উত্তম কুমার, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ভ্রান্তিবিলাস ছবির একটা অংশে মেলায় পুতুলনাচের মাধ্যমে পুরাণের অহল্যার কথা তুলে ধরার দৃশ্য অনেকেরই মনে আছে নিশ্চয়ই। এ ছাড়াও বিশিষ্ট অনেক লেখকের গল্পে এই পুতুলনাচ বা পুতুলের বিয়ে দেওয়ার কথা পাওয়া যায়। অথচ, এই ইন্টারনেট সর্বস্ব যুগে পুতুলনাচের কদর তলানিতে এসে ঠেকেছে।
পুতুলনাচের ইতিহাস খুবই ঐতিহ্যময়। প্রাচীন কালে ধর্ম প্রচারের জন্য পুতুলনাচের সাহায্য নেওয়া হত বলে কথিত আছে। মানুষের কাছে এক জীবন্ত প্রতিকৃতি হয়ে সব সময়ে ধরা দিয়ে এসেছে বলেই এই শিল্পের গ্রহণযোগ্যতাও আকাশছোঁয়া ছিল। সুকুমার সেনের একটি লেখাতে পাওয়া যায়, চৈতন্য-পূর্ব বড়ু চণ্ডীদাস রচিত ‘শ্রীকৃষ্ণকীর্তন’ পালাটি ছিল একটি পুতুল নাটকের পাণ্ডুলিপি। এত রঙিন ইতিহাসমণ্ডিত হয়েও এই পুতুলনাচ শিল্পের অবনমন আক্ষেপজনক।
অথচ, এতটাও দুর্দশা হওয়ার কথা নয় এই শিল্পের। কারণ, কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে প্রতি বছর বাজেটে এই প্রাচীন শিল্পের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু আধুনিক দলগুলির দুর্নীতির কারণে গ্রামীণ প্রান্তিক দলগুলি সেই অর্থের অনেকাংশ থেকে ব্রাত্য হয়ে থাকে। অতএব বলাই যায়, পরিকাঠামোগত ভাবে অনুন্নয়ন তো রয়েছে এই শিল্পে। তবে এটাও অস্বীকার করা যায় না যে, আধুনিকতা আত্মস্থ করার বিষয়েও এই শিল্পের সনাতন দলগুলি বেশ অনড় থাকায় এর উন্নতিসাধনে ব্যাঘাত ঘটছে।
আক্ষেপের বিষয়, মণিপুর, রাজস্থান-সহ বেশ কিছু রাজ্যে এই শিল্পের ঐতিহ্য শুধু বজায়ই থাকেনি, একে কেন্দ্র করে রুজিরুটিও নির্ধারণ করে থাকেন বহু মানুষ। দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক এই নাচ দেখা ও জানার নেশায় ছুটে আসেন। তাতে একাধারে এই ঐতিহ্য যেমন বিশ্ববন্দিত হয়, তেমনই সে সব রাজ্যে পর্যটনশিল্পেও জোয়ার আসে।
তাই সমস্ত দিক বিবেচনা করে এই প্রাচীন শিল্পের প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকারেরও নজরদারি আবশ্যক। একটা সময়ে যে শিল্প বিশ্ববন্দিত হয়ে এসেছে, তার অবক্ষয়ের কারণগুলি বিশদে জেনে তাকে রক্ষা করার দায় সরকারেরই। ভবিষ্যতে এই শিল্পের মাধ্যমেও অর্থনীতিতে জোয়ার আসবে— এই ভাবনা নিয়ে তাদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করা উচিত।
শুভজিৎ বসাক
কলকাতা-৫০
সঙ্কটে গ্রন্থাগার
করোনার তৃতীয় ঢেউ অনেকটা স্বাভাবিক হতে যানচলাচল-সহ প্রথম শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস চালু করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও এক অজ্ঞাত কারণে প্রায় কোনও গ্রন্থাগারের দরজাই এখনও সপ্তাহে তিন দিনের বেশি খুলছে না। তা ছাড়া এখানে কর্মীর তীব্র অভাব নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে চর্চা চলছে। সেই নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও ইতিবাচক উদ্যোগ লক্ষ করা যায়নি। তার উপর অর্থাভাবে এ বছর গ্রাম-শহর নির্বিশেষে কোনও গ্রন্থাগারকেই বই কেনার জন্য অর্থ দেওয়া হয়নি।
এই অবস্থায় বই পড়ার বাইরে গ্রন্থাগারের সদস্যদের মানসিক ও আত্মিক বিনোদনের জন্য কোনও ধরনের অনুষ্ঠানের কথা ভাবা এখন স্বপ্নের অতীত। কর্মীর অপ্রতুলতা ও অর্থাভাবের ফলে গ্রামাঞ্চলে কোনও কোনও গ্রন্থাগার বন্ধও হয়ে গিয়েছে। শিক্ষার বিস্তার এবং মানুষের মানসিক উন্নতির জন্য গ্রন্থাগারের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। তা সত্ত্বেও রাজ্যের সমস্যা-জর্জরিত গ্রন্থাগারগুলি ক্রমশ অচলাবস্থার সম্মুখীন হচ্ছে। এই প্রবণতা বন্ধ করে অবিলম্বে গ্রন্থাগারের সার্বিক উন্নতিসাধনে ইতিবাচক পদক্ষেপ
করা প্রয়োজন।
প্রদ্যোৎ পালুই
বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া
মুদ্রায় শঙ্কা
‘আশঙ্কা জালিয়াতি’ শীর্ষক চিঠিতে (সম্পাদক সমীপেষু, ২৮-২) কুমার শেখর সেনগুপ্তের মতে, ক্রিপ্টোকারেন্সিতেও অর্থ লোপাট বা জালিয়াতির সম্ভাবনা আছে, তাই ডিজিটাল মুদ্রায় বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া জরুরি। এই গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ বার বার প্রচার হওয়া দরকার, যাতে অন্তত নিরীহ সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অর্থ লোপাট না হয়ে যায়। অথচ, এই সঞ্চয় সবচেয়ে সুরক্ষিত কোথায় থাকবে, সেই চিন্তায় এখন
জেরবার মানুষ।
পত্রলেখকের মতে, “রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের ছাড়া ক্রিপ্টোকারেন্সি (সম্ভবত সামনের বছর বাজারে আসবে) একমাত্র সরকার অনুমোদিত ডিজিটাল মুদ্রা। বাকি মুদ্রাগুলির গ্যারান্টি কেউ দেবে না।” এখন তো সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কেও সাধারণ গ্রাহকের আমানত ১০০ শতাংশ সুরক্ষিত নয়। ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হলে ৫ লক্ষ টাকার বেশি মিলবে না, সে আপনার যতই আমানত থাকুক না কেন ব্যাঙ্কে। এই অবস্থার কারণ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অনাদায়ি ও খেলাপি ঋণ এবং জালিয়াতি-জনিত বিশাল ক্ষতি। সাধারণ ভাবে ফি বছর ব্যাঙ্কের লাভের একাংশ দিয়ে এই ঋণ মকুব হতে থাকে। তা সত্ত্বেও সাধারণ ভাবে অনাদায়ি ঋণ ২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি। এর সঙ্গে যোগ করতে হবে জালিয়াতি। মেহুল চোক্সি, নীরব মোদীর জালিয়াতি তুচ্ছ হয়ে গিয়েছে গুজরাতের জাহাজ নির্মাণ সংস্থার প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার জালিয়াতির কাছে, যা ভারতের ইতিহাসে বৃহত্তম ব্যাঙ্কিং কেলেঙ্কারি। সব ঘটছে কেন্দ্রীয় অর্থনীতির নাকের ডগায়। সুতরাং, আগামী দিনে রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের সরকার অনুমোদিত ক্রিপ্টোকারেন্সিও কী ভাবে, কতটা সুরক্ষিত থাকবে, তার গ্যারান্টি প্রশ্নের মুখে থেকে যাচ্ছে।
আগে সুদ, ডিভিডেন্ড, মাইনে, মুনাফা বাবদ সামান্য টাকায় জীবন চলে যেত। এখন বাজারে জিনিসপত্রের দাম, মুদ্রাস্ফীতি বেড়েই চলেছে। ফলে সংসার চালাতে যে কোনও ভাবে বেশি রোজগার করতে হচ্ছে। সেখানেই জেরবার মানুষের চাহিদা পরিণত হচ্ছে ‘লোভ’-এ। বাধ্য হয়ে অজস্র ঝুঁকির চোরা ফাঁদে পা দিচ্ছে মানুষ।
এত দিন অর্থ মুদ্রা রূপে ছোঁয়া যেত, পকেটে থাকলে নিশ্চিন্তি। সেই অর্থই অদৃশ্য রূপ ধারণ করে হয়ে গিয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি। ক্রিপ্টো শব্দের অর্থ গুপ্ত। কারেন্সি গুপ্ত হয়ে যাচ্ছে ০ আর ১, এই দুই বাইনারি চাবিকাঠিতে। এখানে সরকারি বা অসরকারি, কোনও ভেদ থাকবে কি না সন্দেহ। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে কাজ করার সূত্রে দেখেছি ব্যাঙ্কে লেজ়ারের বদলে কম্পিউটারাইজ়েশনের পর সাধারণ মানুষের মনে সন্দেহ হয়েছিল, তার সঞ্চয় ঠিকঠাক থাকবে তো? সরকারি বা অসরকারি, যা-ই হোক, ভাল করে জেনে-বুঝে, যাচাই করে তবেই বিনিয়োগ করা উচিত। এ দিকে, খোলাবাজারে বিনিয়োগ বিষয়ে সরকারি বিধি মোতাবেক বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ এত ক্ষুদ্র যে পড়া যায় না, এত দ্রুত বলা হয় যে তা শুনে বোঝা যায় না। ফলে এক বার অর্থ খোয়া গেলে যাবতীয় দায় বিনিয়োগকারীরই।
শুভ্রাংশু কুমার রায়
চন্দননগর, হুগলি
অসৎ আঁতাঁত
‘বেআইনি নির্মাণে দোষ নয় কাউন্সিলরের’ (২৭-২) খবরটি পড়ে বুঝতে পারলাম মেয়র ফিরহাদ হাকিম চোখ খুলে ঘুমোন। বহু বছর ধরে কোনও নির্মাণকার্যে একটি ইট ফেলতে গেলেও রাজনৈতিক নেতাদের থেকে অনুমতি নিতে হয়। বাম আমল থেকেই এটি বাংলার সংস্কৃতি। মেয়র এ বিষয়ে অবহিত নন, এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? তা-ও যদি ধরে নেওয়া হয় বেআইনি নির্মাণের জন্য বিল্ডিং ডিপার্টমেন্ট ও পুলিশ দায়ী, সে ক্ষেত্রেও মেয়র দায় এড়াতে পারেন কি? তাঁর মেয়াদে তিনি ক’জন বিল্ডিং বিভাগের কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা করেছেন কিংবা সংশ্লিষ্ট থানার আধিকারিকদের বিরুদ্ধেই বা কী ব্যবস্থা করা হয়েছে? বেআইনি বাড়ির রমরমা কেন বর্তমান আমলে এত বাড়ছে? আসলে বিল্ডিং দফতর, পুলিশ ও কাউন্সিলর মিলে তৈরি হয়েছে এক অসৎ আঁতাঁত!
বলাই কাঞ্জিলাল
কলকাতা-৮৪
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy