ফাইল চিত্র।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সংক্রান্ত ঘোষণা (‘করোনা কমলেই পরীক্ষা: ব্রাত্য’, ২১-৫) নতুন করে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে পরীক্ষার্থীদের কপালে। দেড় বছরের উপর একই বিষয় নিয়ে চর্চা করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে অনেকেই। করোনা অতিমারির এই পরিস্থিতিতে সিবিএসই এবং আইসিএসই বোর্ড তাদের দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল করেছে। আমাদের পরীক্ষা জুনে হওয়ার কথা থাকলেও আপাতত তা স্থগিত রেখেছে মাধ্যমিক পর্ষদ। ধরে নিলাম, পরীক্ষা জুলাইয়ের শেষে অথবা অগস্টে হবে। এটাও মানলাম, যে হেতু দশম শ্রেণিতে কোনও পরীক্ষারই আমরা সম্মুখীন হইনি, তাই মাধ্যমিকের মূল্যায়ন খুবই জরুরি। তাই বলে আর কত দিন এই একই বিষয় নিয়ে পড়ব? এই রকম অনিশ্চয়তার মধ্যে একঘেয়েমি চলে আসাটা অসম্ভব নয়। বিশেষত যখন আমরা দেখছি যে, আমাদেরই সমবয়সি বন্ধুরা পরবর্তী ক্লাসের জন্য তৈরি হতে শুরু করেছে। অনেকে দশম শ্রেণির পর বোর্ড পাল্টেছে এবং তাদের নতুন পঠনপাঠনও শুরু হচ্ছে। তাদের তো মাধ্যমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার পাশাপাশি নতুন ক্লাসের পড়াও পড়তে হচ্ছে!
উপরন্তু একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণিতে বিশাল সিলেবাস, অথচ আমাদের তা পড়ার সময় অনেকটাই কমে যাবে। ধৈর্য হারিয়ে ফেলছেন অভিভাবকেরাও। তাঁরা পরীক্ষা বাতিল করার জন্য সওয়াল করছেন। সরকারের কাছে বিনীত আবেদন, পরীক্ষার্থীদের মানসিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মাধ্যমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা নিয়ে যেন আর এক বার ভেবে দেখা হয়।
সঞ্জনা সাহা, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, কলকাতা-৫১
পাহারাহীন
এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়া হোক। পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়গুলিতে খাতা ও মাধ্যমিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে দিতে পারে। পরিবর্তিত এবং নির্দিষ্ট রুটিন অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ে অভিভাবকেরা এসে খাতা এবং প্রশ্নপত্র নিয়ে বাড়িতে গিয়ে সময়সীমা মেনে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নেবেন। আবার বিদ্যালয় নির্দেশিত সময়ে খাতা সে দিনই জমা দেবেন বিদ্যালয়ে। উত্তরপত্রের মূল্যায়ন হবে নিজের নিজের বিদ্যালয়েই। মূল্যায়নের পর নির্দিষ্ট সময়ে সেই নম্বর যাবে পর্ষদ অফিসে। মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশিত হবে সুনির্দিষ্ট সময়ে মেধা তালিকা ছাড়া।
গত এক বছরের বেশি সময় ধরে করোনা পরিস্থিতিতে বহু বিদ্যালয় নবম, দশম, একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির মূল্যায়ন-প্রক্রিয়া এই ভাবেই চালিয়েছে। উচ্চ প্রাথমিক স্তরে প্রতি মাসে মিড-ডে মিলের সামগ্ৰীর সঙ্গে প্রশ্নপত্র ও খাতা দিয়ে এবং তা নির্দিষ্ট সময়ে ফেরত নিয়ে নিরন্তর মূল্যায়ন-প্রক্রিয়া চালিয়েছে বিদ্যালয়গুলি। তাই শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথা মাথায় রেখে এই বছরের জন্য পাহারাহীন মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়ার সনির্বন্ধ অনুরোধ জানাই।
সুদীপ্ত সরকার, কলকাতা-১০৩
চাই গণমূল্যায়ন
যে হারে করোনা সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে এই মুহূর্তে পরীক্ষা গ্রহণ দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় হবে। আবার পরীক্ষা স্থগিত করা যুক্তিসঙ্গত নয়, কারণ বর্তমানে পড়ুয়ারা শিক্ষাবর্ষের ক্ষেত্রে ছ’মাসের অধিক সময় পিছিয়ে রয়েছে। আরও পিছোলে তা ভবিষ্যতে উচ্চতর শিক্ষায় অপূরণীয় ক্ষতি করবে। আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়। এই করোনাকালীন পরিস্থিতিতে পরীক্ষাকে ঘিরে সংশয় এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ, মৃত্যুভয় পরীক্ষার্থীদের বিধ্বস্ত করেছে। তাই পরীক্ষা বাতিল হোক। পূর্ববর্তী শ্ৰেণির ভিত্তিতে মূল্যায়ন অযৌক্তিক। যে হেতু সব স্কুলে মক টেস্ট হয়নি এবং প্রশ্নও সমমানের নয়, তাই এটিও মূল্যায়নের মাধ্যম হতে পারে না। তাই গণমূল্যায়নের দাবি জানাচ্ছি। ঘোষণা করা হোক— শিক্ষার্থীরা অবাধে বিষয় নির্বাচন করতে পারবে, ও নিজ নিজ বিদ্যালয়ে নির্ধারিত বিষয় থাকলে তা নিয়ে অবাধে পড়তে পারবে। ভিন্ন বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চাইলে কর্তৃপক্ষ অ্যাডমিশন টেস্ট নিতে পারে।
আলোকপর্ণ মণ্ডল, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, দমদম কিশোর ভারতী
দায়িত্বহীন
রাজ্যে প্রতি বছর সাধারণত ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়। এ বছর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসেই দেশে করোনা সংক্রমণ সবচেয়ে কম ছিল। ফলে সেই সময়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা নেওয়াই যেত। কিন্তু সেই পরীক্ষা জুন মাসে পিছিয়ে দেওয়া হল। এর আসল কারণ হল, বিধানসভা ভোট। রাজনৈতিক নেতানেত্রী এবং নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্যই এখন ভারতে তথা বাংলায় করোনার গ্রাফ শিখর স্পর্শ করেছে। এই সময়ে পরীক্ষা আরও পিছিয়ে দেওয়ার অর্থ পরীক্ষার্থীদের বিপদে ফেলে দেওয়া। সেই কারণেই অন্য বোর্ডগুলির মতো এ বারের মাধ্যমিক পরীক্ষা বাতিল করাটাই উচিত। যে হেতু সিবিএসই বোর্ডের মতো আমাদের বোর্ডে কোনও অন্তর্বর্তিকালীন মূল্যায়ন হয়নি, তাই আইসিএসই বোর্ডকে অনুসরণ করে বর্তমান মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের উচ্চ শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা হোক।
জিতাংশু নাথ, মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী, কলকাতা
অনলাইন ক্লাস
আমি এক জন স্কুলশিক্ষক, উঁকি দিলাম কচিকাঁচাদের মনোজগতে। ওরা খুব খারাপ সময় কাটাচ্ছে। গ্রামবাংলার সরকার-পোষিত বিদ্যালয়ের শিশুরা পিছিয়ে পড়েছে অনলাইন ক্লাসে। প্রায় একশো ভাগ ছাত্রছাত্রীর অভিভাবক মিড-ডে মিল-এর সামগ্রী আনতে বিদ্যালয়ে এলেও, অনলাইন ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার কম কেন? কলকাতা-সংলগ্ন জেলাগুলোতেও গ্রামাঞ্চলের শিক্ষক, অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, ৯০ শতাংশ বিদ্যালয়ে এই হার ৪০ শতাংশের কম। বেশির ভাগ সরকার-পোষিত বিদ্যালয়ে ২০-২৫ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। বিশ্ব কবে অতিমারি-মুক্ত হবে কেউ জানি না। সম্প্রতি সরকারি বিদ্যালয়গুলিকে ‘সেফ হোম’ করার একটি সঙ্গত প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। সুতরাং, অনলাইন পঠনপাঠনের বিকল্প এই মুহূর্তে নেই।
বেসরকারি বিদ্যালয়গুলোর অনলাইন ক্লাসে কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। সেই পরিকাঠামো বা উপকরণ সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিদ্যালয় বা তার শিশুদের পরিবারের হাতে না থাকলেও, উপায় খুঁজতেই হবে। বিশেষত পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির ক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ এতটাই কম যে, এর ফলে তাদের বৌদ্ধিক বিকাশ ব্যাহত হতে পারে।
সমস্যা হল, বেশির ভাগ পড়ুয়ার কাছে স্মার্টফোন বা কম্পিউটার নেই। নবম, দশম ও একাদশের ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য, তাদের কাছে ফোন থাকলেও নেই পর্যাপ্ত নেট ব্যালান্স। প্রায় ৮০ শতাংশ অভিভাবক আনলিমিটেড নেট প্যাক কিনতে অপারগ। ব্যক্তিগত ভাবে একটি সমীক্ষা করে দেখলাম, প্রায় ৪০ শতাংশ এলাকায় ইন্টারনেট সিগন্যাল খুব দুর্বল, ৫৫ শতাংশ এলাকায় তা মাঝারি রকম, মাত্র পাঁচ শতাংশ এলাকায় খুব ভাল। এই সমস্যাগুলির জন্যই অনলাইন ক্লাসে সংযোগ ব্যাহত হচ্ছে।
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের কাছে সরকারি সাহায্যে কেনা ট্যাব বা ফোন থাকলেও সব স্তরের স্কুলপড়ুয়াদের সমস্যা তাতে মিটছে না। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ, তারা যদি এই সাহায্য আরও বেশি করে ছাত্রছাত্রীদের কাছে পৌঁছে দেয়, সেই সঙ্গে গ্রামাঞ্চলে নেট সিগন্যাল জোরালো করার ব্যবস্থা করে, তা হলে আরও অনেক ছাত্রছাত্রী নিয়মিত ভাবে অনলাইন পঠনপাঠনের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে।
সৌরভ চট্টোপাধ্যায়, জগৎবল্লভপুর, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy