গত দু’বছরে সমাজমাধ্যম খুললেই চোখে পড়েছে কচিকাঁচাদের আবৃত্তি, গান, আঁকা ইত্যাদি। এগুলি তাদের ঘরে বসে করা কাজের ছবি। যদিও আর একটা শ্রেণিও আছে। নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন ‘সূর্যালোক এবং অন্যান্য ভয়’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছিলেন— “এ বিশ্বে এমন অনেক শিশু আছে যারা শুধুমাত্র রাতের অন্ধকারকে ভয় পায় না। ভয় পায় রোদ ঝলমলে দিনকেও। কারণ সেই দিনের শুরু হয় খাবার ছাড়া, আবার রুগ্ণ শরীর নিয়ে দিনযাপনের কথা ভেবে।”
বিদ্যালয় শিক্ষার বিকল্প হিসাবে অনলাইন পঠনপাঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছিল অতিমারির প্রথম থেকেই। যদিও সেটা যে সাময়িক বিকল্প, দীর্ঘমেয়াদি নয়, তা সময়ের সঙ্গে বোঝা গিয়েছে। নব্য উদারবাদমুখী বর্তমান সামাজিক কাঠামোতে স্কুলকে শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর সহপাঠীদের সঙ্গে আদানপ্রদানের জায়গা হিসাবে না দেখে, দক্ষ শ্রমিক তৈরির উপায় হিসাবে দেখা হয়। সে পন্থা কতটা যথার্থ, সেই প্রশ্ন সরিয়ে রাখলেও বলা যায়, অনলাইন শিক্ষায় সামাজিক বৈষম্য আরও প্রকট হয়েছে। এক শ্রেণি ঘরে বসে ক্লাস করেছে। আর এক শ্রেণি মোবাইল-ট্যাব-ডেটাপ্যাক-বিদ্যুৎ, উপযুক্ত পরিকাঠামো, এগুলির অভাবে এই বিকল্প পদ্ধতিতে ব্রাত্য রয়ে গিয়েছে। উপযুক্ত পরিকাঠামো, সরকারি উদ্যোগ, বিনিয়োগ থাকলে তাও এই অনলাইন মাধ্যমে ছাত্রদের অনেকটা লাভ হতে পারত। যদিও উপেক্ষিত থেকে যেত শিশুদের পরিণত দৃষ্টিভঙ্গি গঠন। ফলত জরুরি ছিল একটা বিকল্প শিক্ষাদানের ব্যবস্থা খোঁজা। সরকার যদিও পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করছে, তবুও প্রশ্ন উঠবে ‘দেরি হয়ে গেল না তো?’ এই ব্যবস্থা আগেই নেওয়া যেত।
অতি দ্রুত সমস্ত শ্রেণির জন্য স্কুল খুলে দেওয়া দরকার অবশ্যই। তবে বিকল্প একটা ব্যবস্থাও ভেবে রাখা এবং প্রয়োজনে যাতে তা বাস্তবায়িত করা যায়, তার জন্য চিন্তা করা জরুরি। চতুর্থ ঢেউ এলেও কি আবার স্কুল বন্ধ রাখতে হবে? এমন কী ব্যবস্থা করা যায়, যাতে শিক্ষাকে ছাত্রছাত্রীর দুয়ারে নিয়ে আসা যেতে পারে? পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষালয় স্থাপন হোক অথবা অনলাইন ব্যবস্থার উন্নতি, কী ভাবে এর পর নির্বিঘ্নে শিক্ষা প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর কাছে পৌঁছে দেওয়া যায়, তা এখন থেকেই ভাবা দরকার। প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের মানসিক স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখাও অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষা এবং মানসিক স্বাস্থ্যের অধিকার প্রতিটি শিশুর প্রাপ্য। স্কুল খুললে সংক্রমণ বাড়তে পারে, তাই হাসপাতালে পরিকাঠামো তৈরি রাখা, কোভিড বিধি মেনে মেলামেশা করার ব্যাপারে খেয়াল রাখাও দরকার।
সুমন চক্রবর্তী
বেঙ্গালুরু
সবার জন্য
সুমন সেনগুপ্তের প্রবন্ধ ‘এ বার দুয়ারে আসুক শিক্ষা’ (ই-সংস্করণ, ২৭-১) পড়ে মনে হল, সত্যিই তো সরকার ‘দুয়ারে সরকার’ প্রকল্প করায় দূরের অফিস-কাছারি গিয়ে যে কাজ করতে হত, তা বাড়ির অদূরে গিয়ে করা যাচ্ছে। কিন্তু যেটা সবচেয়ে বেশি জরুরি, অর্থাৎ শিক্ষা বিষয়ে যে ‘অনলাইন’ পদ্ধতিতে সরকার জোর দিয়েছিল, তা শহর বা শহরতলির পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে কাজ দিলেও গ্রামগঞ্জে যেখানে বিদ্যুৎ বা নেটওয়ার্ক সমস্যা, তারা সরকারি শিক্ষাদান প্রকল্পের বাইরেই থেকে গেল দু’বছর। এটি একটি বিকল্প শিক্ষাদান পদ্ধতি বটে, তবে বিকল্প আরও অনেক ভাবে ভাবা যেত, যা বিচ্ছিন্ন ভাবে হচ্ছে রাজ্যের এ দিক-ও দিক ব্যক্তিগত উদ্যোগে। যেটুকু সুযোগ সরকারি স্তরে দেওয়া হল, তা কি বিজনবাড়ি জনপদের অদূরে রঙ্গিত নদী তীরবর্তী বাসিন্দা ‘ডোমা’দের বোধগম্য হবে! প্রত্যন্ত অঞ্চলের দিনমজুরি বা চাষের কাজে যুক্ত থাকা অধিকাংশ নিরক্ষর বাবা-মায়ের কাছে আমাদের প্রত্যাশা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। যাঁদের বাড়িতে দু’বেলা খাবার জোটে না, তাকিয়ে থাকেন স্কুলের মিড-ডে মিল বা তার চাল-ডাল সামগ্রী পেলে ছেলেমেয়ের পেটটা ভরবে বলে, তাঁরা স্মার্টফোন জোগাবেন কী করে ছেলেমেয়েদের! তাঁরা ডোমার মতো ছেলেমেয়েদের পাথর ভাঙার কাজে উৎসাহ দেবেন, ইটভাটায়, চায়ের দোকান, ভাতের হোটেলে কাজে লাগিয়ে দিতে দ্বিতীয় বার ভাববেন না।
যারা সদ্য স্কুল যাওয়া শুরু করেছিল বা প্রাথমিক স্তরে ছিল, তারা ভুলেও গিয়েছে পড়াশোনা কী বস্তু। উপর ক্লাসের পড়ুয়ারাও তা-ই। হয় রোজগারের কাজে নেমে পড়েছে, না হয় নানা অকাজ-কুকাজে মনোনিবেশ করছে। বিপথে যাওয়ার হাতছানি প্রতি পদক্ষেপে। এদের কথা ভেবে স্কুল বন্ধ থাকলেও স্থানীয় শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সাহায্যে এলাকার ফাঁকা মাঠ, ক্লাব চত্বর বা স্কুল সংলগ্ন মাঠে পড়ায় বসার অভ্যাসটুকু চালু রাখা যেত। ‘হারিয়ে যাওয়া’ বা ‘স্কুল-ড্রপআউট’-এর সংখ্যাটাও হয়তো খানিক কমত।
সৌম্যেন্দ্র নাথ জানা
কলকাতা-১৫৪
ভাল উদ্যোগ
‘বিকল্প নহে’ (২৯-১) শীর্ষক সম্পাদকীয় অত্যন্ত সময়োপযোগী। বাস্তবেই বড্ড দেরি হয়ে গিয়েছে! ‘পাড়ায় শিক্ষা’র ভাবনা যদি ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্প চালু করার সময়ই করা যেত, খুব ভাল হত। পাড়ায় পাড়ায় শিক্ষালয়ের গাড়ি প্রবেশ করত। ফাঁকা মাঠে দূরত্ব মেনে যদি পড়াশোনার ধারা বজায় রাখা যেত, তা হলে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হতাশা তৈরি হত না। তবে, ‘সব ভাল যার শেষ ভাল’। যা ক্ষতি হওয়ার, তা তো হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় ‘পাড়ায় শিক্ষা’র উদ্যোগটি যথেষ্ট ইতিবাচক। সংক্রমণের ভয় বদ্ধ ঘরের মধ্যে বেশি। অনেক ছাত্রছাত্রী এক জায়গায় না থেকে যদি উন্মুক্ত স্থানে বা গাছের তলায় পড়াশোনার একটা ব্যবস্থা করা হয়, তাতে শিক্ষক-ছাত্রের মধ্যে সম্পর্কটা অন্তত আবার জুড়ে যায়। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে বন্ধুভাবাপন্ন মনোভাব, সেটাও গড়ে ওঠে! কোভিড-প্রকোপ একেবারে চলে গেলে বিদ্যালয়ে সবাই হইহই করে ‘আনন্দ পাঠে’ অংশ নিতে পারে। সুতরাং, এখন অনলাইন ক্লাসের সঙ্গে ‘পাড়ায় শিক্ষা’ চলুক। এতে শিক্ষার্থীদেরই সুবিধা হবে।
বিবেকানন্দ চৌধুরী
কাটোয়া, পূর্ব বর্ধমান
অবিচার
একরামুল বারি ‘বিধিভঙ্গই কি তবে বিধিলিপি’ (৩-২) প্রবন্ধে পশ্চিমবঙ্গে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় বসা লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত পরীক্ষার্থীর মনের কথা বলেছেন। স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির স্বজনপোষণ দূর করার জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশন-এর মাধ্যমে ১৯৯৮ সাল থেকে স্কুলগুলিতে নিয়োগ শুরু হয় গত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে। প্রতি বছর বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে স্কুল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীরা বসতেন এবং শিক্ষকতায় নিযুক্ত হতেন। শিক্ষিত বেকার ছেলেমেয়েদের মধ্যেও উৎসাহ দেখা যেত। গত ৬-৭ বছর ধরে প্রকাশিত প্রার্থী-তালিকা নিয়ে অসন্তোষ এবং ফলস্বরূপ অসংখ্য মামলায় সরকার নাজেহাল। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। শারীরশিক্ষা ও কর্মশিক্ষার এসএসসি তালিকাভুক্ত অনেক প্রার্থী চাকরি না পাওয়ায় দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করছেন। সরকার তাঁদের দাবির কথা না শুনে, আলোচনায় না ডেকে পুলিশ দিয়ে তাঁদের দমন করার চেষ্টা করেছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক।
তাই এই প্রবন্ধে লেখকের প্রস্তাবগুলি সরকার বা স্কুল সার্ভিস কমিশনের ভেবে দেখা উচিত। কিছু অসাধু কর্মী বা রাজনৈতিক নেতার জন্য বার বার সরকারের মুখ পুড়ুক, এটা কাম্য নয়।
জয়ন্ত কুমার দেবনাথ
রানাঘাট, নদিয়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy