‘বিকল্প উৎসব’ (২-১০) শীর্ষক সম্পাদকীয় উৎসব মরসুম প্রসঙ্গে এক সময়োচিত ও ঠিকঠাক আলোচনা। করোনার দ্বিতীয় তরঙ্গ যখন যাই যাই করেও যায়নি, তৃতীয় ঢেউয়ের চোখরাঙানি প্রায় ঘরের দুয়ারে, তখন মহামান্য আদালতের বেঁধে দেওয়া উৎসবের গত বছরের নিয়মবিধি এ বছরেও বহাল রাখার সিদ্ধান্ত সত্যিই স্বস্তিদায়ক। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে এই উৎসবের সময় বিধিনিষেধ আরোপে আরও কঠোর হতে বলেছে। ও দিকে কোর্টের নির্দেশে পুজোপ্রাঙ্গণ দর্শকশূন্য রাখার কথা বলা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞ মহলের এক বড় অংশ আদালতের এই নির্দেশকে স্বাগত জানিয়েছেন।
দিল্লি বা উত্তরপ্রদেশের ধর্মীয় দশেরা উৎসব থেকে এ রাজ্যের দুর্গাপুজো সমস্ত ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে আজ এক বিরাট উৎসবের ভূমিকায়। বাঁধভাঙা জনস্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে এত বড় উৎসবের সবটুকু আনন্দ চেটেপুটে নিতে কার না ইচ্ছে করে! কিন্তু ভাবতে হবে এবং বুঝতে হবে যে, এই দিনগুলোর বাঁধভাঙা আনন্দ যেন আগামী দিনের বিষাদের কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। প্রিয়জনের সঙ্গে চিরবিচ্ছেদ না ঘটায়। নিয়ম মেনে যদি এ বারের উৎসব আমরা পালন করি, তা হলে আগামী বছর হয়তো করোনাকে চির বিদায় দিয়ে আমরা আবার আগের মতো করেই উৎসবে সকলে মিলে শামিল হতে পারব। মনে রাখতে হবে উৎসবের সাময়িক উন্মাদনা থেকে বেঁচে থাকার আনন্দ ও আকর্ষণ অনেক বেশি।
দিলীপ কুমার সেনগুপ্ত, কলকাতা-৫১
আঞ্চলিক ভাষায়
ব্যাঙ্ক, মিউচুয়াল ফান্ড, এলআইসি-র মতো বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায়শই ইংরেজিতে চিঠি বা বার্তা আসে, এটা ওটা দলিলপত্র চেয়ে বা সতর্ক করতে। এগুলি অল্পশিক্ষিত ও ইংরেজি না-জানা মানুষদের বুঝতে খুব অসুবিধা হয়। তার ফলে সময়মতো ‘দাবি’ পূরণ করতে মানসিক চাপে পড়তে হয়। তখন ছুটতে হয় সংশ্লিষ্ট দফতরে বা ‘এজেন্ট’-এর বাড়িতে, যা আর এক যন্ত্রণা। বর্তমান আধুনিক মুদ্রণ-বিজ্ঞানের যুগে ওই চিঠি বা বার্তাগুলি কি বাংলায় বা আঞ্চলিক ভাষায় পাঠানো যায় না?
বলীন্দ্র বৈদ্য, ডায়মন্ড হারবার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
কই স্বাধীন
অতীতে সংবাদমাধ্যমকে কিছুটা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার রাজনৈতিক ঝোঁক থাকলেও তা ছিল সীমাবদ্ধ। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করার বা মানুষের চিন্তাধারাকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করতে মিথ্যা প্রচার ও সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোগ অগ্রাহ্য করে রাষ্ট্রকে তোষণের দায়িত্ব তুলে নেয়নি সংবাদমাধ্যম! বর্তমানে কর্পোরেট পোষ্য সংবাদমাধ্যম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত। তাই তাদেরই স্বার্থে সমাজের চিন্তাধারা নিয়ন্ত্রণ করতে চায় তারা। আশ্চর্যের বিষয়, আর্থ-সামাজিক নিরাপত্তার নীতি বিঘ্নিত ও অগ্রাহ্য হচ্ছে দেখেও দুধেভাতে থাকা তথাকথিত শিক্ষিত নাগরিকও তাঁদের আচরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন, এতে তাঁদের মান-মর্যাদায় বিন্দুমাত্র আঘাত লাগে না।
সংবাদমাধ্যম এখন কর্পোরেট নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রের শাসকদের ইচ্ছা পূরণ করতে এক রকম পণ্যে পরিণত হয়েছে। দুঃখের বিষয়, গত এক দশকে দেশের ৯৫% মিডিয়া এবং তাদের সাংবাদিকরা এই গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়েছেন।
পরাশর চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা-৪৮
হেমন্তর কীর্তি
হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ‘ও নদীরে একটি কথা শুধাই শুধু তোমারে’ এবং ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’ শীর্ষক অবিস্মরণীয় বাংলা গান দু’টি ইংরেজি ছবিতেও শোনা যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যিই আজ থেকে ৫০ বছর আগে ১৯৭২ সালে সিদ্ধার্থ নামক ইংরেজি ছবিতে এই যুগান্তকারী ঘটনাটি প্রতিফলিত হয়েছিল। যদিও গান দু’টি ইতিপূর্বে হেমন্ত গেয়েছিলেন যথাক্রমে নীল আকাশের নীচে (১৯৫৯) ও মরুতীর্থ হিংলাজ (১৯৫৯) ছবিতে। কিন্তু সিদ্ধার্থ-এ গান দু’টি ব্যবহারে ছিল নতুনত্ব। সেই প্রথম হলিউডের কোনও ছবিতে বাংলা গান শুনল পৃথিবীর দর্শকশ্রোতা। সিদ্ধার্থ-এর সুরারোপ করেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় স্বয়ং। এহেন অধ্যায়টি অর্ধশতাব্দীতে পদার্পণ করল।
নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত জার্মান সাহিত্যিক হেরম্যান হেস-এর কাহিনি অবলম্বনে সিদ্ধার্থ ছবিটি করেছিলেন লন্ডনের পরিচালক কনরাড রুকস। চিত্রনাট্য তাঁর লেখা। এমনকি প্রযোজকও ছিলেন তিনি। হলিউডের এই ছবিটি তৈরি হয়েছিল ভারতের পটভূমিতে। ছবির বিষয়বস্তু ছিল, শান্তি কী? কী ভাবে শান্তি পাওয়া যায়? শান্তির সন্ধানে মেলে ধরা হয় ভারতের আধ্যাত্মিক ও দর্শন বিষয়। আর এই সব কিছু গড়ে ওঠে ছবির নায়ক সিদ্ধার্থকে ঘিরে, যার নামভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন শশী কপূর। নায়িকা ছিলেন সিমি গারেওয়াল। এ ছাড়াও অভিনয় করেন রমেশ শর্মা, পিন্টু কপূর, অমরিক সিংহ, শান্তি হীরানন্দ এবং আরও অনেকে।
সিদ্ধার্থ-এর জন্য উপযুক্ত সুরকারের সন্ধানে ছিলেন রুকস সাহেব। তখন সিমি তাঁকে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের খোঁজ দেন। সিমি হলেন হেমন্তের এক জন বড় ভক্ত। তাঁর গানের প্রচুর রেকর্ড সিমির সংগ্রহে আছে। সিমির সেই জমানো রেকর্ডের সূত্র ধরে পরিচালক পৌঁছে যান হেমন্তের সুরের রত্নখনিতে। হেমন্তের হাতে তুলে দেন সিদ্ধার্থ-এর সুরারোপের কাজ।
ছবির কাহিনি ও চিত্রনাট্য অনুসারে অতীতে হেমন্তের গাওয়া ‘ও নদীরে’ গানটি কাকতালীয় ভাবে মিলে গিয়েছিল। আর গানের সুরটাও কনরাড রুকস-এর খুব পছন্দ হয়। সেই মতো গানটির ইংরেজি অনুবাদ করা প্রয়োজন, এমনটাই মনস্থির করলেন হেমন্ত। কিন্তু পরিচালক আপত্তি জানালেন। তাঁর ইচ্ছা অনুসারে বাংলা ভাষাতেই গানটি হেমন্ত নতুন করে গাইলেন। সঙ্গে সারা ছবি জুড়ে থাকল হেমন্তের অমৃতকণ্ঠে হামিং। এমনকি সিদ্ধার্থের পিতার মুখের ইংরেজি সংলাপ ডাবিং করেছিলেন স্বয়ং হেমন্ত। আর তাঁর সুরে দু’টি ইংরেজি গান গেয়েছিলেন লন্ডনের উদীয়মান গায়ক আর ম্যাকজেল। কিন্তু নিউ ইয়র্কে এক প্রখ্যাত ক্রিটিকের পরামর্শে ছবি থেকে গান দু’টি বাদ দেওয়া হয়। পরিবর্তে একটি সিচুয়েশনে নতুন করে বাংলা ভাষাতেই হেমন্ত গাইলেন ‘পথের ক্লান্তি ভুলে’। অন্য একটি সিচুয়েশনে ‘জয় জগদীশ হরে’ (আনন্দ মঠ, ১৯৫২) রাখার চিন্তাভাবনা ছিল। সঙ্গীত বিষয়ে হেমন্ত সব কাজই লন্ডনে বসে করেছিলেন। লন্ডনের কয়েক জন ভারতীয় যন্ত্রশিল্পীকে নিয়ে এই কর্মযজ্ঞ করেছিলেন তিনি। এই কাজের জন্য তাঁকে দু’বার লন্ডনে যেতে হয়েছিল। গান দু’টির গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের নামও টাইটেল কার্ডে দেখা যায়।
সিদ্ধার্থ এবং হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গাওয়া বাংলা গান দু’টি খুবই সমাদৃত হয়েছিল। ভাষার বাধা ভুলে সুরের ও কণ্ঠের জাদুতে মন্ত্রমুগ্ধ হয়েছিলেন বিদেশিরা। ভারতে এই ছবি কয়েক বছর পর আসে। ছবিতে একাধিক দৃশ্যে নায়িকার নগ্ন শরীর আর নায়কের সঙ্গে যৌনতার কারণে সেন্সর বোর্ডের নিষেধাজ্ঞা ছিল। সেই বাধাও পেরিয়ে ভারতে সিদ্ধার্থ প্রথম দেখানো হয়েছিল দিল্লি ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল-এ বিশেষ শো’তে।
বিশ্বনাথ বিশ্বাস, কলকাতা-১০৫
বিধিনিষেধ
আগামী ৪ নভেম্বর এ বারের দীপাবলি। প্রতি বছরের মতো শব্দবাজির কানফাটা আওয়াজ ও বায়ুদূষণের হাত থেকে বাঁচতে হলে, শব্দবাজি-সহ সমস্ত রকমের বাজির উৎপাদনে প্রশাসনের কড়া বিধিনিষেধ চালু করা আশু প্রয়োজন। না হলে এই করোনা পরিস্থিতিতেও বায়ু ও শব্দদূষণ অব্যাহত থাকবে।
বিপ্লব হালদার, কর্ণজোড়া, উত্তর দিনাজপুর
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy