Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
Education

সম্পাদক সমীপেষু: নতুন মাফিয়া

এখন অনেকেই বলছেন, অনেক আগে থেকেই সর্ষের মধ্যে ভূত ছিল, কিন্তু ধরা পড়েনি। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড়ো ধরা।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪ ০৫:১৯
Share: Save:

মলয় মুখোপাধ্যায়ের ‘একেই কি বলে পরীক্ষা?’ (৪-৭) শীর্ষক প্রবন্ধটি পড়ে মনে হল, এত দিন জমি মাফিয়া, কয়লা মাফিয়া ইত্যাদি শব্দবন্ধের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম, এখন পরিচয় ঘটল ‘পরীক্ষা মাফিয়া’ শব্দবন্ধটির সঙ্গে! অবশ্য কিছু রাজ্যে এই পরীক্ষা মাফিয়ারা সক্রিয় বহু দিন ধরেই। সে সব রাজ্যে নাকি টাকা দিলেই ডিগ্ৰির সার্টিফিকেট পাওয়া যায়, এমনকি সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও পাওয়া যায়! তবে নিট এবং নেট-এর মতো সর্বভারতীয় পরীক্ষায় এর আগে এত ব্যাপক ভাবে এই পরীক্ষা মাফিয়াদের ভূমিকা প্রকাশ্যে আসেনি। অবশ্য এখন অনেকেই বলছেন, অনেক আগে থেকেই সর্ষের মধ্যে ভূত ছিল, কিন্তু ধরা পড়েনি। বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, চুরি বিদ্যা বড় বিদ্যা যদি না পড়ো ধরা। সুতরাং এই বিদ্যা অবলম্বন করে অতীতে যারা লাভবান হয়েছে, তাদের লোভ বেড়ে গিয়েছে। এ বার একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গিয়েছে। ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষায় এক সঙ্গে ৬৭ জন ১০০ শতাংশ নম্বর পেয়ে গেল, আশ্চর্যজনক নয় কি?

যারা এই মাফিয়াদের টাকা দিয়ে ডাক্তার বা অধ্যাপক হতে চেয়েছে, তারা তাদের কেরিয়ারের শুরু থেকেই জালিয়াতির পথকে গ্রহণ করেছে। এটাই সবচেয়ে দুশ্চিন্তায় বিষয়। প্রবন্ধে উল্লিখিত এক নিট পিজি পরীক্ষার্থীর কাছে প্রস্তাব গিয়েছে যে, ৬৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে প্রশ্নপত্র পাওয়া যাবে। যে ছাত্র ওই প্রস্তাবটি গ্রহণ করবে, সে কতটা যোগ্য ডাক্তার হবে, তা নিশ্চিত ভাবে বলা না গেলেও সে যে তার পেশাগত জীবন থেকে ওই টাকাটা তুলতে চাইবে, সে কথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায়। আর তার কোপ গিয়ে পড়বে বেচারি রোগীদের উপর! এটাই আমরা এখন দেখতে পাচ্ছি বাস্তবে। পরীক্ষা নামের এই প্রহসনে বঞ্চিত হচ্ছে প্রকৃত মেধাবী ছাত্ররা।

দেবযানী চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৮৬

স্বপ্নভঙ্গ

মলয় মুখোপাধ্যায়ের ‘একেই কি বলে পরীক্ষা?’ প্রবন্ধটি প্রাসঙ্গিক, এবং শঙ্কারও। ডাক্তারি প্রবেশিকা থেকে অধ্যাপনা ও গবেষক বৃত্তির পরীক্ষা— সর্বত্র দুর্নীতির জাল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে রাঘব বোয়ালদের তার সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা উঠে এসেছে। উঠে এসেছে নেতা-মন্ত্রীদের শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চিত্র। অন্যায়কে প্রশ্রয় দেওয়ার রাজনৈতিক চক্রান্ত। এর পাশাপাশি আছে অভিভাবকদের গগনচুম্বী আশা-আকাঙ্ক্ষা। অন্যায় জেনেও অর্থ বিনিয়োগ করতে দ্বিধা না করা।

স্মরণীয়, অষ্টাদশ লোকসভার ফলাফল নিয়ে ৪ জুন সারা বিশ্ব যখন সমাজমাধ্যমের দিকে তাকিয়ে, তখনই এনটিএ পরিচালিত নিট (ইউজি) পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হল। কেন একই দিন তারা বেছে নিল এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ফল প্রকাশের জন্য? পরীক্ষার ফল প্রকাশে দেখা গেল, ৭২০ নম্বরের পরীক্ষায় পূর্ণ মান পেয়েছে ৬৭ জন। এর মধ্যে আট জন একই পরীক্ষা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থী। এই অভাবনীয় ঘটনায় অসংখ্য অভিযোগ উঠে আসছে। প্রশ্ন ফাঁস থেকে নম্বর পাইয়ে দেওয়ার ঢালাও ব্যবস্থা। এনটিএ-র মতো পরীক্ষা নিয়ামকের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। তারা সাংবাদিক সম্মেলন করে জানায়, পরীক্ষায় কোনও কারচুপি হয়নি। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীও সংবাদমাধ্যমে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করেন। অবশেষে তিনি স্বীকার করেছেন, কিছু কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। পটনা শহরে পরীক্ষার আগের দিন প্রশ্নপত্র নিয়ে এক বাড়িতে পরীক্ষার্থীদের বসানো হয়। সেখানে ‘সলভার গ্যাং’-দের সহায়তায় উত্তর মুখস্থ করানো হয়েছে। একাধিক অঙ্গরাজ্যে ছড়িয়ে রয়েছে এই মাফিয়াচক্র।

স্বাভাবিক ভাবেই বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য অতীতের মতো রাজ্যস্তরে এই প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য সরব হয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে অন্ধকারের পরিধি এতটাই পরিব্যাপ্ত যে, ১৮ জুনে হওয়া ইউজিসি নেট পরীক্ষাও বাতিল করতে হয়েছিল। দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা এনটিএ-র সদস্যদের এমন অবনমনের কথা ভাবতে কষ্ট হয়। সব কিছু কি টাকা দিয়ে কেনা-বেচা করা যায়?

যে বিষয়টিতে প্রবন্ধকার আলোকপাত করেননি, তা হল ভারতের দারিদ্র। ভারতের এক বিরাট সংখ্যক দরিদ্র মানুষ সুষম খাদ্য জোগাড় করতে অক্ষম। এর সঙ্গে রয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি। ফলে, নিম্নবিত্ত পরিবারগুলিতে যে ছেলে-মেয়েরা নিট পরীক্ষায় বসার স্বপ্ন বুনে চলেছে, স্বাধীনতার এতগুলি বছর পেরিয়ে এসেও কি তাদের কথা ভাবার সময় আসেনি? এই সমস্ত পরিবারের ছেলে-মেয়েরা আর্থিক কারণে বার বার নিট পরীক্ষা বা অন্যান্য পরীক্ষার মুখোমুখি হতে পারে না। হারিয়ে যায় তাদের স্বপ্ন।

প্রবন্ধকার এই অবস্থায় ত্রুটিমুক্ত পরীক্ষা পদ্ধতি প্রসঙ্গে ইউপিএসসি-র প্রসঙ্গ তুলেছেন। কিন্তু ভাবতে হবে ভারতের রাজনৈতিক কর্ণধার থেকে শিক্ষা নিয়ামকরা যেমন কর্দমাক্ত, সেখানে অন্যান্য সংস্থা কতটা মেরুদণ্ড সোজা রাখতে পারবে? তবে আমারও বিশ্বাস, সমস্ত প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের উপর ভিত্তি না করে মাধ্যমিক বোর্ড, হায়ার সেকেন্ডারি বা ডিগ্রি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরও যোগ্যতার মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণের দিন এসেছে। এখন যেমন এঞ্জিনিয়ারিং পড়তে হলে অঙ্কে একটা নির্দিষ্ট নম্বর পাওয়া আবশ্যক।

সূর্যকান্ত মণ্ডল, কলকাতা-৮৪

মন্মথের স্মরণ

বাংলা পূর্ণাঙ্গ নাটকের মহৎ স্রষ্টা, একাঙ্ক নাটক সম্রাট মন্মথ রায় ‘১২৫ পেরিয়ে’ (কলকাতার কড়চা, ২৯-৬) আজ বিস্মৃতপ্রায়। তিনি শুধু নাট্যকারই নন, ছিলেন নাট্য অধিকারের অকুণ্ঠ প্রবক্তা, প্রগতিশীল ও সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভাবনার অধিকারী। অর্থনৈতিক শোষণ, সামাজিক নিষ্পেষণ ও রাজনৈতিক অত্যাচারে জর্জরিত মানুষের ছবি নানা ভাবে ধরা পড়েছে তাঁর নাটকে। মানবমনের “সূক্ষ্মতম অন্তর্দ্বন্দ্বের প্রতিটি পরদা ইনি অতি নিপুণ হস্তে উন্মোচিত করিয়াছেন। অন্তর্দ্বন্দ্বের এই অবিরাম সংঘাতে ইঁহার সৃষ্ট চরিত্রগুলির মর্মস্থল ছিঁড়িয়া যাইতেছে বলিয়া বোধ হয়” (অজিতকুমার ঘোষ, বাংলা নাটকের ইতিহাস, ২০১৮)। একই সঙ্গে গভীরতর জীবনবোধ ও শিল্পরূপের বিস্ময়কর সংমিশ্রণ তাঁর সৃষ্টিবৈচিত্রকে দান করেছে অনন্যতা। তাঁর নাটক এক সময়ে কলকাতার রঙ্গমঞ্চে অসামান্য জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল। ১৯৩০ সালে ইংরেজ সরকার নিষিদ্ধ করে তাঁর কারাগার নাটক। এটি পৌরাণিক হয়েও ছিল আধুনিক, তাতে ছিল রাজনৈতিক সংগ্রামের অগ্নিময় ব্যঞ্জনা। আজও তাঁর চাঁদ সদাগর নাটকের মুখ্য চরিত্রটি ট্র্যাজিক মাহাত্ম্যে উজ্জ্বল এক চরিত্র। ১৯২৩-এ তাঁর প্রথম একাঙ্ক নাটক মুক্তির ডাক প্রকাশ পেলে প্রমথ চৌধুরী একে ‘যথার্থই একখানি ড্রামা’ বলে অভিহিত করেন। কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছিলেন, “এক বুক কাদা ভেঙে পথ চলে এক দিঘি পদ্ম দেখলে দু’চোখে আনন্দ যেমন ধরে না, তেমনি আনন্দ দু’চোখ পুরে পান করেছি আপনার লেখায়” (নবনাটিকা দর্শনাকাঙ্ক্ষী)।

আবার স্বাধীনতা আন্দোলনকালে জনমানসে দেশাত্মবোধ জাগ্রত করার উদ্দেশ্য নিয়ে মন্মথ রায় লিখেছিলেন মীরকাশিম-এর মতো ঐতিহাসিক নাটক। মীরকাশিমের জ্বালাময় উক্তির মধ্য দিয়ে ব্যক্ত হয়েছে পরাধীনতার নাগপাশে বদ্ধ জাতির শেষ মুক্তিস্বপ্ন ও করুণ হতাশা। পরবর্তী কালে লেখা ঐতিহাসিক নাটক সাঁওতাল বিদ্রোহ ও অমৃত অতীত-এ প্রাধান্য পেয়েছে গণবিদ্রোহের সুর। স্বাধীনতা-উত্তরকালে মন্মথ রায়ের লেখা পথে-বিপথে, ধর্মঘট, বন্যা, মহাভারতী, টোটোপাড়া, চাষীর প্রেম, ফকিরের পাথর নাটক সামাজিক অন্যায়, অসঙ্গতিকে ফুটিয়ে তুলেছিল।

পরিশেষে মন্মথ রায়ের বহু অভিনীত নাটক মহাপ্রেম-এর কথা বলতেই হয়। চিন-ভারত সীমান্ত সংঘর্ষের পটভূমিকায় লেখা দেশাত্মবোধক নাটক হিসেবে যা সাড়া জাগিয়েছিল। সম্প্রতি ১৬ জুন তাঁর ১২৫ বছর পূর্তিতে জীবনানন্দ সভাঘরে পালিত হল স্মরণ-অনুষ্ঠান।

সুদেব মাল, খরসরাই, হুগলি

অন্য বিষয়গুলি:

Education Examinations Students NEET
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy