— ফাইল চিত্র।
‘দেশবাসীই তাঁর পরিবার, ভোটে নতুন মন্ত্র মোদীর’ (৫-৩) শীর্ষক সংবাদে প্রকাশ, ভোটের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তেলঙ্গানার এক সভায় বলেছেন, ১৪০ কোটি দেশবাসীই তাঁর পরিবার। শুধু পরিবারের সদস্য করলেই তো হল না, পরিবারের কর্তা হিসাবে তো কিছু দায়িত্বও থাকে, এবং তা পালন করতে হয়। দেখা যাক, গত দশ বছরে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীর প্রতি কেমন দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্ষমতায় বসার দু’বছরের মাথায় প্রধানমন্ত্রী ‘নোট বাতিল’ ঘোষণা করেছিলেন। বলেছিলেন, এতে সাধারণ মানুষের যত অসুবিধাই হোক, দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদ, জাল নোট এবং কালো টাকা চিরকালের জন্য দূর হয়ে যাবে। বাস্তবে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ ছাড়া আর কোনও লাভই যে হয়নি, তা আজ স্পষ্ট।
প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, ২০২২ সালের মধ্যে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে দেবেন। ২০২৪ সাল হয়ে গেল। কৃষকরা জানেন, দ্বিগুণ নয়, সার-বীজ-কীটনাশকের দামে সরকার খরচ যা বাড়িয়েছে, তাতে নিম্নমুখী তাঁদের রোজগার। দেশে প্রতিনিয়ত কৃষকরা আত্মহত্যা করছেন। চুয়াল্লিশটি শ্রম আইনকে ছেঁটে চারটিতে এনেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাতে শ্রমিকদের বহু সংগ্রামে অর্জিত অধিকারগুলি প্রায় সবই কেড়ে নেওয়া হয়েছে। স্থায়ী চাকরি প্রায় তুলেই দেওয়া হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে কোথাও ন্যূনতম মজুরি বলে কিছু নেই। আট ঘণ্টার পরিবর্তে মালিকরা এখন শ্রমিক-কর্মচারীদের ইচ্ছামতো খাটান।
প্রধানমন্ত্রী এখন সব বক্তৃতায় নারীশক্তির কথা বলছেন। নারীদের জন্য তাঁর সরকার কী করেছে? তাঁর নিজের রাজ্য গুজরাতে গত পাঁচ বছরে নারীর উপর অত্যাচারের ঘটনা বেড়েছে। দেশের ৫০ শতাংশ নারী অপুষ্টির শিকার। পণের জন্য নির্যাতন এবং বধূহত্যা ভারতে একটি গুরুতর সমস্যা। এনসিআরবি-র তথ্য অনুযায়ী, মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধের ঘটনা ২০২২-এর তুলনায় ২০২৩-এ প্রায় ৪ শতাংশ বেড়েছে। বাল্যবিবাহ এবং নারীপাচার আজও গুরুতর সমস্যা হিসাবে থেকে গেছে। কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণ ক্রমাগত কমছে। তাঁর দলের সাংসদের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ তুলেছেন অলিম্পিক পদকজয়ী মহিলা কুস্তিগিররা।
দেশে বেকারত্ব গত ৪৫ বছরে শীর্ষে পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় সরকারে লক্ষ লক্ষ পদ শূন্য। লক্ষ লক্ষ যুবক বিদেশে পাড়ি দিচ্ছেন শ্রমিকের কাজের জন্য। দেশে এখন কর্মহীন বেকার যুবকরা প্রতি ঘণ্টায় দু’জন করে আত্মহত্যা করছেন। এর পরও কি এই কথা বুঝতে অসুবিধা হয় যে, কোনও পরিবারের কর্তা হিসাবে অন্তর থেকে নয়, লোকসভা ভোটকে সামনে রেখেই প্রধানমন্ত্রী এই কথাগুলি বলেছেন?
ইন্দ্র মিত্র, কলকাতা-৩১
দোষ কার?
‘নেতাদের কাছে গেলেই নাবালিকা বিয়েতে ছাড়পত্র!’ (৯-৩) শীর্ষক প্রতিবেদন প্রসঙ্গে এই চিঠি। তিন বছর আগে সদ্যোজাত মেয়েকে কোলে নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল সন্দেশখালির দ্বারীরজাঙ্গাল বনমালী বিদ্যাভবনের এক ছাত্রী। তখন তার বয়স ছিল ১৬ বছর। আবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর কোনও এক নাবালিকার সঙ্গে জনৈক নেতার ছেলের বিয়ে হয়ে গেছে। বিয়ের পর সাংসারিক অশান্তিতে স্বামীর ঘর থেকে বিতাড়িত হয়ে সে এখন বাবার ঘরে। সন্দেশখালি নদীর এ-পাড়ে বেড়মজুর, ও-পাড়ে সন্দেশখালি দ্বীপ। দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নদীর দুই পাড়ে নাবালিকা বিয়ের অজস্র উদাহরণ রয়েছে। নেতাদের কাছে গেলেই নাবালিকা বিয়েতে ছাড়পত্র— এ কথা এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে ঘোরে।
সমাজে যা কিছু মন্দ ঘটুক, সবের পিছনে রয়েছে রাজনীতি, সব দোষ রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর— এমন একটা বক্তব্য সাধারণ মানুষ সাগ্রহে গ্রহণ করছেন। এক বার ভাবুন তো, নাবালিকার বাবা-মা যদি না চান, তা হলে জোর করে সেই মেয়ের বিয়ে দেওয়া সম্ভব? অনেক ক্ষেত্রেই নাবালিকার বাবা-মা ‘কন্যাশ্রী’-র ২৫ হাজার টাকা সাহায্য পেয়েও মেয়েকে পড়াশোনা করানোর কথা ভাবছেন না। তাঁরা ভাবছেন, এই টাকাটা দিয়ে একটা রঙিন মোবাইল কিনে, বা ব্যাঙ্কে গচ্ছিত রেখে, কিংবা অন্য কাজে লাগিয়ে, মেয়েকে যেন তেন প্রকারেণ একটি ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিতে পারলেই হল। কন্যাদায় থেকে তো মুক্তি!
মেয়ে মানেই যেন একটা বোঝা। নাবালিকা মেয়ের জন্য অতি নিম্নরুচি, অযোগ্য পাত্র পেয়ে গেলেও তাঁরা বিয়ে দিতে ইতস্তত বোধ করেন না। রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকা, বিডিও, সমাজের বিশিষ্ট মানুষ, আত্মীয়স্বজন, যাঁরা এই বিয়েতে বাধা বা বাগড়া দিতে আসবেন, তাঁরাই তাঁদের শত্রু হয়ে দাঁড়ান। এটাই এই সমাজে ঘোর বাস্তব। শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের উপর দোষ চাপিয়ে কেন আমরা নিজেদের দায়দায়িত্ব সম্পূর্ণ ভুলে যাব?
স্থানীয় নেতা-নেত্রীদের দোষ আছে, মানছি। কিন্তু তার জন্য নিজেদের দোষটা কেন ঢাকব? নাবালিকা কন্যার বাবা-মা তথা অভিভাবকদের অজ্ঞতা দূর করতে সমাজ আজ ব্যর্থ। তাই স্থানীয় নেতাদের উপর দোষ চাপিয়ে দেওয়ার আগে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে অভিভাবকদের সচেতন করা দরকার। বাবা-মাকে বোঝাতে পারলে নাবালিকা বিবাহের ব্যাধি ধীরে ধীরে সমাজ থেকে নির্মূল হবে। একটি নাবালিকা কন্যার বিবাহ যেমন তাকে শারীরিক ও মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে, তেমনই সমাজকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে— সেই ব্যাপারটি মেয়ের বাবা-মাকে বোঝাতে হবে। এমন কাজে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও প্রশাসনের সঙ্গে এলাকার শুভবোধসম্পন্ন মানুষ সঙ্গ দেবেন বলে মনে করি।
চৈতন্য দাশ, ধুবুলিয়া, নদিয়া
দারিদ্রের মাপ
অভিরূপ সরকারের ‘ভাত বনাম ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট’ (১১-৩) প্রবন্ধের প্রসঙ্গে এই চিঠি। সরকারি ভাবে নানা ধরনের সূচক দিয়ে দারিদ্রের পরিমাপ চলে। তার ফলে নানা ধরনের প্রকল্পে অনেকে সংযুক্ত হন, অনেকে বাদ পড়েন। ছোটবেলায় গ্রামে বেসরকারি সংস্থাকে বিনাপয়সায় শৌচালয় করে দিতে দেখেছিলাম। তবে অধিকাংশ প্রাপক শৌচালয় ব্যবহার করতেন না, বর্ষাকালে শুকনো পাতা, কাঠ রাখতেন। এখন সামগ্রিক চিত্র বদলেছে। গ্রামেও স্মার্টফোন, কালার টিভি, কেবল লাইন আছে। তবে সার্বিক পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়নি। মানুষের কর্মসংস্থান নেই। তাঁরা কৃষিকাজ ছেড়ে অন্য পেশায় মনোনিবেশ করেছেন। সে সব পেশায় সারা বছর কাজ নেই। স্বাভাবিক ভাবে সবাই নিজেকে পিছিয়ে পড়া মানুষের মধ্যে আনতে চান। মাটির ঘর থাকলেই পাকা ঘর মেলে। বছরের পর বছর ধরে একটার পর একটা ঘর আসে এক-এক জন ভাইয়ের নামে। কাঁচা ঘরের পরিবর্তন হয় না। আমপানে ক্ষতিগ্রস্তর তালিকা নির্মাণ করা হয়। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা তালিকা থেকে প্রায়ই বাদ পড়েন। দারিদ্রের শর্তগুলি খুঁটিয়ে দেখা দরকার। এখানেই সমস্যা— বেড়ালের গলায় ঘণ্টা বাঁধবে কে?
সৈয়দ সাদিক ইকবাল, সিমলা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
ক্যাশলেস
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের জন্য যে হেলথ স্কিম, চাকরিরত অবস্থায় আমি তার অন্তর্ভুক্ত ছিলাম। অবসরের পরেও আওতাভুক্ত হয়েছি। এই স্কিমে দু’লাখ টাকা পর্যন্ত ক্যাশলেস চিকিৎসার সুবিধা মেলে। তার পর বিল মেটাতে যে টাকাটা পকেট থেকে খরচ হয়, অফিস থেকে বিল করে তা পাওয়ার সামর্থ্য প্রবীণদের প্রায় নেই। অবসরপ্রাপ্তদের জন্য গোটা প্রকল্প ‘ক্যাশলেস’-এর আওতাভুক্ত করা হোক। আউটডোরে ডাক্তারদের ফি-ও তার অন্তর্গত হোক। বিভিন্ন জেলায় আরও নার্সিংহোমকে এর আওতায় আনা হোক।
সঞ্জয় কুমার মিশ্র, কান্দি, মুর্শিদাবাদ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy