—প্রতীকী চিত্র।
কিছু দিন আগে কলকাতা লিগের প্রিমিয়ার ডিভিশনের একটি খেলায় হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় মহমেডান সমর্থকের। এর ফলে অনেক প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। প্রথমত, মাঠের বাইরে অ্যাম্বুল্যান্স থাকলেও তাতে কোনও চিকিৎসার সরঞ্জাম ও সহকারী ছিল না। দ্বিতীয়ত, আইএফএ-র ডাক্তার গুরুত্ব দেননি। তৃতীয়ত, রেফারির ভুল সিদ্ধান্তের জন্য হতভাগ্য সমর্থকের অকালমৃত্যু ঘটেছে।
মানুষ খেলার মাঠে কেন যায়? খেলার উত্তেজনা উপভোগ করার জন্য। রেফারির সিদ্ধান্ত যা-ই হোক না কেন, সেটা খেলার একটা অংশ। সুতরাং, রেফারির সিদ্ধান্ত এক জন মানুষের মৃত্যুর জন্য কোনও ভাবে দায়ী নয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন সময়ে এই ঘটনা ঘটেছে। এটা খেলোয়াড়দের যেমন হতে পারে, তেমনই দর্শকদেরও হতে পারে। যদিও খেলোয়াড়দের তুলনায় এটা দর্শকদের হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি, কারণ খেলোয়াড়েরা শারীরিক ভাবে অনেক বেশি ফিট এক জন সাধারণ মানুষের তুলনায়। ২০২১ সালে ডেনমার্কের ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেন ইউরো চলাকালীন মাঠের মধ্যে ‘সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’-এ আক্রান্ত হয়েও মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসেন শুধু একটা যন্ত্রের সৌজন্যে— অটোমেটেড এক্সটারনাল ডিফিব্রিলেটর (এইডি)। এই যন্ত্র হাতের কাছে থাকলে আচমকা হৃদ্রোগে আক্রান্ত মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব পঁচাত্তর শতাংশ ক্ষেত্রে। অবশ্যই এই জরুরি মেশিনটি দুই থেকে পাঁচ মিনিটের মধ্যে চালু করতে হবে। তার মানে এই মেশিন থাকবে মাঠের সাইড লাইনে, গ্যালারির মাঝামাঝি জায়গায়। এই বছর ইউরো ফুটবল ম্যাচ চলাকালীন এক গোলরক্ষককে দেখা গিয়েছিল মাঠের সাইড লাইনে থাকা এইডি মেশিন দর্শকদের দিকে ছুড়ে দিতে। গ্যালারির এক দর্শকের সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট-এর কথা বুঝতে পেরেই গোলরক্ষক এই কাণ্ড করেছিলেন। সেই দর্শক প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন। সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট-এ এইডি না থাকলে বাঁচার সম্ভাবনা দুই থেকে তিন শতাংশ।
সত্যি কথা বলতে ইউরোপ, আমেরিকার রাস্তায়, শপিং মল, পার্ক, স্টেডিয়াম, স্টেশন— সর্বত্র অটোমেটেড ইলেকট্রিক্যাল ডিফিব্রিলেটর রাখা থাকে। এ বার প্রশ্ন, কারা চালাতে পারেন এই এইডি। ডাক্তারের কি প্রয়োজন নেই? প্রশিক্ষিত প্যারামেডিক্যাল স্টাফ থাকলে ভাল। এমনকি এক জন সাধারণ মানুষ নির্দেশ শুনে এই যন্ত্র চালাতে পারবেন। এই জীবনদায়ী যন্ত্রটি আমাদের দেশে এক লক্ষ টাকার কম দামে পাওয়া যায়। সুতরাং, খেলার মাঠে সাডেন কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট-এর পরে ডাক্তার, রেফারি বা সিস্টেমের উপর দোষারোপ না করে সমস্ত ক্রীড়া প্রশাসক, ক্রীড়া দফতর, কর্মকর্তাদের কাছে আমার বিশেষ অনুরোধ, আপনারা খেলার মাঠে, স্টেডিয়ামে অটোমেটেড এক্সটারনাল ডিফিব্রিলেটরের ব্যবস্থা রাখুন আর ক্রীড়ামোদী মানুষকে নিরাপদে খেলার উত্তেজনা উপভোগ করতে সাহায্য করুন।
সৌগত মাইতি, তমলুক, পূর্ব মেদিনীপুর
খেলায় অন্যরা
‘জিতল পেশাদারিত্ব’ (৮-৯) শিরোনামে প্রকাশিত পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু কথা। লেখক মাত্র কয়েক বছর আগে পর্যন্ত কলকাতার ক্লাবগুলির অপেশাদার আচরণের কুফল এবং মোহনবাগান বনাম ইস্টবেঙ্গলের ডুরান্ড কাপ ফাইনাল খেলার বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি লিখেছেন, “কিন্তু অবাঙালিরা ফুটবলে সংখ্যাগুরু হওয়ায় ক্ষতির চেয়ে লাভই হয়েছে, যা দেখিয়ে দিল আজকের মোহনবাগান।” কিন্তু সে দিন ঘটনা যা ঘটেছিল, তা ছিল এই রকম। মোহনবাগানে তবু এক জন বাঙালি ফুটবলার ছিলেন। তিনি ছিলেন অধিনায়ক শুভাশিস বসু এবং তাঁকে বলা হচ্ছে এই মুহূর্তে ভারতের সেরা লেফটব্যাক। তার উপরে মোহনবাগানকে শেষ ৩৯ মিনিট (রেফারি মোট ১০০ মিনিট খেলিয়েছেন) দশ জনে খেলতে হয়েছে। ইস্টবেঙ্গলে এক জনও বাঙালি ফুটবলার ছিলেন না, সকলেই অবাঙালি ও বিদেশি। সেই অর্থে লেখকের হিসাবমতো ইস্টবেঙ্গলেরই ‘দেখিয়ে দেওয়া’-র কথা ছিল। মোহনবাগানের ‘অবাঙালি’ নামী এবং দক্ষ খেলোয়াড় অনিরুদ্ধ থাপা দুটো ডার্বিতেই প্রবল চাপ নিতে না পেরে মোহনবাগানকে ডুবিয়েছেন। প্রথম ডার্বিতে তাঁর মারাত্মক ভুলে নন্দ কুমার গোল করে যান। আর দ্বিতীয় ডার্বিতে লাল কার্ড দেখে বাইরে যান। কোনও অবাঙালি খেলোয়াড় এবং পাঠক আশা করি ভুল বুঝবেন না, পরিপ্রেক্ষিতটা বুঝবেন। তাই প্রবল প্রতিযোগিতার জন্যই এখনকার ফুটবলাররা চাপে থাকেন। দৃঢ় ভাবে প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত প্রবল চাপ চলতেই থাকবে। তিনি আরও লিখেছেন, “তাই আজকের খেলোয়াড়রা অনেক খোলামেলা ভাবে, অকুতোভয় হয়ে মন দিয়ে ফুটবল খেলতে পারছেন। এই মোহনবাগান দলের খেলাতেও সেই মানসিকতাই ফুটে উঠল। না হলে ৬১ মিনিটে দশ জন হয়ে যাওয়া একটা দল গত ত্রিশ-চল্লিশ বছরে এতটা পরিণত ফুটবল খেলতে পারত না। খোলসে ঢুকে বশ্যতা স্বীকার করে ফেলত।” পত্রলেখককে মনে করিয়ে দিতে চাই, দশ জনে খেলে ম্যাচ বার করাটা মোহনবাগানের কাছে নতুন নয়। নব্বইয়ের দশকে সিজ়ারস কাপ সেমিফাইনাল ম্যাচ। মুখোমুখি মোহনবাগান এবং ইস্টবেঙ্গল। খেলার ১৮ মিনিটের মাথায় মোহনবাগানের সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে অন্যায় ভাবে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে রেফারি বার করে দেন। ৭২ মিনিট দশ জনে খেলে মোহনবাগান ৩-২ গোলে ম্যাচ জিতে ফাইনালে ওঠে।
ভিন রাজ্যের অবাঙালি তো বাদই দিলাম, ইস্টবেঙ্গলেই তো ১৯৪২-৪৩ সালে বর্মা থেকে আসা প্রথম বিদেশি খেলোয়াড় ফ্রেড পাগস্লি থেকে শুরু করে অজস্র ফুটবলার খেলেছেন। ষাটের দশকে শ্রীলঙ্কা থেকে দু’জন আসেন। সত্তরের দশকে রুক বাহাদুর। আশির দশকে মজিদ বাসকর, জামশিদ নাসিরি ও খাবাজি তো কলকাতা লিগ তোলপাড় করে দিয়েছিলেন। নব্বইয়ের দশকে ইস্টবেঙ্গলে ঝাঁকে-ঝাঁকে বিদেশি ফুটবলাররা খেলেছেন। পক্ষান্তরে শতবর্ষ পার করে মোহনবাগানে প্রথম বিদেশি চিমা ওকেরি আসেন ১৯৯১ সালে। ধীরেন দে থাকাকালীন কোনও বিদেশি ফুটবলারকে মোহনবাগানে আনা যায়নি। তবে, লেখকের সঙ্গে এই জায়গায় সহমত পোষণ করে বলতেই হচ্ছে, কয়েক জন ভাল ফুটবলার আসা সত্ত্বেও অন্যতম কারণ হিসাবে কর্মকর্তাদের অপেশাদারিত্ব মনোভাবের জন্যেই কলকাতার ফুটবল ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে।
সোমনাথ মুখোপাধ্যায়, কলকাতা-৫৭
বাঙালির অভাব
১৩২তম ডুরান্ড কাপের ফাইনালে ডার্বিতে মোহনবাগান চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইস্টবেঙ্গলকে পরাজিত করল। হেরে গেলেও ইস্টবেঙ্গল ক্লাবও খুব ভাল খেলেছে। গত কয়েক বছর ইস্টবেঙ্গল হতাশাজনক পারফরম্যান্স করলেও, এ বার কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতের অধীনে অনেক চনমনে। আশা করা যায়, আইএসএল-এ ইস্টবেঙ্গল গত কয়েক মরসুমের তুলনায় অনেক ভাল খেলবে। তবুও মনটা একটু খারাপ লাগে যখন দেখি, বাংলার ফুটবল দলে বাঙালি মুখ নেই। বাংলার ফুটবলে বাইরের রাজ্য থেকে অনেক ফুটবলার এসে খেলেছেন, বিদেশিরাও নাম করেছেন। তাঁদের পাশাপাশি মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য,
সুব্রত ভট্টাচার্য, সুরজিৎ সেনগুপ্ত, ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়, শিবাজি বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ ফুটবলারও দাপিয়ে খেলেছেন। ইস্টবেঙ্গলের আসিয়ান কাপ জয়ের নেপথ্যে ভাইচুং ভুটিয়ার পাশাপাশি ষষ্ঠী দুলের অবদানও অনস্বীকার্য। আজ সেখানে বাংলার ক্লাবে বাঙালি খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি মন খারাপ করে। বাংলার ক্লাবগুলি দাপিয়ে খেলুক, অবশ্যই বাঙালি খেলোয়াড়দের সঙ্গে নিয়ে। ক্লাব কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে নজর দিন।
অভিজিৎ ঘোষ, গড়চক্রবেড়িয়া, পূর্ব মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy