ঈশানী দত্ত রায়ের প্রবন্ধ ‘একটি কুকুরের তরফে বলছি’ (১-১০) একটি বিবেকদর্পণ। এ দেশের কিছু জননেতা-জননেত্রী আছেন, যাঁরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে বুঝতে পারেন না যে, তাঁরা প্রশাসক না শাসক। লেখাটি তাঁদের অবশ্যই পড়া উচিত। বেচারা কুকুর। মানুষের এত উপকার করেও মানুষের গালাগাল খেয়ে তার দিন কাটে। কুকুরকে লাই দিলে মাথায় চড়ে। আর নেতানেত্রীদের ‘লাইক’ করে ভোট দিলে তাঁরা আমাদের কুকুর বানিয়ে দেন। সরকারি কর্মচারীরা এক বার ভুল করে ন্যায্য ডিএ পাওয়ার আবদার করে ফেলেছিলেন। তাই তাঁদের সারমেয় বানিয়ে মানসিক ভাবে সাবাড় করার চেষ্টা করা হয়েছিল। রাজা-রানির রাজত্বে আমরা কেউই ‘রাজা’ নই। সবাই প্রজা, যাদের কুকুরের বিশ্বস্ততা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়। লেখক এক জায়গায় লিখেছেন, “নাগরিক সমাজ থেকেও কোনও প্রতিবাদবাক্য শোনা যায়নি।” তার কারণ নাগরিক সমাজ (যার মধ্যে বুদ্ধিজীবীরাও আছেন) নিস্তব্ধতার ধ্যানে মগ্ন।
এ এক কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি। হয় ক্ষমতাকে, দম্ভকে মেনে নাও, না হলে সারমেয়র অস্তিত্ব নিয়ে বেঁচে থাকো। ক্ষমতাকে সমাজের শুভ কাজে লাগাতে গেলে জ্ঞান লাগে, অধ্যবসায় লাগে, উপযুক্ত মানুষের সহযোগিতার প্রয়োজন হয়। অপর পক্ষে, অহঙ্কার জ্ঞান বিনষ্ট করে। প্রকৃত বিদ্যা মানুষকে বিনয়ী করে তোলে। যখন দেশের, রাজ্যের গণতন্ত্রে প্রশাসকরা ‘শাসক’ হয়ে ওঠেন, তাঁদের মধ্যে বিনয়ের লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন অনুমান করা যায়, আমরা কোন রাজত্বে বাস করছি।
অশোক বসু
বারুইপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা
অমার্জিত
ঈশানী দত্ত রায় লিখেছেন, “একটি গণতন্ত্রেও জনপ্রতিনিধিরা নিজেদের রাজা-রানি, সোজা কথায় শাসক বলে ভাবতে শুরু করেন। ফলে মানুষকে মনুষ্যেতর প্রাণী বলে দাগিয়ে দেওয়াটা তাঁদের কণ্ঠ থেকে অনায়াসে নিঃসৃত হয়।” সঠিক পর্যবেক্ষণ। এই দেশে তথা এই রাজ্যে ভোটের আগে সব দলেরই রাজনৈতিক নেতারা করজোড়ে জনগণের দুয়ারে এসে দাঁড়ান। তখন তাঁরা বিনয়ের অবতার সাজেন। ভোট পর্ব এক বার চুকে যাওয়ার পর যখন জনপ্রতিনিধিতে পরিণত হন, তখন নিজেকে তাঁরা সিংহাসনে আসীন রাজা-রানি ভাবতেই পছন্দ করেন। আচরণে দাম্ভিকতা ও ভাষার প্রয়োগে জনগণের প্রতি, বিশেষত সমালোচকদের প্রতি তাচ্ছিল্যের প্রকাশ ঘটাই স্বাভাবিক। কারণ, পরবর্তী নির্বাচনের আগে তাঁকে পদচ্যুত করার ক্ষমতা জনগণের নেই। নেহরু জমানার পর থেকেই ভারতীয় রাজনীতিতে বিরোধীদের প্রতি সহিষ্ণুতার পাট উঠে গিয়েছে। দেশের বা রাজ্যের সমস্যা নিয়ে শাসক ও বিরোধী দলকে কখনও এক সঙ্গে কোনও আলোচনা করতে দেখা যায় না। অনেক সময়ই দেখা যায়, শাসক দলের প্রধান নেতার সঙ্গে প্রধান বিরোধী দলের নেতার সৌজন্যের সম্পর্কটুকুও নেই। আজ শাসক ও বিরোধী দলের নেতাদের মধ্যে ভদ্র ও মার্জিত মানুষের বড় অভাব।
কৌশিক চিনা
মুন্সিরহাট, হাওড়া
নহি তো মেষ
নেতানেত্রীরা নিজেদের মতকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য, বা নিজের কোনও দোষ ঢাকতে যে ভাবে মানুষের সঙ্গে কুকুরের বিভিন্ন সময়ে তুলনা টেনে আনেন, তার বিশ্লেষণ খুব সুচারু ভাবে করেছেন ঈশানী দত্ত রায়। আমরা জানি, কুকুর যতই ঘেউ ঘেউ করুক, তাকে ডেকে খাবার দিলেই সে চুপ করে যাবে। ঠিক যে সময়ে তাকে প্রতি দিন খাবার দেওয়া হবে, সে সময় এসে লেজ নেড়ে প্রভুভক্তি দেখাবে। এ বার ওই সময়েই অন্য কোনও ব্যক্তি যদি আরও ভাল খাবারের ব্যবস্থা করে, তখন কুকুরটি নতুন জনের কাছেই যাবে। বাঁচার জন্যে এটাই তাঁদের চরিত্র। আর যে কুকুরের কোনও প্রভু নেই, তারা নিজের বাঁচার তাগিদেই রাস্তা থেকে খাবার জোগাড় করে। এর জন্যে তাদের মুখোমুখি হতে হয় নিজেদের মধ্যেই সংগ্রামে, আবার কখনও বা আপসে। জনপ্রতিনিধিরা প্রশাসকের খোলস ছেড়ে, শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে গণতন্ত্রকে শ্বাপদসঙ্কুল পরিবেশে পরিণত করতে পারেন মানুষের প্রতি তাঁদের এই ভাবনা থেকেই। এই ভাবনা মনে স্থান না দিয়ে, গর্জে উঠতে হবে এই বলে, “মানুষ আমরা, নহি তো মেষ।”
অশোক দাশ
রিষড়া, হুগলি
বিনা প্রতিবাদে
মানুষকে ‘কুকুর’ বলে দাগিয়ে দেওয়া স্বভাবকে নেতানেত্রীদের অমার্জনীয় স্পর্ধা আখ্যায়িত করেছেন ঈশানী দত্ত রায়। তাঁর বক্তব্যকে সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে বলতে চাই, আসলে আফিম খাওয়া মানুষগুলো নিজেদের আর মানুষ বলে মনে করেন না। তাঁরা নিজেদের ক্রীতদাস ভেবে নিয়েছেন। কাজেই জনপ্রতিনিধিদের যে কোনও কাজের তাঁবেদারি করতেই তাঁরা ব্যস্ত। ফলে রাজা (পড়ুন জনপ্রতিনিধি) যখন বলেন, কুকুরছানা চাপা পড়লে যেমন দুঃখ হয়, মানুষের মৃত্যুতেও একই দুঃখ হয়েছে— তাতে কিছু আসে যায় কি? আমরা প্রতিবাদ করতে ভুলে গিয়েছি। তাই পরিযায়ীর মৃত্যু বা কৃষকের মৃত্যুতে আমাদের কিছু আসে যায় না। বা সরকারি কর্মচারীদের ডিএ সংক্রান্ত দাবিকে ‘ঘেউ ঘেউ’ শব্দবন্ধ দিয়ে তুলনা করলে, বা মৃতদেহকে কুকুরের সঙ্গে তুলনা করলেও আমাদের হেলদোল নেই।
এর জন্য আমাদের সামন্তদাস মনোভাব দায়ী। জনপ্রতিনিধিরা যে রাজা বা রানির ভূমিকা পালন করবেন, আর আমরা বশংবদ হয়ে থাকব, সেটা নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে নিয়ে গিয়ে আমরাই প্রমাণ করে দিচ্ছি। আর সরকার পক্ষ বা বিরোধীপক্ষ— সবাই যেন খানিকটা গিয়ে থেমে যায়, কোথাও যেন আগে থেকেই গাঁটছড়া বাঁধা রয়েছে। আমরা ক্ষণিকের আনন্দে মশগুল থাকি, গণতন্ত্রের কথা এখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পুস্তকের একটা অধ্যায়মাত্র।
পরেশনাথ কর্মকার
রানাঘাট, নদিয়া
শিবদাসের রচনা
অলক রায়চৌধুরীর ‘বাংলা গানের প্রতিমা গড়তেন যে শিল্পীরা’ (৩-১০) শীর্ষক প্রবন্ধে লেখা হয়েছে, “গৌরীপ্রসন্ন-অজয়-মান্না দে ত্রয়ী প্রাণবন্ত করেছিলেন ‘ভারত আমার ভারতবর্ষ, স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো’।” এই গানটির রচয়িতা শ্রদ্ধেয় শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। অজয় দাসের সুরে চারমূর্তি (১৯৭৮) বাংলা ছায়াছবিতে মান্না দে-র গাওয়া গানটি আজও অবিস্মরণীয়। গানের প্রতিটা শব্দচয়ন এক অন্য মাত্রা বহন করে। শিবদাস বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলা গানের এক অন্যতম স্মরণীয় নাম এবং আমার ভীষণ প্ৰিয়। শিবদাসবাবুর প্রসঙ্গে আরও একটি কথা উল্লেখ করতে চাই। কিশোর কুমারের গাওয়া ‘হাওয়া মেঘ সরায়ে ফুল ঝরায়ে’ গানটি শিবদাসবাবু অতি যত্নে লিখেছিলেন। এ গানের জন্য তিনি মুম্বই গিয়ে কয়েক দিন কিশোর কুমারের বাড়িতেও ছিলেন। পরে কিশোর কুমারের সুরে শিবদাসবাবুর লেখা এই গান সারা বাংলা কাঁপিয়ে দেয়। আজও পুজো প্যান্ডেলে এই গান নিয়মিত শুনতে পাওয়া যায়।
স্নেহাশিস সামন্ত
দাশনগর, হাওড়া
আগুন দাম
সম্প্রতি অতিবৃষ্টির কারণে আনাজের বাজারে আগুন লেগেছে। প্রায় সব আনাজের দাম দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে, আলু আর পেঁপে বাদে। সঙ্গে সর্ষের তেল-সহ বিভিন্ন ভোজ্য তেল ও অন্যান্য সামগ্রীও ক্রমশ চড়ছে। গরিব ও সাধারণ মানুষের পেট চালানো দায়। এমনিতেই দুর্গাপুজোর আগে সব জিনিসের দাম বাড়ে। কারণ, চাঁদার উৎপাত। গত বছর করোনা আবহে বড় পুজো হয়নি, চাঁদার জুলুমও নেই বললেই চলে। তা সত্ত্বেও দাম বাড়ায় কসুর নেই।
শিবপদ চক্রবর্তী
কাঁচরাপাড়া, উত্তর ২৪ পরগনা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy