‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’ প্রকল্প থেকে যে মহিলা ৫০০ টাকা বা ১০০০ টাকা প্রতি মাসে অনুদান পাবেন, তিনি যদি স্কুলের মিড-ডে মিলের কর্মী হন, তা হলেও তিনি কি প্রকৃত অর্থে সরকারের কাছ থেকে কোনও আর্থিক সাহায্য পাবেন? আমাদের রাজ্যে মিড-ডে মিলের রান্নার কাজ করে মহিলা কর্মীরা মাসিক মজুরি পান ১৫০০ টাকা, যেখানে অনেক রাজ্যে এই একই কাজ করে মাসিক মজুরি পাওয়া যায় ৫০০০-৬০০০ টাকা। অর্থাৎ, মাসিক আর্থিক সাহায্য, আর সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টে পর্যন্ত খেটে মিড-ডে মিলের কর্মীদের কাজের মজুরি প্রায় সমান।
রাজ্যে প্রায় ৫০ হাজার মহিলা এই কাজের সঙ্গে যুক্ত। এই ৫০ হাজার মহিলা যে আর্থিক বঞ্চনার সম্মুখীন হচ্ছেন, সেই অর্থ দিয়ে কম করে দু’লক্ষ মহিলাকে ১০০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া যাবে। কিংবা মহিলাটির স্বামী বা সন্তান যদি কোনও সরকারি হাসপাতালের চুক্তিভিত্তিক চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হন, তবে ওই পরিবারটি স্থায়ী কর্মীর অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাদ দিলেও মাসিক প্রায় হাজার দশেক টাকা আর্থিক বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। এই অর্থ দিয়ে ১০ জনকে মাসিক ১০০০ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া যাবে। চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরা অনেক দিন ধরেই সুপ্রিম কোর্টের ‘সম কাজে সম বেতন’-এর নির্দেশকে সামনে রেখে আন্দোলন করে আসছেন। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, প্যারাটিচার, এসএসকে শিক্ষক, সিভিক ভলান্টিয়ার, দমকল কর্মী, কলেজ শিক্ষক, করণিক, আয়ুর্বেদ চিকিৎসক, হোমিয়োপ্যাথিক চিকিৎসক, পোস্ট ডক্টরাল ট্রেনি, সকলেই এ রাজ্যে আর্থিক বঞ্চনার শিকার। প্যারাটিচাররাও অনেক দিন ধরে পথে নেমে আন্দোলন করছেন, তাঁদের দাবি কেন্দ্রের ২৫ হাজার আর রাজ্যের ১৫ হাজার টাকা, অর্থাৎ ৪০ হাজার টাকার, যা অন্য রাজ্যের প্যারাটিচাররা পাচ্ছেন। আর এ রাজ্যে তাঁরা পাচ্ছেন ১১ হাজার টাকা।
দৈনিক মজুরিতেও এখানে বঞ্চনা আছে। যে কাজ এখানে করলে ৩০০ টাকা দৈনিক মজুরি মেলে, সেই একই কাজ করে অনেক রাজ্যেই ৬০০-৭০০ টাকা মেলে, তাই যুব সমাজের একটা বড় অংশ দৈনিক কাজের জন্যই রাজ্য ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। এই আর্থিক বঞ্চনা দূর করলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা অনেকটাই কমে যেত, জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলোকে এ ভাবে সর্বজনীন রূপ দিতে হত না। তাতে প্রকৃত দরিদ্র মানুষকে আরও বেশি আর্থিক সাহায্য করা যেত। যাঁর অর্থের প্রয়োজন, তাঁকে ৫০০-১০০০ টাকা নয়, মাসে ন্যূনতম ৫০০০-৬০০০ টাকা দেওয়া দরকার। আর এই কাজ করার জন্য ছোট ছোট অনেক প্রকল্প না করে ‘ন্যূনতম আয়’ প্রকল্প চালু করার পথে হাঁটতে হবে। এতে অর্থের অপচয় কমবে, দুর্নীতি কমবে। অর্থনীতিবিদদের একাংশ ‘ন্যূনতম আয়’ প্রকল্প চালু করার কথা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন।
অসিত কুমার রায়
ভদ্রেশ্বর, হুগলি
কন্যাদায়?
আফরোজা খাতুন তাঁর প্রবন্ধে (‘কোন দিক থেকে উন্নতির সহায়’, ২০-৮) মেয়েদের সঠিক সামাজিক অবস্থানটি তুলে ধরেছেন। অবলা, নির্বোধ, বোকা মেয়েদের কোনও কিছুতেই নিজের সিদ্ধান্ত নেওয়া চলবে না! এমনকি জীবনসঙ্গীও বাছার অধিকার নেই। তবে এ ব্যাপারে হিন্দু, মুসলিম, শিখ সব ধর্মের মেয়ের সমান অবস্থা। মহাভারতের যুগে দেখা যায়, দ্রৌপদীকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধেই পাঁচটি স্বামীর পত্নী হিসেবে থাকতে হয়েছিল, আবার পাশা খেলাতে তাঁকে বাজিও রাখা হয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষী, এক রাজা অন্য রাজার কাছে হেরে গেলে নিজের মেয়ে বা বোনের সঙ্গে জয়ী রাজার বিবাহ দিয়ে দিতেন। আবার অনেক সময় বিবাহের মাধ্যমে যুদ্ধ এড়ানো যেত, কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই মেয়েটির মত নেওয়া হত না। হিন্দু সমাজে বাল্যবিবাহ, সতীদাহ প্রথা ছোট ছোট মেয়েদের জীবন নষ্ট করে দিতে যথেষ্ট ছিল।
বিবাহ দু’টি পরিণত বয়স্ক নরনারীর এক সঙ্গে জীবন কাটানোর অঙ্গীকার। এর মধ্যে কারও মাতব্বরি করা উচিত না। আর ছেলে-মেয়ে ভিন্ন ধর্ম, বর্ণ বা ভাষার হলেই পরিবার সম্মানরক্ষার্থে তাদেরকে মেরে ফেলা (অনার কিলিং) ভারতীয় দণ্ডবিধিতে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বিভিন্ন সময়ে সুপ্রিম কোর্ট, বিভিন্ন হাই কোর্ট বার বার রায় দিয়েছে যে, পরিণতবয়স্ক নরনারীর পছন্দমতো জীবনসঙ্গী নির্বাচন করার অধিকার আছে। এই বিবাহ সম্পূর্ণ আইনসম্মত ও নৈতিক।
পরিবার থেকে ধর্ম, বর্ণ, জাত মিলিয়ে বিয়ে দিলেই যে বিবাহ সুখের হবে, তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। থাকলে প্রতি বছর কোর্টে বধূ নির্যাতন, বিবাহ বিচ্ছেদের মামলার সংখ্যা ক্রমবর্ধমান হত না।
সর্বানী গুপ্ত
বড়জোড়া, বাঁকুড়া
কেন ভিড়
চৈতালী চট্টোপাধ্যায়ের ‘মেয়েরা কি সত্যি স্বাধীন?’ (২১-৮) প্রসঙ্গে এই চিঠি। কন্যাসন্তান জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গেই যেখানে গায়ের রং অনুযায়ী বিয়ের বাজারে তার দাম ঠিক হয়ে যায়, সেখানে সারা জীবন যে তাকে নিজের ও পরিবারের সম্মান রক্ষার্থে দরকষাকষির প্রতিযোগিতায় নামতে হবে, সেটা বোধ হয় স্বাভাবিক। নিরাপত্তার কারণে বাড়ির কাছের স্কুল-কলেজে পড়াশোনার পর একটা ‘মেয়েদের জন্য সেফ’ চাকরি পেয়ে গেলেই মেয়েটির বাবা-মায়ের মনে কন্যাদায়গ্রস্ততার চিন্তা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। কিছু আত্মীয়স্বজন-পারিবারিক বন্ধু পার্টটাইম ঘটকবৃত্তি বেছে নিয়ে কন্যার উপযুক্ত পাত্র খুঁজে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। তা ছাড়াও গৃহকর্ম ও হস্তশিল্পে নিপুণা মেয়ে যদি ভাল পড়াশোনা না করে, তা হলে একটাই রাস্তা, বিয়ে দিয়ে দাও। এখানে ‘উপযুক্ত পাত্র’ কথার অর্থ সেই পাত্র যেন বর্ণ, গোত্র, জাতি, শিক্ষা, পেশা ও উপার্জনের দিক থেকে কন্যার চেয়ে এগিয়ে থাকে, অন্তত যেন কন্যার সমান হয়। কোনও এক অজানা কারণে কন্যার পারিবারিক সম্মান সেই পাত্রের উপর বর্তায়। তাই জীবনসঙ্গীর কাছে শারীরিক-মানসিক কিংবা ইচ্ছের স্বাধীনতা দাবি করাটা আর শেষ পর্যন্ত হয়ে ওঠে না মেয়েটার, বরং এক বা একাধিক ‘সাপোর্টিভ’ চরিত্রের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। যে তন্ত্র সমাজরক্ষার নামে মেয়েদের চিরকাল যেন তেন প্রকারেণ ‘কেয়ার অব’-এর কুঠুরিতে পুরে রাখতে চেয়েছে, তার কাছ থেকে স্বাধীনতা আশা করা বৃথা। যে সমাজ নিজেই কিছু ভ্রান্ত ধারণা ও সংস্কারের কাছে পরাধীনতা স্বীকার করেছে, সেই সমাজ মেয়েদের কী স্বাধীনতা দেবে? মেয়েদের স্বাধীনতা ‘দেওয়ার’ আগে এই সমাজের পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হওয়া জরুরি।
নারী আর্থিক ভাবে স্বনির্ভর হলে তার মনে সংসারের সব দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন না করতে পারার অনুতাপের বীজ বপন করে দেওয়াও সেই স্বাধীনতা হরণের নামান্তর। তাই লক্ষ্মীর ভান্ডারে নিজেদের স্বাধীনতা খুঁজে নিতে মেয়েরা আজ অনেকেই মরিয়া হয়ে উঠেছে।
অনিশা ঘোষ
পান্ডুয়া, হুগলি
লর্ডসের মোড়
দক্ষিণ কলকাতায় প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের মাঝামাঝি স্থানে লর্ডসের মোড় অত্যন্ত জনবহুল, ভোর থেকে রাত পর্যন্ত সদাব্যস্ত। দূরদর্শন কেন্দ্র, যাদবপুর থানা, সাউথ সিটি মল, লেকগার্ডেন্স এবং টালিগঞ্জের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানের সংযোগস্থল এই লর্ডস মোড়। বর্তমানে জবরদখল ও বেনিয়মে কলকাতার সেরা তকমা পেতে পারে। সরকারি রাস্তা, ফুটপাত— সব জবরদখল। মোড়ের মাথায় বিশাল ম্যারাপ বেঁধে শনিঠাকুর, সাঁইবাবা, জন্মাষ্টমীর পুজো, প্রতি দিন কিছু না কিছু চলছেই। মাইকে গান, অসংখ্য রিকশার হুড়োহুড়ি, দোকান থেকে নির্গত ভাতের ফ্যান, উচ্ছিষ্ট, গুটকার থুতু, যেখানে সেখানে অটো বা ট্যাক্সির দাঁড়িয়ে যাওয়া, ভিখারিদের উৎপাত— কী নেই! পথের মধ্যে নির্মাণের জন্য পড়ে থাকা ইট, বালি ও পাথরকুচির পাহাড়। এর জন্য পথ দুর্ঘটনা তো লেগেই আছে। কারও কোনও হেলদোল নেই! অবিলম্বে বন্ধ হোক এই অনাচার।
দিলীপ চক্রবর্তী
কলকাতা-৪৫
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy