Advertisement
E-Paper

সম্পাদক সমীপেষু: পুষ্টির ব্যবস্থা

দু’বছর পর কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতরের প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের সরকারি বরাদ্দে ৭৪ পয়সা ও এক টাকা ১২ পয়সা বৃদ্ধির খবর সত্যিই হতাশাজনক।

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:১৩
Share
Save

‘অল্প বাড়ানো হল মিড-ডে মিলের বরাদ্দ, ফের বিতর্ক’ (২৮-১১) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে কিছু কথা। দু’বছর পর কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতরের প্রাথমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পড়ুয়াদের মিড-ডে মিলের সরকারি বরাদ্দে ৭৪ পয়সা ও এক টাকা ১২ পয়সা বৃদ্ধির খবর সত্যিই হতাশাজনক। এই বৃদ্ধির পর প্রাথমিকে বরাদ্দ হল মাথাপিছু ৬ টাকা ১৯ পয়সা এবং উচ্চ প্রাথমিকে ৯ টাকা ২৯ পয়সা। প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মাণ প্রকল্পের উদ্দেশ্যই হল দরিদ্র শ্রেণির পড়ুয়াদের এক বেলা রান্না করা পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার পাশাপাশি তাদের বিদ্যালয়মুখী করা। স্কুলছুটের হার কমানোর উদ্দেশ্য পূরণের কথা নাহয় বাদ দিলাম, কিন্তু ন্যূনতম যে খাদ্য ও পুষ্টি পড়ুয়াদের পাওয়ার কথা, সেটাও তাদের মিলছে কি? এ ব্যাপারে কেন্দ্র এবং রাজ্য, দু’তরফেই তদারকির অভাব নজরে আসে। মিড-ডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের অনেকের মতে, রাজ্য সরকার বিভিন্ন প্রকল্পে তাদের অনুদান বাড়ালেও মাথাপিছু মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধিতে সে ভাবে নজর দিচ্ছে না। প্রসঙ্গত, মিড-ডে মিলের খরচের ৬০ শতাংশ কেন্দ্র এবং ৪০ শতাংশ রাজ্য বহন করে। যে কোনও বাস্তববুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তিই এটা বলতে পারেন যে, মিড-ডে মিলের উপকরণের জোগান পড়ুয়াদের পুষ্টির কথা ভেবে করা উচিত। অথচ, সরকারি উদাসীনতা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে তারা মনে করে, অভুক্ত শ্রেণির পড়ুয়াদের ডালভাত দেওয়াটাই যথেষ্ট। অতি দরিদ্র শ্রেণির অধিকাংশ পড়ুয়ার কাছে মিড-ডে মিলের খাবারটাই দিনের প্রথম খাবার, যার টানে তারা বিদ্যালয়ে আসে। এর পরে রাতের ভরপেট খাবার তাদের জোটে কি না, সে ব্যাপারে সন্দেহ আছে।

গত বছর বাজেটে মিড-ডে মিলের যা বরাদ্দ ছিল তাতে সপ্তাহে অন্তত একটা দিনও শিশুদের পাতে ডিমের ঝোল ভাত দিতে গিয়ে বিদ্যালয়গুলি আর্থিক সমস্যার মধ্যে পড়েছে। কারণ, যেখানে একটা ডিমেরই দাম ৬.৫০-৭ টাকার মধ্যে, সেখানে মাথাপিছু প্রাথমিক স্তরে পড়ুয়াদের জন্য বরাদ্দ ছিল ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। বিভিন্ন আনাজের বর্তমান বাজার-মূল্যের কথা ভাবলে এই বরাদ্দের অঙ্ক অত্যন্ত হাস্যকর বলে মনে হয়। শিক্ষকদের মতে, ন্যূনতম বরাদ্দমূল্য কম করেও ১৫ টাকা না হলে, কোনও পাতে ডিম ভাত দেওয়া সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, কী ভাবনাচিন্তা করে দু’বছর পরে কেন্দ্রীয় শিক্ষা দফতরের মিড-ডে মিলে এই যৎসামান্য বৃদ্ধি করা হল? অন্যান্য রাজ্যে খাদ্যের পুষ্টিগুণ বাড়াতে বাড়তি অর্থ বরাদ্দ করা হয়। মেলায়-খেলায় রাজ্য প্রশাসনের উদ্যোগ থাকলেও, এ ক্ষেত্রে নেই কেন? সহানুভূতির সঙ্গে এই প্রান্তিক পড়ুয়াদের কথা যদি ভাবা না হয়, তা হলে এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য আদৌ পূরণ হবে কি?

স্বরাজ সাহা, কলকাতা-১৫০

তুচ্ছ অনুদান

ছাত্রছাত্রীদের জন্য মিড-ডে মিল ও রন্ধনশিল্পীদের মজুরি প্রদানে সরকারি অর্থ বণ্টনের করুণ চেহারাটি ‘অগ্রাধিকার’ (৪-১২) সম্পাদকীয়তে নিপুণ ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। এই প্রকল্পের গালভরা নাম প্রধানমন্ত্রী পোষণ শক্তি নির্মাণ। বর্তমান দুর্মূল্যের বাজারে কেন্দ্রের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের মিড-ডে মিলের বরাদ্দ ৬ টাকা ১৯ পয়সা ও রন্ধনকর্মীদের অপরিবর্তিত মজুরি বাবদ ১০০০ টাকা একান্তই তুচ্ছ তাচ্ছিল্যের অনুদান। রাজ্য সরকার মিড-মিলের কর্মীদের বেতনের অঙ্ক ১১ বছর ১৫০০ টাকা রাখার পরে এ বছর তা ২০০০ করেছে। অথচ, কেরল দৈনিক ৬০০ টাকা, হরিয়ানা মাসে ৭০০০ টাকা, পুদুচেরি ১২০০০ ও ওড়িশা ৩০০০ টাকা দিতে পারে কী ভাবে? এই রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী যখন বলেন যে, অল্প টাকায় পুষ্টিকর খাদ্য দেওয়া সম্ভব নয়, তখন প্রশ্ন ওঠা উচিত কেন এই সরকার এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করছে না? যদি আবাস যোজনা, লক্ষ্মীর ভান্ডার, পুজোর অনুদান বা ছাত্রদের ট্যাব কিনতে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা যায়, তবে শিক্ষার্থীদের খাবার এবং মিড-ডে মিল কর্মীদের বেতন দিতে এমন অনীহা কেন? গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময়ে কয়েক দিন মিড-ডে মিলের টাকা বাড়িয়ে করা হয়েছিল মাথাপিছু ২০ টাকা। সেটা কি আনুগত্য পাওয়ার একটা কৌশল ছিল?

মূল বিষয়টি হল, শিক্ষার বিস্তার ঘটাতে কোনও সরকারই বিশেষ আগ্রহী নয়। তাই অর্থ বরাদ্দ কম রাখা হয়। এটা সত্য যে, শিক্ষা আনে চেতনা, চেতনা আনে মুক্তি। আর সেটাই যে কোনও সরকারের কাছে চরম দুশ্চিন্তার।

সারনাথ হাজরা, হাওড়া

সীমিত সুযোগ

‘অতঃপর স্কুলছুট’ (৩-১২) শীর্ষক সম্পাদকীয়ের পরিপ্রেক্ষিতে এই চিঠি। রাজ্যের শিক্ষাব্যবস্থার অবনমন এখনও অব্যাহত। ২০২২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর সংখ্যা চার লক্ষের উপর কমে গিয়েছিল। অথচ, শীর্ষ প্রশাসনের মুখে একটা কথাও শোনা যায়নি। বিগত দু’-তিন বছর শহরের নামীদামি কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বা রসায়ন বিভাগে আসন খালি থেকে যাচ্ছে ছাত্রছাত্রীর অভাবে। উচ্চশিক্ষার প্রতি কি তবে আগ্রহ কমে যাচ্ছে পড়ুয়াদের? উচ্চশিক্ষার পর যে চাকরি পাওয়া যাবে এমন সম্ভাবনা কোথায়? এখন তো চাকরি পেতে গেলে এক বিরাট অঙ্কের টাকা নেতা-মন্ত্রীদের হাতে তুলে দিতে হয়। কিন্তু সেই সাধ্য সকলের থাকে না। তাই হয়তো উচ্চশিক্ষার পথ থেকে দ্রুত সরে যাচ্ছে ছাত্রছাত্রীরা।

এ বছর রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীর উপস্থিতির সংখ্যা কমেছে ১০ থেকে ৩০ শতাংশ। এরা সকলেই পুজোর আগে পর্যন্ত স্কুলে এসেছিল কারণ তখন ট্যাবের টাকা দেওয়া হচ্ছিল। টাকা পাওয়ার পরে শিক্ষার্থীদের একাংশ স্কুলে আসা বন্ধ করে দেয়। যে-হেতু তারা টেস্ট দেয়নি, তা হলে ধরে নেওয়া হচ্ছে যে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় ওরা আর বসবে না। ট্যাব হাতে দিয়ে যে পড়ুয়াদের ধরে রাখার চেষ্টা করছিল সরকার, সেই প্রচেষ্টা ধাক্কা খেয়েছে। ফলে, সবুজ সাথী বা ট্যাব দিয়ে শুধু শিক্ষার উন্নতি করা সম্ভব নয়, সেটা স্পষ্ট। এমনিতেই বেশির ভাগ শিক্ষায়তনে পরিকাঠামো তো বটেই, শিক্ষকও অপ্রতুল। কিছু দিন আগে খবর হয়েছিল যে, রাজ্যের বহু সরকারি বা সরকারপোষিত বিদ্যালয়ে চক-ডাস্টার কেনার টাকা নেই। এই চক-ডাস্টার কেনার উদ্দেশ্যে যে কম্পোজ়িট গ্রান্ট পাওয়া যায় তা আসেনি। এ সব নিয়ে কি কোনও মাথাব্যথা আছে প্রশাসনের? অন্য দিকে, ছুটির বিষয়টিও ভুললে চলবে না। একটি পরিসংখ্যান বলছে, বছরের ৫২ সপ্তাহের মধ্যে মোটামুটি ২৭-৩০ সপ্তাহ স্কুল খোলা থাকে। প্রসঙ্গত, গত বছর বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, রাজ্য সরকার মহার্ঘ ভাতা কম দেয় বটে, কিন্তু ছুটি দেয় প্রচুর। কিন্তু এই ছুটি আখেরে স্কুলপড়ুয়াদের কতখানি ক্ষতি করছে, তা কি প্রশাসন বুঝছে না?

উৎসব, খেলা-মেলা-দুর্গাপুজো, পুজো কার্নিভালের মতো বিষয়ে অকাতরে করদাতাদের টাকা খরচ হবে, না কি এ সবের রাশ টেনে শিক্ষাখাতে ও অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্পে রাজকোষের ব্যবহার হবে— ভেবে দেখার সময় এসেছে রাজ্য প্রশাসনের। নয়তো রাজ্যের যুবকদের কাছে পরবর্তী কালে দু’টি বিকল্প থাকবে— হয় হাতেকলমে কাজ শিখে পরিযায়ী শ্রমিক হয়ে অন্য রাজ্যে পাড়ি দেওয়া, নয়তো সিন্ডিকেটের সাম্রাজ্যে মিশে যাওয়া।

দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, বিরাটি, উত্তর ২৪ পরগনা

চড়া ভাড়া

সম্প্রতি কলকাতা স্টেশন থেকে যাত্রীসাথি অ্যাপ মারফত প্রিপেড ট্যাক্সি বুথ থেকে ট্যাক্সি নিই বনহুগলি যাওয়ার জন্য। দূরত্ব ছিল মাত্র ৬.২ কিলোমিটার। অথচ, ভাড়া হল ২৬৬ টাকা, তা-ও দিনের বেলা। এখন ওলা, উবর থেকে যাত্রীসাথি যে ট্যাক্সিতেই ওঠা যাক, অত্যধিক ভাড়া দিতে হয়। এর প্রতিকার কী?

সুব্রত চক্রবর্তী, কলকাতা-৩৫

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

school Students Nutrition

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}