বাইরে শীতের আমেজ, আর ঘরের মধ্যে নারকেল-নতুন গুড়ের সুঘ্রাণ। আজ পৌষ সংক্রান্তি। নানা ধরনের পিঠেপুলি খাওয়ার সময়। পাটিসাপটা, চিতই পিঠে, আস্কে পিঠে, তেলের পিঠে, কাঁকন পিঠে, পাকন পিঠে, গোকুল পিঠে, ভাপা পিঠে, দুধপুলি, নোনতা পিঠে— পিঠের তালিকা শেষ হওয়ার নয়। সঙ্গে নতুন গুড়ের পায়েস। এর স্বাদই অনবদ্য।
মনে পড়ে সেই ছোটবেলার দিনগুলোর কথা। ঠাকুমা নিজে হাতে চসি বানাতেন, রোদে শুকোতেন, কোনও পাখি যাতে মুখ না দেয়, তার জন্য ঠায় রোদে বসে পাহারা দিতেন। তার পর বিকেল থেকেই শুরু হত পিঠে বানানোর তোড়জোড়। সারা বাড়ি পিঠে আর পায়েসের গন্ধে ম ম করত। এখন সময় বদলেছে। পিঠে বানাতে আমি ভালবাসি। যদিও খুব একটা পারি না। পাটিসাপটা, দুধপুলি, মালপোয়ার সঙ্গে পায়েস। এটুকুই রপ্ত করতে পেরেছি।
আমরা এখন অনেক বেশি স্বাস্থ্য-সচেতন। অনেকেই শীতকালে পিঠে খাওয়ার কথা ভাবতেই পারেন না। এখন দোকানে স্বাস্থ্য-সচেতন ভোজনরসিকদের জন্য পাওয়া যাচ্ছে বেকড পাটিসাপটা, সয়া-আমন্ড পাটিসাপটা, ওটস পাটিসাপটা, আরও কত কী। শহরের বিভিন্ন মিষ্টির দোকানে এখন পিঠের জন্যই আলাদা কাউন্টার। শুধু কী তা-ই, শীতকালে পিঠের মেলাও শুরু হয় নানা পাড়ায়।
তবে বর্তমান দিনে ব্যস্ততার জীবন, যান্ত্রিক জীবন। সারা দিন কর্মব্যস্ততার পরে বাড়ি এসে আর পিঠে বানানোর ইচ্ছে থাকে না। রেডিমেড খাদ্যের সুবিধা আরও আমাদের অলস বানিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়াও আজ ঘরে ঘরে শুগার, কোলেস্টেরল, গ্যাসট্রিক, অ্যাসিডিটি, ফ্যাটি লিভার ইত্যাদি রোগ উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। তাই আজ পৌষপার্বণে পিঠে বানানোর রেওয়াজটাও ফিকে হয়ে যাচ্ছে। এই সমস্ত চিন্তা করেই বোধ হয় নারকেল, গুড়, গোবিন্দভোগ চালের বদলে এসেছে ওটস, সয়া, আমন্ড ইত্যাদি। এতে স্বাস্থ্যও ঠিক থাকবে আবার পিঠে খাওয়াও হবে। কিন্তু এটাও ঠিক, ওই সুগন্ধি নলেন গুড়, গোবিন্দভোগ চাল, নারকেল ইত্যাদি সহযোগে তৈরি পিঠের স্বাদ-গন্ধই আলাদা।
পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় চক্রবর্তী
হাকিমপাড়া, শিলিগুড়ি
উৎসবের পৌষ
পৌষ সংক্রান্তিতে পিঠেপুলির বিষয়টা এখন অনেকটাই নিয়মরক্ষার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে আগ্ৰহ হারিয়েছেন অনেকে। আগে গ্ৰামগঞ্জে এর প্রস্তুতি লক্ষ করা যেত ভীষণ ভাবে, সেখানেও এখন হারিয়েছে তার জৌলুস। এই উৎসব মূলত নতুন ধানকে কেন্দ্র করেই। নতুন ওঠা ধানের চালে নবান্ন। পিঠে-পায়েস, লক্ষ্মীর আরাধনায় সের মেপে ধান, বাউনি। শিষ-সহ ধানে বিশেষ আদলে লক্ষ্মীর প্রতীক। গোলাভরা ধানে ধনদেবতাকে আবাহন, আলপনা নানা উপচারের। তার প্রস্তুতি চলত পনেরো দিন আগে থেকেই। কৃষিভিত্তিক জীবনে এই উৎসব ছড়িয়ে রয়েছে আমাদের এই বঙ্গজীবনে। সেখানে গ্ৰাম-শহর মিলেমিশে একাকার। কিন্তু বর্তমানে কোথায় সেই পৌষের নতুন ওঠা ধান! বিস্তীর্ণ আমন ধানের মাঠ অনাবাদি, নেই নতুন ওঠা ধান। কাজেই সেই উন্মাদনা হারিয়েছে, তবুও আছে নিয়ম। আর তার জন্যই বোধ হয় পৌষ মাসে পিঠেপুলি। আর তা কত নামের। যেমন আছে পুলিপিঠে ভাপা, আস্কে, সরু চাকলি, গুড় পিঠে, দুধপুলি, পাটিসাপটা ইত্যাদি যার মূল উপাদানই চালগুঁড়ির আটা। অথচ, প্রতিটার স্বাদ-গন্ধের ভিন্নতা। তাতেই বোঝা যায়, রসনা তৃপ্তিতে পৌষের ভূমিকা। বুঝিয়ে দেয়, পৌষ কত সুন্দর।
কিন্তু এই পিঠে তৈরিতে লাগে দক্ষতা, পরিশ্রম ও ধৈর্য। সেই জন্যই বোধ হয় অনেকের অনীহা। সেই জন্যই কি বিভিন্ন মেলা উৎসবে দেখা যায় পিঠেপুলির স্টল? আগে দেখতাম, মা-জেঠিমারা চাল ভিজিয়ে আবার খানিক শুকিয়ে শিলে গুঁড়োতেন সেই চাল, শিলনোড়ার সেই দিন আর নেই। শিলনোড়াতে চাল গুঁড়ো করার শব্দ আর পাওয়া যাবে না। এখন সহজেই বাজারে মেলে বস্তাবন্দি, নয়তো ব্র্যান্ডেড কোম্পানির চালগুঁড়ির প্যাকেট। এখন তো রেশনে বিনামূল্যে চাল, অনেকেই সেই চাল গমকলে গুঁড়িয়ে সহজেই বানিয়ে নিচ্ছেন চালের আটা। তাতেই চলছে পিঠেপুলি উৎসব। আর এই পিঠে উৎসবে মাটির তৈরি পিঠে বানানোর সেই পাত্রও হারিয়ে গিয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন পিঠে তৈরির যে মৃৎপাত্র, তা মেলা থেকে নানা জায়গায় বিক্রি হত, ভাপা, সেঁকা, পোড়ার জন্য নানা আদলের মাটির পাত্র। এগুলো এখন সেকেলে। এখন শৌখিন ধাতব পাত্র। তাই মার খাচ্ছে এই ধরনের মৃৎশিল্প।
সনৎ ঘোষ
খালোড়, হাওড়া
নিয়মের মেলা
করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ঝড়ের গতিতে বেড়ে চলেছে। তার মধ্যেই শুরু হল গঙ্গাসাগর মেলা। এই মেলা এ বছর শুরু হওয়া ঠিক কি না, তা নিয়ে চলছে বিতর্ক। ইতিমধ্যেই খবরে উঠে এসেছে ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের বেশ বড় সংখ্যক ডাক্তার, নার্স ও চিকিৎসা কর্মী আক্রান্ত। মেলার শুরুর আগেই এত সংখ্যক চিকিৎসক আক্রান্ত হওয়া মেলা আয়োজনের উপর প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার শেষ প্রান্তে সাগর মেলায় পৌঁছনোর আগে কলকাতা থেকে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে আসতে হয়। পথিমধ্যে যে বিশ্রামের স্থান, সেখানে স্থানীয় মানুষ ও বাইরের রাজ্য থেকে আসা পুণ্যার্থীদের মেলামেশায় যে সংক্রমণ ছড়াবে না, তা বলা সম্ভব নয়। জনস্বার্থে করা মামলায় মহামান্য হাই কোর্ট শর্তসাপেক্ষে মেলার অনুমোদন দিয়েছেন, যেখানে মুখ্যসচিব, বিরোধী দলনেতা ও মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়ে ৩ সদস্যের কমিটির নজরদারিতে মেলা চলবে। কোভিড স্বাস্থ্যবিধিকে মান্যতা ও মেলার সমস্ত নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, তা কমিটির নজরে থাকবে। যদি কোভিড স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘিত ও নিয়ন্ত্রণ হাতের বাইরে চলে যায়, তবে কমিটি জনস্বার্থে এই মেলা বন্ধের প্রস্তাব দিতে পারে রাজ্য সরকারকে।
কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছু প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে। যেমন— সাগরমেলার ৫ লক্ষ পুণ্যার্থীর মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কতটা সম্ভব। ২) মাস্ক পরা যেখানে মেলায় আসার প্রধান শর্ত, সেখানে সংবাদে উঠে এসেছে মাস্কবিহীন সাধুসন্তদের ছবি। মূল মেলা এলাকায় এঁরা সবাই সারা ক্ষণ মাস্ক পরে থাকছেন কি? ৩) বিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকরা যেখানে বার বার বলছেন বড় জমায়েত এড়িয়ে চলতে, সেখানে গঙ্গাসাগরের মতো কয়েক লক্ষ জমায়েতে করোনাবিধি ১০০ শতাংশ মানা সত্যিই কতটা সম্ভব, যেখানে সামান্য হাটেবাজারে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে ও মাস্ক পরতে অনুরোধ জানিয়ে এখনও মাইক হাতে প্রশাসনকে প্রচার করতে হচ্ছে। ৪) যে মেলা মিলনমেলা না হয়ে নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ, তার আয়োজন কি খুব দরকার ছিল? জীবনের জন্যই মেলা। সেই জীবন যখন টালমাটাল, বিপর্যস্ত, তার থেকে যদি পুণ্যার্থীরা নিজেদের সরিয়ে রাখতেন, অসুবিধা কী ছিল?
দেবদূত মণ্ডল
নূরপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
নির্লজ্জ কেন
‘গাছতলায় নামতা পড়ালেন শিক্ষক’ (৭-১) প্রসঙ্গে দু’-একটি কথা। সংবাদে প্রকাশিত শিক্ষক ইন্দ্রনীলবাবুর উদ্যোগ ও চেষ্টাকে সম্পূর্ণ সমর্থন করি। তাঁর ভাবনাকে কুর্নিশ। কিন্তু তাঁর বক্তব্যে ব্যবহৃত ‘...নির্লজ্জের মতো বেতন নেব?’ বাক্যবন্ধনীর প্রতি তীব্র প্রতিবাদ করছি। শিক্ষক-শিক্ষিকারা ইচ্ছা করে ‘নির্লজ্জ’ হয়ে চুপ করে বসে নেই। সরকারি সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্কুল বন্ধ। সেখানে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কোনও হাত নেই। তাঁদের মধ্যে থেকেও অবিলম্বে স্কুল খোলার দাবি উঠেছে। প্রসঙ্গত, শিক্ষক শিক্ষিকারা কিন্তু প্রতি মাসে মিড-ডে মিল-সহ অন্যান্য অফিশিয়াল কাজে স্কুলে গিয়েছেন। করোনাকালেও এই কাজ বন্ধ হয়নি। সমাজের তির্যক মন্তব্য শুনেও (যা এখনও শুনতে হয়) তাঁরা নিজের কাজটি করে গিয়েছেন। এর পরেও ‘নির্লজ্জের মতো বেতন নেব?’— কথাটি মানতে পারলাম না।
অরিন্দম সন্ন্যাসী
কৃষ্ণনগর, নদিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy