পতন ঠেকাচ্ছেন হকি স্টিক দিয়ে। নুয়েছেন, কিন্তু ভেঙে পড়ছেন না। টোকিয়ো অলিম্পিক্সের মাঠে মহিলা হকি দলের এক জন যোদ্ধার প্রথম পাতার এই ছবি (‘স্বপ্নভঙ্গ’, ৭-৮) অনেক যুদ্ধের কথা বলে। অতীত এবং আগামী দিনের যুদ্ধ। সঙ্গের প্রতিবেদনে (‘দুনিয়াকে চমকে দিল ওরা, মাথা নত শ্রদ্ধায়’) অত্যন্ত সুচারু ভাবে সেই সব যুদ্ধের হদিস দিয়েছেন বর্ষীয়ান সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। একটা নির্দিষ্ট মাঠে নির্দিষ্ট সময় ধরে খেলায় হার। কিন্তু সেই হার জয়ের চাইতে বেশি। প্রথমে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও গত বারের সোনাজয়ী বিপক্ষের গোলে পর পর তিন বার বল ঢোকানো। শুধু মাঠের লড়াই নয়, আছে মাঠের বাইরের লড়াইও। দারিদ্র, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, শারীরিক সীমাবদ্ধতা, জাতপাতের বিদ্বেষ— রানি রামপাল আর বন্দনা কাটারিয়ার টিম অনেক বড় বড় লড়াইয়ে জিতেছে। সেই লড়াইয়ের খবর সম্পন্ন পৃথিবীর অধিবাসীরা রাখেন না। ভুক্তভোগীরাই বোঝেন অন্ধকারের স্বরূপ। এই ‘বিজয়ী’ টিম বুঝিয়ে ছাড়ল, জল-কাদার মাটিতে জন্ম নিয়েও আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন দেখা যায়। প্রথম পাতায় ছবিটির ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে— স্বপ্নভঙ্গ। ক্যাপশনটিতে ‘স্বপ্নদ্রষ্টা’ বা এই জাতীয় কোনও শব্দ দেওয়া হলে ভাল হত।
বিশ্বনাথ পাকড়াশি, শ্রীরামপুর, হুগলি
দলিত বলেই?
“অলিম্পিক্সে হার, ‘দলিত’ বন্দনার বাড়িতে চড়াও” (৬-৮) শিরোনামের খবরটি পড়ে বিস্মিত ও স্তম্ভিত হয়েছি। ভারতে দলিতদের উপর অত্যাচার কোন পর্যায়ে আছে, তার বড় উদাহরণ বন্দনা কাটারিয়ার মতো টোকিয়ো অলিম্পিক্সে ভারতের মহিলা হকি দলের নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড়ের বাড়িতে চড়াও হওয়ার ঘটনা। বন্দনা কাটারিয়ার মতো দলিত খেলোয়াড় দলে আছে বলেই দলের হার হয়েছে— এই ধরনের অপমানজনক কথার তীব্র প্রতিবাদ হওয়া উচিত। বন্দনা কাটারিয়া একমাত্র ভারতীয় মহিলা হকি খেলোয়াড়, যিনি অলিম্পিক হকিতে হ্যাটট্রিক করেছেন। তাঁর অপমান দলিত সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমস্ত মহিলারও অপমান। ভবিষ্যতে আমাদের দেশকে গর্বিত করা ব্যক্তিদের যারা জাতপাতের কথা বলে হেনস্থা, অপমান করবে, তাদের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে তীব্র প্রতিবাদের ঝড় তুলতে হবে। এ ছাড়া জাতপাতের এই অপমানজনক ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না হয়, তার জন্য রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
দেবদূত মণ্ডল, নুরপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
অন্ধকার দিক
একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে প্রায় ১৪০ কোটির দেশের কিছু বর্বর মানুষ যখন অলিম্পিক্সে হারের জন্য দলিত কন্যার বাড়িতে চড়াও হয়ে তাঁর নামে জঘন্য মন্তব্য করে আর সেই সঙ্গে তাঁর পরিবারকে হুমকি দেয়, তখন সারা বিশ্বের কাছে ভারতের শিক্ষা, সভ্যতার এক অন্ধকার রূপ ফুটে ওঠে। খেলাধুলো যখন ঐক্য আর সম্প্রীতির মেলবন্ধন, তখন তা পৃথিবীর এই বৃহত্তম গণতন্ত্রে কিছু অশিক্ষিত বর্বর মানুষের জঘন্যতম আচরণে বন্দনাদের মতো মহিলাদের কাছে হতাশার কারণ। আর এই বর্বরোচিত আচরণ ভবিষ্যতের ক্রীড়াবিদদের জন্য এক অশনিসঙ্কেত। জাতীয় মঞ্চ বা বিশ্ব মঞ্চে কোনও ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করার আগে ভাববেন, তাঁরা যদি বিফল হন, তবে তাঁদের অবস্থা দলিত বন্দনাদের মতো হবে না তো? বন্দনা এবং তাঁর পরিবারকে অপমান আর হেনস্থার বিরুদ্ধে নিন্দা জানানোর ভাষা নেই। কেন্দ্রীয় সরকার আর রাজ্য প্রশাসনের উচিত সেই বর্বরদের উচিত শিক্ষা দিয়ে ক্রীড়াবিদদের পাশে থেকে উৎসাহ সঞ্চার করা।
উজ্জ্বল গুপ্ত , কলকাতা-১৫৭
ব্যর্থতার কারণ
টোকিয়ো অলিম্পিক্সের শেষ মুহূর্তে অ্যাথলেটিক্সে নীরজ চোপড়ার দ্বারা অর্জিত সোনাটি লাভে তামাম ভারতবাসীর মতোই আমিও আনন্দে আত্মহারা, বিহ্বল হয়ে পড়েছি ঠিকই, তবে কোথাও যেন মনের মধ্যে একটা দুঃখ অনবরত বিঁধেই চলেছে যে, আমাদের প্রত্যাশামতো টোকিয়ো অলিম্পিক্সে যাওয়া ১২৭ জন খেলোয়াড়ের পদক সংখ্যা দুই অঙ্কে পৌঁছতে পারল না কেন? আটকে গেল মাত্র ৭টিতে— ১টি সোনা, ২টি রুপো ও ৪টি ব্রোঞ্জ পদকে। হয়তো অনেকেই বলবেন, টোকিয়ো অলিম্পিক্সে পদকজয়ী ৯৩টি দেশের মধ্যে ভারতের ৪৮তম স্থান ভারতীয় খেলোয়াড়দের দুরন্ত ফলাফলের প্রমাণ। কিন্তু এক বারও কেউ ভেবে দেখছেন, অ্যাথলেটিক্সে একটি সোনা পাওয়া আমাদের মনের অতৃপ্ত চাহিদাকে অনেকাংশে পূরণ করতে পারলেও, পুরোপুরি করতে পারল কি? ভেবে দেখেছেন, কেন ভারতের ১৫ জন শুটার একটিও পদক জিততে পারলেন না? অথচ, এঁদের পিছনে ভারত সরকারের ক্রীড়া মন্ত্রকের চেষ্টার অন্ত ছিল না। টোকিয়োয় খেলতে যাওয়া অন্য খেলোয়াড়দের জন্য যা করা হয়নি, এই ১৫ জন বিশ্বমানের শুটারদের জন্য তা করা হয়েছিল। অলিম্পিক্স সূচনার দু’মাস আগেই ক্রোয়েশিয়ায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল শুধুমাত্র এঁদের প্রশিক্ষণের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ও ভারতের বাইরের আবহাওয়ার সঙ্গে সড়গড় করে ক্রোয়েশিয়া থেকেই সরাসরি টোকিয়ো পাঠাতে। প্রশ্ন তো উঠবেই যে, এত যত্ন নেওয়ার পরিণতি শেষমেশ এই হল কেন?
তবে সাফল্যের কারণের মতোই ব্যর্থতারও তো কারণ একটা থাকবে। শুটারদের ঘরের বাইরে পাঠিয়ে অতিরিক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া, ক্রোয়েশিয়ায় দ্বিতীয় আইএসএসএফ বিশ্বকাপ শুটিং প্রতিযোগিতায় খেলানো কি হিতে বিপরীত হয়ে গেল না? যে সৌরভ চৌধরি ২০১৬ সাল থেকেই ধারাবাহিক ভাবে জুনিয়র ও সিনিয়র বিশ্বকাপ শুটিংয়ে রেকর্ড পয়েন্ট পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে আসছিলেন, বিগত এশিয়ান গেমস ও কমনওয়েলথ গেমসেও চ্যাম্পিয়ন, তিনি কেন পারলেন না ক্রোয়েশিয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বকাপে তাঁর প্রিয় ১০ মিটার এয়ার পিস্তলের ব্যক্তিগত ইভেন্টে পদক জয় করতে? রাহি সর্নোবাট ছাড়া দ্বিতীয় আইএসএসএফে একই অবস্থা হতে দেখলাম মনু ভাকের এবং তাঁর সঙ্গে অভিষেক বর্মা, ঐশ্বর্য প্রতাপ সিংহ তোমর, অঞ্জুম মুদগিল, অপূর্বী চান্দেলা প্রমুখের ক্ষেত্রেও? এঁদের দ্বিতীয় আইএসএসএফ বিশ্বকাপ শুটিং প্রতিযোগিতায় ব্যর্থতা কি চরম রূপ নিল অলিম্পিক্সে পর্বতপ্রমাণ মানসিক চাপ নিতে না পারার কারণ হিসেবে?
স্বর্ণজয়ী অ্যাথলিট নীরজ চোপড়া বলেছিলেন যে, অলিম্পিক্সের আগে তিনি আর কোনও প্রতিযোগিতায় খেলেননি, অতিরিক্ত প্রশিক্ষণও নেননি, যাতে অলিম্পিক্সে খেলার সময় মনের জোর থাকে, প্রচণ্ড মানসিক চাপ সহ্য করতে পারেন। অনেকেই আশা করেছিলেন, এই ১৫ জন শুটারের সাফল্যের বলে দেশে সোনা-সহ একাধিক পদক আসবে। এঁদের অতিরিক্ত খেলানো ও প্রশিক্ষণই কি ভুল হয়ে গেল? এই নামী শুটার ও তিরন্দাজরা সফল হলে পদক তালিকায় ভারতের স্থান ৪৮তম স্থান না হয়ে হয়তো ২০ থেকে ৩০-এর মধ্যে থাকত। এই ভুল থেকেই দেশের ক্রীড়া মন্ত্রক ও ক্রীড়া বিভাগের শিক্ষা নেওয়া উচিত।
তাপস সাহা, শেওড়াফুলি, হুগলি
‘নবীন’ চোখে
সারা দেশ নবীন পট্টনায়ককে বাহবা দিচ্ছে তাঁর ভারতীয় হকির প্রতি দায়বদ্ধতার জন্য। উনি দেখিয়ে দিলেন, সৎ উদ্দেশ্য থাকলে অলিম্পিক্স থেকেও পদক আনা যায়। অথচ, আমরা তা পারলাম কই? জনগণের লক্ষ লক্ষ টাকা জানি না কোন মহৎ উদ্দেশ্যে, ক্লাবের নাম করে নষ্ট করা হচ্ছে। অযথা টাকা ওড়ালে লোকে মুখে কিছু না বললেও, ভাল চোখে দেখে না। রাজ্য সরকারের কাছে অনুরোধ, আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে কি ‘নবীন’ করা যায় না?
রবি মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৪৫
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy