সুযোগ পেলেই দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। চব্বিশের লোকসভা ভোটের আগে তিনি নেহরুকে উদ্ধৃত করে এবং তাঁকে সংরক্ষণ-বিরোধী বলে প্রতিপন্ন করে হাওয়া তুলতে চেয়েছিলেন। আজ তাঁর বংশধর তথা লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী দেশের স্বাধীনতায় নেহরুর অবদানের ব্যাখ্যা দিয়ে দাবি করলেন, তাঁর থেকেই ‘সত্য ও সাহসের’ উত্তরাধিকার পেয়েছেন তিনি। রাহুলের দাবি, এগুলি তাঁর রক্তে রয়েছে। সম্প্রতি ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় ইডি রাহুল এবং সনিয়া গান্ধীর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে রাহুলের এ দিনের ‘সাহস’ এবং ‘ভয়কে জয় করা’র কথায় আলাদা তাৎপর্য রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। যদিও ইডি-প্রসঙ্গ সরাসরি তোলেননি তিনি।
দলীয় নেতা সন্দীপ দীক্ষিতের সঙ্গে পডকাস্টে খোলামেলা আলোচনার ভিডিয়ো পোস্ট করেছেন রাহুল তাঁর নিজের এক্স হ্যান্ডলে। সেখানে শুধু নেহরু নন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কালক্রমে যে সব কংগ্রেস নেতাকে নিজের প্রচারের অঙ্গ করে ফেলেছেন, সেই সর্দার পটেল এবং সুভাষচন্দ্র বসুর কথাও স্মরণ করেছেন রাহুল। রাহুলের কথায়, ‘‘জওহরলাল নেহরু আমাদের নিছক রাজনীতির পাঠ দেননি। তিনি শিখিয়েছেন কী ভাবে ভয়ের মোকাবিলা করতে হয় এবং সত্যের পাশে দাঁড়াতে হয়। তিনি ভারতবাসীকে সাহস জুগিয়েছেন বিরোধিতার সঙ্গে যুঝতে এবং শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতা কেড়ে আনতে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জওহরলালের সঙ্গে একই পঙ্ক্তিতে রাহুল নাম করেছেন সুভাষচন্দ্র বসুর, যা নেহরু-গান্ধী পরিবারের কোনও নেতার পক্ষে বিরল ঘটনা। তিনি বলেছেন, “গান্ধী, নেহরু, অম্বেডকর, সর্দার পটেল, সুভাষ বোস প্রত্যেকেই আমাদের শিখিয়েছেন কী ভাবে ভয়কে জয় করতে হয়। সাম্রাজ্যবাদ নয়, রাজনীতি নয়, শুধুমাত্র সাহসের বিষয় এটি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে গান্ধী রুখে দাঁড়িয়েছিলেন কেবলমাত্র সত্যকে সঙ্গে নিয়ে। নেহরু দেশবাসীকে সাহস দিয়েছিলেন অত্যাচারীদের রুখতে। বিজ্ঞান হোক বা শিল্প বা বিপ্লব– মানুষের যে কোনও ক্ষেত্রে উত্থান শুরু হয় ভয়কে জয় করা দিয়ে। আর আপনি যদি অহিংসায় ব্রতী হন, তা হলে সত্যই হয়ে ওঠে আপনার একমাত্র আয়ুধ। ওঁদের সঙ্গে যা-ই হয়ে থাক না কেন, তাঁরা মাথা ঝোঁকাননি। তাই তাঁদের মহান নেতা বলা হয়।’’
প্রসঙ্গক্রমে নিজের ঠাকুমার কথাও তুলেছেন কংগ্রেস নেতা। বলেছেন, ছোটবেলায় ইন্দিরা গান্ধী তাঁদের নেহরুর গল্প শোনাতেন। তাঁর প্রিয় পাহাড়ে এক বার হিমবাহের মুখে কী ভাবে বিপদে পড়েছিলেন নেহরু, পশুপাখি কী ভাবে তাঁদের পরিবারের অঙ্গ হয়ে উঠেছিল, সেই সব গল্প। রাহুল বলেন, ‘‘আমার মা এখনও বাগানে পাখপাখালি দেখেন। আমি জুডো অনুশীলন করি। এগুলি নিছক অভ্যাস নয়। আমরা যেখানে রয়েছি, তার জানলা। আমাদের চারপাশের পৃথিবীটার সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলি। আর সবচেয়ে বেশি যেটা ভিতরে ধারণ করে রাখি, তা হল শান্ত ভাবে বিপদের মোকাবিলা করার শক্তি।” ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় ইডি-র সাম্প্রতিক তৎপরতার নিরিখে রাহুলের এই বার্তা বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে রাজনৈতিক শিবির। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গেও আজ বলেন, ইডি যা-ই করুক, দল তাতে ভয় পায় না।
তবে বিজেপি রাহুলকে বিঁধেছে ‘ভুল’ ইতিহাস তুলে ধরার জন্য। রাহুল বলেছিলেন, মোহনদাস কর্মচন্দ গান্ধীকে ব্রিটেনে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। ঘটনাটা আদতে ঘটেছিল দক্ষিণ আফ্রিকায়। বিজেপি সাংসদ লহর সিংহ সিরোয়া সে কথা এক্স হ্যান্ডলে লিখে বলেন, ‘‘আমি রাহুলজির মতো উচ্চশিক্ষিত না হলেও এটুকু জানি। রাহুলের কাছ থেকে কেউ যেন ইতিহাস জানতে না যান!’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)