দেবাশিস ভট্টাচার্যের নিবন্ধ “‘বাঙালি’ হয়ে ওঠা গেল কি”
(২৮-১) অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। ২৩ জানুয়ারি ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে নেতাজির ১২৫তম জন্মবার্ষিকীর সূচনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতার পূর্বে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়া অবশ্যই নিন্দনীয়! অনুষ্ঠানটি কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক আয়োজিত ও আমন্ত্রণমূলক হওয়ায় অনভিপ্রেত অংশটুকুর দায় আয়োজক কর্তৃপক্ষের উপরই বর্তায়। সে দিনের অনুষ্ঠানটি রাজনৈতিক মঞ্চ ছিল না, অতএব মুখ্যমন্ত্রীকে প্ররোচিত করতেই তা করা হয়েছে, সন্দেহ নেই। বঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করেছে কেন্দ্রের শাসক দল। স্বাভাবিক ভাবেই বাঙালি মনীষীদের প্রতি তাঁদের নেতাদের আনুগত্য প্রদর্শন ও বাঙালি হয়ে ওঠার তীব্র প্রয়াস ক্রমবর্ধমান। শুধু স্থান-কাল-পাত্র নির্বাচনে পোড়খাওয়া নেতাদেরও ভুল হয়ে যাচ্ছে। সুভাষচন্দ্র বসু সৎ, নিষ্ঠাবান, অবিসংবাদিত নেতা, প্রতিটি বাঙালির ঘরে নিত্য স্মরণীয় তাঁর আত্মত্যাগ। নেতাজি, বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথের লেখা দু’চার লাইন মুখস্থ করে সমমনস্ক মানুষদের করতালি আদায় করা গেলেও, বাঙালির হৃদয়ে প্রবেশের ছাড়পত্র মিলবে না। এক বিশাল বাঙালি জনগোষ্ঠী আছে, যাঁরা প্রিয় মনীষীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের দিনে বিসদৃশ ঘটনা মেনে নিতে পারেন না। সে দিন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদ মুখ্যমন্ত্রী চটজলদি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তার জন্য তাঁকে সাধুবাদ জানাই।
রাজা বাগচি, গুপ্তিপাড়া, হুগলি
অশোভন
‘নেতাজি ও জয় শ্রীরাম’ সম্পাদকীয় নিবন্ধ (২৯-১) সম্পর্কে বক্তব্য, অবশ্যই ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তোলা উক্ত অনুষ্ঠানের মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশের সঙ্গে শতভাগ অশোভন এবং বেমানান। কিন্তু এটাকে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ‘বেইজ্জতি’ হিসেবে নেওয়ার কোনও যৌক্তিকতা নেই। ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে নিজের বক্তব্য পরিবেশন করা সবচেয়ে শোভন হত। অরাজনৈতিক ও ধর্মনিরপেক্ষ সরকারি অনুষ্ঠানে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিকে যারা প্ররোচনা হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল, সেটাই হত তাদের বিরুদ্ধে সমুচিত জবাব। এই বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর অতিশয় স্পর্শকাতরতা বিষয়টিকে অন্য রঙে রাঙিয়ে দিল।
একটি অনুষ্ঠানের গাম্ভীর্য ধরে রাখার প্রধান দায়িত্ব অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা এবং আমন্ত্রিত বক্তাদের। দর্শকেরা কী আচরণ করবেন, কখন প্ররোচিত করার চেষ্টা করবেন, তা কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। তাতে বিচলিত হওয়া এক জন আমন্ত্রিত বক্তার উচিত নয়। পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র কিংবা তাৎক্ষণিক উচ্ছ্বাস যা-ই হোক না কেন, কয়েক জন দর্শকের অসংলগ্ন আচরণ কিংবা প্ররোচনায় পা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে নেতাজির জন্মদিনকে উপলক্ষ করে এক অপ্রয়োজনীয় বিতর্কের অবতারণা করলেন, সেটা মোটেই কাম্য ছিল না।
সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হল, নেতাজির আদর্শ, দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ সব ভুলে আমরা মেতে উঠলাম একটি ধর্মীয়-রাজনৈতিক স্লোগানকে নিয়ে! তার উচিত-অনুচিত বিচার করাই মূল লক্ষ্য হয়ে উঠল। কোনও মনীষীর জন্মদিন পালন করার উদ্দেশ্য, তাঁর জীবনের আদর্শকে সমসাময়িক জাতীয় জীবনে গ্রহণ করা এবং প্রয়োগ করা। অথচ, আনুষ্ঠানিকতা ও আড়ম্বরের আড়ালে আমরা মেতে রইলাম সেই দলাদলি, সঙ্কীর্ণ নোংরা রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে।
অপূর্ব সৎপতি, সারেঙ্গা, বাঁকুড়া
তাঁর আদর্শ
নেতাজির জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বিজেপির সমর্থকরা ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তুলে শুধু মুখ্যমন্ত্রীকেই নয়, প্রধানমন্ত্রীকেও অসম্মান করলেন। দুর্ভাগ্য, এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁর বক্তৃতায় কোনও বার্তা দিলেন না। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের আসল উদ্দেশ্য এ থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়। সম্প্রতি দলবদল বঙ্গ রাজনীতির অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাঁরা দল বদলে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁরাও তাঁদের নেতাজি-প্রীতি দেখাতে উঠে-পড়ে লেগেছেন। কিন্তু নেতাজিকে তাঁরা ঠিকমতো পড়েছেন কি? পড়ে বুঝলে নিশ্চয়ই দিনের পর দিন বিভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চে অন্য দলের নেতা-নেত্রীদের সম্পর্কে ঘৃণ্য মন্তব্য, গালাগালি উগ্র ভাবে উগরে দিতেন না। রাজনৈতিক জীবনে গাঁধীজির সঙ্গে নেতাজির মতাদর্শের মিল হয়নি। কংগ্রেসের সভাপতির পদে ইস্তফা দিয়ে নেতাজি ফরওয়ার্ড ব্লক গঠন করেছিলেন। কিন্তু, গাঁধীজির প্রতি নেতাজি আজীবন শ্রদ্ধাশীল ছিলেন। তাঁর নামে কখনও কটূক্তি, কটাক্ষ, অসৌজন্য প্রকাশ করেননি। বরং তাঁকে শ্রদ্ধা-সম্মান জানিয়ে আজাদ হিন্দ বাহিনীর একটি ব্রিগেডের নাম রেখেছিলেন ‘গাঁধী ব্রিগেড’। আর গাঁধীজিও নেতাজিকে বলেছিলেন ‘দ্য পেট্রিয়ট অব পেট্রিয়টস’। আজকের দলবদলুরা নেতাজির কাছ থেকে এইটুকু শিক্ষা নিয়ে কটু ভাষা, অসৌজন্য, গালিগালাজ থেকে বিরত থাকবেন কি? তাতে অন্তত রাজনৈতিক সংস্কৃতি একটু বজায় থাকবে।
অরুণ মালাকার, কলকাতা-১০৩
অসম্মান
নেতাজি ছিলেন সাম্প্রদায়িকতা ও বর্ণবৈষম্যের ঊর্ধ্বে, জাতীয়তাবাদের ধারক, বাহক ও প্রচারক। তাঁর জন্মদিনে ভিক্টোরিয়ায় যে ভাবে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিয়ে সরকারি অনুষ্ঠানের শালীনতা নষ্ট করা হল, তার বিরুদ্ধে প্রত্যেকের সরব হওয়া উচিত। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিবাদকে আমরা সম্মান জানাই। এই অনুষ্ঠানে বাংলার অনেক স্বনামধন্য ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন। যখন মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করলেন তাঁকে বেইজ্জত করা হয়েছে, তাঁরা কেন নীরব রইলেন? এই ঘটনায় শুধুমাত্র বাংলার মুখ্যমন্ত্রী নয়, নেতাজিকেও অপমান করা হল।
সৈয়দ আনসার উল আলাম, খেপুত, পশ্চিম মেদিনীপুর
নির্লজ্জ
নেতাজি সঙ্কীর্ণ রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠতে পেরেছিলেন। তাঁরই প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অনুষ্ঠানে রাজনীতির নির্লজ্জ কারবারিরা এমন আচরণের সাহস পেল কী করে? অবাক হয়ে দেখলাম, অর্বাচীনের দল নেতাজির নামে জয়ধ্বনি না দিয়ে সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক ভাবে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দিল। এক জন দেশপ্রেমিককে শ্রদ্ধা নিবেদনের অছিলায় এমন সঙ্কীর্ণ রাজনীতিতে মেতে ওঠা যায় না। দলীয় কর্মীদের আচরণের প্রতিবাদে অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধানমন্ত্রী একটি বাক্যও ব্যয় করেননি। তাঁর মুখে শোনা গেল মতুয়া গুরুদের কথা, আত্মনির্ভর ভারতের কথা, আয়ুষ্মান ভারত ও কৃষি আইনের কথা। যদিও এগুলোর সঙ্গে নেতাজি বা তাঁর আজাদ হিন্দ বাহিনীর সম্পর্ক কতটা ছিল, তা ঠিক বোঝা গেল না।
সমীর কুমার ঘোষ, কলকাতা-৬৫
পরিকল্পিত?
টিভিতে দেখেছি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রালয় আয়োজিত নেতাজি জন্মজয়ন্তী অনুষ্ঠানে যে আমন্ত্রিত অতিথিরা পিছনের সারিতে বসে আছেন, তাঁদের অনেকেরই মুখে ‘মাস্ক’ নেই। দূরত্ববিধিও মানা হয়নি। আবার ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান যখন দেওয়া হচ্ছে, তখন এক জন ব্যক্তি, সম্ভবত নিরাপত্তাকর্মী, হাত নেড়ে চুপ করানোর চেষ্টা করছেন। যে অনুষ্ঠানে দেশের প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন, তার নিরাপত্তার দায়িত্ব ন্যস্ত স্পেশাল প্রোটেকশন গ্রুপ বা এসপিজি-র হাতে। এসপিজি-র নিরাপত্তা বেষ্টনী অতিক্রম করে, করোনা বিধি অগ্রাহ্য করে এত জন কী করে প্রবেশ করলেন? বিশৃঙ্খলাকারীদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত প্রশাসনিক ব্যবস্থা
কেন নেওয়া হল না? তবে কি পুরোটাই পূর্বপরিকল্পিত?
প্রবীর মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy