Advertisement
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪
CPM

সম্পাদক সমীপেষু: কে গড়বে সরকার

তৃণমূল নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের মার খেয়েও মাঠ ছেড়ে না পালানোর মানসিকতা বিজেপি-বিরোধী তরুণদের নজর কেড়েছে।

শেষ আপডেট: ২০ অক্টোবর ২০২১ ০৪:৩১
Share: Save:

উত্তম সাহা লিখিত, ‘ত্রিপুরায় রাজনীতির নতুন বাঁক’ (২০-৯) শীর্ষক প্রবন্ধে ত্রিপুরার রাজনীতির বর্তমান অবস্থান পুরোপুরি আলোচিত হয়নি বরং একপেশে ভাবে ত্রিপুরায় তৃণমূল দলের অভিযান, শাসক বিজেপি দ্বারা আক্রমণ ও হেনস্থা এবং সেখানে তারা ক্ষমতা দখল করতে পারবে কি না, এই বিষয় আলোচিত হয়েছে। বলা হয়েছে, তৃণমূল নেতৃবৃন্দ ও কর্মীদের মার খেয়েও মাঠ ছেড়ে না পালানোর মানসিকতা বিজেপি-বিরোধী তরুণদের নজর কেড়েছে। তা হলে শাসক বিজেপি দল ফ্যাসিস্ট কায়দায় যে ভাবে সিপিএমের পার্টি অফিসগুলি ভেঙে অগ্নিসংযোগ করেছে, বামপন্থী মানুষজনের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, এবং তা সত্ত্বেও ওখানকার বামমনস্ক মানুষরা যে ভাবে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন, ‘কাজ দাও, ছাঁটাই নয়’ স্লোগান তুলে, রান্নার গ্যাস ও অন্যান্য খাদ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে বিভিন্ন জেলায় বিশাল মিছিল করেছেন, সেগুলিও তাঁদের সাধারণ জনমানসে অত্যন্ত গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে।

বিজেপির জনবিরোধী কার্যকলাপে তাদের জনপ্রিয়তা এখন তলানিতে। বাইরে থেকে আসা তৃণমূল নয়, মাটি কামড়ে পড়ে থাকা সিপিএমই ত্রিপুরার প্রধান বিরোধী দল। তা ছাড়া জনজাতি জনগোষ্ঠীর দলও ওই এলাকার স্বশাসিত পরিষদ দখল করেছে। বর্তমানে ত্রিপুরায় সিপিএমের শীর্ষ পদে রয়েছেন ওখানকার জনজাতি নেতা জিতেন্দ্র চৌধুরী। শুধু তৃণমূলকে রুখতে নয়, সিপিএমের বিশাল মিছিল, আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দেওয়ার জন্যই শাসক দলের আবেদনে করোনাকে কারণ দেখিয়ে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত হাই কোর্ট মিটিং-মিছিল বন্ধ রাখতে নির্দেশ দিয়েছে। কাজেই ত্রিপুরায় ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে জনজাতি দল, সিপিএম, জনমনে কিছুটা জায়গা দখল করে থাকা তৃণমূল ,অথবা পেশিশক্তির দ্বারা আবার বিজেপি— এদের মধ্যে কে সরকার গড়বে, তা বলার সময় এখনও আসেনি।

শিখা সেনগুপ্ত

কলকাতা-৫১

নয়া মোড়

অনিন্দিতা ঘোষালের “এ বার আবার ‘খেলা’” (৮-১০) শীর্ষক প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে আমার এই পত্র। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ ত্রিপুরার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একটি নয়া মোড় আনতে সক্ষম হয়েছে। প্রবন্ধকার বলেছেন, ২৫ বছরের বাম শাসনের অবসান ঘটেছে। বলেননি, উত্তর-পূর্ব ভারতেও বিজেপির প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। এটাই নয়া মোড়, যা বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছে। যে কোনও রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট রাজ্যটির নাগরিকই ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন, ত্রিপুরার ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হয়নি। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় থাকলে ‘ইনকামবেন্সি’ একটি ভূমিকা পালন করে বটে, তবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী-সহ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ত্রিপুরা রাজ্যকে পাখির চোখ করা বিস্ময়ের উদ্রেক করে বইকি! নির্বাচনের প্রারম্ভে তাই নিত্যনতুন চমক ও প্রতিশ্রুতি দিতে তাঁরা কুণ্ঠিত হননি। সেই সব প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন করা থেকে অনেক দূরে এখন ত্রিপুরার রাজনীতি। সেখানে এখন আস্ফালন আর ক্ষমতা প্রয়োগের দাপাদাপি। গণতন্ত্রের পরিপন্থী হলেও যা আধুনিক রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। ইতিপূর্বে ওই রাজ্যে যাঁরা ক্ষমতাসীন ছিলেন, তাঁরাও বিরোধী দলকে দাঁত ফোটাতে দেননি।

আগেই উল্লেখ করেছি, ত্রিপুরার জনগণের পূর্ণ সমর্থন ছিল বলেই বিজেপি আজ ক্ষমতায়। বাকিটুকু আরএসএস-এর কৌশল। ২০১৮ সালের পর ত্রিপুরার মানুষ আর ভোট দিতে যেতে পারেননি। এমনটাই তো হওয়ার ছিল, যা সিপিএম বা অন্য কোনও বিরোধী দলের পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব হয়নি। যত দূর জানি, ত্রিপুরার বেশির ভাগ অংশ জনজাতি অধ্যুষিত এবং পার্বত্য অঞ্চলের মধ্যে পড়ে। সীমান্ত-লাগোয়া সেই সব অঞ্চলে নিভৃতে সংগঠন মজবুত করেছে আরএসএস। নিজেদের বুদ্ধিমান ও সর্বজ্ঞানী ভাবা সিপিএম ঘুণাক্ষরেও তা টের পায়নি। তারা কংগ্রেসকে প্রতিপক্ষ মনে করে পঁচিশ বছর ছায়ার সঙ্গে যুদ্ধ করে আজ রাজ্যছাড়া। জায়গা নিয়েছে ‘খেলা হবে’ স্লোগান দেওয়া রাজনৈতিক দলটি।

আদৌ খেলা হবে কি না, তা এখনও পর্যন্ত বলার অবকাশ আসেনি। তবে, পশ্চিমবঙ্গের মাঠের চেয়ে যে ত্রিপুরার পার্বত্য ময়দানে খেলা অনেক কঠিন, তা নবাগত রাজনৈতিক দলকে মনে রাখতে হবে। বিজেপির আইটি সেল অনেক বেশি কার্যকর। তারা কৌশলে জনগণের সমবেদনা আদায় করতে পারে। তাই আজ তারা ক্ষমতায়। এক বার কোনও রাজ্যের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে পরের নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ার অতীত ইতিহাস বিজেপির নেই, যা আত্মবিশ্বাসী করেছে সর্বভারতীয় দলটিকে। ত্রিপুরার জনগণের সমবেদনা আদায় করে শুধু ‘খেলা হবে’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে বিশেষ কিছু লাভ হবে বলে মনে হয় না। চাই সংগঠন, চাই বিনিয়োগ, চাই জনগণের বিশ্বাস অর্জন। তার জন্য যে তৎপরতা প্রয়োজন, মাত্র তিন বছরের মধ্যে তার বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব।

সবশেষে বলা যায়, খাতায়-কলমে ত্রিপুরার একমাত্র বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের কাছে অনুরোধ, গণতন্ত্রের কথা শুধুমাত্র মুখে নয়, সবার জন্য উন্মুক্ত না করলে পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা-সহ সব রাজ্যেই সাইনবোর্ড হয়ে যেতে হবে।

রাজা বাগচি

গুপ্তিপাড়া, হুগলি

নেশায় বুঁদ

‘প্রথম আদি তব ভ্রান্তি’ সম্পাদকীয়তে (৫-১০) ৩৪ বছরের সিপিএম শাসন তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ার কারণ হিসেবে যথার্থ ভাবে অপদার্থতা, নির্বুদ্ধিতা এবং অহঙ্কারের ত্র্যহস্পর্শের উল্লেখ করা হয়েছে। দীর্ঘ কংগ্রেসি অপশাসন, জরুরি অবস্থা প্রভৃতির কারণে রাজ্য জনমনে কংগ্রেস-বিরোধিতা প্রকট হয়ে উঠেছিল। এই পরিস্থিতিতেই ক্ষমতায় বসেছিল সিপিএম ফ্রন্ট সরকার। বিরোধী হিসাবে কংগ্রেস ছিল অত্যন্ত দুর্বল। এসইউসিআই নানা বিষয় নিয়ে লাগাতার আন্দোলন করলেও তার তেমন প্রচার ছিল না। এই অবস্থায় ফ্রন্ট হয়ে উঠেছিল একমেবাদ্বিতীয়ম্। এই পরিস্থিতিকেই সিপিএম নেতারা তাঁদের ঐতিহাসিক সাফল্য হিসাবে প্রচার করেছিলেন। কিছু বামপন্থী স্লোগান জোর গলায় আওড়ানোর ফলে শোষিত মানুষের একটা অংশ মনে করেছিলেন, এটা বুঝি তাঁদের সরকার। শিক্ষিত একটা অংশেরও মনে হয়েছিল, এটা বোধ হয় প্রগতিশীল সরকার। এই পরিস্থিতিতে সিপিএম নেতারা নিজেদের ‘সর্বজ্ঞ’ হিসাবে তুলে ধরার সুযোগ পেয়েছিলেন। দলের নেতৃত্বের এই ভাব নীচতলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল এবং কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে অদ্ভুত যান্ত্রিকতার জন্ম দিয়েছিল। এই যান্ত্রিকতাই ‘কারও কথা শুনব না’, ‘কারও থেকে কিছু শিখব না’ মনোভাবের জন্ম দেয়। ফলে জনগণ কী ভাবছে, দল সম্পর্কে তাঁদের মনোভাব কী, এ সব জানার, বোঝার ইচ্ছেটাই গোটা দল থেকে চলে গিয়েছিল। সেই ভাবনা থেকে দলের নেতাকর্মীরা আজও মুক্ত হতে পারেননি। তাই যে কংগ্রেসকে নেতারা চিরকাল জনগণের শত্রু বলে এলেন, তার সঙ্গেই জোট করলেন। বিজেপি এবং রাজ্যের শাসক দল সম্পর্কে মানুষের মনোভাব কী, তা বোঝার কোনও রকম চেষ্টা না করেই বিজেমূলের কল্পিত তত্ত্ব খাড়া করলেন এবং কর্মীরা তা প্রচার করতে নেমে পড়লেন।

দীর্ঘ ৩৪ বছরের রাজত্ব গোটা দলের মধ্যে একটা শাসকের, রাজার মনোভাব গড়ে তুলেছিল। তার পর এক দিন যখন হঠাৎ ক্ষমতা চলে গেল, দলের নেতা থেকে কর্মীদের মনোভাবটা হল, তাঁদের হারিয়ে দিয়ে রাজ্যের মানুষ ভীষণ রকমের একটা অন্যায় করেছেন, এবং এর দ্বারা জনগণ তাঁদের নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছেন। তাঁরা শাসকের মনোভাব নিয়েই চলতে থাকলেন। আসলে শাসন করার একটা নেশা থাকে। লক্ষ্য যদি স্পষ্ট না থাকে, তবে দীর্ঘ শাসনকালে সেই নেশা বেশ পেকে ওঠে। শাসকের সেই পাকা নেশাতেই সিপিএম আজও বুঁদ হয়ে রয়েছে।

সমর মিত্র

কলকাতা-১৩

অন্য বিষয়গুলি:

CPM Tripura BJP TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy