কালেভদ্রে এক-আধটা চোখে পড়ে।’’
প্রসন্নকুমার কোলে
শ্রীরামপুর, হুগলি
কাঁকড়া শিকারি
মানুষের ক্ষুধা কত প্রবল, অভাব কত প্রকট হলে সে বাঘের ভয়েও ভীত হয় না। পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন অঞ্চলে অনেক পরিযায়ী শ্রমিক বাইরে থেকে ফিরে এসেছেন। হাতে কোনও কাজ নেই, কিন্তু পেট তো আছে। কাজ না পেয়ে তাঁরা সুন্দরবনের গভীর খাঁড়িতে কাঁকড়া ধরতে যাচ্ছেন। ভাগ্য ভাল থাকলে কাঁকড়া নিয়েই ঘরে ফিরলেন। কিছু উপার্জনও হল। কিন্তু সব দিন সমান যায় না। কাঁকড়া ধরতে গিয়ে জলজ্যান্ত জোয়ান মানুষটাই বাঘের পেটে চলে গেল। প্রায়ই খবরের কাগজে দেখি কাঁকড়া শিকারি বাঘের পেটে গিয়েছেন। সরকারকে অনুরোধ, এঁদের কাজের ব্যবস্থা করা হোক। দেশের নাগরিককে যেন বাঘের পেটে যেতে না হয়।
সঞ্জয় চৌধুরী
ইন্দা, খড়্গপুর
চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা
সম্পাদক সমীপেষু,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।
ইমেল: letters@abp.in
যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy