—ফাইল চিত্র।
কৌশিক সেন তাঁর ‘এই গণতন্ত্রের নিয়তি’ (৪-৫) প্রবন্ধে শুধু রাজনীতির কথা বলেই থেমে গিয়েছেন। কিন্তু গণতন্ত্রের নিয়তির জন্য গণমাধ্যমের একাংশ এবং তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরাও যে দায়ী, সে কথা উল্লেখ করেননি। ওই সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীরাও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, বা বিভ্রান্তিকে তাঁরা প্রশ্রয় দিচ্ছেন। কৌশিকবাবু তাঁর লেখায় ভাঁওতার কথা বলেছেন। মোদী তো বলেছেন, গত দশ বছর তাঁর ‘ট্রেলার’ ছিল। পুরো সিনেমা দেখতে হলে ২০৪৭ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। রাজনাথ সিংহ বলেছিলেন, বিজেপি কথা দিলে কথা রাখে। অথচ, কৃষকের আয় দ্বিগুণ হয়নি, বেকারত্বও কমেনি। মোদী এখন বলছেন, তাঁরা সাম্য ও স্থিতিশীল সরকার গঠনের পক্ষে। এই ধরনের প্রতিশ্রুতি যে অলীক, সে কথা সবাই কি জানে না?
এই সরকার স্থিতিশীল হলে সংবিধানের মূল কাঠামো অক্ষুণ্ণ থাকবে না, ইতিমধ্যেই বিরোধী দলগুলো এমন আশঙ্কা প্রকাশ করছে। ভোটের সময় এলেই নেতারা যে অকাতরে ভ্রান্ত প্রতিশ্রুতি বিলি করেন, তা অজানা নয়। মানুষও আস্তে আস্তে বুঝতে পারছে, বিশ্বাস কমছে গণতন্ত্রে। ফলে ভোটদানের হার যেমন কমছে, ভোট বয়কট করছেন অনেকে, পাশাপাশি সর্বাধিক ভোটপ্রাপ্ত ‘নোটা’-কে জয়ী করার দাবিতে দেশের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা দায়ের হচ্ছে। অর্থনীতিতে শুধুই খতিয়ান, কিন্তু বিকাশে যে কতখানি অসাম্য রয়েছে, তা অপুষ্টি, বেকারত্ব থেকে বোঝা যাচ্ছে। বিরোধী নেতাদের বিভ্রান্তির আর এক কারণ, একতার অভাব। গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় কৌতুক এই যে, দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের সব মিথ্যাভাষণ সহ্য করেও মানুষ ভোটের লাইনে দাঁড়াচ্ছে।
তন্ময় কবিরাজ, রসুলপুর, পূর্ব বর্ধমান
ফ্যাসিবাদী দল
কৌশিক সেনের প্রবন্ধটি পাঠ করে উপলব্ধি হল যে, বিজেপির মতো একটি ফ্যাসিস্ট দলের প্রতিরোধে একটি জোরদার সর্বভারতীয় জোট গঠিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু কী প্রক্রিয়ায় এবং কাদের নিয়ে এই জোট গঠন সম্ভব, সে সম্পর্কে আলোকপাত করলে ভাল লাগত। আজকাল ‘ফ্যাসিস্ট’ শব্দটি প্রায়ই উচ্চারিত হচ্ছে। অথচ এর স্বরূপ সম্পর্কে, কিংবা এই শক্তির উদ্ভবের আর্থ-রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে তেমন আলোচনা শোনা যায় না।
মোদীজিকে ফ্যাসিবাদী মনে হচ্ছে। ইন্দিরাজিকে কি তা মনে হত না? এ রাজ্যে সিপিআই(এম) নিয়ন্ত্রিত বামফ্রন্ট সরকার কি এমন প্রবণতা দেখায়নি? তৃণমূলও আজ দেখাচ্ছে। তা হলে কি এটা প্রমাণিত হচ্ছে না যে, যাঁরা ক্ষমতাসীন হবেন, তাঁরাই এই বিশেষ ধাঁচের শাসনে-শোষণে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন? শুধু ভারতে নয়, বিশ্বের সমস্ত দেশের শাসকগোষ্ঠী আজ এই দোষে দুষ্ট। কারণ, গণতন্ত্রের সার্থক প্রয়োগ তাঁদের পক্ষে বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।
বাস্তবে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার জন্মলগ্নে, অর্থাৎ নবজাগরণের প্রত্যুষে যথার্থ গণতান্ত্রিক চেতনার উন্মেষ ঘটেছিল। তখনকার জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতিতে তার প্রভাব লক্ষণীয়। এই পরিমণ্ডলে জন্ম নিয়েছিল মানবতাবাদী ভাবধারা। সেই ধারণায় পুষ্ট বহু মহৎ প্রাণের কথা আমরা জেনেছি ইতিহাস থেকে। অথচ, এই পুঁজিবাদের তথাকথিত অগ্রগতি ডেকে আনল এক গভীর সঙ্কট। যে যে গণতান্ত্রিক অধিকার এক দিন সকলের করায়ত্ত হয়েছিল, একে একে সে সব কেড়ে নেওয়া হতে থাকল। শুধু টিকে থাকল গণতন্ত্রের ঠাট। অন্তর্হিত হল তার মর্মবস্তু। বিভিন্ন দেশের মরণোন্মুখ পুঁজিবাদী শক্তি নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইয়ে মেতে উঠল। তাই বিশ্ববাসীকে সইতে হল প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধকল। আর এখন? তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভাবনায় আমরা আতঙ্কিত।
ফ্যাসিবাদ পুঁজিবাদের বর্তমান মুমূর্ষু অবস্থায় রাজনৈতিক কাঠামোর একটি স্তর। এটা কিন্তু হিটলার-মুসোলিনির ফ্যাসিবাদ নয়। এর স্বরূপ সম্পূর্ণ পৃথক। যথার্থ মানুষ গড়ার সমস্ত প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করে এই ফ্যাসিবাদ। কর্পোরেট ব্যবস্থার গহ্বরে আজ সমস্ত ক্ষুদ্র পুঁজি। সর্বক্ষেত্রে চলছে ‘মনোপলি’-র শাসন। আইনসভা, প্রশাসনিক ক্ষেত্র ও বিচার বিভাগ হারিয়েছে অতীতের স্বাধীনতা। সর্বোপরি মনন জগতে যুক্তিহীনতা, অবৈজ্ঞানিক ভাবনা এবং চূড়ান্ত ধর্মীয় গোঁড়ামি এক অদ্ভুত পরিমণ্ডল সৃষ্টি করেছে। এই লক্ষণগুলো আজ স্পষ্ট চোখে পড়ছে। উদ্দেশ্য, বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি, অর্থনৈতিক বৈষম্য ও শিক্ষা-স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গভীর মৌলিক সমস্যাগুলোর দিকে জনগণের দৃষ্টি যাতে না পড়ে। এর পাশাপাশি অম্বানী-আদানির স্বার্থপূরণে দরাজ মোদীজি। এ চিত্র আজ পরিষ্কার। এখন উপলব্ধি করা যাচ্ছে, বিজেপি ধর্মভিত্তিক দল নয়। ধর্মের জিগির তোলা, কিংবা মুসলিম বিদ্বেষ উস্কে দেওয়ার মুখ্য উদ্দেশ্য কেবলমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু ভোট সংগ্রহ করা। চূড়ান্ত ফ্যাসিবাদী শক্তি বিজেপি সম্পর্কে আরও বিশদ ভাবে জানা ও তাকে প্রতিরোধ করা জরুরি।
তপন কুমার সামন্ত, কলকাতা-১২
ভোটের জন্য
‘পরিযায়ী ভোট’ (৭-৫) সম্পাদকীয়টিতে দেশের বিভিন্ন রাজ্যে কর্মরত পরিযায়ী শ্রমিকদের নির্বাচনে ভোটদানের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ। এ দেশে প্রায় সাড়ে ছ’কোটি পরিযায়ী শ্রমিক নাকি ভোটদান থেকে বিরত থাকেন। তাঁদের নাগরিকত্ব অধিকার প্রয়োগের জন্য ‘রিমোট ভোটিং’-এর ব্যবস্থা করলে তাঁরা সহজেই যে কোনও রাজ্যে থেকে নিজের রাজ্যের এলাকার ভোটপ্রার্থীদের ভোট দিতে পারবেন। কিন্তু এ রাজ্যের মতো বহু রাজ্যেই ত্রিস্তরে ব্যালট পেপারে পঞ্চায়েত রাজের নির্বাচন হয়। সরকারের পক্ষে তাঁদের কাছ থেকে পোস্টাল ব্যালটে ভোট নেওয়া কষ্টকর ও ব্যয়সাপেক্ষ। পোস্টাল ভোটে কারচুপির ও গোপনীয়তা ফাঁস হওয়ার ভয়ও থাকে।
বর্তমানে গ্রামবাংলার পঞ্চায়েত নির্বাচনগুলিতে দেখা যায় নির্বাচনের দিন ঘোষণা এবং দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এলাকার প্রার্থীদের ভোট আদায়ের প্রচেষ্টা শুরু হন। খোঁজ করা হয়, বাড়ির পরিযায়ী শ্রমিকদের কে কোথায় আছে, তার ঠিকানা। বাড়িতে এসে ভোট দেওয়ার জন্য কোনও কোনও ভোটপ্রার্থী পরিবারের হাতে আসা-যাওয়ার ভাড়া তুলে দেন। কেউ কেউ আবার হুমকি দেন, ভিনরাজ্যে থাকা আত্মীয়রা যদি এসে ভোটের দিনে ভোটটা না দেন, তা হলে তাঁদের পরিবারের রেশন, বার্ধক্য ভাতা, পেনশন, লক্ষ্মীর ভান্ডার, কন্যাশ্রী, রূপশ্রী প্রভৃতি প্রকল্পে সুবিধাদান বন্ধ হয়ে যাবে। তাই বাড়ির লোকেদের অনুরোধ মতো ভিনরাজ্যে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকরা এক প্রকার বাধ্য হয়ে ভোটের আগের দিনে এসে, ভোট দিয়ে আবার নিজের কর্মস্থলে ফিরে যান।
রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার, এবং নির্বাচন কমিশন কি পারে না, এই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিজ কর্মস্থল থেকে ভোট দেওয়ার কোনও বিশেষ ব্যবস্থা করতে? এই ব্যাপারে ভাবার সময় এসেছে, কারণ এই দেশে পরিযায়ী শ্রমিকদের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে।
তপনকুমার বিদ, বেগুনকোদর, পুরুলিয়া
তারকাই সার
লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন দলে যে সব অভিনেতা-অভিনেত্রী প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের তারকা প্রার্থী হিসেবে অভিহিত করা হচ্ছে। এঁদের মধ্যে অনেকে সাংসদ বা বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এঁদের ঘিরে মানুষের ভিড় জমলেও সেই ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে কিছু প্রশ্ন। যেমন, গত পাঁচ বছরে সংসদে বা বিধানসভায় কী ভূমিকা পালন করেছেন এঁরা? দেখা যাচ্ছে, বক্তব্য রাখা দূরস্থান, এঁদের অধিকাংশেরই সেখানে উপস্থিতির হার অত্যন্ত কম। এক জন সাংসদ বা বিধায়কের কাজ এলাকার রাস্তাঘাট নির্মাণ, নর্দমা সাফাই বা পথবাতি বসানো নয়। এগুলোর জন্য সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত বা পুরসভা আছে। লোকসভা বা বিধানসভায় জনপ্রতিনিধিকে মানুষ নির্বাচিত করে দেশ বা রাজ্যের নীতি নির্ধারণ করতে। সেই কাজে এই সব তথাকথিত তারকারা ব্যর্থ। যে সব প্রার্থী ভোটের প্রচারে গিয়ে ধোঁয়া দেখলেই শিল্প হয়েছে বলে দাবি করেন বা তাঁকে ভোট দিলে ভোটাররা সারা বছর দেখতে পাবেন বলে লঘু মন্তব্য করেন, তাঁরা সাংসদ হিসেবে কতটা সফল হবেন, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। এঁদের প্রার্থী না করে এক জন পূর্ণ সময়ের রাজনীতিবিদকে প্রার্থী করলে, তাঁরা এঁদের থেকে বেশি সক্রিয় ভূমিকা পালন করতেন না কি?
সুদীপা রায় ঘোষ, সোনাচূড়া, পূর্ব মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy