অবশেষে পুণের সিরাম ইনস্টিটিউট তাদের উৎপাদিত টিকা কোভিশিল্ডের বাজার দর নির্ধারণ করে দিল, যেটা সরকারি হাসপাতালে প্রতি ডোজ় ৪০০ টাকা এবং বেসরকারি হাসপাতালে প্রতি ডোজ় ৬০০ টাকা। কোভ্যাক্সিন-এর বিষয়ে এখনও কিছু শোনা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্র ঘোষণা করেছে, ১ মে থেকে গোটা দেশে ১৮ বছর বয়সের ঊর্ধ্বে সকলের টিকাকরণ শুরু হবে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষের মনে কতকগুলি প্রশ্ন উঠে আসা অত্যন্ত সঙ্গত। এক, এখনও পর্যন্ত যে বিনামূল্যে টিকাকরণ প্রক্রিয়া চলছে, এটা কি বন্ধ হয়ে যাবে, না দু’টি প্রক্রিয়াই সমান তালে চলবে? সে ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ কি গাঁটের পয়সা খরচ করে টিকা নিতে উৎসাহী হবেন? দুই, এত পয়সা খরচ করে সকলের এই টিকা নেওয়ার সামর্থ্য আছে কি না, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। সে ক্ষেত্রে টিকাকরণের আসল উদ্দেশ্যটি ব্যর্থ হয়ে যাবে না তো? তিন, টিকা নিয়ে কালোবাজারি শুরু হয়ে যাবে না তো?
চার, এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির বাজারে, যেখানে রান্নার গ্যাস, ভোজ্য তেল, ডাল, আনাজপাতি থেকে শুরু করে পেট্রল, ডিজ়েল সব কিছুর অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা সাধারণ মানুষ ঠিক ঠিক ভাবে সামলাতে পারছেন না, সেখানে পয়সা দিয়ে এই টিকা নিতে গেলে সাধারণ মানুষের উপর আবারও একটা বাড়তি বোঝা চেপে বসবে না তো? পাঁচ, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে যখন দেশের পরিস্থিতি এক প্রকার বেসামাল, সেই সময় যখন উৎপাদন বৃদ্ধি করে সমস্ত মানুষকে দ্রুত টিকাকরণের আওতায় আনা প্রয়োজন, সেই সময় এই পদক্ষেপ সমগ্র প্রক্রিয়াটির উপর প্রশ্নচিহ্ন তুলে দেবে না তো? সে ক্ষেত্রে সহ-নাগরিকদের মৃত্যু-মিছিল আমরা রোধ করতে পারব তো?
সুশীলা মালাকার সরদার
বসিরহাট, উত্তর ২৪ পরগনা
ক্লাবের দায়
গত কয়েক দিন উত্তর ভারত (বিশেষ করে দিল্লির) ও মহারাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রান্তের ভয়াবহতার ছবি দেখে এই রাজ্যের নাগরিক হিসেবে আমরা উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত। আশঙ্কা হচ্ছে, খুব অল্প দিনের মধ্যেই কলকাতা এবং রাজ্যের নানা প্রান্তে এক অভূতপূর্ব সঙ্কটের সুনামি আসতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে অনুরোধ, সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ক্লাবগুলিকে যেন রাজ্য প্রশাসন এই সঙ্কটের মোকাবিলায় সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করার নির্দেশ দেয়। গণরসুই বা কমিউনিটি কিচেনের মডেলে তারা পাড়ায় পাড়ায় দুঃস্থ পরিবারগুলির কথা ভেবে অক্সিজেনের একটি ব্যাঙ্ক প্রস্তুত রাখুক। তা যত ছোট মাপেরই হোক না কেন। দরকারে স্থানীয় ক্লাব, বিয়েবাড়ি ও কমিউনিটি হলগুলিতে কোভিড আইসোলেশন সেন্টার গড়ে তুলুক। এলাকার রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দিতে অ্যাম্বুল্যান্স প্রস্তুত রাখুক। যে সমস্ত ক্লাব প্রতি বছর দুর্গাপুজোয় কোটি কোটি টাকা খরচ করে, তারা এই সব কাজে বেশি দায়িত্ব নিক। নিজেদের এলাকায় পরিকাঠামো গড়ে তুলুক। কেবলমাত্র সরকারি পরিকাঠামোর ভরসায় থাকার সময় এটা নয়। এলাকায় এলাকায় স্থানীয় উদ্যোগে কোভিড মোকাবিলার পরিকাঠামো গড়ে তুলতে হবে। বিপর্যয়ের মাঝে হঠাৎ সচেতন হওয়ার চেয়ে অসীম শক্তিশালী শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রস্তুত থাকা শ্রেয়।
রোহন ইসলাম
কলকাতা-৮
নষ্ট টিকা
খবরের কাগজে পড়লাম, তথ্যের অধিকার আইনে করা প্রশ্নের উত্তরে জানতে পারা গিয়েছে, আমাদের দেশে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ কোটি টিকার ডোজ়ের মধ্যে প্রায় ৪৪ লক্ষ ডোজ় বিভিন্ন রাজ্যে নষ্ট হয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, তামিলনাড়ুতে ১২ শতাংশ, হরিয়ানায় ৯.৭৪ শতাংশ, এবং পঞ্জাবে ৮.১২ শতাংশ ভ্যাকসিনের ডোজ় নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশে কয়েকটি কথা বলার আছে। আমরা জানি, করোনার প্রতিষেধক হিসেবে যে কোনও টিকা (কোভিশিল্ড কিংবা কোভ্যাক্সিন) তৈরি করতে একটি নির্দিষ্ট সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে প্রায় আধ কোটি টিকার ডোজ় নষ্ট হয়ে যাওয়া কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের চরম অবহেলা ও খামখেয়ালিপনার নিদর্শন। এক দিকে সারা দেশে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সুনামির মতো আছড়ে পড়েছে, হাসপাতালগুলিতে করোনা চিকিৎসায় তীব্র সঙ্কট, প্রয়োজনের তুলনায় ওষুধপত্র, অক্সিজেন সিলিন্ডার, করোনা পরীক্ষার কিটের জোগান অপ্রতুল, অন্য দিকে তখন টিকার আকাল তীব্র হয়ে দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে প্রয়োজনের তুলনায় জোগান খুবই কম। হাসপাতালের সামনে দীর্ঘ সময় ধরে লাইনে দাঁড়িয়েও বয়স্ক মানুষেরা টিকা পাচ্ছেন না। অথচ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আমাদের দেশে তৈরি হওয়া টিকার ৫০ শতাংশ বাইরের দেশকে বিক্রি করেছেন। কিন্তু কেন? আগে তো নিজের দেশের মানুষ বাঁচুক, তার পর অন্য কথা।
জাতির উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে করোনার এই কঠিন সময়ে ধৈর্য ধরে থাকতে বলেছেন। কিন্তু, গত বছর ওঁর ঘোষণা করা লকডাউনের সময় তীব্র আর্থিক এবং মানসিক সঙ্কটেও সারা দেশের মানুষ কি ধৈর্য ধরে থাকেননি? লক্ষণীয়, লকডাউন উঠে যাওয়ার পর বেশ কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও টিকার সুষম বণ্টন করা হয়নি। দেশের মানুষ টিকা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এখন অন্য উপায় না দেখে সরকার খোলা বাজারে টিকার ছাড়পত্র দিলেও সেই ভ্যাকসিনের প্রতি ডোজ়ের দাম যা ধার্য হয়েছে, তা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে।
অথচ, বাইরের দেশগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, বহু দেশে আমাদের দেশের চেয়ে বেশি মানুষের টিকাকরণ হয়েছে সরকারি ভাবে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখা সত্ত্বেও এ রাজ্যে টিকার জোগান ঠিক মতো মেলেনি। আর ভোট-বাজারে এ রাজ্যের বিজেপির নেতা-নেত্রীরা শুধু রাজ্য সরকারকেই দায়ী করে যাচ্ছেন।
করোনা চিকিৎসার এই সঙ্কটাপন্ন অবস্থায় এত লক্ষ টিকার ডোজ় নষ্টের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কি দায় এড়াতে পারে? যে সব রাজ্যে বেশি চাহিদা, কেন সেই সব রাজ্যে টিকা সময়মতো পাঠানো হয়নি? তথ্যের অধিকার আইনের রিপোর্টে আরও প্রকাশ, পশ্চিমবঙ্গ, কেরল, হিমাচল প্রদেশ, মিজোরাম, গোয়ার মতো রাজ্যে ভ্যাকসিন নষ্ট হয়নি। তা হলে এই সব রাজ্যে কেন সময় থাকতে প্রয়োজনীয় ডোজ় কেন্দ্র পাঠাল না? কেন্দ্রীয় সরকারের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং সদিচ্ছা থাকলে, এত টিকা নষ্ট হত না।
অরুণ মালাকার
কলকাতা-১০৩
লাগামহীন
অতিমারির এক বছর কেটে গেল, আক্রান্ত অগণিত মানুষ। তবুও স্বাস্থ্যখাতে কেন্দ্রীয় বাজেটে ব্যয়বরাদ্দ সে ভাবে বাড়েনি। রাষ্ট্রীয় ওষুধ প্রস্তুত কারখানাগুলো (আইডিপিএল, এইচএএল, আরডিপিএল, বিসিপিএল) আজও বন্ধ ও রুগ্ণপ্রায়। বেসরকারি ও বহুজাতিক সংস্থার রমরমা। যথাযথ ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ছাড়াই ওষুধ বাজারজাত হচ্ছে। ওষুধের উপর থেকে জিএসটি প্রত্যাহারের লাগাতার দাবি জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি।
জয়ন্ত কুমার পাঁজা
কোন্নগর, হুগলি
জাঁতির মহিমা
ব্যাঙ্কে গিয়েছি। পাশে এক জন বয়স্ক মহিলাও অপেক্ষা করছেন। কিছু ক্ষণ পর তিনি তাঁর ব্যাগটি খুললেন এবং বার করলেন একটি জাঁতি। ভাবলাম, এ বার নিশ্চয়ই সুপারি বেরোবে। কিন্তু বার হল একটি ট্যাবলেটের পাতা। একটি ট্যাবলেট নিয়ে মাঝ বরাবর লাইনটি জাঁতির মাঝে রেখে দিলেন এক চাপ। নিখুঁত দু’ভাগ হল ট্যাবলেট। এক ঢোঁক জল খেয়ে ওষুধ খাওয়া শেষ করলেন। উদ্ভাবনী শক্তি দেখে অবাক হলাম। যা-ই হোক, ওষুধ কোম্পানিগুলি অর্ধমাত্রার গোটা একটি ট্যাবলেট বিক্রি করলে সুবিধাই হয়।
অমিতাভ সরকার
কলকাতা-৩৬
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy