Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Dwijendralal Ray

সম্পাদক সমীপেষু: ‘আমার জন্মভূমি’

দেশি গানে ইউরোপীয় সুর ব্যবহারের প্রথম চমক দ্বিজেন্দ্রলাল দেখাননি। তাঁর পূর্বসূরি হিসেবে শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর এবং জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম এ ক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখ্য।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।

দ্বিজেন্দ্রলাল রায়।

শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৫:১৫
Share: Save:

‘স্বাধীনতার ৭৫’ ক্রোড়পত্রে সুগত বসুর ‘স্বাধীনতা আর সঙ্গীত: সীমান্ত পেরোনো সুর’ (১৫-৮) শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠে বিশেষ ঋদ্ধ হলাম। তবে, একটা ভুল থেকে যায়— দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ গানটির ১৯০৫ সালে স্বদেশি আন্দোলনের সময় জনপ্রিয়তার প্রশ্নে। লেখকের উল্লেখেই, দ্বিজেন্দ্রলালের ঐতিহাসিক নাটক সাজাহান-এর মিনার্ভা থিয়েটারে প্রথম অভিনয়কালে নাট্যচরিত্র ‘রাজপুত রানি মহামায়া’র আহ্বানে চারণ দলের সমবেত কণ্ঠে প্রথম শোনা যায় সেই গান। প্রথম অভিনয় হয় শনিবার ২১ অগস্ট ১৯০৯-এ। ওই দিনের অমৃতবাজার পত্রিকা-য় প্রকাশিত বিজ্ঞাপনে— “নিউ ড্রামা! ম্যাগনিফিশেন্ট ড্রামা! সেনসেশনাল ড্রামা!/ মিনার্ভা থিয়েটার/ সিক্স, বিডন স্ট্রিট/ স্যাটারডে, দ্য টোয়েন্টি ফার্স্ট অগস্ট অ্যাট এইট থার্টি পিএম শার্প/ দ্য গ্র্যান্ড ফার্স্ট পারফরম্যান্স অব মিস্টার ডি এল রয়’স/ সেনসেশনাল হিস্টোরিক্যাল ড্রামা/ সাজাহান/...জি.সি ঘোষ, ম্যানেজার।”

পরবর্তী শনিবার ২৮ অগস্ট ১৯০৯-এ দ্বিতীয় অভিনয়ের বিজ্ঞাপন প্রকাশ পেল অমৃতবাজার পত্রিকা-য়, সেখানে দাবি করা হচ্ছে— “দারুণ সাফল্য, সীমাহীন সাফল্য, বেনজির সাফল্য/ মিনার্ভা থিয়েটার/ ছয় বিডন স্ট্রিট/ শনিবার, আঠাশে অগস্ট ঠিক সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায়/... এই শক্তিশালী নাটকের চমকপ্রদ জাঁকজমক, পিয়েরি বানুর মনোমুগ্ধকর গান নিখুঁত ভাবে যে তোলপাড়-করা আবেগের উদ্রেক ঘটিয়েছে, কাশ্মীরের নৃত্যরত মেয়েদের নৌকা চালানো এবং বাদ্যযন্ত্রের সাহায্য মধুর সঙ্গীত, এবং সর্বোপরি চারণ দলের সমবেত কণ্ঠে দেশাত্মবোধক গান ‘আমার জন্মভূমি’ এমন ছাপ রাখতে সক্ষম হয়েছে, যা ভুলে যেতে বহু দিন সময় লাগবে... জি সি ঘোষ, ম্যানেজার।”

প্রসঙ্গত, দেশি গানে ইউরোপীয় সুর ব্যবহারের প্রথম চমক দ্বিজেন্দ্রলাল দেখাননি। তাঁর পূর্বসূরি হিসেবে শৌরীন্দ্রমোহন ঠাকুর এবং জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম এ ক্ষেত্রে বিশেষ উল্লেখ্য।

দেবজিত্ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা-২৯

দেশাত্মবোধক

‘স্বাধীনতা আর সঙ্গীত: সীমান্ত পেরোনো সুর’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলা হয়েছে, “স্বাধীনতা সংগ্রাম তখন উত্তুঙ্গ পর্বে পৌঁছেছে, সুভাষচন্দ্র ব্যস্ত হয়ে উঠলেন ভারতের জাতীয় সঙ্গীত নিয়ে। আবিদ হাসানের স্মৃতিকথায় পাওয়া যায় ইউরোপে ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার-এ তিনটি বাছাই গান নিয়ে আলোচনার কথা— বঙ্কিমচন্দ্রের ‘বন্দে মাতরম্‌’, ইকবালের ‘সারে জহাঁ সে অচ্ছা’, রবীন্দ্রনাথের ‘জনগণমন অধিনায়ক’। নেতাজি বেছেছিলেন ‘জনগণমন’-কেই।”

এই প্রসঙ্গে বলতে চাই, ইকবাল-রচিত শিশুদের জন্য উর্দু ভাষায় দেশাত্মবোধক কবিতা ‘সারে জহাঁ সে অচ্ছা’ ১৯০৪ সালের ১৬ অগস্ট সাপ্তাহিক পত্রিকা ইত্তেহাদ-এ প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। জানা যায়, গান্ধীজি ১৯৩০ সালে যখন পুণে শহরের ইয়েরওয়াড়া কারাগারে বন্দি ছিলেন, সেই সময় তিনি এই গানটি সুর দিয়ে গাইতেন। ১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সেতারবাদক রবিশঙ্কর ও কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের নৈপুণ্যে গানটির জনপ্রিয়তা ভারতের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং সেই জনপ্রিয়তার ধারা এখনও সারা ভারতে সমান ভাবে বহমান।ভারতীয় সেনাবাহিনীর মহড়ার সময় এখনও বাদ্যযন্ত্রে এই গানটি পরিবেশিত হয়।

প্রসন্নকুমার কোলে, শ্রীরামপুর, হুগলি

কুর্নিশ

ঘড়ির কাঁটা সন্ধে সাতটা ছুঁইছুঁই। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুতোষ হলে মাথা নিচু করে, কাজ করে চলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকরা। আর আছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা। তাঁরা হলময় পায়চারি করছেন, খোঁজ নিচ্ছেন কারও কোনও কিছু প্রয়োজন আছে কি না। মিনারেল ওয়াটার শেষ হয়ে গেলে ব্যবস্থা করছেন, কেউ একটু চা বেশি খেতে চাইলে তাঁকে বরাদ্দ কাগজের কাপের চা একের বেশি দুইয়ের ব্যবস্থা করছেন।

আর তারই মধ্যে কলেজ শিক্ষকরা একমনে কাজ করে চলেছেন। সারা শহর যখন নিম্নচাপের বৃষ্টি, আসন্ন সপ্তাহান্তের ছুটির উদ্‌যাপনে ব্যস্ত, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে আশুতোষ হল, ল’ হল ও আরও বেশ কিছু অংশে চলছে এই প্রায় যুদ্ধের মহড়া। প্রায় দু’বছর বাদে, নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে কোভিডের চতুর্থ ঢেউয়ের চোখরাঙানিকে অগ্রাহ্য করে সম্ভব হয়েছে অফলাইন পরীক্ষা নেওয়া। পরীক্ষা নেওয়ার পদ্ধতির ছুড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জও তো কিছু কম ছিল না। হোম সেন্টারের বাইরে পরীক্ষা দিতে গেল কলেজের মেয়েরা দু’বছর পরে, বাইরের কলেজের মেয়েরা পরীক্ষা দিতে এল কলেজে। কোভিডের চতুর্থ ঢেউ দোরগোড়ায়, কত শিক্ষক, শিক্ষিকা সংক্রমিত হলেন পরীক্ষার প্রথম বা দ্বিতীয় দিনেই। কিন্তু অফলাইন পরীক্ষা থেমে থাকল না। অসুস্থ সহকর্মীর জায়গায় এসে দাঁড়ালেন অন্য আর এক জন। এ ভাবে একে একে শেষ হল ষষ্ঠ, চতুর্থ ও দ্বিতীয় সিমেস্টারের পরীক্ষা। বছরের এই সময়ে শুধুমাত্র জোড় সংখ্যার সিমেস্টারের পরীক্ষার সূচি, তেমনই হল। মনে রাখা ভাল, এই বছরেরই শুরুতে প্রথম, তৃতীয় ও পঞ্চম সিমেস্টারের পরীক্ষা অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও অফলাইন নেওয়া সম্ভব হয়নি। কোভিডের তৃতীয় ঢেউয়ের কাছে সেই শুভ প্রচেষ্টাকে হার মানতে হয়েছিল।

এ বার তা হতে দিলেন না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, অশিক্ষক কর্মচারীরা, তাঁদের অদম্য প্রচেষ্টায়। নানা অনিশ্চয়তায় পরীক্ষা হতে দেরি হয়েছে, এ দিকে ফাইনাল বা ষষ্ঠ সিমেস্টারের রেজ়াল্টের প্রয়োজন হয় পরবর্তী স্নাতকোত্তরের পর্যায়ে। তার মূল্যায়ন সম্পূর্ণ না হলে, ঠিক সময়ে শুরু হবে না স্নাতকোত্তরের পাঠ্যক্রমও। তাই যুদ্ধ ঘোষণা হল। যুদ্ধ কোভিডের অনিশ্চয়তার বিরুদ্ধে, অনলাইন-অফলাইন পরীক্ষার টালবাহানায় যাঁদের কিছু স্বার্থসিদ্ধ হচ্ছিল, তাঁদের বিরুদ্ধে এবং সামগ্রিক ভাবে শিক্ষার অরাজকতার বিরুদ্ধে।

লেখার শুরুতে যে যুদ্ধক্ষেত্রের বর্ণনা, তা আর কিছুই নয়— স্পট এগজ়ামিনেশন বা নির্দিষ্ট কিছু সেন্টারে বসে খাতা দেখার ব্যবস্থা। মনে হতে পারে, এ আর নতুন কী? বেশ কিছু পরীক্ষার বোর্ডে তো আগেও এ রকম পদ্ধতি প্রচলিত ছিল, আছে। তবে? মূল পার্থক্য সম্ভবত মাত্রায় এবং মাত্রাজনিত গুরুত্বে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজের সংখ্যা ১৫১, ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ১৯ হাজারের বেশি। এ থেকে হয়তো কিছুটা আন্দাজ করা সম্ভব। তবে সংখ্যা ও যোগফলের থেকেও সম্ভবত প্রয়োজনীয় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবেগ ও আদর্শজনিত গুরুত্ব। আজও, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কী ভাবে পরীক্ষা নেবে, অনলাইন না অফলাইন, তার দিকে তাকিয়ে থাকে শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতির মানচিত্র।

তাই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ামকরা যখন মুখ্য পরীক্ষক, তার অধীনস্থ পরীক্ষকদের জানালেন যে, ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে, একত্রিত হয়ে যুদ্ধকালীন প্রস্তুতিতে খাতা দেখতে হবে— গুরুত্ব বুঝে নিতে অসুবিধে হয়নি কারও। কারণ, তাঁরা জানেন, তাঁদের দিকে তাকিয়ে আছে সন্তানতুল্য ছাত্রছাত্রীরা। অতিমারির সময় তাঁরা কত কম কাজ করেছেন ইত্যাদি অভিযোগ শুনতে হয়েছে সম্প্রদায়ের সবাইকেই। অপরাধী সাব্যস্ত করেছে সমাজমাধ্যম। তাঁরা যদি এক বার দেখে যেতেন নিজেদের আপাত সুবিধে-অসুবিধেকে অগ্রাহ্য করে শুধুমাত্র শিক্ষক-পরীক্ষকের দায়িত্ব কী ভাবে পালন করার চেষ্টা করছেন শিক্ষকরা।

শুধু পরের বার ছাত্রছাত্রীদের সামনে, সন্তানের সামনে তাদের শিক্ষক-অধ্যাপকদের অযোগ্য কর্মবিমুখ বলার আগে ভেবে নেওয়ার চেষ্টা করবেন সেই কর্মব্যস্ত আশুতোষ হলের ছবি।

আপনি যখন বিশ্রাম নিচ্ছিলেন, আপনার সন্তানের স্বার্থে জেগে ছিলেন তাঁরা।

ঈশা দাশগুপ্ত, কলকাতা-১০৬

অন্য বিষয়গুলি:

Dwijendralal Ray Songs Plays
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy