অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের ‘চোখের সামনে সর্বনাশ’ (৩১-৮) শীর্ষক প্রবন্ধের প্রেক্ষিতে স্কুল খোলার ব্যাপারে সরকারের সঠিক ভূমিকা পালনে ব্যর্থতা নিয়ে এই চিঠি। লেখক উল্লেখ করেছেন বহু শিক্ষকের অস্বাভাবিক পরিশ্রম ও উদ্ভাবনীর কথা। তেমনই এক আদর্শ প্রাথমিক শিক্ষকের উদ্ভাবিত পদ্ধতিগুলিকে তুলে ধরছি, যা সরকার এবং সমাজকে শিক্ষার বিষয়ে উদ্যোগী হতে বাধ্য করেছে। মহারাষ্ট্রের এক প্রাথমিক শিক্ষক এবং গ্লোবাল টিচার প্রাইজ় বিজেতা রণজিৎ সিংহ দিসালে (ছবিতে)। তিনি ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সচেতনতা তৈরি করেছেন। স্কুলে বিভিন্ন শিক্ষামূলক বিনোদনের ব্যবস্থা করেছেন। মা-বাবাকে এসএমএস পাঠিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। পাঠ্যপুস্তকের বিষয়কে আকর্ষক ভাবে ব্যাখ্যা করে তা ‘কিউআর’ কোডে তুলেছেন। অতিমারিতে যখন স্কুল বন্ধ, রণজিৎ সিংহ দিসালের অভিনব পদ্ধতি স্কুলছুট হওয়া থেকে বাঁচিয়েছে বহু পড়ুয়াকে। তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করে মহারাষ্ট্র সরকারের শিক্ষা দফতর এই কোড-সহ পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে উদ্যোগী হয়েছে। এই কোড স্ক্যান করে ছাত্রছাত্রীরা বাড়িতে পাঠের অনুশীলন করতে পারে। আমাদের রাজ্যেও এই ধরনের কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে অতিমারিকালে ছেলেমেয়েরা বাড়িতে বসে পড়াশোনা করতে পারত। পরিশ্রম এবং নিষ্ঠার ফল দিসালে পেয়েছিলেন। তাঁর স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতির হার ১০০ শতাংশ। স্কুল-সংলগ্ন এলাকায় নাবালিকা-বিবাহের হার শূন্য। জীর্ণ এক গোয়াল ঘর থেকে শুরু করে দিসালের স্কুল এখন শিক্ষামহলের আদর্শ। দিসালের মতো অন্য শিক্ষকরাও নিজ নিজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করে যজ্ঞে শামিল হতে পারেন। এই কঠিন সময়কে কাজে লাগিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করার সুযোগ শিক্ষক সমাজের সামনে অপেক্ষা করছে।
পঙ্কজ কুমার চট্টোপাধ্যায়
খড়দহ, উত্তর ২৪ পরগনা
উদাসীন
‘চোখের সামনে সর্বনাশ’ প্রবন্ধে করোনা পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গের স্কুল খোলার ব্যাপারে সরকারের গড়িমসি মনোভাবের সমালোচনা যথার্থ। সরকার পশ্চিমবঙ্গে উপনির্বাচন করানোর ব্যাপারে যতটা আগ্রহী এবং সক্রিয়, স্কুল খোলার ব্যাপারে কিন্তু তার ছিটেফোঁটা দেখা যাচ্ছে না।
শিশু কাঁদলে যেমন তাকে লজেন্স দিয়ে ভুলিয়ে রাখা হয়, তেমনই পরিস্থিতির চাপে পড়ে সরকার স্কুল খোলার ব্যাপারে মাঝে মধ্যে কিছু ঘোষণা করে। এখন শোনা যাচ্ছে সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে ভাইফোঁটার পর, মানে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে স্কুল খোলা হতে পারে। প্রসঙ্গত, আরও একটি বিষয়ে সরকার দেরি করছে— লোকাল ট্রেন পুরোপুরি ভাবে চালু করা। সরকার নানা ভাবে বুঝিয়ে দিচ্ছে যে, স্কুল খুললে ও ট্রেন পুরোপুরি ভাবে চালালে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাবে। তাই তারা এই দু’টি বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করছে। এর পিছনে আসল কারণটি হল আসন্ন উপনির্বাচন। নভেম্বর মাসের মধ্যে উপনির্বাচন না করাতে পারলে মুখ্যমন্ত্রী পদের ব্যাপারে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। তাই স্কুল খোলার মতো বিষয় নির্বাচন মিটে গেলে দেখা যাবে— এই মনোভাব নিয়েই সরকার চলছে।
আর জনগণের কথা বেশি না বলাই ভাল। তাঁরা এখন সমাজকল্যাণমূলক সরকারি প্রকল্পের ফর্ম তুলতে ব্যস্ত। শিক্ষাব্যবস্থা, ন্যায়নীতি বার বার রাজনীতির কাছে হেরে যাচ্ছে। তাই ‘চোখের সামনে সর্বনাশ’ দেখা ছাড়া আর উপায় কী?
অশোক বসু
বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
সদিচ্ছার অভাব
করোনাবিধি মেনে সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় দু’বছর বন্ধ। অথচ, সরকারি প্রকল্পগুলোয় হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে অতিমারি সংক্রান্ত সাবধানতা লাটে উঠেছে। প্রশাসনের চোখের সামনে, বলা যায় সরকারি আধিকারিকদের সহায়তায় বিধিভঙ্গের প্রতিযোগিতা চলছে। মাঝে নির্বাচন এবং পরবর্তী কালে রাজনৈতিক দলগুলোর, বিশেষ করে সরকারি দলের কর্মসূচি বন্ধ নেই। জমায়েতে সতর্কতা মানারও বালাই নেই। সরকার নিজেদের প্রভু ভাবে বলেই ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানের বিকল্প বন্দোবস্ত না করে পঠনপাঠনের দরজায় তালা দিয়ে দিয়েছে। সদিচ্ছা থাকলে সরকার করোনা চিকিৎসার মতো তাৎক্ষণিক ভাবে পরিকাঠামো নির্মাণ করে পাঠদানের বিকল্প শ্রেণিকক্ষের ব্যবস্থা করতে পারত।
মুরারি মণ্ডল
মাধবডিহি, পূর্ব বর্ধমান
ভুল ভাঙেনি
অনির্বাণ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা ‘ভুল তো ভাঙল, অতঃপর?’ (১৩-৭) প্রবন্ধটি প্রাসঙ্গিক হলেও ভুল এখনও সিপিএমের ভাঙেনি। ভুল শোধরানো অনেক বাকি। এখনও পার্টি আত্মসমালোচনা করতে ভয় পায়। দলের মধ্যে একটা অংশের সঙ্গে অন্য অংশের মতান্তর রয়ে গিয়েছে। অতীতের বার বার করা ভুলের মাসুল পার্টিকে আজ এখানে দাঁড় করিয়েছে। জ্যোতি বসুকে প্রধানমন্ত্রী করা নিয়ে দলের মধ্যে অন্তঃকলহ, ইউপিএ সরকার থেকে শেষ সময়ে সমর্থন তুলে নেওয়া, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়কে প্রায় অকারণে পার্টি থেকে বহিষ্কার, পশ্চিমবঙ্গে বার বার অপ্রাসঙ্গিক জোট-ঘোঁট’এর রাজনীতি, পার্টিতে বৃদ্ধতন্ত্রের প্রভাব, কারণ-অকারণে পার্টির সদস্যদের চিঠি, শো-কজ়, সাসপেন্ড এবং সর্বোপরি সর্বস্তরে সাংগঠনিক দুর্বলতা— এই কারণগুলোই সিপিএমকে আজ শূন্যে পৌঁছে দিয়েছে।
আসা যাক ২০২১ বিধানসভা নির্বাচন প্রসঙ্গে। গত ১০ বছরে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে কোনও সাড়া-জাগানো আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি সিপিএম। বরং সরকারের জনমুখী প্রকল্পের নিরন্তর সমালোচনা করে গিয়েছে। এই নির্বাচনে বামপন্থীদের আক্রমণের অভিমুখ ছিল মূলত তৃণমূল, বিজেপি নয়। মানুষ এগুলো ভাল চোখে দেখেননি। ভোট বৈতরণি পার হওয়ার জন্য সংখ্যালঘু ভোট টানতে আইএসএফ-এর সঙ্গে দু’মাস আগে জোটও সাধারণ ভোটাররা মেনে নেননি। বামপন্থীরা সময়োপযোগী রাজনীতি না করতে পারলে এই শূন্য-দশা কাটবে না।
সুচন্দা হালদার
অশোকনগর, উত্তর ২৪ পরগনা
ঘুণধরা ভবিষ্যৎ
2 অতিমারির ফলে দেড় বছর ধরে সমাজের পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীরা পাঠবিমুখ হয়ে, বিভিন্ন ধরনের কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছে। এই ছাত্রছাত্রীরা এত দিন ধরে যা শিখেছিল, পেট চালানোর দায়ে তাও ভুলতে বসেছে। এই পরিস্থিতিতে স্কুল না খুলেও সরকার বিকল্প চিন্তা-ভাবনা করলে হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারত। কিছু ক্ষেত্রে বিক্ষিপ্ত ভাবে শিক্ষকরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেও সার্বিক ভাবে সেই কাজ হয়নি। সরকার যেখানে ব্লক স্তরের অফিসার, কর্মীদের সমাজের আমজনতার দুয়ারে পাঠাচ্ছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য, সেখানে শিক্ষকদের ছাত্রছাত্রীদের কাছে পাঠানোর চেষ্টাও করা যেত। ছাত্রছাত্রীরাও বাড়ির কাছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পেয়ে মানসিক ভাবে উদ্বুদ্ধ হত। এ ছাড়া, কিছু সময়ের জন্য স্কুল খুলে শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে সাময়িক সাক্ষাতের একটা সুযোগ করে দেওয়া যেত, যা কাজে লাগিয়ে স্কুল খোলার আগে পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা পড়া বুঝে নিতে পারত। নিদেনপক্ষে বাড়িতে বসে কী পড়তে হবে, তার একটা গাইডলাইন পেত।
অবশ্যই, সবচেয়ে মূল্যবান ছাত্রছাত্রীদের জীবন। সেই জীবনকে রক্ষা করতে হবে সর্বাগ্রে। কিন্তু জীবনকে রক্ষা করতে গিয়ে সমস্ত ভবিষ্যৎ জীবনেই ঘুণ ধরে গেলে তার হিসেব কে রাখবে?
অরুণ কুমার মণ্ডল
সেকেন্দারপুর রাই কে পি পাল বাহাদুর হাই স্কুল, হুগলি
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy