উত্তরবঙ্গে রেল দুর্ঘটনার কারণ এবং নর্থইস্ট ফ্রন্টিয়ার (এনএফ) রেলের বৈদ্যুতিকরণ সম্পর্কে আনন্দবাজার পত্রিকা ইতিমধ্যে যথেষ্ট তথ্য প্রকাশ করেছে। তবুও কিছু প্রাসঙ্গিক খুঁটিনাটি যোগ করছি, যা প্রকাশ পায়নি। এই রেলে বৈদ্যুতিকরণ অনুমোদন পেয়েছিল ইউপিএ আমলে ২০০৮ সালে, কাটিহার থেকে গুয়াহাটি পর্যন্ত। ২০১৮ সালে কাটিহার থেকে মালদহ পর্যন্ত বৈদ্যুতিক ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ২০২০ সালে নিউ জলপাইগুড়ি ও কিছু কাল পরে নিউ কোচবিহার পর্যন্ত বৈদ্যুতিক ট্রেন চালু হলেও, রেলের গড়িমসির কারণে কাটিহার, এনজেপি বা মালদহ, কোথাও শেড নির্মাণ হয়নি। এ জন্য রেল মন্ত্রক এই রেলের জন্য কোনও নতুন ইলেকট্রিক ইঞ্জিন বরাদ্দ করেনি। অন্য দিকে, অপারেটিং খরচ কমাতে রেল মন্ত্রকের নির্দেশ— বৈদ্যুতিকরণ শেষ হয়ে গেলে ডিজ়েল ইঞ্জিন ব্যবহার করা চলবে না। সুতরাং, এনএফ রেলকে পূর্ব রেল এবং অন্যান্য জ়োনের বৈদ্যুতিক ইঞ্জিন দিয়েই ট্রেন চালাতে হয়। পূর্ব রেল যাত্রিবাহী ট্রেনের জন্য এনএফ রেলকে ডব্লিউ এপি ৭ ইঞ্জিন দিলেও অন্যান্য রেল থেকে ভাল ইঞ্জিন সব সময় দেওয়া সম্ভব হয় না। রেল নিয়ে চর্চাকারী জনৈক ব্যক্তি দুর্ঘটনার পর দিন ফেসবুকে ওই ইঞ্জিনের লগবুকের (বা অন্য শংসাপত্র) ছবি পোস্ট করেছিলেন। রেল ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণের নিয়মকানুন আছে এবং তা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে করা হয়। দুর্ঘটনার ৪/৫ দিন আগে এই ইঞ্জিনের রুটিন রক্ষণাবেক্ষণের কথা ছিল, কিন্তু অজানা কারণে তা হয়নি। সম্ভবত রেলকর্তাদের চাপে সেই পোস্টটি এখন উধাও।
সবচেয়ে আশ্চর্যের কথা হল, নিউ জলপাইগুড়িতে ইঞ্জিনের গোলমাল ধরা পড়া সত্ত্বেও কেন রেলের ইঞ্জিন পরীক্ষকরা ট্রেনটি ওই ইঞ্জিনকে দিয়েই পাঠানোর ছাড়পত্র দিলেন? এনএফ রেলের ইলেকট্রিক ইঞ্জিন নেই, কিন্তু অজস্র ভাল ডিজ়েল ইঞ্জিন রয়েছে এনজেপিতেই। একটা ডিজ়েল ইঞ্জিন লাগিয়ে দিলে নিয়মভঙ্গ হলে হত, কিন্তু এতগুলো প্রাণ তো বেঁচে যেত। আর ক্ষয়ক্ষতি? নতুন আপ লাইন মাত্র সাত মাস চালু হয়েছে, রেললাইন, স্লিপার, ইলেকট্রিক মাস্ট, তার, ওভারহেড ইকুইপমেন্ট, সবই এখন ছিন্নভিন্ন। তাই আবার ডিজ়েল ইঞ্জিন দিয়েই ট্রেন চালাতে হচ্ছে। প্রত্যেক কর্মী, ড্রাইভার-সহ যাঁরা এই দুর্ঘটনার জন্য দায়ী, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন।
কিশোর পালচৌধুরী
কল্যাণী, নদিয়া
স্বচ্ছতার দাবি
২০১৭ সালে প্রাথমিক টেটের আবেদন নিয়েছিল রাজ্য সরকার। ২০২১ সালে পরীক্ষা নেয়। এ বছর প্রকাশিত হয়েছে পরীক্ষার ফলাফল। চূড়ান্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া কবে শুরু হবে, জানায়নি সরকার। অন্য দিকে, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, যে সমস্ত পরীক্ষার্থী নিজেদের প্রাপ্ত নম্বর বা উত্তরপত্রের প্রতিলিপি পেতে চান, তাঁরা আবেদন করতে পারেন পর্ষদে। আবেদনপত্রের সঙ্গে ৫০০ টাকার ডিমান্ড ড্রাফট চেয়েছে পর্ষদ। সেই সঙ্গে তথ্যের অধিকার (আরটিআই) ফর্মে কোর্ট ফি ১০ টাকা, স্পিড পোস্টে আবেদন পাঠাতে আনুষঙ্গিক খরচ আরও প্রায় ১০০ টাকা। অর্থাৎ, মোট খরচ প্রায় ৬০০ টাকা।
অথচ, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের উচিত ছিল, প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর ফল প্রকাশের দিনই জানিয়ে দেওয়া। পাশ-করা পরীক্ষার্থীদের বিস্তারিত বিবরণ-সহ নথি পিডিএফ আকারে প্রকাশ করা। প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর ওএমআর উত্তরপত্র ওয়েবসাইটে আপলোড করা। কিন্তু পর্ষদ এগুলো কোনওটাই করেনি। শুধু রোল নম্বর দিলে ওয়েবসাইটে কোয়ালিফায়েড বা নট কোয়ালিফায়েড দেখিয়েছে। ফলে প্রক্রিয়ার মধ্যে স্বচ্ছতার অভাব দেখা দিয়েছে। স্বচ্ছ ভাবে শিক্ষক নিয়োগের স্বার্থে কয়েকটি দাবি রাখছি— ১) সমস্ত কৃতকার্য পরীক্ষার্থীর নাম পিডিএফ আকারে প্রকাশ; ২) সকলের উত্তরপত্র ওয়েবসাইটে আপলোড; ৩) প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর ঘোষণা; ৪) কোনও টাকা না নিয়ে প্রত্যেক আবেদনকারীকে উত্তরপত্র প্রদান-সহ প্রাপ্ত নম্বর জানানো; আর ৫) প্রতি বছর টেট পরীক্ষা নেওয়া এবং সমস্ত শূন্য
পদে নিয়োগ।
আব্দুল জলিল সরকার
সম্পাদক, বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, কোচবিহার
শিক্ষার সঙ্কট
‘শিক্ষা কাহাকে বলে’ (১০-১) সম্পাদকীয় শিরোনামে ঠিক ভাবেই উল্লেখ করা হয়েছে, ‘পড়াশোনা হইল জ্ঞান উৎপাদন প্রক্রিয়া’। বিগত কয়েক দশক ধরে ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থাকে বাজারমুখী করে তোলার ফলে তৈরি হওয়া সঙ্কটকে স্পষ্ট করা হয়েছে, “তাহা বলিয়া বিদ্যাচর্চার উৎকর্ষ এবং বাজারের ভিতর কোনও ফারাক থাকিবে না— ইহা কি সঙ্গত?” আমরা লক্ষ করছি, দেশি-বিদেশি বৃহৎ পুঁজিপতিরা সর্বোচ্চ মুনাফার স্বার্থে বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করে দেশবাসীকে ক্রমাগত নিঃস্ব করছেন এবং তার মধ্য দিয়ে ভয়াবহ মন্দার প্রকোপ ক্রমশ প্রশস্ত হচ্ছে। কোনও নতুন শ্রমনির্ভর শিল্প-কলকারখানা হবে না, উৎপাদনে সঙ্কট বাড়তেই থাকবে। যত সমস্যা বাড়বে, ততই মালিকরা তাঁদের পুঁজিকে ক্রমে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যুদ্ধের সরঞ্জামে বিনিয়োগ করবেন। এমনকি রাস্তাঘাট ও জল-জঙ্গলকেও একই ভাবে মুনাফার জন্য অধিগ্রহণ করবেন। এর নাম দেশসেবা, জনসেবা নয়। সম্পাদকীয়তে লেখা হয়েছে, “মোদী সরকারের আমলে... বিজ্ঞানের প্রয়োগগত বা ‘প্র্যাকটিক্যাল’কে তাহার তত্ত্বগত বা ‘থিয়োরিটিক্যাল’ শাখা অপেক্ষা বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়া অনর্থ ঘটিয়াছে।” আসলে, বিজ্ঞানের কারিগরি দিক ততটুকুই তারা রাখতে চায়, যতটুকু না নিলে সভ্যতা অচল হয়ে যাবে। আশঙ্কা হয়, দেশবাসীর মনে শিক্ষার মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানবিরোধী অন্ধবিশ্বাস গড়ে তোলাই যেন তাদের পরিকল্পনা, যাতে যুক্তিতর্কের মধ্য দিয়ে সত্য খোঁজার আগ্রহ ছাত্রদের মননে গড়ে না ওঠে।
এর পরিণতি হবে ভয়ঙ্কর। আগামী প্রজন্ম তবে কোন শিক্ষা পাবে? এটাই কি হিটলারের ফ্যাসিবাদী সংস্কৃতির আভাস নয়? এ দেশের এক বিশিষ্ট চিন্তাবিদ বহু দিন আগেই বলে গিয়েছেন, “ফ্যাসিবাদ হচ্ছে অধ্যাত্মবাদ, তমসাচ্ছন্ন ভাবনাধারণা এবং যুক্তিহীনতার সঙ্গে কারিগরি বৈজ্ঞানিক বিদ্যার এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ। এ রকম ঘটনা যখন দেশে ঘটে তখন যুক্তিবাদী মন দেশ থেকে মরে যায়।” কারণ, তা মনুষ্যত্বকে মেরে ফেলে। আজ কী ভয়ঙ্কর ভাবে শিক্ষায় কুসংস্কারকে আরও ব্যাপকতর রূপ দেওয়ার উদ্দেশ্যে দেশের প্রথম সারির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে। যার সাম্প্রতিকতম নজির শিবপুর আইআইইএসটি এবং আইআইটি খড়্গপুরের মতো প্রতিষ্ঠানেতেও দেখা গেল। কোথাও বিজ্ঞানের ক্লাসে গীতার মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হচ্ছে, কোথাও প্রচার করা হচ্ছে— আর্যরা ছিল এ দেশীয়। এ ভাবে শিক্ষার সর্বনাশ ঘটে চললে অবশিষ্ট আর কী থাকতে পারে!
ঋতিকা বসু
ডালখোলা, উত্তর দিনাজপুর
উপেক্ষিত
হাওড়া রেল স্টেশনের বিকল্প হিসাবে সাঁতরাগাছি রেল স্টেশনের পরিকাঠামো তৈরির কাজ বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই রেল দফতর শুরু করেছে। কাজও অনেকটাই এগিয়েছে। এই জন্য বাবুঘাটের বাসস্ট্যান্ড সাঁতরাগাছিতে স্থানান্তরিত করতে বেশ কয়েক বছর আগে সাঁতরাগাছি বাস টার্মিনাল তৈরি হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাবুঘাটের বাসস্ট্যান্ড স্থানান্তরিত হয়নি। নিকাশি ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষায় ও অন্য সময়ে বেশি বৃষ্টি হলে সাঁতরাগাছির টার্মিনালটি জলে ভরে যায়। কোনা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে সাঁতরাগাছির মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বাস টার্মিনাল, যার নির্মাণ ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ, তাকে যথাযথ ব্যবহারের জন্য প্রশাসনকে অনুরোধ করছি।
অপূর্বলাল নস্কর
ভান্ডারদহ, হাওড়া
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy