একনাগাড়ে অন্য রাজ্যের অপরাধ বা দুর্নীতির উদাহরণ দিয়ে এই ভাবে নিজেদের কৃত পাপকে কি ঢাকতে উদ্যোগী হতে পারতেন? প্রতীকী ছবি।
বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আসুন, সেলফি তুলি’ (১৭-৩) প্রবন্ধ প্রসঙ্গে জানাই, তিনি যথার্থই লিখেছেন। বাস্তবিকই লজ্জা, ঘেন্নার মতো শব্দকে এ বার বাংলা অভিধান থেকে তুলে দেওয়ার সময় এসেছে। টিভিতে আলোচনা চলাকালীন যখন দেখি ঘোরতর অপরাধের পরও ওই সব দলীয় সমর্থক নির্লজ্জের মতো মুখ দেখান আর বিরক্তিকরভোকাল টনিক দিয়ে যান শাসক শিবিরের হয়ে, তখনই মনে হয়— এঁদের মধ্যে কি সামান্য লজ্জা বা অপরাধবোধের ছিটেফোঁটাও নেই। যদি থাকত, তা হলে একনাগাড়ে অন্য রাজ্যের অপরাধ বা দুর্নীতির উদাহরণ দিয়ে এই ভাবে নিজেদের কৃত পাপকে কি ঢাকতে উদ্যোগী হতে পারতেন? যে-হেতু অন্য রাজ্যেও নানা অপরাধ ঘটে চলেছে, তাই তার সঙ্গে এই গুরুতর অপরাধের তুলনা টানা একে লঘু করার দুর্লঙ্ঘ্য প্রয়াস নয় কি! শাসক শিবিরের এত দুর্নীতি যখন আর ঢেকে রাখা যাচ্ছে না, তখন আগামী পঞ্চায়েত ভোটে এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। রাজনীতি সম্পর্কে যাঁদের সামান্য অভিজ্ঞতাও নেই, তাঁরাও হয়তো চোখ বন্ধ করে এমনটা স্বীকার করে নেবেন। আর সেটাই এঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। সেই জন্যেই হয়তো শাসক দল বিশিষ্ট কিছু নেতা, মন্ত্রী বা দলের পুষ্ট সমাজবিরোধীদের দিয়ে হুঙ্কার ছেড়ে সাধারণ মানুষকে লজ্জাহীন ভাষায় আক্রমণ করতে উদ্যোগী হচ্ছে। সামান্য রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার অভাবের ফলে এঁরা কেন যে বুঝতে পারছেন না এই কদর্য সাহস প্রদর্শন করে ও স্থূল রাজনীতির মাধ্যমে এঁদের নিজেদের আসল রূপটাই আরও প্রকট হয়ে যাচ্ছে দিনকে দিন। আর সেইজন্যেই অনুদানপ্রাপ্ত এবং চাটুকার ক্লাবের কিছু সভ্য ছাড়া সাধারণ মানুষ ক্রমশ এঁদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে শুরু করেছে। আসলে সুস্থ রাজনীতির পাঠ এঁদের কোনও দিন শেখানো হয়নি!
সুব্রত সেনগুপ্ত, কলকাতা-১০৪
বেআইনি পথে
বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আসুন, সেলফি তুলি’ শীর্ষক প্রবন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে এই পত্র। আসলে বাঙালিদের একাংশ শর্টকাটে বড়লোক হতে বেশি পছন্দ করেন। সেই আশির দশকে ‘সঞ্চিতা’ থেকে শুরু করে বর্তমানে সারদা-রোজ়ভ্যালি— বেআইনি চিটফান্ডের ব্যবসাকে ফুলেফেঁপে উঠতে সাহায্য করেছে এই মানুষদেরই সুপ্ত মনোবাঞ্ছা। তার ফাঁদে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। তোলপাড় হয়েছে রাজ্য ও দেশের রাজনীতি। বেআইনি চিটফান্ডের ব্যবসায় আমাদের রাজ্য ভারতের মধ্যেপ্রথম হয়েছে।
‘নেড়া বেলতলায় এক বারই যায়’— এই প্রবাদকে মিথ্যা প্রমাণ করে এঁরা এই বার গেলেন পয়সার বিনিময়ে চাকরি কিনতে। আট-দশ লক্ষ টাকায় চাকরি কেনা হল। বেআইনি পথে চাকরি কেনা হল, অথচ ওই টাকা দিয়ে তাঁরা সৎ পথে ব্যবসা করলেন না। যে বিপুল পরিমাণ টাকা এই চাকরি কেনাবেচায় লেনদেন হল, সেই টাকাটা যদি ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হত, তা হলে অনেক মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতে পারত। কিন্তু তা না হয়ে টাকাগুলো চলে গেল নেতা-মন্ত্রীদের পকেটে। প্রবন্ধে সঠিক ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, চাকরি বিক্রির টাকায় অভিযুক্ত নেতা-মন্ত্রী যখন দানসত্র করেন, তখন ওই টাকার উৎস সম্পর্কে আমরা কিন্তু কেউ কোনও প্রশ্ন করি না। আমাদের সমাজ থেকে লজ্জা-ঘৃণা-ভয় আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। সেই জন্যই দুর্নীতি আজ সর্বগ্রাসী। পরস্পরকে দোষারোপনা করে আসুন আমরা সবাইসেলফি তুলি।
শেষাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়, ভদ্রেশ্বর, হুগলি
মাতৃসত্তা
বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রবন্ধ প্রসঙ্গে এ পত্রের অবতারণা। প্রবন্ধকার অতি সুচারু ভাবে মিসেস চ্যাটার্জি ভার্সেস নরওয়ে ছবির ট্রেলর দেখে যে পুত্রস্নেহের অন্ধত্বের ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা সত্যিই ভয়ঙ্কর। সন্তানের কর্ম যদি সামাজিক অবক্ষয়ের কারণ হয়ে ওঠে, তবে সেই সন্তানের মা ও পরিবার তার দায় এড়াতে পারেন না। সন্তানকে মানুষ করে তোলা মা-বাবার কর্তব্য। সে ক্ষেত্রে সন্তান প্রকৃত মানুষ হয়ে যদি সমাজের হিতকারী হয়ে ওঠে, তার গৌরব যেমন মা ও পরিবারের প্রাপ্য, তেমনই সন্তান যদি অমানুষ হয়ে সমাজকে অতিষ্ঠ করে তোলে, তবে তার লজ্জাও মা ও পরিবারেরই প্রাপ্য।
এ ক্ষেত্রে প্রবন্ধকার সঙ্গত ভাবেই প্রশ্ন তুলেছেন— মা ও পরিবার লজ্জা পাচ্ছেন, না কি সন্তানের অসৎ পথে কাঁড়ি কাঁড়ি রোজগারের লোভে লজ্জাকে কণ্ঠহার করে সন্তানের গরবে গরবিনি হয়ে উঠছেন? তিনি প্রশ্ন তুলেছেন— লজ্জা যদি এ ভাবে আপডেট হয়ে যায়, মায়ের চাহিদা যদি ব্যাঙ্কক, সিঙ্গাপুর আর চল্লিশ লক্ষের গাড়ির লোভের তুলাযন্ত্রে পরিমাপ হয়, তবে সমাজ রসাতলে যেতে আর কী-ই বা বাকি রইল? না না, এতটা ভেঙে পড়ার অবস্থা ভারতীয় তথা বাঙালি মায়েদের এখনও হয়নি, কোনও দিন হবেও না, বলা ভাল কোনও কিছুর বিনিময়েই হতে দেওয়া যাবে না। আমরা বাঙালিরা মহাপুরুষদের মায়ের নামের পরে দেবী শব্দ বসিয়ে চিরকাল তাঁদের শ্রদ্ধা করে আসছি। এ যে কেবল তাঁদের সন্তান মহাপুরুষ হয়ে উঠেছেন, সেই কারণেই নয়, তাঁদের মহান ত্যাগের কাহিনিকে স্মরণ করেও। ভারতীয় নারী ও তার মাতৃসত্তা চিরকালই ত্যাগের সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণরূপে প্রতিষ্ঠিত হয়ে আছে বিশ্বব্যাপী। সেখানে কয়েক জন কুমাতার লোভ সমাজের অধঃপতনের কারণ হয়ে ওঠে। কিন্তু মা কু(খারাপ) হবেন কী করে? মা তো মা-ই হন। দু’-পাঁচ জন মায়ের লোভ ভুবনদের মাসির মতো ছোট চোর থেকে ডাকাত করে তুলেছে বটে, কিন্তু আমরা আশাবাদী— ভুবনদের ঘাড় ধরে বুঝিয়ে দেওয়ার মতো মায়েরাই আজও সংখ্যায় অধিক।
মিলন কুমার দে, হরিপাল, হুগলি
বর্ষণধারা
বাংলার মাটি শুধু কৃষির নয়, কৃষ্টিরও বটে। হাজারও লোকাচার এ মাটির মজ্জায়, শিরায় মিশে আছে। অজস্র লোকপার্বণের অকৃত্রিম অহঙ্কার, যা আমাদের স্বকীয় সংস্কৃতি ও সম্ভ্রান্ত ঐতিহ্যের প্রামাণ্য দলিল। অধিকাংশ লোকাচারের সঙ্গে প্রকৃতি ও বিজ্ঞানের যোগ বেশ গভীর। বিশ্বব্যাপী এর অসংখ্য উদাহরণ রয়েছে। প্রকৃতির জল, আলো, বাতাস, আগুন, উদ্ভিদ ও পশু-পাখির স্বরূপকে দেবতা জ্ঞানে পুজো করা ও কৃতজ্ঞতায় অর্ঘ্য নিবেদনের রীতি মিশর, সুমের, আর্য-সহ প্রায় সকল প্রাচীন সভ্যতাতেই পরিলক্ষিত হয়েছে।
সেই আবহমানতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খানিক ফিকে হলেও লুপ্ত হয়ে যায়নি। বাংলার তেমনই এক লুপ্তপ্রায় লোকাচার ‘বর্ষণধারা’ উৎসব। মানবসভ্যতার বিকাশে ও লালনে উদ্ভিদের ভূমিকা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। নিঃস্বার্থ পাহারাদারের মতো আজও সে মানুষের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রেখেছে। এই অকৃত্রিম বন্ধুর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতায় আনত হওয়ার উৎসব ‘বর্ষণধারা’। গ্রীষ্মের দ্রোহকালে শুধু প্রাণী নয়, পোড়ে উদ্ভিদও। শরীর শুকোয়। শিকড় নাগাল পায় না মাটির গভীর খা়ঁজে লুকিয়ে থাকা কৃপণ জলের। ঠিক তখনই জলের ভাঁড় নিয়ে উপস্থিত হয় মানুষ। অক্ষয় তৃতীয়ার দিন গাছের চার পাশ সাফসুতরো করে তিনটি পোক্ত লাঠি সহযোগে একটি কাঠামো তৈরি করে তাতে মাটির ভাঁড় বা কলসি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, ছোট ছোট ছিদ্র করে দেওয়া হয় তলদেশে। তার পর স্নান করে নতুন কাপড় পরে সারিবদ্ধ ভাবে জল নিয়ে গিয়ে, গাছের পাতা ধুয়ে, কাণ্ডে চন্দন লেপে, পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে জল ঢালা হয় ঝোলানো ফুটো ভাঁড় বা কলসিতে, যা সারা দিন বর্ষণের ধারার মতো জলের জোগান দেয় তৃষ্ণার্ত উদ্ভিদকে। সারা দিন দুই থেকে তিন বার বর্ষণধারার পাত্র পূরণ করা নিয়ম। এই নিয়ম চলে ঠিকমতো বর্ষা না আসা পর্যন্ত।
পলাশ মান্না, সবং, পশ্চিম মেদিনীপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy