নিয়মিত লাইব্রেরিতে যাওয়ার অভ্যাস আজও হাতেগোনা পাঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। প্রতীকী ছবি।
রাজ্যে প্রায় ২৪৮০টি গ্রন্থাগারের মধ্যে ১২০০টিরও বেশি বন্ধ হয়ে গিয়েছে কর্মীর অভাবে (‘বিজ্ঞপ্তি সত্ত্বেও ২১ মাস নিয়োগ নেই গ্রন্থাগারে’, ২০-১১)। এ সংবাদ পড়ার পরেও বইপ্রেমীদের মধ্যে বিশেষ হেলদোল জাগবে বলে মনে হয় না। ছদ্ম বইপ্রেমীরাই তো দলে ভারী। কলকাতা পুস্তকমেলায় তাঁরাই রেকর্ড ভিড় জমান, লাইব্রেরিমুখো হওয়ার অভ্যাস যাঁদের নেই বললেই চলে। নিয়মিত লাইব্রেরিতে যাওয়ার অভ্যাস আজও হাতেগোনা পাঠকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। গ্রন্থাগারে কর্মীর অভাবের ঘটনাকে নিশ্চয়ই মেনে নেওয়া যায় না। তবে পাঠকের অভাবে অনেক গ্রন্থাগারই যে এক রকম অচল, তা-ই বা কেমন করে মানা যাবে? সচেতন পাঠকের বড়ই অভাব, আর তা কোনও উপায়েই দূর করা যাচ্ছে না। গ্রন্থাগার আন্দোলন, ‘বইয়ের জন্য হাঁটুন’ ব্যানারশোভিত পদযাত্রা কিংবা গ্রন্থমেলার সংখ্যা বাড়লেই তো আর পাঠকের সংখ্যা বাড়ে না। প্রায় পাঠকহীন গ্রন্থাগার সরকারই বা কত দিন বাঁচিয়ে রাখতে পারে? কাজে বহাল গ্রন্থাগার কর্মীদের মধ্যেও এ নিয়ে উদ্বেগ আছে। বেশ বড় সরকারি লাইব্রেরিতে গিয়ে দেখেছি, সাকুল্যে পাঁচ জন পাঠকও দিনে হাজির হন না।
করণীয় তবে কী? এত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থাকা সত্ত্বেও বইপড়ুয়ারা যে লাইব্রেরিতে আসেন না তার কারণ, পাঠ্যবহির্ভূত বই পড়ার অভ্যাস ভাল ভাবে গড়েই ওঠেনি। বইকে ঘিরে আমরা আজও এক ধরনের উৎসবকেন্দ্রিকতায় মাতি। গ্রন্থাগারের উদ্দেশ্য তবে কী? লাইব্রেরির বই মনের বিচিত্র কৌতূহল মেটায়, সুস্থ মন গড়ে তোলে। বিদ্যা যে শক্তি, এ জ্ঞান প্রাচীন যুগেও ছিল। তা কি তবে উধাও হয়ে গেল! বিশিষ্ট সাহিত্য সমালোচক প্রমথ চৌধুরী ‘সেল্ফ-কালচার’-এর কথা বলতে গিয়ে যে ধরনের লাইব্রেরির কথা বলেছিলেন, তা পুনরায় স্মরণ করা দরকার। “উচ্চশিক্ষার লাইব্রেরি নয়, নিম্নশিক্ষার লাইব্রেরি নয়, দুয়ের মাঝামাঝি গোছের লাইব্রেরি”-র কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি। তাঁর মতে, এ ধরনের লাইব্রেরি পণ্ডিত বানায় না— মানুষ করে তোলে। এই লাইব্রেরির আজও বড়ই অভাব।
শিবাশিস দত্ত, কলকাতা-৮৪
গরহাজির
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট পরীক্ষায় পড়ুয়াদের ব্যাপক গরহাজিরায় উদ্বেগের কথা ব্যক্ত হয়েছে ‘টেস্টে ব্যাপক গরহাজিরায় বাড়ছে উদ্বেগ’ (২১-১১) শীর্ষক প্রতিবেদনে। কিন্তু আমরা কি টেস্ট পরীক্ষার দিনগুলোতে পরীক্ষার হলে এসে বুঝতে পারলাম ছেলেমেয়েরা স্কুলছুট? এ সমস্যা শুরু হয়েছে কোভিড-পরবর্তী স্কুল খোলার পর থেকেই। বিদ্যালয় আসার ক্ষেত্রেই অনীহা তৈরি করেছে মাঝের দীর্ঘ সময়ের বিচ্ছিন্নতা। নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা থেকে এত বেশি দূরে চলে গিয়েছে যে, তাদের বিদ্যালয় ব্যবস্থায় আনতেই বেগ পেতে হচ্ছে। তাই এই পরীক্ষার দিনে নয়, আমাদের মনে হয় আরও আগেই ভাবতে হত।
প্রতিবেদনে প্রশ্ন করা হয়েছে, শিক্ষক নিয়োগ-সংক্রান্ত লাগাতার আন্দোলনের জন্য এই অনুপস্থিতি কি না। দশম ও দ্বাদশের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রেই কি অভিঘাত তৈরি করে ফেলল এই আন্দোলন? মনে হয় কোনও সিদ্ধান্তে আসা ঠিক হবে না। কলেজ ইউনিভার্সিটির ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে এ ধরনের আন্দোলনের প্রভাব পড়তে পারে, বিদ্যালয় শিক্ষার ক্ষেত্রে তা কষ্টকল্পিত।
উৎসশ্রী প্রকল্পে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বদলির বিশেষ প্রভাব পড়ল কি না এই টেস্ট পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে, সে প্রশ্নও উঠেছে। উৎসশ্রীতে গ্রাম থেকে শহরে এসেছেন অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা। তা হলে শহরের স্কুলেও ব্যাপক গরহাজিরা হচ্ছে কেন? এ ব্যাপারে মনে হয় সমীক্ষার আশু দরকার আছে। এ ক্ষেত্রে শিক্ষা দফতরের ‘বাংলার শিক্ষা’ পোর্টাল খুবই সহায়ক তথ্য দিতে পারবে।
ট্যাব কেনার টাকা ঢুকল এই দিন সাতেক আগে। এই সাত দিনের মধ্যে টাকা পেয়েই দ্বাদশের ছেলেমেয়েরা ঠিক করে নিল, তারা পরীক্ষা দেবে না? সেটাও বোধ হয় বাস্তবসম্মত নয়। তা হলে দশমের ছেলেমেয়েরা অনুপস্থিত কেন? তারা তো টাকা পায়নি। কেউ অভিমত দিয়েছেন দশম শ্রেণির ছেলেমেয়েরা কোভিডের জন্য বাইরে কাজে চলে গেছে। আজ যারা দশমের পরীক্ষায় বসছে তারা তো কোভিডের সময় ক্লাস এইটে পড়ত। আর যারা দ্বাদশের পরীক্ষা দিচ্ছে, তারা তখন দশমে। তা হলে নাইন ও ইলেভেন ক্লাসেই তো সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিতি হওয়ার কথা ছিল। নাইন ও ইলেভেনে অনুপস্থিত হলে তারা দশম বা দ্বাদশে উঠল কী করে?
একটা বিশেষ সমস্যা এ বারের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। গত বছর পুরনো সিলেবাসে মাধ্যমিক/ উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা হয়েছিল, এ বার সম্পূর্ণ সিলেবাসে টেস্ট পরীক্ষা হচ্ছে। তাতে তাদের নাজেহাল অবস্থা। উচ্চ মাধ্যমিকের বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়ারা মনে করে, সিবিএসসি বা আইসিএসসি-র তুলনায় তাদের সিলেবাস অনেক কঠিন। এই সামান্য সময়ে তাদের সিলেবাস শেষ করা দুরূহ হয়ে উঠেছে।
জামা-জুতো, বইখাতা, ব্যাগ, মিড-ডে মিল, সাইকেল, কন্যাশ্রী ইত্যাদি নানাবিধ সুবিধে পাওয়ার পরেও বহু ছেলেমেয়ে পড়াশোনায় বিমুখ। তাদের পড়াশোনায় ফেরানোর ব্যাপারে সরকার, বিদ্যালয় এবং পরিবারের সম্মিলিত উদ্যোগের বিশেষ দরকার।
সব্যসাচী ধর, শিক্ষক, সিউড়ি নেতাজি বিদ্যাভবন
ট্যাবের টাকা
কোভিডের সময়ে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকার দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের স্মার্ট ফোন বা ট্যাব কেনার উদ্দেশ্যে দশ হাজার টাকা করে দেওয়ার বন্দোবস্ত করে। নিঃসন্দেহে সেটা ছিল সাধু উদ্যোগ। অফলাইন পড়াশোনা ও পরীক্ষা চালু হলেও, স্মার্ট ফোন বা ট্যাব কেনার টাকা দেওয়ার বন্দোবস্তটা কিন্তু রয়েই গেছে। ‘টেস্টে ব্যাপক গরহাজিরায় বাড়ছে উদ্বেগ’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, বহু স্কুলে দ্বাদশের টেস্ট পরীক্ষায় বেশ কিছু ছাত্র-ছাত্রী অনুপস্থিত, যদিও ট্যাব কেনার টাকা তারা পেয়ে গিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তোতাকাহিনী’ গল্পের একটি লাইন মনে পড়ে গেল। “শিক্ষা যদি নাও হয় খাঁচা তো হইল। পাখির কী কপাল।” আমার পরিচিত সচ্ছল পরিবারের একাদশ শ্রেণির এক পড়ুয়ার স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, ডেস্কটপ, সঙ্গে প্রতি বিষয় পিছু এক জন করে গৃহশিক্ষক আছেন। আগামী বছর দশ হাজার টাকা প্রাপ্তি লাভের কাউন্টডাউন সে এখন থেকে শুরু করে দিয়েছে!
অরিন্দম দাস, হরিপুর, উত্তর ২৪ পরগনা
স্বাগত অডিট
রাজ্য পাতায় ‘মিড-ডে মিল নিয়ে’ (২৬-১১) খবর পড়ে কিছু কথা। বর্তমান অগ্নিমূল্য বাজারে প্রাথমিকে বরাদ্দ ৫ টাকা ৪৫ পয়সা আর উচ্চ প্রাথমিকে বরাদ্দ ৮ টাকা ১৭ পয়সা। যেখানে আমাদের ৩ জন শিশুর মধ্যে ১ জন অপুষ্টিতে ভোগে, সেখানে এই বরাদ্দ কতটা যুক্তিসঙ্গত? অভিজ্ঞতায় দেখেছি, যে সকল বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা কম, অথবা মিড-ডে মিলে উপস্থিতির সংখ্যা বেশি, তাদের সমস্যা বেশি। আগে গ্ৰামের বিদ্যালয় দেখাশোনার জন্য ভিলেজ এডুকেশন কমিটি, শহরের বিদ্যালয় দেখাশোনার জন্য ওয়ার্ড এডুকেশন কমিটি ছিল। বর্তমানে তা নেই। তাই মিড-ডে মিল প্রকল্পে স্বচ্ছতা আনতে সোশ্যাল অডিটের সিদ্ধান্ত যথার্থ। প্রাথমিক ভাবে প্রতি জেলার ২০টি বিদ্যালয়ে হতে চলেছে এই অডিটের কাজ। অডিটের সময়ে খতিয়ে দেখা হবে বিদ্যালয়ের পারিপার্শ্বিক অবস্থা, রান্নাঘর, রাঁধুনি, খাওয়ার জায়গা, স্টোর রুম, পানীয় জলের ব্যবস্থা ইত্যাদি। পাশাপাশি খতিয়ে দেখা হবে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ, খরচ-খরচা ও খাতাপত্র যাচাই। আমার প্রস্তাব, ‘ড্রপ আউট’ ও নাবালিকা বিয়েও আসুক সোশ্যাল অডিটের পরিধিতে।
দীপংকর মান্না, আমতা, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy