নানা আবেদন, অনুরোধ, প্রচার সত্ত্বেও লোকের বাইরে বেরোনো কিছুতেই আটকানো যাচ্ছে না। পুলিশকে বাধ্য হয়ে লাঠি চালাতে হচ্ছে, সাইকেল বা বাইকের চাকার হাওয়া বার করে দিতে হচ্ছে, কান ধরে ওঠবোস করাতে হচ্ছে। যার ফলে পুলিশকে যথারীতি সুনাম ও দুর্নামের ভাগী হতে হচ্ছে। ঠিক সময়েই সরকারের মনে পড়েছে, গত শতকের আশির দশকে টিভি-তে সম্প্রচারিত ‘রামায়ণ’, ‘মহাভারত’ সিরিয়ালগুলো দেখার জন্য রাস্তাঘাট, দোকান-বাজার আপনাআপনিই শুনশান হয়ে যেত। তাই এই দুটো সিরিয়ালের পুনঃসম্প্রচার শুরু হয়েছে টিভিতে। যে দেশের লোক যাতে মজে, তাকে তা-ই দিয়েই বশ করতে হয়। ধর্ম আর বিনোদন এই দেশের লোকের সবচেয়ে মশগুল থাকার জিনিস। লকডাউন যদি সার্থক করতে হয়, এদের মিশেলেই করতে হবে!
প্রমথরঞ্জন ভট্টাচার্য, কলকাতা-৮৪
‘আইন’ মেনে
সব্জির দোকানের সামনে আইন মেনে গণ্ডির ভেতর দাঁড়িয়ে থাকা ক্রেতাকে ঠেলা মেরে এগিয়ে গিয়ে, আইন মেনে এক দলা থুতু ফেলে, নিজামুদ্দিনে মুসলমানদের আইন ভেঙে ধর্মীয় জমায়েতকে গালি দেওয়া শুরু! কারণ ওই জমায়েত থেকেই তো— সেই অবধি রোগের লক্ষণমাত্র না থাকা সুস্থ-সজীব ভারতে— করোনাভাইরাস ছড়িয়ে গেল! সেই সূত্রে শুরু মুসলমান সব্জিওয়ালাকে আইনমাফিক গালি: তোদের জন্যেই এই দশা, ধর্ম ধর্ম করে গেলি!
গরিব মুসলমান সব্জিওয়ালার সওয়াল করার হক নেই, মাথা নিচু করে রাখাই আইন। নিজামুদ্দিনে কী হয়েছিল, গরিবদের তা নিয়ে সঠিক জানতে না পারাটাই আইন। পয়সাওয়ালা ক্রেতা বলছে, এবং তার চারপাশের সবাই হইহই করে তার সঙ্গে গলা মেলাচ্ছে। অতএব, সব্জিওয়ালাকে মেনে নিতে হবে যে মুসলমানরা দেশের শত্রু, তারা জঙ্গি, তারা পদে পদে দেশের আইন ভাঙে, এবং আজ দেশের মাথায় তারাই এত বড় দুর্গতি চাপিয়ে দিল।
এর মধ্যে দেশের নানা কোণে নেতা-মন্ত্রী-আদালতের জ্ঞাতসারে, কখনও বা উৎসাহে, নানা হিন্দু-নামধারী জমায়েত নিয়ে প্রশ্ন যদি কেউ নাও করে, নিজামুদ্দিনে সমাবেশটা আদৌ হতে দেওয়া হল কেন সেটা জিজ্ঞাসা করলেও আইন ভেঙে টুকড়ে টুকড়ে হয়ে যাবে!
কেন করোনাভাইরাস নিয়ে বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থা, বিজ্ঞানী মহল, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, এবং বিশ্ব সংবাদমাধ্যম এত আগে থেকে সতর্কতা জারি করা সত্ত্বেও, বিমানবন্দরে পরীক্ষা শুরু করতেই ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি লেগে গেল, সে কথা তোলা যাবে না— আইন ভাঙবে।
কেন প্রতি দশ লক্ষ জনসংখ্যায় মাত্র এগারো জনের পরীক্ষা হয়েছে, সে প্রশ্ন তোলা ঘোর বে-আইনি। আরও বেআইনি এই খবরটা জানা যে, ২০ মার্চ পর্যন্ত, ইউনাইটেড আরব এমিরেটস-এর মতো মুসলমান দেশে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা হয়েছে সবচেয়ে বেশি— প্রতি দশ লক্ষে ১২৬৩৯ জনের। আর এক মুসলমান দেশ ইরানে এই সংখ্যাটা ৯৫২, ইংল্যান্ডের সমান, আমেরিকার তিন গুণ।
আর, এ প্রশ্ন তো সরাসরি দেশদ্রোহ: কেন করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতির প্রভূত সুযোগ থাকা সত্ত্বেও, জনস্বাস্থ্যব্যবস্থাকে প্রস্তুত করে তোলা হল না?
দেশের উচ্চডিগ্রিধারী মধ্যশিক্ষিত, মধ্যমেধার উচ্চবিত্ত, নিম্নরুচির উচ্চবর্গের এ প্রশ্নগুলো তোলার সাহস নেই। এবং আইনমাফিক তাঁরা নিজেদের বিবেক বাঁচানোর একটা পথ পেয়ে গেলেন: মুসলমানদের ধর্মীয় জমায়েতটা না হলে, শত্রুপক্ষ হিসেবে বেছে নেবার মতো কিছু ছিল না! দেশের সঙ্কটকালে, মুসলমান-বিদ্বেষের চেয়ে উত্তম ওষুধ আর কী-ই বা আছে?
দ্রৌপদী মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-১৬৩
প্রাণীগুলো
আপনার এলাকার লালু-ভুলুরা এখন কেমন আছে? আমি বলছি রাস্তার কুকুর, বেড়ালদের কথা। অথবা সামনের গাছে ছুটে বেড়ানো কাঠবেড়ালিগুলোর কথা। সারা বছর খুঁটে খুঁটে খেয়ে বেঁচে থাকে যারা? এই অবোধ প্রাণীগুলি কোভিড-১৯ বোঝে না। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণও বোঝে না। সমস্ত খাবারের দোকান বন্ধ, বাড়িতে বাড়িতে রেশনিং শুরু হয়েছে। লোকে ভ্যাটে নোংরা ফেলতেও বেরোবে না। ওদের ভালবাসার জনেরাও বাড়িবন্দি। আপনি নিশ্চয় চাইবেন না কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের চেনা জন্তুগুলোর নিষ্প্রাণ গলে যাওয়া শরীরগুলোকে রাস্তায় খুঁজে পেতে!
এই ভয়ানক সময়ে দয়া করে একটু মানবিক হোন। যা-ই খাবেন, সামান্য বাঁচিয়ে রাখুন। সম্ভব হলে পাশের ফ্ল্যাট থেকেও চেয়ে নিতে পারেন বেঁচে যাওয়া খাবার বা বাসি খুদকুঁড়ো। টুক করে মুখোশ পরে এক বার বাড়ির সিঁড়ি দিয়ে নেমে ওদের ডেকে সেটুকু দিয়ে আবার চলে আসুন নিরাপদ আশ্রয়ে। কটা সামান্য বিস্কুট ছুড়ে দিন সুযোগ পেলেই।
ওদের জন্য কোনও বাজেটও বরাদ্দ হবে না। ভরসা আমরাই। আমাদের সবার প্রয়াসে বেঁচে থাকুক সবাই।
উত্তরায়ণ সেনগুপ্ত, কলকাতা-২৮
বিশ্বাসের জোর
করোনা-আঁধার দূর করতে দীপ জ্বালানোর হোম টাস্ক দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। আপাত লক্ষ্য, রাষ্ট্রকে মানসিক ভাবে উজ্জীবিত করা। সন্দেহ হয়, এটাও আসলে মোদী-আনুগত্যের একটি অনুশীলন মাত্র। ছোট ছোট সহজসাধ্য নির্দেশ পালনের মাধ্যমে যা তৈরি করা হচ্ছে।
হালের পাঠ ছিল: তালি-থালি, ঘণ্টা-শঙ্খ বাজিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো। তলে তলে প্রচার হয়েছিল, ওই শব্দের কম্পনে ভাইরাস মরবে। সমাজের সব শ্রেণির মানুষ তালি বাজিয়েছেন। মোদী মাথা গুনে উৎসাহ পেয়েছেন। সমালোচকদেরও রাষ্ট্রবোধের সুতোয় জড়িয়ে আনুগত্যের গণ্ডিতে এনে ফেলার হোম টাস্কে এ বার, দীপ জ্বেলে যাও।
সঙ্কটকে অন্ধকার জ্ঞান করে আলোয় ভরসা রাখতে ভালবাসি আমরা সকলেই। একটি প্রদীপ জ্বেলে আকাশের দিকে তুলে ধরতে ভারতের বহু মানুষের ভালই লাগবে। গোটা ভারত তাতে একাত্ম হবে, ক্ষতি নেই। মিডিয়ায় ভাল ছবি হবে। বিশ্বে প্রচার হবে। লাভের কড়ি গুনবেন মোদী। ফের মাথা গুনবেন তিনি।
তবে এই কোটি কোটি আলোকশিখায় পতঙ্গের মতো ভাইরাসেরা এসে ঝাঁপিয়ে পড়বে ও প্রাণ দেবে— এমন কোনও প্রচার তলে তলে হচ্ছে কি না, নজর রাখা দরকার সে দিকেও।
প্রচুর ঠাট্টা-তামাশা শুরু হয়ে গিয়েছে এ নিয়ে। তবে বিশ্বাসের দুধ খাওয়া জনগণেশ কি ঠাট্টার পাত্র! করোনাভাইরাস লোকমুখে এখনই ‘করুণাদেবী’। কিছু দিনের মধ্যে মহা ধুমধামে ‘যাঁর’ পুজো হতেই পারে। কোথাও হয়তো ‘তাঁর’ ব্রতকথার পাঁচালি লেখা শুরু হয়ে গিয়েছে! ছেপে বেরোনোর অপেক্ষা। বিশ্বাস করতে যে আমরা বড় ভালবাসি।
শুভাশিস ভট্টাচার্য, কলকাতা-৫৬
মানবিক সলমন
গত ১৯ মার্চ থেকে বলিউডের সব কাজ বন্ধ। বলিউডে জুনিয়র আর্টিস্ট, টেকনিশিয়ান, স্পটবয়রা প্রতি দিনের হিসাবে টাকা পেতেন। শুটিং বন্ধ থাকলে তাঁদের পক্ষে দিন গুজরান করা ভীষণ কঠিন। বলিউডের সঙ্গে যুক্ত থাকা এই রকম ২৫ হাজার ঠিকাকর্মীর দায়িত্ব নিয়েছেন সলমন খান। কুর্নিশ জানাই।
শিবব্রত গুহ, কলকাতা-৭৮
ভ্রম সংশোধন
'লকডাউনের হাল কী, জানাল গুগল' (পৃ ৫, ৪-৪) শীর্ষক খবরের সঙ্গে গুগল সমীক্ষার পরিসংখ্যানে 'বিনোদনের জায়গা'র বদলে ভুল করে 'খুচরো বিক্রি' লেখা হয়েছে। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy