দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের ১৬০তম জন্মদিন নীরবে চলে গেল ১৮ জুলাই (১৮৬১-১৯২৩)। বিজেপি এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ইস্তাহারে কাদম্বিনীর উল্লেখ করে বলেছিল, জয়লাভ করলে তারা ‘কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় স্বাস্থ্য পরিকাঠামো তহবিল’ গঠন করবে। ১০ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প। এতে প্রতি জেলায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল হবে; প্রতি ব্লকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র হবে, প্রতি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র হবে। নির্বাচনে জিততে পারেনি বিজেপি। তাই বলে কাদম্বিনীর জন্মদিন পালনের কথাও ভুলে গেল তারা! অবশ্য, কাদম্বিনীর জন্মদিন পালনে অন্য কোন দলেরও আগ্রহ দেখা গেল না। তাঁর জন্মদিন পালন করল গুগল। নির্বাচনী ইস্তাহারে বিজেপি কেন হঠাৎ কাদম্বিনীকে নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করল, তার কারণ স্পষ্ট। বিজেপির বাঙালি ডিএনএ প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দ, সুভাষের সঙ্গে এসেছিলেন কাদম্বিনী। কিন্তু বিজেপির নীতি ও আদর্শের সঙ্গে কাদম্বিনীকে যে ‘আঁটানো’ যেত না, সে কথা বলেছেন গবেষক বরুণ চট্টোপাধ্যায়। এই ব্রাহ্ম মহিলাকে কম অপদস্থ করেনি সে কালের উগ্র হিন্দুবাদীরা। তাঁকে ‘বেশ্যা’ বলতেও বাধেনি রক্ষণশীলদের। তাই ১৮৯১ সালে কাদম্বিনী বঙ্গবাসী পত্রিকার বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করতে বাধ্য হন।
বিজেপি কাদম্বিনীকে দাবার ঘুঁটি করলে শেষ পর্যন্ত বিপদে পড়ত। সম্ভবত বিজেপির ডাক্তার সাংসদ সুভাষ সরকার নির্বাচনী ইস্তাহারে কাদম্বিনীকে স্থান দেওয়ার উদ্যোগ করেছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রের মন্ত্রী হওয়ার পরে এ ব্যাপারে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তিনি।
দিলীপ মজুমদার
কলকাতা-৬০
নিধিরাম সর্দার
‘দিল্লি যদি রাজ্যে দল চালায়’ (২১-৭) প্রবন্ধে মোহিত রায় আলোচনা করেছেন, প্রাক্-স্বাধীনতা কাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত কংগ্রেস এবং সিপিএম-এর দিল্লি নেতৃত্ব কী ভাবে রাজ্যের দলগুলিকে অমেরুদণ্ডী লেজুড়ে পরিণত করেছে। লেখক নিবন্ধটির ৮০ ভাগ জায়গা বরাদ্দ রেখেছেন অন্য দু’টি রাজনৈতিক দলের জন্য। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনের আগে যে দলের প্রধানমন্ত্রী-সমেত ডজনখানেক মন্ত্রী এ রাজ্যে ‘ডেলি প্যাসেঞ্জারি’ করলেন এবং রাজ্য পার্টিকে প্রকারান্তরে নিধিরাম সর্দারে পরিণত করলেন, তার আলোচনা হল না কেন?
অশোক কুমার দত্ত
কলকাতা-৫১
ভুল ছিল না
মোহিত রায় দলের আপত্তিতে জ্যোতিবাবুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার প্রসঙ্গ তুলেছেন। ১৯৯০-৯১, ১৯৯৬-৯৭ বা ১৯৯৭-৯৮, এই পর্বে দেশের তিন প্রধানমন্ত্রীর কার্যকালের মেয়াদ ছিল যথাক্রমে ২২৩ দিন (চন্দ্রশেখর), ৩২৪ দিন (দেবগৌড়া) ও ৩৩২ দিন (গুজরাল)। যৌথ সরকারে জ্যোতিবাবুর কি অন্য রকম কোনও পরিণতি হত বলে মনে হয়? পশ্চিমবঙ্গে ৩৪ বছর শাসনকালে কিন্তু দলের কর্মসূচি নিরূপণ হয়েছিল দিল্লির এ কে গোপালন ভবন থেকে। এ বছর কেরলে বাম গণতান্ত্রিক মোর্চা দ্বিতীয় বার ক্ষমতায় এসেছে পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অভিভাবকত্বে।
সরিৎশেখর দাস
ব্যারাকপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
কেন্দ্রের দখলদারি
মোহিত রায়ের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে বলতে চাই, কংগ্রেস ও সিপিএমের আমলে বাংলার দলকে গুরুত্বপূর্ণ নানা বিষয়ে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য করা হলেও, সরকার চালনায়, বা রাজ্যে দল পরিচালনায়, স্থানীয় নেতৃত্ব ছিল স্বাধীন। জরুরি অবস্থা ছাড়া অন্য কোনও সময় রাজ্যের এক্তিয়ারে কেন্দ্রীয় সরকার অহেতুক দখলদারি করত না। এখন প্রতিটি সরকারি পদক্ষেপে রাজ্যের অধিকার খর্ব করতে কেন্দ্র সচেষ্ট।
১৯৩৭ সালে কংগ্রেস সর্ববৃহৎ দল হিসেবে যুক্ত বঙ্গপ্রদেশে জয়ী হওয়ার পরেও ফজলুল হকের দলের সঙ্গে মিলে সরকার গঠন করেনি, করলে ইতিহাস অন্য রকম হতে পারত, এ কথাটা এখন প্রায়ই শোনা যায়। উদ্দেশ্য, শ্যামাপ্রসাদ সংখ্যালঘু হিন্দু মহাসভার কতিপয় সদস্য নিয়ে ফজলুল হকের মন্ত্রিসভায় যোগ দিয়ে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিলেন, বাংলার গৌরব বৃদ্ধি করেছিলেন— এটা প্রমাণ করা।
কিন্তু ইতিহাস অন্য রকম ছিল। ফজলুল হক তখনও দ্বৈত সদস্যপদ বজায় রেখেছিলেন। এক দিকে তিনি যোগেন মণ্ডলের তফসিলি জাতির দলকে নিয়ে কৃষক প্রজা পার্টির অবিসংবাদী নেতা, ও অন্য দিকে তিনি মুসলিম লীগেরও নেতা ছিলেন। এই বিষবৃক্ষের ফল শিগগিরই ফলল— এই ফজলুল হকই ১৯৪০-এর মুসলিম লীগের লাহৌর সম্মেলনে প্রথম পৃথক পাকিস্তান প্রস্তাব পেশ করেন। এবং ১৯৪৩ সালে কৃষক প্রজা পার্টি মুসলিম লীগে যোগ দিল। শ্যামাপ্রসাদও দ্বৈত কংগ্রেস ও হিন্দু মহাসভা দুটোরই সদস্য ছিলেন একই সময়ে। সুভাষ বসু কংগ্রেস সভাপতি হিসেবে নিয়ম চালু করেছিলেন, একই সঙ্গে কংগ্রেসের আর সাম্প্রদায়িক হিন্দু মহাসভা দলের সদস্য হওয়া যাবে না। তখন শ্যামাপ্রসাদ কংগ্রেসের সদস্যপদ ত্যাগ করেন। কাজেই শ্যামাপ্রসাদ ছিলেন প্রকাশ্যে, আর হক ছিলেন ছদ্মবেশে সাম্প্রদায়িক দলের নেতা। নীতিগত কারণেই কংগ্রেস উভয়ের সঙ্গে সমদূরত্ব বজায় রেখেছিল। হকের মন্ত্রিসভায় গেলে হক প্রধানমন্ত্রী হতেন না, কারণ কংগ্রেস ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। এটা হক মানতে রাজি ছিলেন না। আর অসমে যে মুসলিম সংগঠনের সঙ্গে কংগ্রেস গাঁটছড়া বেঁধেছিল, তার সঙ্গে মুসলিম লীগের কোনও যোগ ছিল না।
আশিস সেনগুপ্ত
কলকাতা-৩৭
প্রতিধ্বনি
মোহিত রায়ের বক্তব্যের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের গুরু এমএস গোলওয়ালকরের বক্তব্যের প্রচুর মিল। গোলওয়ালকর ১৯৬১ সালে ‘ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেশন কাউন্সিল’-এর প্রথম অধিবেশনে লিখে পাঠাচ্ছেন, “আজকের দিনে সরকারের সঙ্ঘীয় কাঠামো (ফেডারাল ফর্ম) কেবল যে বিচ্ছিন্নতাবাদের অনুভূতির উন্মেষ ঘটায় তা-ই নয়, বরং এই ধারণাকে প্রতিপালনও করে। এক দিক থেকে দেখতে গেলে (সঙ্ঘীয় কাঠামো) এক রাষ্ট্র এই ধারণাকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে এবং নস্যাৎ করে। সেই জন্য একে (সঙ্ঘীয় কাঠামোকে) সম্পূর্ণ উপড়ে ফেলতে হবে, সংবিধানকে পবিত্র করতে হবে আর এককেন্দ্রিক কাঠামোর সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”
খুব পরিকল্পিত এবং সুচিন্তিত ভাবে এই সব দৃষ্টিভঙ্গি যে প্রচার করা হচ্ছে, তার প্রমাণ গোলওয়ালকরের উদ্ধৃতি, “আমাদের দেশের সংবিধানে সঙ্ঘীয় কাঠামো নিয়ে আমাদের মঙ্গলের জন্য যে সব কথা বলা আছে তার সবগুলিকে মাটির নীচে পুঁতে দেওয়া হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং কার্যকর পদক্ষেপ। ভারত এই এক রাষ্ট্রের মধ্যে যে সব ‘স্বশাসিত’ বা ‘আংশিক-স্বশাসিত’ প্রদেশ (রাজ্য) আছে, তাদের অস্তিত্ব ঝেঁটিয়ে বিদেয় করতে হবে। অঞ্চল, সম্প্রদায়, ভাষা অথবা অন্য কোনও কিছু নিয়ে গর্ববোধ, যা আমাদের একতার অনুভূতিকে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে, বিভাজনকামী সেই সব উপাদানের বিন্দুমাত্র অবশেষ না রেখে ঘোষণা করতে হবে ‘এক দেশ, এক রাষ্ট্র, এক আইনসভা, এক কার্যনির্বাহী শাসক দল’। এককেন্দ্রিক কাঠামোর সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আসুন সংবিধানকে পুনরায় পরীক্ষা করা হোক, পুনর্বার লেখা হোক।...”
প্রবন্ধকার তাঁর লেখায় গোলওয়ালকরের স্বপ্ন বাস্তবায়িত করতে সংবিধানের প্রাথমিক মৌলিক উপাদানকে অগ্রাহ্য করে কট্টর হিন্দুত্বপন্থী সংখ্যাগুরুবাদ স্থাপনার মধ্য দিয়ে এককেন্দ্রিক শাসন-কাঠামো প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাবেন, তাতে বিস্ময়ের অবকাশ থাকে কি?
প্রবীর মুখোপাধ্যায়
কলকাতা-৮৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy